অক্সিজেন সঙ্কটের শঙ্কা
- আপলোড টাইম : ০৮:৫৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ এপ্রিল ২০২১
- / ১১৯ বার পড়া হয়েছে
সক্ষমতা বাড়াতে হবে
দেশে করোনাভাইরাসের দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাজ্যের ধরনের অস্তিত্ব মিলেছে। এ মহামারিতে নতুন আক্রান্তদের ৮১ শতাংশের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরন শনাক্ত হয়েছে। এটি আগের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রমণপ্রবণ এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি ভারতে শনাক্ত হওয়া ধরনটি আরো ভয়াবহ। প্রতিবেশী দেশটির সাথে আমাদের যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ। এ হিসাবে ভারতে শনাক্ত হওয়া অতি সংক্রামক ভাইরাসের ধরনটি বাংলাদেশে আসবে, এটি নিশ্চিত করেই বলা যায়। তবে সরকার ভারতে শনাক্ত হওয়া নতুন ধরনের সংক্রমণ যাতে বাংলাদেশে ছড়াতে না পারে, সে জন্য দেশটির সাথে দুই সপ্তাহের জন্য যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ভারতে শনাক্ত হওয়া নতুন ধরন নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে করোনা চিকিৎসায় অন্যতম প্রধান উপকরণ অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অথচ করোনা আক্রান্ত কোনো রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে তাদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। অন্যথায় হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না।
আমাদের হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন যে পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন, দেশে উৎপাদন হচ্ছে তার চেয়ে কম। বড় একটি অংশ আমদানি করা হয় ভারত থেকে। কিন্তু ভারতে করোনা রোগী ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দিন কয়েক আগে অক্সিজেন রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। ফলে বাংলাদেশে অক্সিজেনের বিরাট ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বর্তমানে এর মজুদের পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার টন। উৎপাদন সক্ষমতার পর যতটুকু ঘাটতি থাকে, মজুদ থেকে তা পূরণ করা হচ্ছে। মজুদ শেষ হলেই দেখা দেবে সঙ্কট। এমন অবস্থায় দেশে করোনা রোগী বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। সরকারি তথ্য মতে, দেশের হাসপাতালে দৈনিক ১৬০ থেকে ১৮০ টন অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। সপ্তাহ খানেক আগে করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের সময় এর পরিমাণ ছিল ২০০ থেকে ২২০ টন। এর মধ্যে দেশীয় কয়েকটি কোম্পানি সরবরাহ করে প্রায় ১৩০ টন। বাকি ৭০-৮০ টন ভারত থেকে আমদানি করা হতো। দেশে অক্সিজেনের মূল জোগানদাতা দুটি কোম্পানি। এর মধ্যে একটি গড়ে ৮০ টন এবং অন্যটি ৩৮ টন অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। আমদানি বাদ দিলে দুটি প্রতিষ্ঠান ১১০ টন অক্সিজেন উৎপাদন করতে পারে। ঘাটতি পূরণে স্বাস্থ্য অধিদফতর আরো তিনটি অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করেছে। নতুন তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিদিন পাওয়া যাবে আরো ২০ টন অক্সিজেন। এ হিসাবে পাঁচটি কোম্পানি মিলে ১৩০ টন অক্সিজেন সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে। এতেও চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না।
সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করলে এটি স্পষ্ট যে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের ন্যূনতম পরিকল্পনাও ছিল না। অক্সিজেনের প্রয়োজন মেটাতে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত ছিল। সেখানে কর্তৃপক্ষ এ কাজটি করতেও উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা, আইসিইউ থেকে শুরু করে অক্সিজেন নিয়েও একই কাজ করেছে। এখন ভারত অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করায় বাংলাদেশও মহাবিপদে পড়তে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতো আমরাও মনে করি, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরবরাহ ঠিক রাখতে বিকল্প উৎস হিসেবে দ্রুত অক্সিজেন জেনারেটর স্থাপন করতে হবে। দেখা গেছে, একটি জেনারেটর থেকে প্রতিদিন ২৪-২৫ হাজার লিটারের মতো অক্সিজেন উৎপাদন করা সম্ভব। জার্মানির সহায়তায় ভারত তীব্র অক্সিজেন সঙ্কট মোকাবেলায় এ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন উৎপাদন শুরু করেছে। একটি হাসপাতালে জেনারেটর বসানো হলে তা থেকে আইসিইউয়ের মতো ৭০ থেকে ৮০টি শয্যায় অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া ১০০ থেকে ১২০টি সাধারণ শয্যায় অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে। সঙ্কট দূর করতে এটি বিকল্প প্রক্রিয়া হতে পারে বলে আমরা মনে করি।