ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

ছাত্রদলের সমাবেশে পুলিশি হামলা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মার্চ ২০২১
  • / ১২৭ বার পড়া হয়েছে

গণতান্ত্রিক অধিকার আর কতকাল ক্ষুণ্ন হবে
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশ অতর্কিত হামলায় পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ। এখন পুলিশ প্রায় কোনো ধরনের সভা-সমাবেশই করতে দিচ্ছে না। বলপ্রয়োগে ভণ্ডুল করে দিচ্ছে। এর আগে লেখক মুশতাক হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত ছাত্রদের মিছিল-সমাবেশেও আক্রমণ করে পুলিশ। প্রতিবাদী ছাত্রদের মিছিল পণ্ড করেই ক্ষান্ত হয়নি, তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ধারায় মামলাও দিয়েছে। পুলিশ কেন এ কাজ করছে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়নি। একটি কথিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষের প্রতিবাদের অধিকার হরণ করা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
কারাবন্দী লেখক মুশতাক আহমদের মৃত্যু ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত রোববার ছাত্রদল প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সকাল ১০টায় প্রেস ক্লাবে অবস্থান নেন। অবশ্য তার আগে পুলিশ বরাবরের মতো পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। তারা শুরু থেকেই ছিল মারমুখী। বেলা ১১টার দিকে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা প্রেস ক্লাবের ভেতর থেকে মিছিল নিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশের বাধার মুখে ছাত্রদলের কর্মীদের একটি অংশ রাস্তার ওপর বসে পড়ে। পুলিশ তাদের বেধড়ক লাঠিপেটা করে রাস্তা থেকে হটিয়ে দেয়। এই সময় পুলিশ ও ছাত্রদলের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলতে থাকে। পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটার মুখে ছাত্রদল ইটপাটকেল ছুড়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করে। পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এ সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত পুলিশের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া ছাত্রদলের আহত নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ স্লেøাগান দিতে থাকেন।
এ সময় পুলিশের হামলায় ছাত্রদলের বহু নেতাকর্মী আহত হন। তাদের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে যাওয়া ২৫ জনকে পুলিশ আটক করে। সমাবেশস্থলের আশপাশ থেকেও তারা কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যায়। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সুনির্দিষ্ট অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করতে চেয়েছেন। তাদের প্রতিবাদ করতে না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে মারমুখী পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল ছুড়ে মেরেছেন। একই সময়ে প্রতিবাদকারীরা পুলিশি আক্রমণে ধরাশায়ী হয়ে আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হওয়া নেতাকর্মীদের হাসাপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। সেখান থেকে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে। এর আগে শাহবাগে মুশতাক হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আটক হওয়া সাতজনের বিরুদ্ধে পুলিশ হত্যাচেষ্টা মামলা দিয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিক্ষুব্ধ মানুষের প্রতিবাদ করার অধিকার নেই। প্রথমে নাগরিকদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে; এরপর ওই নির্যাতনের বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দ করতে দিতে চায় না সরকার। এই অবস্থাকে কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক বলার সুযোগ নেই।
লেখক মুশতাকের মৃত্যু নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, তাকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নির্যাতন চালিয়েছে। তার কানের পর্দা ফেটে যায়, পায়ে সংক্রমণ ঘটে। এ অবস্থায় ষষ্ঠবারের মতো আদালতে জামিন চেয়ে তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। বর্তমানে দেশে এমন অনেকে রয়েছে যারা দেশবিরোধী অসংখ্য কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনের গতি একেবারে মন্থর। এমন অভিযুক্ত ব্যক্তি সহজে জামিন পাচ্ছে এর বহু উদাহরণ রয়েছে। তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, এমন সব লোকেরা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে যাদের দ্বারা দেশের ক্ষতি হতে পারে। এ অবস্থায় লেখক মুশতাক, কার্টুনিস্ট কিশোর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কী এমন জঘন্য কাজ করেছেন, যে জন্য তারা আটক থাকবেন, কারাগারে মারা যাবেন? সাধারণ মানুষ কি এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্নও করতে পারবে না? উল্টো এসবের প্রতিকার চাইতে গেলে পুলিশের আক্রমণের শিকার হতে হবে? আবার কঠিন ধারায় মামলা খেতে হবে? এ অবস্থাকে কিভাবে একটি গণতান্ত্রিক সমাজে মেনে নেয়া যায়। জনগণের প্রতিবাদ করার সুযোগ দমিয়ে দেয়ার অধিকার সরকারের নেই। সরকার সাধারণ মানুষের এই গণতান্ত্রিক অধিকারের সুরক্ষা দেবে, এটাই জাতির প্রত্যাশা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

ছাত্রদলের সমাবেশে পুলিশি হামলা

আপলোড টাইম : ১০:২৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মার্চ ২০২১

গণতান্ত্রিক অধিকার আর কতকাল ক্ষুণ্ন হবে
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত ছাত্রদলের বিক্ষোভ সমাবেশ অতর্কিত হামলায় পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ। এখন পুলিশ প্রায় কোনো ধরনের সভা-সমাবেশই করতে দিচ্ছে না। বলপ্রয়োগে ভণ্ডুল করে দিচ্ছে। এর আগে লেখক মুশতাক হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত ছাত্রদের মিছিল-সমাবেশেও আক্রমণ করে পুলিশ। প্রতিবাদী ছাত্রদের মিছিল পণ্ড করেই ক্ষান্ত হয়নি, তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ধারায় মামলাও দিয়েছে। পুলিশ কেন এ কাজ করছে তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়নি। একটি কথিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষের প্রতিবাদের অধিকার হরণ করা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
কারাবন্দী লেখক মুশতাক আহমদের মৃত্যু ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত রোববার ছাত্রদল প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সকাল ১০টায় প্রেস ক্লাবে অবস্থান নেন। অবশ্য তার আগে পুলিশ বরাবরের মতো পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। তারা শুরু থেকেই ছিল মারমুখী। বেলা ১১টার দিকে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা প্রেস ক্লাবের ভেতর থেকে মিছিল নিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশের বাধার মুখে ছাত্রদলের কর্মীদের একটি অংশ রাস্তার ওপর বসে পড়ে। পুলিশ তাদের বেধড়ক লাঠিপেটা করে রাস্তা থেকে হটিয়ে দেয়। এই সময় পুলিশ ও ছাত্রদলের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলতে থাকে। পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটার মুখে ছাত্রদল ইটপাটকেল ছুড়ে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করে। পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এ সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত পুলিশের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া ছাত্রদলের আহত নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ স্লেøাগান দিতে থাকেন।
এ সময় পুলিশের হামলায় ছাত্রদলের বহু নেতাকর্মী আহত হন। তাদের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে যাওয়া ২৫ জনকে পুলিশ আটক করে। সমাবেশস্থলের আশপাশ থেকেও তারা কয়েকজনকে আটক করে নিয়ে যায়। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সুনির্দিষ্ট অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করতে চেয়েছেন। তাদের প্রতিবাদ করতে না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে মারমুখী পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল ছুড়ে মেরেছেন। একই সময়ে প্রতিবাদকারীরা পুলিশি আক্রমণে ধরাশায়ী হয়ে আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হওয়া নেতাকর্মীদের হাসাপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। সেখান থেকে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে। এর আগে শাহবাগে মুশতাক হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আটক হওয়া সাতজনের বিরুদ্ধে পুলিশ হত্যাচেষ্টা মামলা দিয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিক্ষুব্ধ মানুষের প্রতিবাদ করার অধিকার নেই। প্রথমে নাগরিকদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে; এরপর ওই নির্যাতনের বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দ করতে দিতে চায় না সরকার। এই অবস্থাকে কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক বলার সুযোগ নেই।
লেখক মুশতাকের মৃত্যু নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, তাকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নির্যাতন চালিয়েছে। তার কানের পর্দা ফেটে যায়, পায়ে সংক্রমণ ঘটে। এ অবস্থায় ষষ্ঠবারের মতো আদালতে জামিন চেয়ে তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। বর্তমানে দেশে এমন অনেকে রয়েছে যারা দেশবিরোধী অসংখ্য কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনের গতি একেবারে মন্থর। এমন অভিযুক্ত ব্যক্তি সহজে জামিন পাচ্ছে এর বহু উদাহরণ রয়েছে। তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, এমন সব লোকেরা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে যাদের দ্বারা দেশের ক্ষতি হতে পারে। এ অবস্থায় লেখক মুশতাক, কার্টুনিস্ট কিশোর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কী এমন জঘন্য কাজ করেছেন, যে জন্য তারা আটক থাকবেন, কারাগারে মারা যাবেন? সাধারণ মানুষ কি এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্নও করতে পারবে না? উল্টো এসবের প্রতিকার চাইতে গেলে পুলিশের আক্রমণের শিকার হতে হবে? আবার কঠিন ধারায় মামলা খেতে হবে? এ অবস্থাকে কিভাবে একটি গণতান্ত্রিক সমাজে মেনে নেয়া যায়। জনগণের প্রতিবাদ করার সুযোগ দমিয়ে দেয়ার অধিকার সরকারের নেই। সরকার সাধারণ মানুষের এই গণতান্ত্রিক অধিকারের সুরক্ষা দেবে, এটাই জাতির প্রত্যাশা।