ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

ভেজাল ও অনিরাপদ খাদ্য

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৭:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১
  • / ১৩৭ বার পড়া হয়েছে

কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে
লাভ কিছুটা বেশি করার জন্য খাদ্যে এমন সব ভেজাল মেশানো হয়, যেগুলো মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। মাছ ও দুধে ফরমালিন, ফল পাকাতে কারবাইড, মুড়িতে ইউরিয়া, এমনই আরো কত কী! গুঁড়া মসলা, চানাচুর ও রঙিন খাবারে ব্যবহার করা হয় শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ও ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কাপড়ের রং। হোটেল-রেস্তোরাঁয় বাসি-পচা খাবার পরিবেশন করা হয়। মরা মুরগিও খাওয়ানো হয়। যারা এসব করে তারা একবারও ভাবে না, এসব বিষাক্ত ও ক্ষতিকর খাবার খেয়ে মানুষের কী হবে? অথচ শুধু খাদ্যে ভেজালের জন্য প্রতিবছর বহু মানুষের অকালমৃত্যু হচ্ছে। খাদ্যে যারা এভাবে ভেজাল দেয়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার ‘জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস ২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন। দেশে ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। চিকিৎসকরা এর জন্য প্রধানত ভেজাল খাদ্যকেই দায়ী করছেন। ভেজাল এত বেশি ছড়িয়ে পড়েছে যে উৎপাদক থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত অনেকেই এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন। অজ্ঞতাও এ ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। ফলমূল, সবজিতে কীটনাশক ব্যবহারের একটি নির্দিষ্ট সময় পরই শুধু তা খাওয়া যায়। কিন্তু অনেক কৃষক সবজিক্ষেতে সকালে কীটনাশক দিয়ে বিকেলে সেই সবজি হাটে নিয়ে যান। তাই প্রধানমন্ত্রী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টির ওপরও জোর দেন। তিনি বলেন, পিউর ফুড অর্ডিন্যান্স, ১৯৫৯ রহিত করে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য আইনের অধীনে ২০১৫ সালে ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি সমন্বয়কারী কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তিনটি বিধিমালা, সাতটি প্রবিধানমালা প্রণয়ন করে বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন থেকে ভোগ পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ১০০টি খাদ্যশিল্পে যে ‘সেফ ফুড প্ল্যান’ নেওয়া হচ্ছে, এটি সারা দেশেই বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। আর দেশে কেন্দ্রীয়ভাবে ফুড টেস্টিং ল্যাব প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা বিভাগীয় পর্যায়েও করতে হবে। পাশাপাশি মানুষ যাতে সুষম খাদ্য গ্রহণ করে, পুষ্টি নিশ্চিত হয়, সে লক্ষ্যেও কাজ করতে হবে। খাদ্য মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে আবার অনিরাপদ খাদ্য মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়। উন্নত দেশগুলোতে খাদ্যে ভেজালের ঘটনা নেই বললেই চলে। প্রিজারভেটিভ ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। সবাই সেগুলো মেনে চলে। বাংলাদেশেও আইন আছে। নিয়ম-কানুন, বিধি-বিধান সবই আছে। কিন্তু প্রায় কিছুই মানা হয় না। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোও সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে না। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রধানমন্ত্রী ভেজাল রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা আশা করি তা যথাযথভাবে পালন করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

ভেজাল ও অনিরাপদ খাদ্য

আপলোড টাইম : ০৯:২৭:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১

কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে
লাভ কিছুটা বেশি করার জন্য খাদ্যে এমন সব ভেজাল মেশানো হয়, যেগুলো মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। মাছ ও দুধে ফরমালিন, ফল পাকাতে কারবাইড, মুড়িতে ইউরিয়া, এমনই আরো কত কী! গুঁড়া মসলা, চানাচুর ও রঙিন খাবারে ব্যবহার করা হয় শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ও ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কাপড়ের রং। হোটেল-রেস্তোরাঁয় বাসি-পচা খাবার পরিবেশন করা হয়। মরা মুরগিও খাওয়ানো হয়। যারা এসব করে তারা একবারও ভাবে না, এসব বিষাক্ত ও ক্ষতিকর খাবার খেয়ে মানুষের কী হবে? অথচ শুধু খাদ্যে ভেজালের জন্য প্রতিবছর বহু মানুষের অকালমৃত্যু হচ্ছে। খাদ্যে যারা এভাবে ভেজাল দেয়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার ‘জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস ২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন। দেশে ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। চিকিৎসকরা এর জন্য প্রধানত ভেজাল খাদ্যকেই দায়ী করছেন। ভেজাল এত বেশি ছড়িয়ে পড়েছে যে উৎপাদক থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত অনেকেই এর সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন। অজ্ঞতাও এ ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। ফলমূল, সবজিতে কীটনাশক ব্যবহারের একটি নির্দিষ্ট সময় পরই শুধু তা খাওয়া যায়। কিন্তু অনেক কৃষক সবজিক্ষেতে সকালে কীটনাশক দিয়ে বিকেলে সেই সবজি হাটে নিয়ে যান। তাই প্রধানমন্ত্রী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টির ওপরও জোর দেন। তিনি বলেন, পিউর ফুড অর্ডিন্যান্স, ১৯৫৯ রহিত করে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য আইনের অধীনে ২০১৫ সালে ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি সমন্বয়কারী কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তিনটি বিধিমালা, সাতটি প্রবিধানমালা প্রণয়ন করে বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন থেকে ভোগ পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে ১০০টি খাদ্যশিল্পে যে ‘সেফ ফুড প্ল্যান’ নেওয়া হচ্ছে, এটি সারা দেশেই বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। আর দেশে কেন্দ্রীয়ভাবে ফুড টেস্টিং ল্যাব প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা বিভাগীয় পর্যায়েও করতে হবে। পাশাপাশি মানুষ যাতে সুষম খাদ্য গ্রহণ করে, পুষ্টি নিশ্চিত হয়, সে লক্ষ্যেও কাজ করতে হবে। খাদ্য মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে আবার অনিরাপদ খাদ্য মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়। উন্নত দেশগুলোতে খাদ্যে ভেজালের ঘটনা নেই বললেই চলে। প্রিজারভেটিভ ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। সবাই সেগুলো মেনে চলে। বাংলাদেশেও আইন আছে। নিয়ম-কানুন, বিধি-বিধান সবই আছে। কিন্তু প্রায় কিছুই মানা হয় না। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোও সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে না। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রধানমন্ত্রী ভেজাল রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা আশা করি তা যথাযথভাবে পালন করা হবে।