ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

বিনা ভোটের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৫৫:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
  • / ১৬০ বার পড়া হয়েছে

নির্বিকার নির্বাচন কমিশন
ভোটের পুরো ব্যবস্থা বর্তমান ক্ষমতাসীনদের পকেটে ঢুকে গেছে। এত দিন নির্বাচন কমিশনের কিছু ছায়া অন্তত দেখা যেত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানরূপে। নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন, ভোটের বাক্স পৌঁছানোসহ আরো কিছু আনুষ্ঠানিক কাজ তারা করতেন। কিন্তু এখন অনেক জেলায় সেটিও আর দরকার হচ্ছে না। এমনভাবে নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে যে, মনে হচ্ছে, এসবের আর কোনো দরকার নেই। কারা নির্বাচনে তাদের প্রার্থিতা দাখিল করতে পারবেন, আরা কারা নির্বাচনে জয়ী হবেনÑ পুরো বিষয়টিই দৃশ্যত ক্ষমতাসীন দলের মুষ্টিমেয় সদস্য ঠিকঠাক করে দিচ্ছেন। এ অবস্থায় ইউনিয়ন কাউন্সিলের মেম্বার ও চেয়ারম্যান, পৌরসভার কাউন্সিলর ও মেয়র নির্বাচনে এসব জেলায় নির্বাচন কমিশনের আর কোনো কাজ থাকছে কি? সহযোগী একটি দৈনিকে ফেনী এবং চট্টগ্রামের রাউজানে এই অদ্ভুত প্রক্রিয়ায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের খবর দেয়া হয়েছে। এ ধরনের নির্বাচন এক অর্থে মন্দের ভালো বলতে হবে। কারণ এ ধরনের ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আপাতত সন্ত্রাস ও হানাহানি হতে দেখা যাচ্ছে না।
পত্রিকাটি লিখেছে, রাউজান উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ী হওয়ার নতুন রীতি প্রায় প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে রাউজানে মেয়র ও সাধারণ ওয়ার্ডের ১২ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের তিনজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে চলেছেন। এর আগে ২০১৬ সালে ওই উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়নের ১১টিরই চেয়ারম্যানকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। ২০১৫ সালে রাউজান পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ভোটে জয়ী হন শাসক দলের বিবদমান প্রার্থী দেবাশীষ পালিত। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরোধী গ্রুপের এই নির্বাচিত মেয়র দায়িত্ব পালনের জন্য তার মেয়াদের পাঁচ বছর পৌরসভা কার্যালয়ে যেতে পারেননি। অর্থাৎ ‘জনগণের ভোটে নির্বাচিত’ হওয়ার কোনো সুফল কার্যত পাওয়া গেল না।
এই অবস্থাকে কোনোভাবে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি’ বলা যায় না। এটাকে বরং ‘ক্ষমতাসীন দলের নিজস্ব পছন্দের বাছাই’ বলা যায়। অর্থাৎ দেশের যে অঞ্চলে সরকারি দলের যে অংশ শক্তিশালী তারাই জনপ্রতিনিধি ঠিক করছেন। এর ব্যতিক্রম কেউ কিছু করতে চাইলে তার ওপর নেমে আসছে দমন-পীড়ন ও জীবনহানির আশঙ্কা। স্থানীয় নির্বাচনে আমাদের নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এখন একেবারে নগণ্য। তাদের কার্যক্রম প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। এর পরও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিকার নেই, যদিও এটা তাদের দায়িত্ব। তাদের পক্ষ থেকে মুখরক্ষার জন্যও কোনো চেষ্টা নেই। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের কী প্রয়োজন থাকতে পারে, আমরা জানি না। এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এ ধরনের প্রতারণাপূর্ণ ও হাস্যকর জনপ্রতিনিধি বাছাই প্রক্রিয়া রাখা হবে কি না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

বিনা ভোটের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে

আপলোড টাইম : ০৭:৫৫:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১

নির্বিকার নির্বাচন কমিশন
ভোটের পুরো ব্যবস্থা বর্তমান ক্ষমতাসীনদের পকেটে ঢুকে গেছে। এত দিন নির্বাচন কমিশনের কিছু ছায়া অন্তত দেখা যেত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানরূপে। নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন, ভোটের বাক্স পৌঁছানোসহ আরো কিছু আনুষ্ঠানিক কাজ তারা করতেন। কিন্তু এখন অনেক জেলায় সেটিও আর দরকার হচ্ছে না। এমনভাবে নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে যে, মনে হচ্ছে, এসবের আর কোনো দরকার নেই। কারা নির্বাচনে তাদের প্রার্থিতা দাখিল করতে পারবেন, আরা কারা নির্বাচনে জয়ী হবেনÑ পুরো বিষয়টিই দৃশ্যত ক্ষমতাসীন দলের মুষ্টিমেয় সদস্য ঠিকঠাক করে দিচ্ছেন। এ অবস্থায় ইউনিয়ন কাউন্সিলের মেম্বার ও চেয়ারম্যান, পৌরসভার কাউন্সিলর ও মেয়র নির্বাচনে এসব জেলায় নির্বাচন কমিশনের আর কোনো কাজ থাকছে কি? সহযোগী একটি দৈনিকে ফেনী এবং চট্টগ্রামের রাউজানে এই অদ্ভুত প্রক্রিয়ায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের খবর দেয়া হয়েছে। এ ধরনের নির্বাচন এক অর্থে মন্দের ভালো বলতে হবে। কারণ এ ধরনের ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আপাতত সন্ত্রাস ও হানাহানি হতে দেখা যাচ্ছে না।
পত্রিকাটি লিখেছে, রাউজান উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়’ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ী হওয়ার নতুন রীতি প্রায় প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে রাউজানে মেয়র ও সাধারণ ওয়ার্ডের ১২ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের তিনজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে চলেছেন। এর আগে ২০১৬ সালে ওই উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়নের ১১টিরই চেয়ারম্যানকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। ২০১৫ সালে রাউজান পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ভোটে জয়ী হন শাসক দলের বিবদমান প্রার্থী দেবাশীষ পালিত। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরোধী গ্রুপের এই নির্বাচিত মেয়র দায়িত্ব পালনের জন্য তার মেয়াদের পাঁচ বছর পৌরসভা কার্যালয়ে যেতে পারেননি। অর্থাৎ ‘জনগণের ভোটে নির্বাচিত’ হওয়ার কোনো সুফল কার্যত পাওয়া গেল না।
এই অবস্থাকে কোনোভাবে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি’ বলা যায় না। এটাকে বরং ‘ক্ষমতাসীন দলের নিজস্ব পছন্দের বাছাই’ বলা যায়। অর্থাৎ দেশের যে অঞ্চলে সরকারি দলের যে অংশ শক্তিশালী তারাই জনপ্রতিনিধি ঠিক করছেন। এর ব্যতিক্রম কেউ কিছু করতে চাইলে তার ওপর নেমে আসছে দমন-পীড়ন ও জীবনহানির আশঙ্কা। স্থানীয় নির্বাচনে আমাদের নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এখন একেবারে নগণ্য। তাদের কার্যক্রম প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। এর পরও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিকার নেই, যদিও এটা তাদের দায়িত্ব। তাদের পক্ষ থেকে মুখরক্ষার জন্যও কোনো চেষ্টা নেই। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের কী প্রয়োজন থাকতে পারে, আমরা জানি না। এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এ ধরনের প্রতারণাপূর্ণ ও হাস্যকর জনপ্রতিনিধি বাছাই প্রক্রিয়া রাখা হবে কি না।