ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

রাস্তাঘাট, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিপন্ন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:০১:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১
  • / ১৫৪ বার পড়া হয়েছে

অবাধে ইট বালু পরিবহন নয়
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে অনেক স্থানে চাষাবাদ করার ট্রাক্টরকে ‘ট্রলি’ বানিয়ে তাতে বেপরোয়াভাবে বহন করা হচ্ছে ইট আর বালু। দীর্ঘ দিন ধরে এসব অবৈধ যানবাহনের অবাধ চলাচলের দরুন গ্রামীণ এলাকার রাস্তাঘাট তথা যাতায়াতমাধ্যম, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যসমেত জীবনযাত্রা এখন মারাত্মক হুমকির মুখে। একটি জাতীয় দৈনিকের মনোহরদী (নরসিংদী) সংবাদদাতা এমন এক উদ্বেগজনক সংবাদ পাঠিয়েছেন।
আলোচ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কৃষিকাজের জন্য আনা ট্রাক্টর দিয়ে বানানো ট্রলি কিংবা ট্রাকে বহন করা হচ্ছে ইট, বালু, মাটি প্রভৃতি। আরো জানানো হয়েছে, এই বেআইনি যানটি লাইসেন্সবিহীন বা অননুমোদিত; তদুপরি শিশু-কিশোর চালকরা এগুলো চালাচ্ছে। এর ফলে দুর্ভোগ বেশি পোহাতে হয় পথচারীদের। সরকার বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নকে সহজ করতে ট্রাক্টর আমদানির পথ সুগম করেছে। কিন্তু এ সুযোগের অপব্যবহার করে অসাধু ব্যবসায়ীরা অবাধে বিদেশ থেকে ট্রাক্টর আনছেন। এরপর এগুলো বেচে দিচ্ছেন শিল্প-কারখানা ও ইটভাটার মালিক এবং বালু ও মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে। কৃষিকাজের জন্য নির্ধারিত থাকায় ট্রাক্টর চালাতে লাইসেন্স বা আনুষ্ঠানিক অনুমতির দরকার হয় না। তদুপরি দামও তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় অনেকে সহজেই কিনতে পারছেন ট্রাক্টর। তবে এ যানের অপব্যবহার করা হচ্ছে বেশি। অপর দিকে ট্রাক্টর ভাড়ার হার ট্রাক ভাড়ার চেয়ে কম বিধায় এর চাহিদাও বেশি। তাই সব মিলিয়ে গ্রাম ছাড়িয়ে শহর এলাকাতেও ট্রাক্টরের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে নরসিংদীর একটি উপজেলার চিত্র তুলে ধরা হলেও এটা নমুনা মাত্র। প্রায় গোটা দেশেই অবাধে ও বিকট আওয়াজ তুলে সদর রাস্তায় ট্রাক্টরসহ এ ধরনের যানবাহন চলছে। এগুলো প্রায় সময়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ কিংবা শিকারে পরিণত হচ্ছে এবং এতে হতাহত হচ্ছেন অনেকে। আর মালামালের ব্যাপক ক্ষতি তো হচ্ছেই।
মনোহরদী উপজেলার অবস্থা সরেজমিন ঘুরে প্রকাশ করা হয়েছে এভাবেÑ ‘কয়েকটি ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, এসব ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলের কারণে গ্রামীণ রাস্তাঘাট বিনষ্ট হচ্ছে। সড়কের দু’পাশে বাড়ি ও কারখানা ধুলায় তলিয়ে গেছে। নদী খননের মাটি সরকারি কাজে নিয়ে যাওয়াসহ অসাধু ব্যবসায়ী কর্তৃক কৃষিজমির টপ সয়েল, ইট ও বালুভর্তি ট্রলি বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে এবং এটা ১৪ থেকে ১৮ বছরের শিশু-কিশোরই বেশি চালাচ্ছে। এতে বেপরোয়া গতি ও কানফাটা শব্দে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।’
এলাকার বেশ ক’জন পথচারীর বক্তব্য, রোড পারমিশনহীন এসব ট্রাক্টর লাইসেন্সবিহীন চালকরা চালিয়ে পথঘাট ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করলেও প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করলেও এ প্রবণতা বন্ধ হচ্ছে না। একজন নির্বাহী বিচারক বলেন, ‘মানুষের যেন সমস্যা না হয় সেজন্য বালু পরিবহন করতে হয় ঢেকে দিয়ে। এ জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছে নিয়মিত।’
সুষ্ঠু জনজনীবনের স্বার্থেই যথেচ্ছ মাটি ও বালু তোলা এবং ইটভাটায় গাছ পোড়ানোসহ নির্বিচারে মাটি ইট-বালু পরিবহন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় সাধারণ মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। ট্রাক্টর চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে লাগানোর প্রবণতার আশু অবসান চাই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

রাস্তাঘাট, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিপন্ন

আপলোড টাইম : ১১:০১:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১

অবাধে ইট বালু পরিবহন নয়
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে অনেক স্থানে চাষাবাদ করার ট্রাক্টরকে ‘ট্রলি’ বানিয়ে তাতে বেপরোয়াভাবে বহন করা হচ্ছে ইট আর বালু। দীর্ঘ দিন ধরে এসব অবৈধ যানবাহনের অবাধ চলাচলের দরুন গ্রামীণ এলাকার রাস্তাঘাট তথা যাতায়াতমাধ্যম, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যসমেত জীবনযাত্রা এখন মারাত্মক হুমকির মুখে। একটি জাতীয় দৈনিকের মনোহরদী (নরসিংদী) সংবাদদাতা এমন এক উদ্বেগজনক সংবাদ পাঠিয়েছেন।
আলোচ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কৃষিকাজের জন্য আনা ট্রাক্টর দিয়ে বানানো ট্রলি কিংবা ট্রাকে বহন করা হচ্ছে ইট, বালু, মাটি প্রভৃতি। আরো জানানো হয়েছে, এই বেআইনি যানটি লাইসেন্সবিহীন বা অননুমোদিত; তদুপরি শিশু-কিশোর চালকরা এগুলো চালাচ্ছে। এর ফলে দুর্ভোগ বেশি পোহাতে হয় পথচারীদের। সরকার বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নকে সহজ করতে ট্রাক্টর আমদানির পথ সুগম করেছে। কিন্তু এ সুযোগের অপব্যবহার করে অসাধু ব্যবসায়ীরা অবাধে বিদেশ থেকে ট্রাক্টর আনছেন। এরপর এগুলো বেচে দিচ্ছেন শিল্প-কারখানা ও ইটভাটার মালিক এবং বালু ও মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে। কৃষিকাজের জন্য নির্ধারিত থাকায় ট্রাক্টর চালাতে লাইসেন্স বা আনুষ্ঠানিক অনুমতির দরকার হয় না। তদুপরি দামও তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় অনেকে সহজেই কিনতে পারছেন ট্রাক্টর। তবে এ যানের অপব্যবহার করা হচ্ছে বেশি। অপর দিকে ট্রাক্টর ভাড়ার হার ট্রাক ভাড়ার চেয়ে কম বিধায় এর চাহিদাও বেশি। তাই সব মিলিয়ে গ্রাম ছাড়িয়ে শহর এলাকাতেও ট্রাক্টরের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে নরসিংদীর একটি উপজেলার চিত্র তুলে ধরা হলেও এটা নমুনা মাত্র। প্রায় গোটা দেশেই অবাধে ও বিকট আওয়াজ তুলে সদর রাস্তায় ট্রাক্টরসহ এ ধরনের যানবাহন চলছে। এগুলো প্রায় সময়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ কিংবা শিকারে পরিণত হচ্ছে এবং এতে হতাহত হচ্ছেন অনেকে। আর মালামালের ব্যাপক ক্ষতি তো হচ্ছেই।
মনোহরদী উপজেলার অবস্থা সরেজমিন ঘুরে প্রকাশ করা হয়েছে এভাবেÑ ‘কয়েকটি ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, এসব ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলের কারণে গ্রামীণ রাস্তাঘাট বিনষ্ট হচ্ছে। সড়কের দু’পাশে বাড়ি ও কারখানা ধুলায় তলিয়ে গেছে। নদী খননের মাটি সরকারি কাজে নিয়ে যাওয়াসহ অসাধু ব্যবসায়ী কর্তৃক কৃষিজমির টপ সয়েল, ইট ও বালুভর্তি ট্রলি বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে এবং এটা ১৪ থেকে ১৮ বছরের শিশু-কিশোরই বেশি চালাচ্ছে। এতে বেপরোয়া গতি ও কানফাটা শব্দে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।’
এলাকার বেশ ক’জন পথচারীর বক্তব্য, রোড পারমিশনহীন এসব ট্রাক্টর লাইসেন্সবিহীন চালকরা চালিয়ে পথঘাট ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করলেও প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করলেও এ প্রবণতা বন্ধ হচ্ছে না। একজন নির্বাহী বিচারক বলেন, ‘মানুষের যেন সমস্যা না হয় সেজন্য বালু পরিবহন করতে হয় ঢেকে দিয়ে। এ জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছে নিয়মিত।’
সুষ্ঠু জনজনীবনের স্বার্থেই যথেচ্ছ মাটি ও বালু তোলা এবং ইটভাটায় গাছ পোড়ানোসহ নির্বিচারে মাটি ইট-বালু পরিবহন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় সাধারণ মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। ট্রাক্টর চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে লাগানোর প্রবণতার আশু অবসান চাই।