মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান
- আপলোড টাইম : ০৯:২০:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
- / ১৫৩ বার পড়া হয়েছে
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। দেশটিতে গত বছরের নবেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে সুচির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে না করতেই এই সেনা অভ্যুত্থান আকস্মিক মনে হলেও অপ্রত্যাশিত নয়। কেননা, সেনাবাহিনী ও সেনাসমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি নির্বাচনের পর থেকেই ভোটে ব্যাপক কারচুরি অভিযোগ করে আসছিল। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যাত হলে চার দিনের মাথায় ঘটল এই অভ্যুত্থান, নবনির্বাচিত পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার আগেই। দেশটিতে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে মিন্ট সোয়ে দায়িত্ব নিয়ে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী করে জরুরী অবস্থা জারি করেন এক বছরের জন্য। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন তথা রোহিঙ্গা গণহত্যা-ধর্ষণের অভিযোগে এই সেনাপ্রধানের ওপর আরোপ করে নিষেধাজ্ঞা। অভ্যুত্থানের পরপরই নবনির্বাচিত স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন নেতাকে আটক করা হয়। তবে আটক হওয়ার আগে ফেসবুকে সুচি লিখেছেন জনগণকে এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামার জন্য। তা না হলে দেশে আবারও শুরু হবে স্বৈরতন্ত্র। উল্লেখ্য, মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে সামরিক শাসন ও স্বৈরতন্ত্রই বহাল ছিল। ২০১৫ সালে প্রবল আন্তর্জাতিক চাপে সে দেশে প্রথম গণতন্ত্রের আবহ সূচিত হতে থাকে সুচির নেতৃত্বে। তবে শেষ রক্ষা হলো না। এর মধ্যেই ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে শুরু হয় রোহিঙ্গা গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। জীবন বাঁচাতে প্রাণ ভয়ে সে সময়ে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় বাংলাদেশে। এর আগে বিতাড়িত হয়েছে পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। ভাগ্যের পরিহাস এই যে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও বিতাড়ন নিয়ে গাম্বিয়ার দায়েরকৃত মামলার শুনানিতে আউং সান সুচি নিজে হাজির হয়ে রাখাইনে সেনা অভিযানের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছিলেন। এ নিয়ে তখন তার কঠোর সমালোচনা হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। আর এখন সেই সেনাবাহিনীই গৃহবন্দী করেছে সুচিকে। এর ফলে দেশটিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও বিলম্বিত হতে পারে।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশে আশ্রিত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের রাখাইনে পুনর্বাসনকল্পে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত প্রথম ভার্চুয়াল বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে। ইতোপূর্বে প্রতিবেশী দেশ ভারতও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশকে। তবে এবারই প্রথম একটি অন্যতম পরাশক্তি ও প্রভাবশালী দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় যুক্ত হলো চীন। তিন দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের এই বৈঠকে তেমন আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি সাধিত না হলেও, প্রথম বৈঠকে যা আশা করা উচিতও নয়, আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্রস্তাবিত ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে পরিস্থিতির বাস্তবানুগ অগ্রগতি হতে পারে বলে আশা করা যায়। চলতি বছরের এপ্রিল-মে নাগাদ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের প্রতিশ্রুত সহযোগিতাও প্রত্যাশিত অবশ্যই। কেননা, মিয়ানমার সরকারের ওপর দু’দেশের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। চীন ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কও উষ্ণ ও হৃদ্যতাপূর্ণ। নতুন সামরিক সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এগিয়ে নেবে বলেই প্রত্যাশা। আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়া কর্তৃক মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও শুনানির বিষয়টি ইতিবাচক অগ্রগতি। সামরিক সরকার কিভাবে তা মোকাবেলা করে সেটিও দেখার বিষয়। তবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আরও জরুরী ও জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশ, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে। এ ক্ষেত্রে চীন ও ভারতের এগিয়ে আসাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই।