দুর্নীতির বৈশ্বিক সূচক: একই তিমিরে বাংলাদেশ
- আপলোড টাইম : ০৮:৪৮:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২১
- / ১৪৯ বার পড়া হয়েছে
গতবারের তুলনায় দুই ধাপ নিচে নেমে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে এবার সূচকের নিম্ন দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। গত বছর ছিল ১৪তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ভুটান। ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২০’-এ বাংলাদেশ ১০০ স্কোরের মধ্যে পেয়েছে ২৬। বিগত তিন বছর ধরে একই স্কোর বাংলাদেশের। বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) পরিচালিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদন গত বৃহস্পতিবার সারা বিশ্বে প্রকাশ করা হয়। এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক এই সূচকের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি দমনে বাংলাদেশের অবস্থান হতাশাজনক। দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে শুধু যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ, অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের অবস্থান দ্বিতীয়। এবার জরিপে অংশ নেয়া ১৮০টি দেশের মধ্যে উপরের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬। গতবারের মতো একই আছে অবস্থান। অর্থাৎ কোনো অগ্রগতি নেই।’ সিপিআই সম্পর্কে যথাযথ ধারণার অভাবে অনেক সময় ‘বাংলাদেশ দুর্নীতিগ্রস্ত বা বাংলাদেশের অধিবাসীরা সবাই দুর্নীতি করে’ এ ধরনের ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয়। যদিও দুর্নীতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য দূরীকরণ- সর্বোপরি, টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের পথে কঠিনতম অন্তরায়। তথাপি বাস্তবে দেশের সাধারণ জনগণ দুর্নীতিগ্রস্ত নন। বরং তারা দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী। ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি এবং তা প্রতিরোধে দেশের নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতায় দেশ বা জনগণকে কোনোভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত বলা যাবে না। দেশীয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোর মতে, বাংলাদেশে দুর্নীতি দমনে হতাশাজনক চিত্রের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার, গণতন্ত্রের জবাবদিহির কার্যকারিতার অবদমন, বিচারহীনতার সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন উপাদান প্রভাব ফেলেছে।
দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা এখনো উদ্বেগজনক। কোভিড-১৯ অতিমারীর প্রেক্ষাপটে এই ভয়াবহতা ও বিস্তৃতি প্রকটভাবে প্রকাশ পেয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শুধুই প্রতিশ্রুতি’ কিংবা ‘অস্বীকারের সংস্কৃতি’ আর ‘স্বল্প পরিসরের অভিযানের’ মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা সম্ভব নয়। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার ঘোষণা সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রকাশ হলেও এর প্রয়োগে ঘাটতি প্রকটভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে। বাস্তবে ঘোষণাতেই আটকে আছে। বিশেষ করে এই ঘোষণা বাস্তবায়নের দায়িত্ব ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত মহল ও প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতির যোগসাজশ, সহায়ক ও সুবিধাভোগীদের প্রভাবের কারণে অগ্রগতি অর্জনের সুযোগ নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এমনভাবে রাজনীতিকীকরণ হচ্ছে যাতে সেগুলো এখন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলে মনে হচ্ছে। এগুলো ঢেলে সাজানো দরকার। সূচকে এসবের প্রভাব পড়েছে। যদি এক্ষেত্রে অগ্রগতি না হয় তা হলে আগামীতেও এর কুপ্রভাব পড়বে। যদি রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করা যেত এবং ক্ষেত্রবিশেষে দুর্নীতির ঘটনা অস্বীকার কিংবা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা না করে অবস্থান ও পরিচয় নির্বিশেষে আইনের কঠোর প্রয়োগ হতো; তাহলে আমাদের স্কোর ও অবস্থানে আরো উন্নতি হতে পারত। দেশে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও অপরাধের মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে। গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের অবস্থান এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সঙ্কুুচিত। আর্থিক ও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ, জালিয়াতি এবং সরকারি কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ইত্যাদি কারণে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। এসব পরিস্থিতির পরিবর্তন করে সব ধরনের ভয়ভীতি কিংবা অনুকম্পার ঊর্ধ্বে উঠে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা’র ঘোষণা যথাযথ বাস্তবায়ন করলে সূচকে বাংলাদেশের স্কোর নিশ্চয়ই কাক্সিক্ষত পর্যায়ে যাবে।