ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:১৩:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২১
  • / ১৬৪ বার পড়া হয়েছে

ভোটাধিকার প্রসঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন
নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক আজো চলছে। প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলো বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হয়েছে। তারা যত অভিযোগ দায়ের করেছেন, কোনোটিতেই এই কমিশন ভ্রƒক্ষেপ করেনি। এরপর জনগণের পক্ষ থেকে ভোট বঞ্চনার বিষয়ে উত্তরোত্তর জোরালোভাবে জানানো হয়েছে। এসবের প্রতি কমিশন একেবারে নির্বিকার থেকেছে। এখন নাগরিক সমাজের বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি এই নির্বাচন কমিশনের নানা অন্যায়ের বিপক্ষে সোচ্চার। ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক রাষ্ট্রপতির কাছে কমিশনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করেছেন। কমিশন বিচ্ছিন্নভাবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেয়ার কসরত করেছে। সর্বশেষ এই কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম করার লজ্জাজনক অভিযোগের কথা জানা গেছে স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদফতর থেকে। দুঃখজনক হচ্ছে, এই কমিশন যখন অন্যায় শুরু করেছিল প্রথমে তাকে থামানো হয়নি। মানুষের ভোটাধিকার হরণের দায়ে প্রথমেই যদি এই কমিশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতো, পরিস্থিতির এতটা অবনতি ঘটত না। একইভাবে এখন এ অভিযোগগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এ কমিশনকে বিদায় করে দেয়া হলেও মূল সমস্যার সমাধান হবে না। মূল অভিযোগ তথা মানুষের ভোট দেয়ার সুযোগ নস্যাতের একটা ব্যবস্থা হওয়া দরকার। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সততা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা জনগণের অধিকার সংরক্ষণ করার কথা। এ ব্যাপারে তারা লোভ-লালসা ও আবেগের ঊর্ধ্বে উঠবেন বলেই প্রত্যাশা। তাই এ পদে নিয়োগ দেয়ার আগে একটি সুষ্ঠু বাছাই প্রক্রিয়া থাকা উচিত। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যখন তাদের বাছাই করা হবে তখন অবশ্যই বিজ্ঞতার পরিচয় দিতে হবে। বিশেষ করে অতীত রেকর্ড এ জন্য বিবেচনায় নেয়া বেশি প্রয়োজন। এখন যেসব অভিযোগ ওঠানো হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, তারা সামান্য অর্থের লোভ ও সংবরণ করতে পারছিলেন না। কমিশন ‘বিশেষ বক্তা’ পদ সৃষ্টি করেছিল। ওই পদের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছিল না। বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার নামে নির্বাচন কমিশন তিন কোটি ৩৫ লাখ টাকা খরচ করেছে। বিশেষ বক্তার তালিকায় ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার এবং এর সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবরা। প্রশিক্ষণ বাবদ এই অর্থ লাভ করার তালিকায় কমিশনের নিচের দিকের সব পর্যায়ের কর্মকর্তারাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন দায়িত্বে নিযুক্ত ব্যক্তিরা এই আয়কে বৈধ বলার জন্য অনেক যুক্তি দেখাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের মতো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারীদের এখন সামান্য অর্থকড়ির হিসাব নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে নামতে হয়েছে। জাতির জন্য এর চেয়ে আর বেশি দুঃখজনক কী হতে পারে? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ইতিহাসে নির্বাচন কমিশনের মতো জায়গাগুলোতে জাতির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হতো। তারা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা কাটছাঁট করার নজির সৃষ্টি করতেন। নিজেরা অতিরিক্ত সুযোগ নেয়ার কথা তারা কখনো চিন্তাও করতেন না। তারা সাধারণত কৃচ্ছ্র সাধন করে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে দেশের সেবা করতে চান। আমাদের দেশে উচ্চ নৈতিক মানসম্পন্ন দক্ষ মানুষের অভাব নেই; কিন্তু নির্বাচন কমিশনের মতো জায়গায় তাদের আর নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের মূল দায়িত্ব এখন আড়ালে চলে গেছে। ভোটের বাক্স স্বচ্ছ হবে কি না; কিংবা ইলেকট্রনিক ভোট বাক্স ব্যবহার করা হবে কি নাÑ এসব আলোচনায় নেই। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে ভোট অনুষ্ঠিত হতে পারবে কি না, সেটিও আলোচনায় নেই। বড় বড় কর্তারা রাষ্ট্রের অর্থ অবৈধভাবে আত্মসাৎ করেছেন কি না সেই বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এখন একটি নতুন কমিশন দায়িত্ব নিলেও মানুষের ভোট দেয়ার সুযোগ হবে কি না তার নিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে না। বিতর্কিত কমিশন দিয়ে যে কাজ হবে না, এ ব্যাপারে প্রায় সবাই একমত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া দরকার মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটি। যে কমিশনই প্রতিষ্ঠা করা হোক, তারা যেন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সক্ষমতা অর্জন করতে পারেন সেটি নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক

আপলোড টাইম : ০৮:১৩:১৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২১

ভোটাধিকার প্রসঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন
নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিতর্ক আজো চলছে। প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলো বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হয়েছে। তারা যত অভিযোগ দায়ের করেছেন, কোনোটিতেই এই কমিশন ভ্রƒক্ষেপ করেনি। এরপর জনগণের পক্ষ থেকে ভোট বঞ্চনার বিষয়ে উত্তরোত্তর জোরালোভাবে জানানো হয়েছে। এসবের প্রতি কমিশন একেবারে নির্বিকার থেকেছে। এখন নাগরিক সমাজের বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি এই নির্বাচন কমিশনের নানা অন্যায়ের বিপক্ষে সোচ্চার। ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক রাষ্ট্রপতির কাছে কমিশনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করেছেন। কমিশন বিচ্ছিন্নভাবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেয়ার কসরত করেছে। সর্বশেষ এই কমিশনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম করার লজ্জাজনক অভিযোগের কথা জানা গেছে স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদফতর থেকে। দুঃখজনক হচ্ছে, এই কমিশন যখন অন্যায় শুরু করেছিল প্রথমে তাকে থামানো হয়নি। মানুষের ভোটাধিকার হরণের দায়ে প্রথমেই যদি এই কমিশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতো, পরিস্থিতির এতটা অবনতি ঘটত না। একইভাবে এখন এ অভিযোগগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এ কমিশনকে বিদায় করে দেয়া হলেও মূল সমস্যার সমাধান হবে না। মূল অভিযোগ তথা মানুষের ভোট দেয়ার সুযোগ নস্যাতের একটা ব্যবস্থা হওয়া দরকার। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সততা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা জনগণের অধিকার সংরক্ষণ করার কথা। এ ব্যাপারে তারা লোভ-লালসা ও আবেগের ঊর্ধ্বে উঠবেন বলেই প্রত্যাশা। তাই এ পদে নিয়োগ দেয়ার আগে একটি সুষ্ঠু বাছাই প্রক্রিয়া থাকা উচিত। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যখন তাদের বাছাই করা হবে তখন অবশ্যই বিজ্ঞতার পরিচয় দিতে হবে। বিশেষ করে অতীত রেকর্ড এ জন্য বিবেচনায় নেয়া বেশি প্রয়োজন। এখন যেসব অভিযোগ ওঠানো হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, তারা সামান্য অর্থের লোভ ও সংবরণ করতে পারছিলেন না। কমিশন ‘বিশেষ বক্তা’ পদ সৃষ্টি করেছিল। ওই পদের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছিল না। বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার নামে নির্বাচন কমিশন তিন কোটি ৩৫ লাখ টাকা খরচ করেছে। বিশেষ বক্তার তালিকায় ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার এবং এর সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবরা। প্রশিক্ষণ বাবদ এই অর্থ লাভ করার তালিকায় কমিশনের নিচের দিকের সব পর্যায়ের কর্মকর্তারাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন দায়িত্বে নিযুক্ত ব্যক্তিরা এই আয়কে বৈধ বলার জন্য অনেক যুক্তি দেখাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের মতো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারীদের এখন সামান্য অর্থকড়ির হিসাব নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে নামতে হয়েছে। জাতির জন্য এর চেয়ে আর বেশি দুঃখজনক কী হতে পারে? গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ইতিহাসে নির্বাচন কমিশনের মতো জায়গাগুলোতে জাতির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হতো। তারা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা কাটছাঁট করার নজির সৃষ্টি করতেন। নিজেরা অতিরিক্ত সুযোগ নেয়ার কথা তারা কখনো চিন্তাও করতেন না। তারা সাধারণত কৃচ্ছ্র সাধন করে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে দেশের সেবা করতে চান। আমাদের দেশে উচ্চ নৈতিক মানসম্পন্ন দক্ষ মানুষের অভাব নেই; কিন্তু নির্বাচন কমিশনের মতো জায়গায় তাদের আর নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের মূল দায়িত্ব এখন আড়ালে চলে গেছে। ভোটের বাক্স স্বচ্ছ হবে কি না; কিংবা ইলেকট্রনিক ভোট বাক্স ব্যবহার করা হবে কি নাÑ এসব আলোচনায় নেই। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে ভোট অনুষ্ঠিত হতে পারবে কি না, সেটিও আলোচনায় নেই। বড় বড় কর্তারা রাষ্ট্রের অর্থ অবৈধভাবে আত্মসাৎ করেছেন কি না সেই বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এখন একটি নতুন কমিশন দায়িত্ব নিলেও মানুষের ভোট দেয়ার সুযোগ হবে কি না তার নিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে না। বিতর্কিত কমিশন দিয়ে যে কাজ হবে না, এ ব্যাপারে প্রায় সবাই একমত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া দরকার মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটি। যে কমিশনই প্রতিষ্ঠা করা হোক, তারা যেন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সক্ষমতা অর্জন করতে পারেন সেটি নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার।