ইপেপার । আজ সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

পরামর্শ ও প্রশিক্ষণে ২৬৭ কোটি টাকা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২১
  • / ১৮৫ বার পড়া হয়েছে

‘খাজনার চেয়ে বাজনা’ যেন বেশি না হয়
বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে, বাজেটের একটি বড় অংশ খরচ হয়ে যাচ্ছে পরামর্শ সেবা বা কনসালট্যান্ট ফি, দেশ-বিদেশে ‘ট্রেনিং’ আর প্রকল্পের যানবাহন কেনার জন্য। এতে বাস্তবে লক্ষ্য অর্জিত হোক বা না হোক, কিংবা অভীষ্ট সুফল প্রাপ্তি যথেষ্ট না ঘটুক, প্রকল্পব্যয়ের বহর বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। আরো অভিযোগ রয়েছে, কনসালটেশন বা পরামর্শ প্রদান বাবদ অতিরিক্ত এবং প্রশিক্ষণের পেছনে অপ্রয়োজনীয় অর্থ ঢালার। আরো বলা হয়ে থাকে, অনেক প্রকল্পের জনবলের অনুপাতে গাড়ি কেনা হয় বেশি। এর ফলে কাজের কাজ হোক বা না হোক, দায়িত্বশীলদের আয়েশি জীবনের মাত্রা এবং সরকারি যানের ব্যাপক অপব্যবহার ও অপচয় বেড়ে যায় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। দেশব্যাপী কারাগারসহ বিচারিক সাইটগুলোর অপরিহার্য ডিজিটালাইজেশন চলছে। তদুপরি করা হচ্ছে ই-আদালত স্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এসব কাজে তিন ধরনের কনসালট্যান্ট আর ট্রেনিং বাবদ ২৬৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এ ছাড়া এ প্রকল্পে একেকটি গাড়ি কেনার কথা ৯ কোটি টাকা দিয়ে। এ ব্যাপারে স্বয়ং প্ল্যানিং কমিশন জানায়, ২০১৮ সালেই এ প্রকল্পের মূল্যায়ন কমিটি বাজেট সংশোধন করতে বলে দিয়েছে। কিন্তু তা করা হলো দু’বছর পরে। দেখা যায়, প্রথম প্রস্তাবের ৩২৭ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পাঠানো বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে, সীমিতসংখ্যক বিচারক, প্রচলিত ব্যবস্থা, গতানুগতিক পদ্ধতি ইত্যাদির ফলে সময়মতো বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে রায় দেয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে কেসের ‘ব্যাকলগ’ দিন দিন বেড়ে চলেছে। ডিজিটাল দেশের লক্ষ্য পূরণে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম শক্তিশালী, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ এবং জনগণের সুবিচার লাভের অধিকার সহজলভ্য করতে বাংলাদেশে বিচারব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করা জরুরি। এ লক্ষ্যে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ একটি পাইলট প্রকল্পের কার্যক্রম ৩২৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কয়েকটি জেলায় বাস্তবায়নের জন্য একনেকে প্রস্তাব পেশ করেছিল। প্রকল্পটি সম্প্রসারিত করে সারা দেশে বাস্তবায়নার্থে কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরে এ জন্য কম্পিউটার কাউন্সিলের সহায়তায় দুই হাজার ২০৯ কোটি ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকার ব্যয়প্রস্তাব আসে প্ল্যানিং কমিশনের কাছে। ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সিইসি সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এ ব্যাপারে। এ দিকে দুই বছর পরে সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবে ব্যয় আরো বেড়েছে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত চার বছর মেয়াদি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্ল্যানিং কমিশনের কাছে এ প্রস্তাব এসেছে। এ দেশে মামলাজট কী ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, তা সবার কাছে স্পষ্ট। এ জন্য বিচারব্যবস্থার যুগোপযোগীকরণের ব্যাপারে কারো দ্বিমত থাকতে পারে না। আলোচ্য প্রকল্পের মাধ্যমে সে উদ্দেশ্যেই সব পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আশা করা যায়। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের জনগণের অর্থের যাতে কোনো অপচয় না ঘটে, তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি, সর্ববিধ দুর্নীতি-অনিয়ম, দীর্ঘসূত্রতা ও অব্যবস্থাপনা রোধ করতে হবে। অন্যথায় বিরাট অঙ্কের অর্থ ব্যয় সত্ত্বেও কাক্সিক্ষত সুফল না-ও মিলতে পারে। আমরা আশা করি, এ জন্য সার্বিক সুশাসন কায়েমের পথে সব প্রতিবন্ধক অপসারণে কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকারে পিছপা হবে না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

পরামর্শ ও প্রশিক্ষণে ২৬৭ কোটি টাকা

আপলোড টাইম : ১০:১৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২১

‘খাজনার চেয়ে বাজনা’ যেন বেশি না হয়
বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে, বাজেটের একটি বড় অংশ খরচ হয়ে যাচ্ছে পরামর্শ সেবা বা কনসালট্যান্ট ফি, দেশ-বিদেশে ‘ট্রেনিং’ আর প্রকল্পের যানবাহন কেনার জন্য। এতে বাস্তবে লক্ষ্য অর্জিত হোক বা না হোক, কিংবা অভীষ্ট সুফল প্রাপ্তি যথেষ্ট না ঘটুক, প্রকল্পব্যয়ের বহর বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। আরো অভিযোগ রয়েছে, কনসালটেশন বা পরামর্শ প্রদান বাবদ অতিরিক্ত এবং প্রশিক্ষণের পেছনে অপ্রয়োজনীয় অর্থ ঢালার। আরো বলা হয়ে থাকে, অনেক প্রকল্পের জনবলের অনুপাতে গাড়ি কেনা হয় বেশি। এর ফলে কাজের কাজ হোক বা না হোক, দায়িত্বশীলদের আয়েশি জীবনের মাত্রা এবং সরকারি যানের ব্যাপক অপব্যবহার ও অপচয় বেড়ে যায় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। দেশব্যাপী কারাগারসহ বিচারিক সাইটগুলোর অপরিহার্য ডিজিটালাইজেশন চলছে। তদুপরি করা হচ্ছে ই-আদালত স্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এসব কাজে তিন ধরনের কনসালট্যান্ট আর ট্রেনিং বাবদ ২৬৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এ ছাড়া এ প্রকল্পে একেকটি গাড়ি কেনার কথা ৯ কোটি টাকা দিয়ে। এ ব্যাপারে স্বয়ং প্ল্যানিং কমিশন জানায়, ২০১৮ সালেই এ প্রকল্পের মূল্যায়ন কমিটি বাজেট সংশোধন করতে বলে দিয়েছে। কিন্তু তা করা হলো দু’বছর পরে। দেখা যায়, প্রথম প্রস্তাবের ৩২৭ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পাঠানো বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে, সীমিতসংখ্যক বিচারক, প্রচলিত ব্যবস্থা, গতানুগতিক পদ্ধতি ইত্যাদির ফলে সময়মতো বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে রায় দেয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে কেসের ‘ব্যাকলগ’ দিন দিন বেড়ে চলেছে। ডিজিটাল দেশের লক্ষ্য পূরণে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম শক্তিশালী, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ এবং জনগণের সুবিচার লাভের অধিকার সহজলভ্য করতে বাংলাদেশে বিচারব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করা জরুরি। এ লক্ষ্যে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ একটি পাইলট প্রকল্পের কার্যক্রম ৩২৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কয়েকটি জেলায় বাস্তবায়নের জন্য একনেকে প্রস্তাব পেশ করেছিল। প্রকল্পটি সম্প্রসারিত করে সারা দেশে বাস্তবায়নার্থে কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরে এ জন্য কম্পিউটার কাউন্সিলের সহায়তায় দুই হাজার ২০৯ কোটি ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকার ব্যয়প্রস্তাব আসে প্ল্যানিং কমিশনের কাছে। ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সিইসি সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এ ব্যাপারে। এ দিকে দুই বছর পরে সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবে ব্যয় আরো বেড়েছে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত চার বছর মেয়াদি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্ল্যানিং কমিশনের কাছে এ প্রস্তাব এসেছে। এ দেশে মামলাজট কী ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, তা সবার কাছে স্পষ্ট। এ জন্য বিচারব্যবস্থার যুগোপযোগীকরণের ব্যাপারে কারো দ্বিমত থাকতে পারে না। আলোচ্য প্রকল্পের মাধ্যমে সে উদ্দেশ্যেই সব পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে আশা করা যায়। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের জনগণের অর্থের যাতে কোনো অপচয় না ঘটে, তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি, সর্ববিধ দুর্নীতি-অনিয়ম, দীর্ঘসূত্রতা ও অব্যবস্থাপনা রোধ করতে হবে। অন্যথায় বিরাট অঙ্কের অর্থ ব্যয় সত্ত্বেও কাক্সিক্ষত সুফল না-ও মিলতে পারে। আমরা আশা করি, এ জন্য সার্বিক সুশাসন কায়েমের পথে সব প্রতিবন্ধক অপসারণে কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকারে পিছপা হবে না।