ইপেপার । আজ সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি-টিউশন ফি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২১:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ জানুয়ারী ২০২১
  • / ১৬২ বার পড়া হয়েছে

অভিভাবকদের কথাও ভাবুন
দেশের সব বিদ্যালয়ে বছরের শুরুতে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের নতুন করে ভর্তি ও পুনঃভর্তি চলছে। তবে পুনঃভর্তি ফি নিতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবার কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন না করেই ‘কৌশলে’ বই বিতরণসহ অন্যান্য কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান ভর্তিতে কিছুটা ‘ধীরে চলো নীতি’ নিয়েছে। কৌশলের অংশ হিসেবে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান অভিভাবকদের কাছ থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পাওনাদি আদায় করলেও জানুয়ারিতে ভর্তি, পুনঃভর্তি বিষয়ে এখনো নোটিশ করেনি। অথচ দেশের অনেক নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাধারণত প্রতি তিন মাসের বেতন এক সাথে নিয়ে থাকে। গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, করোনার কারণে কিছু প্রতিষ্ঠান যৎসামান্য ছাড় দিলেও এই মহামারীকালেও প্রায় সব প্রতিষ্ঠান গত বছরের জানুয়ারির সমান ফি নিচ্ছে। কোনো কোনোটিতে ফির পরিমাণ আরো বাড়ানো হয়েছে। অভিভাবকদের কাছ থেকে ষোলোআনা বুঝে নেয়া হচ্ছে। ফলে ভর্তি ও টিউশন ফি নিয়ে বছরের শুরুতেই প্রচণ্ড চাপে পড়েছেন অভিভাবকরা। ছাত্রছাত্রীদের সামনাসামনি পাঠদান না করানোয় গত বছর করোনার ৯ মাসে শিক্ষার্থীদের কয়েক মাসের টিউশন ফি মওকুফ করা হয়। কিন্তু করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরও ভর্তি বা টিউশন ফির ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হচ্ছে না। এভাবে টিউশন ফি আদায় কতটা যৌক্তিক এবং মানবিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বমহলে। এমন অবস্থায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, করোনার খেসারত দিতে হচ্ছে শুধু অভিভাবকদের। যদিও করোনাকালে পুনঃভর্তি ফি নেয়া যাবে না মর্মে গত ১৮ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) একটি সার্কুলার জারি করেছিল। সেখানে নির্দেশনা দেয়া হয় যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন এই সাতটি খাতে কোনো অর্থ গ্রহণ করতে পারবে না। বাস্তবে এই নির্দেশনার কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না। বলা যায়, ‘কাজির গরু কেতাবে আছে’। আদেশটি এই বাংলা প্রবাদের অর্থই বহন করছে, এর অন্য কোনো তাৎপর্য নেই। কৌতূহলোদ্দীপক হলো, মাউশি এখনো বলছে, পুরোনো শিক্ষার্থীদের নতুন করে ভর্তি করিয়ে তাদের কাছ থেকে পুনঃভর্তি ফি নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারো বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সবার জানা, করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন সারা দেশের নিম্নআয়ের বিপুলঅসংখ্য মানুষ। বেসরকারি সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, নতুন করে অন্তত ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। এ সঙ্কটকালেও বেতন-ফি আদায়ে অভিভাবকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে চলেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। একে অমানবিক ছাড়া অন্য কিছু বলার উপায় নেই। কারণ, দেশে করোনার প্রকোপ এখনো কমেনি। মাউশির নির্দেশনার পরও টিউশন ও ভর্তি ফি আগের মতোই আদায় চলছে। আর তা নতুন বছরের জানুয়ারির শুরু থেকেই চলছে। বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ দেখেও দেখছে না। নিজেদের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপও নিচ্ছে না। শিক্ষাবিদরা বারবার বলে আসছিলেন, কোন খাতে কত টাকা নেয়া যাবে, সেটি মাউশি নির্ধারণ করে দিতে পারত বছরের শুরুতেই। তাদের মতে, অভিভাবকরা তো জানেন না কোন শ্রেণীতে ভর্তি ফি কত আর পুনঃভর্তি ফি’ই বা কত। করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর বিষয়ে ‘মানবিক’ আচরণ করার কথা সরকার বললেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি নির্দেশনা অগ্রাহ্য করে যে অর্থ আদায় করছে; তা অবৈধ এবং অগ্রহণযোগ্য। সরকারকে মুষ্টিমেয়র স্বার্থ সংরক্ষণ না করে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যারা আর্থিক সঙ্কটে আছেন, তাদের বোঝা কমানোর বাস্তব উদ্যোগ নিতে হবে। আপদকালে অভিভাবকদের কথা বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা খাতে জরুরি বরাদ্দ বাড়িয়ে হলেও এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি-টিউশন ফি

আপলোড টাইম : ১০:২১:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ জানুয়ারী ২০২১

অভিভাবকদের কথাও ভাবুন
দেশের সব বিদ্যালয়ে বছরের শুরুতে ২০২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের নতুন করে ভর্তি ও পুনঃভর্তি চলছে। তবে পুনঃভর্তি ফি নিতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এবার কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন না করেই ‘কৌশলে’ বই বিতরণসহ অন্যান্য কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান ভর্তিতে কিছুটা ‘ধীরে চলো নীতি’ নিয়েছে। কৌশলের অংশ হিসেবে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান অভিভাবকদের কাছ থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পাওনাদি আদায় করলেও জানুয়ারিতে ভর্তি, পুনঃভর্তি বিষয়ে এখনো নোটিশ করেনি। অথচ দেশের অনেক নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাধারণত প্রতি তিন মাসের বেতন এক সাথে নিয়ে থাকে। গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, করোনার কারণে কিছু প্রতিষ্ঠান যৎসামান্য ছাড় দিলেও এই মহামারীকালেও প্রায় সব প্রতিষ্ঠান গত বছরের জানুয়ারির সমান ফি নিচ্ছে। কোনো কোনোটিতে ফির পরিমাণ আরো বাড়ানো হয়েছে। অভিভাবকদের কাছ থেকে ষোলোআনা বুঝে নেয়া হচ্ছে। ফলে ভর্তি ও টিউশন ফি নিয়ে বছরের শুরুতেই প্রচণ্ড চাপে পড়েছেন অভিভাবকরা। ছাত্রছাত্রীদের সামনাসামনি পাঠদান না করানোয় গত বছর করোনার ৯ মাসে শিক্ষার্থীদের কয়েক মাসের টিউশন ফি মওকুফ করা হয়। কিন্তু করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরও ভর্তি বা টিউশন ফির ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হচ্ছে না। এভাবে টিউশন ফি আদায় কতটা যৌক্তিক এবং মানবিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বমহলে। এমন অবস্থায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, করোনার খেসারত দিতে হচ্ছে শুধু অভিভাবকদের। যদিও করোনাকালে পুনঃভর্তি ফি নেয়া যাবে না মর্মে গত ১৮ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) একটি সার্কুলার জারি করেছিল। সেখানে নির্দেশনা দেয়া হয় যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন এই সাতটি খাতে কোনো অর্থ গ্রহণ করতে পারবে না। বাস্তবে এই নির্দেশনার কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না। বলা যায়, ‘কাজির গরু কেতাবে আছে’। আদেশটি এই বাংলা প্রবাদের অর্থই বহন করছে, এর অন্য কোনো তাৎপর্য নেই। কৌতূহলোদ্দীপক হলো, মাউশি এখনো বলছে, পুরোনো শিক্ষার্থীদের নতুন করে ভর্তি করিয়ে তাদের কাছ থেকে পুনঃভর্তি ফি নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারো বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সবার জানা, করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন সারা দেশের নিম্নআয়ের বিপুলঅসংখ্য মানুষ। বেসরকারি সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, নতুন করে অন্তত ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। এ সঙ্কটকালেও বেতন-ফি আদায়ে অভিভাবকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে চলেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। একে অমানবিক ছাড়া অন্য কিছু বলার উপায় নেই। কারণ, দেশে করোনার প্রকোপ এখনো কমেনি। মাউশির নির্দেশনার পরও টিউশন ও ভর্তি ফি আগের মতোই আদায় চলছে। আর তা নতুন বছরের জানুয়ারির শুরু থেকেই চলছে। বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ দেখেও দেখছে না। নিজেদের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপও নিচ্ছে না। শিক্ষাবিদরা বারবার বলে আসছিলেন, কোন খাতে কত টাকা নেয়া যাবে, সেটি মাউশি নির্ধারণ করে দিতে পারত বছরের শুরুতেই। তাদের মতে, অভিভাবকরা তো জানেন না কোন শ্রেণীতে ভর্তি ফি কত আর পুনঃভর্তি ফি’ই বা কত। করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর বিষয়ে ‘মানবিক’ আচরণ করার কথা সরকার বললেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি নির্দেশনা অগ্রাহ্য করে যে অর্থ আদায় করছে; তা অবৈধ এবং অগ্রহণযোগ্য। সরকারকে মুষ্টিমেয়র স্বার্থ সংরক্ষণ না করে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যারা আর্থিক সঙ্কটে আছেন, তাদের বোঝা কমানোর বাস্তব উদ্যোগ নিতে হবে। আপদকালে অভিভাবকদের কথা বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা খাতে জরুরি বরাদ্দ বাড়িয়ে হলেও এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।