ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

ধর্ষণ মহামারির ভ্যাকসিন কোথায়?

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:১৪:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২১
  • / ১৭৮ বার পড়া হয়েছে

চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াসের কাছে তার এক শিষ্য জানতে চেয়েছিলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক উপাদানগুলো কি কি?’ জবাবে কনফুসিয়াস বলেন, ‘খাদ্য, নিরাপত্তা এবং জনগণের আস্থা অর্জন’। শিষ্য পুনরায় জানতে চাইল, ‘দুর্যোগ মুহূর্তে জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রকে যদি কোনো কিছু উৎসর্গ করতে হয়, তবে সেটি কি?’ কনফুসিয়াস উত্তরে বলেন, ‘খাদ্য বা নিরাপত্তা যদি বিসর্জন দিতেও হয়, তবুও জনগণের আস্থা যেন কখনও না হারায়।’ আমাদের দেশে বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থার সংকট দৃশমান। সমাজে বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ বর্তমানে মহামারির আকার ধারণ করেছে; যার দাবানলে সারা দেশ আজ প্রকম্পিত হচ্ছে। শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী, মাঝবয়সি, বৃদ্ধা, প্রতিবন্ধী, অন্তঃসত্ত্বা, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, চাকরিজীবী, গৃহবধূ, আধুনিকা, হিজাবি এমনকি ছয় সন্তানের জননীও ধর্ষক নামক সমাজের নিকৃষ্ট কীটগুলোর বিকৃত যৌন হামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। মানুষরূপী এই জানোয়ারদের দাপটে ক্রমান্বয়ে অদৃশ্য হচ্ছে সমাজের মূল্যবোধ। প্রতিদিন যেন আগের দিনের সঙ্গে পালস্না দিয়ে এসব ধর্ষণ নির্যাতন বৃদ্ধি পাচ্ছে; আর একই সঙ্গে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দেশে ১ হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আগের বছর ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭৩২ জন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে ধর্ষণের ঘটনা দ্বিগুণ বেড়েছে। এমনকি এই করোনা দুর্যোগেও নারী ও শিশু নির্যাতন থেমে নেই। সার্বিকভাবে যে সব পরিসংখ্যান উঠে আসছে তা সমাজে যৌননিপীড়ন ও ধর্ষণসহ নারীর প্রতি নানারকম সহিংসতার ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরছে। রাজনীতি-পরিচয়কে অপরাধের অস্ত্র ও শাস্তি ঠেকানোর ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মাদক ব্যবসা, অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অর্থপাচার, খুন, রাহাজানি আর সন্ত্রাসের নরক রাজ্য গড়ার অসংখ্য নজির আলোচনায় এসেছে। দেখেছি, যুগে যুগে সরকারপন্থি ছাত্রদের একাংশ ছাত্র না হয়ে গুন্ডা হয়, ধর্ষক হয়, ডাকাত হয়। কেন হয়? দায়মুক্তির সুযোগ থাকায় হয়। পেশির জোরের কারণে হয়। তারা জানে, পুলিশ, আইন, বিচার প্রভৃতি সবকিছুই তাদের ক্ষমতার কাছে নতজানু। ধর্ষণের কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের খবর যত বেশি পাওয়া যায়, এ সব অপরাধের দায়ে অপরাধীর শাস্তির দৃষ্টান্ত এর চেয়ে কম। কী করলে ধর্ষণের সংখ্যা কমিয়ে আনা যায়? সে আলোচনার গোড়াতেই ঝাড়ু-বোলানো কথাগুলো বাদ দেওয়া দরকার। ‘সমাজ না বদলালে অবস্থা বদলাবে না’ আর ‘কোনো দিন ধর্ষণ কমবে না’ এ দুটো একই কথা। দার্শনিক ইম্যানুয়েল কান্ট বলেছিলেন, হাড়-শয়তানদের সমাজেও সুশাসন সম্ভব। এই সমাজেও ধর্ষণ কমানো যাবে, যদি যথাযথ বিধিব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। তাই ধর্ষণসহ সব ধরনের সহিংস অপরাধের রাস টেনে ধরার জন্য প্রথম কর্তব্য এ সব অপরাধের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে গতি সঞ্চার করা। একটির পর একটি ধর্ষণের খবরের সমান্তরালে যদি একটির পর একটি শাস্তির খবরও নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ধর্ষণপ্রবণতা হ্রাস পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

ধর্ষণ মহামারির ভ্যাকসিন কোথায়?

আপলোড টাইম : ১১:১৪:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২১

চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াসের কাছে তার এক শিষ্য জানতে চেয়েছিলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক উপাদানগুলো কি কি?’ জবাবে কনফুসিয়াস বলেন, ‘খাদ্য, নিরাপত্তা এবং জনগণের আস্থা অর্জন’। শিষ্য পুনরায় জানতে চাইল, ‘দুর্যোগ মুহূর্তে জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রকে যদি কোনো কিছু উৎসর্গ করতে হয়, তবে সেটি কি?’ কনফুসিয়াস উত্তরে বলেন, ‘খাদ্য বা নিরাপত্তা যদি বিসর্জন দিতেও হয়, তবুও জনগণের আস্থা যেন কখনও না হারায়।’ আমাদের দেশে বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থার সংকট দৃশমান। সমাজে বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ বর্তমানে মহামারির আকার ধারণ করেছে; যার দাবানলে সারা দেশ আজ প্রকম্পিত হচ্ছে। শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী, মাঝবয়সি, বৃদ্ধা, প্রতিবন্ধী, অন্তঃসত্ত্বা, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, চাকরিজীবী, গৃহবধূ, আধুনিকা, হিজাবি এমনকি ছয় সন্তানের জননীও ধর্ষক নামক সমাজের নিকৃষ্ট কীটগুলোর বিকৃত যৌন হামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। মানুষরূপী এই জানোয়ারদের দাপটে ক্রমান্বয়ে অদৃশ্য হচ্ছে সমাজের মূল্যবোধ। প্রতিদিন যেন আগের দিনের সঙ্গে পালস্না দিয়ে এসব ধর্ষণ নির্যাতন বৃদ্ধি পাচ্ছে; আর একই সঙ্গে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দেশে ১ হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আগের বছর ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭৩২ জন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে ধর্ষণের ঘটনা দ্বিগুণ বেড়েছে। এমনকি এই করোনা দুর্যোগেও নারী ও শিশু নির্যাতন থেমে নেই। সার্বিকভাবে যে সব পরিসংখ্যান উঠে আসছে তা সমাজে যৌননিপীড়ন ও ধর্ষণসহ নারীর প্রতি নানারকম সহিংসতার ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরছে। রাজনীতি-পরিচয়কে অপরাধের অস্ত্র ও শাস্তি ঠেকানোর ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মাদক ব্যবসা, অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অর্থপাচার, খুন, রাহাজানি আর সন্ত্রাসের নরক রাজ্য গড়ার অসংখ্য নজির আলোচনায় এসেছে। দেখেছি, যুগে যুগে সরকারপন্থি ছাত্রদের একাংশ ছাত্র না হয়ে গুন্ডা হয়, ধর্ষক হয়, ডাকাত হয়। কেন হয়? দায়মুক্তির সুযোগ থাকায় হয়। পেশির জোরের কারণে হয়। তারা জানে, পুলিশ, আইন, বিচার প্রভৃতি সবকিছুই তাদের ক্ষমতার কাছে নতজানু। ধর্ষণের কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের খবর যত বেশি পাওয়া যায়, এ সব অপরাধের দায়ে অপরাধীর শাস্তির দৃষ্টান্ত এর চেয়ে কম। কী করলে ধর্ষণের সংখ্যা কমিয়ে আনা যায়? সে আলোচনার গোড়াতেই ঝাড়ু-বোলানো কথাগুলো বাদ দেওয়া দরকার। ‘সমাজ না বদলালে অবস্থা বদলাবে না’ আর ‘কোনো দিন ধর্ষণ কমবে না’ এ দুটো একই কথা। দার্শনিক ইম্যানুয়েল কান্ট বলেছিলেন, হাড়-শয়তানদের সমাজেও সুশাসন সম্ভব। এই সমাজেও ধর্ষণ কমানো যাবে, যদি যথাযথ বিধিব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। তাই ধর্ষণসহ সব ধরনের সহিংস অপরাধের রাস টেনে ধরার জন্য প্রথম কর্তব্য এ সব অপরাধের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে গতি সঞ্চার করা। একটির পর একটি ধর্ষণের খবরের সমান্তরালে যদি একটির পর একটি শাস্তির খবরও নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ধর্ষণপ্রবণতা হ্রাস পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।