১৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠক আজ মূলধন ঘাটতিতে চলতে পারছে না ৫ ব্যাংক আর্থিক কেলেঙ্কারি ও খেলাপি ঋণের কারণেই ব্যাংকগুলোতে মূলধন ঘাটতি
- আপলোড টাইম : ০৫:০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মার্চ ২০১৭
- / ৪২৯ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলো চরমভাবে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। সোনালী, বেসিক, কৃষিসহ পাঁচ ব্যাংকেরই মূলধন ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতির কারণে সরকার এর আগে ৮ হাজার কোটি টাকা নগদ দিয়েছে সাত ব্যাংককে। এ ব্যাংকগুলোই আবার নতুন কৌশলে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা দাবি করছে। এবারের দাবি নগদ টাকা নয়, বন্ড। আজ রোববার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ নিয়ে বিশেষ বৈঠক করবেন। রাষ্ট্র মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ও দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণের বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত’ শীর্ষক বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ব্যাংকগুলো হচ্ছে সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। মূলত বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি ও খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারার কারণেই ব্যাংকগুলোতে মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যেই সোনালী, জনতা ও বেসিক ব্যাংক থেকে বেরিয়ে গেছে ১২ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে রূপালী, অগ্রণী ব্যাংকসহ বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর দুর্নীতির তথ্যও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন তদন্তে উঠে আসে। এরপরের তিন বছরে (২০১৪ থেকে ২০১৬) সরকার সোনালী, বেসিক, জনতাসহ সাত ব্যাংককে ৭ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা দিয়েছে। এগুলো দেওয়া হয়েছে কখনো মূলধন ঘাটতি পূরণ, কখনোবা মূলধন পুনর্গঠন বা মূলধন পুনর্ভরণের নামে। এরপরও নতুন করে বেসিক, জনতা ও রূপালী ব্যাংক আরও ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা চেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ এ নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, দুর্নীতি, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনাগত অদক্ষতার কারণেই ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বের হয়ে গেল। এরপর সরকারের তহবিল থেকে টাকাও দেওয়া হলো। আমার মনে হয়, ব্যাংকগুলোর অভ্যাস খারাপ করে দেওয়া হচ্ছে। তারা মনে করছে যে, যা-ই করি না কেন, সরকার তো দিচ্ছেই। এবিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বলেন আজ রোববার বৈঠক হচ্ছে এর বাইরে আর কিছুই বলতে চাননি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য বেসিক, জনতা, রূপালী এবং গ্রামীণ ব্যাংক ৪ হাজার ১৪১ কোটি ২২ লাখ টাকার বন্ড ছাড়ার অনুমতি চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। এর মধ্যে বেসিক ব্যাংকের একারই চাওয়া ২০ বছর মেয়াদি ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ‘রি-ক্যাপিটালাইজেশন বন্ড’। আর সাত বছর মেয়াদি ‘সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড’ চায় জনতা ও রূপালী ব্যাংক। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকের চাওয়া ১ হাজার কোটি ও রূপালী ব্যাংক চায় ৫০০ কোটি টাকার বন্ড। অন্যদিকে মূলধনে সরকারি শেয়ার এক-চতুর্থাংশ বজায় রাখার জন্য গ্রামীণ ব্যাংক মাত্র ২২ লাখ টাকার বন্ড ছাড়তে চেয়েছে। বেসিক ও রূপালী ব্যাংক আবেদনে ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়ন এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যবসা করার জন্য অর্থ প্রয়োজনের কথা বলেছে। কেননা মূলধন ঘাটতি থাকায় তারা ব্যবসা করতে পারছে না। বিসমিল্লাহ গ্রুপের কেলেঙ্কারির পর জনতা ব্যাংককে ৮১৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাংকের এখন মূলধন ঘাটতি নেই। তারপরও ১ হাজার কোটি টাকার বন্ড চেয়েছে জনতা ব্যাংক। বেসিক ব্যাংকের বিতর্কিত চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর নেতৃত্বাধীন কয়েক বছর ধরে চলা দুর্নীতি ও লুটপাটের পর ব্যাংকটিকে সরকার দিয়েছে ২ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ মনে করে, দীর্ঘদিন রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো মুনাফা অর্জনের ধারায় নেই, ফলে এ উপায় আপাতত বিবেচনা করার কোনো সুযোগ নেই। তবে ভালো উপায় হচ্ছে খেলাপি ঋণ কমিয়ে প্রভিশন ঘাটতি কমানো। কিন্তু ব্যাংকগুলোর এ ব্যাপারেও সাফল্য নেই। মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলো বন্ড ছাড়তে পারে কি না? এবিষয়ে জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের উচিত হবে ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ আদায়ে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেওয়া।