বিজিবি-বিএসএফ সংবাদ সম্মেলন সীমান্ত হত্যায় যৌথ তদন্ত হবে না
- আপলোড টাইম : ০৪:৪৯:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
- / ৩৩৬ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক: সীমান্তে হত্যার ক্ষেত্রে যৌথ তদন্তের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের ৪৪তম সীমান্ত সম্মেলন শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে গত বছরের মে মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ৪২তম সীমান্ত সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ঘটে যাওয়া প্রতিটি হত্যাকা- তদন্তে বিজিবি ও বিএসএফের যৌথ তদন্ত দল কাজ করবে।
তবে গতকাল দেওয়া যৌথ প্রেস বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যাকা- বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ক্ষেত্রে বিজিবি ও বিএসএফ যৌথভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, শনাক্তকরণ ও মূল্যায়নের কাজ করতে সম্মত হয়েছে।
৪২তম সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যৌথ তদন্ত থেকে সরে এসে কেন এখন যৌথ পরিদর্শন ও মূল্যায়নের কথা বলা হচ্ছে, জানতে চাইলে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কোনো ঘটনা তদন্তের দায়িত্বটি পুলিশের। বিজিবির বা বিএসএফ—কারও ওসব ঘটনা তদন্তের এখতিয়ার নেই। তাই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আত্মরক্ষার্থে গুলি করে বিএসএফ
যৌথ সংবাদ বিবৃতিতে বিএসএফের মহাপরিচালক কে কে শর্মা বলেছেন, প্রাণঘাতী নয় (নন-লেথাল), এমন অস্ত্র ব্যবহারের ফলে সীমান্তে মৃত্যুর ঘটনা কমিয়ে আনা গেলেও বিএসএফ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। কেবল আত্মরক্ষার্থে নন-লেথাল অস্ত্র দিয়ে ফায়ার করেন বিএসএফ সদস্যরা। সীমান্তে মৃত্যু বন্ধ করতে পশু ও মাদক চোরাচালানপ্রবণ এলাকায় যৌথ টহল ও সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ যৌথভাবে করতে সম্মত হয়েছে উভয় পক্ষ। ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর বাংলাদেশে সম্ভাব্য অবস্থান ধ্বংসে বিজিবির সাহায্য চেয়েছেন বিএসএফের মহাপরিচালক। জবাবে বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কোনো ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর ক্যাম্প বা অবস্থান নেই।
আন্তসীমান্ত অপরাধ, মাদক-অস্ত্রসহ অবৈধ চোরাচালান বন্ধে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিয়েছে উভয় পক্ষ। বিশেষ করে অস্ত্র ও গোলাবারুদ চোরাচালানের বিষয়ে উভয় মহাপরিচালকই উদ্বেগ প্রকাশ করে তা বন্ধে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। ভারতের কারাগার ও সংশোধন কেন্দ্রগুলোতে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে ফেরত পাঠাতে জাতীয়তা যাচাইয়ের কাজ ত্বরান্বিত করার তাগাদা দিয়েছেন বিএসএফের মহাপরিচালক কে কে শর্মা। জবাবে বিজিবির মহাপরিচালক ভুক্তভোগী বাংলাদেশিদের নাম-পরিচয়সহ যাবতীয় তথ্য দ্রুত পাঠানোর অনুরোধ করেছেন, যাতে তাঁদের দ্রুত দেশে ফেরত আনা যায়। এ ছাড়া আস্থা সৃষ্টির অংশ হিসেবে দুই পক্ষ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যৌথ অনুশীলন ও প্রশিক্ষণ, পর্বতারোহণ, সাইক্লিং ইত্যাদি। এ ছাড়া বিজিবি সদস্যদের যোগব্যায়াম শেখাবেন বিএসএফের পুরুষ ও নারী সদস্যরা। এর বাইরে উভয় বাহিনীর মধ্যে সফর বিনিময়ে সম্মত হয়েছে দুপক্ষই। ভারতে চিকিৎসা ও প্রকৌশলে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী বিজিবি সদস্যদের সন্তানদের বৃত্তিও দেবে বিএসএফ।
সম্মেলনে বিজিবির মহাপরিচালক বাংলাদেশের ২৮ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। বিএসএফের মহাপরিচালক কে কে শর্মার নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল ওই সম্মেলনে অংশ নেয়। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক, বিজিবি সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, সার্ভে অব বাংলাদেশ এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছেন।