ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

অধিকার পেলে মিয়ানমারে ফিরে যাবেন রোহিঙ্গারা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০১:৩৩:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী ২০১৭
  • / ৫৮৩ বার পড়া হয়েছে

image_1798_276143সমীকরণ ডেস্ক: কফি আনান কমিশনের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল সোমবার কক্সবাজারের উখিয়ার দুটি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন। এ সময় কমিশনের সদস্যদের রোহিঙ্গারা জানান, মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি। সফরের দ্বিতীয় দিন সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে যান। এরপর তারা পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে স্থাপিত কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরও পরিদর্শন করেন। সেখানে দুই ঘণ্টা অবস্থানকালে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ১১ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেন। পরিদর্শনের সময় রোহিঙ্গারা নানা দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড-পোস্টার দেখিয়ে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধের দাবি জানান। এই দুটি শিবিরে অবস্থান করছেন অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গা। এর মধ্যে অন্তত ৪০ হাজার রোহিঙ্গা সদ্য অনুপ্রবেশকারী। প্রতিনিধি দলের তিন সদস্য হলেন মিয়ানমারের নাগরিক উইন ম্রা ও আই লুইন এবং লেবাননের নাগরিক ঘাশান সালামে। তাদের সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়রে যুগ্ম সচিব বাকী বিল্লাহ, জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, শরণার্থী-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও আইএমওর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার ব্যক্তিরা। কুতুপালং নিবন্ধিত শরণার্থীশিবিরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন আনান কমিশন। এ সময় কমিশনের কাছে রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মৌলভী আলি আহমদ, বস্নক পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাফর আলম, নুরুল হক ও মো. ইউনুছ। এ সময় রোহিঙ্গারা গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত রাখাইন রাজ্যে সেনা নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী অত্যাচার ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে একটি চিঠি আনান কমিশনের প্রতিনিধি দলের কাছে হস্তান্তর করে। ওই চিঠিতে এলাকা, স্থান ও সময় উল্লেখ করে বলা হয়, ‘অপারেশন ক্লিজিং’ নামে রাখাইন রাজ্যে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০টি মসজিদ, ৫৪টি ধর্মীয় স্কুল ও তিন হাজার ৩২৯টি ঘরবাড়ি, ১৯৬টি দোকানে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করে ধ্বংস করা হয়। এ ছাড়া ৭৯৮ জন নারী ও কিশোরীকে ধর্ষণ, ৪৬৯ জনকে গুলি করে হত্যা, ১০৮ জনকে নির্যাতন চালিয়ে খুন, ৭৮ জনকে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা এবং ৯২০ জনকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালানো হয়। এর সত্যতা নিশ্চিত করে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক বলেন, এ সময় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গা মুসলিমদের মিয়ানমার ফিরে যাবে কি না জানতে চান। উত্তরে রোহিঙ্গারা বলে, আরাকানের (রাখাইন রাজ্য) স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরলে ও ন্যূনতম মৌলিক অধিকারগুলো পেলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি। এরপর কমিশনের সদস্যরা জানতে চান, বাংলাদেশে তারা কেমন আছে? জবাবে রোহিঙ্গারা বলে, নানা সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বাংলাদেশ সরকার ও স্থানীয় জনগণ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু শিবিরে খাদ্যদ্রব্যের মারাত্মক সংকট চলছে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দরকার। কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের সময়ও আনান কমিশনের সদস্যদের কাছে সহায় সম্বলহীন অবস্থায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্যে সেনা ও পুলিশের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরেন। রাখাইন রাজ্যের গজরবিলের মো. রফিক (৪০) বলেন, গত ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা তাদের গ্রামটি ঘিরে গুলিবর্ষণ শুরু করে। ঘরবাড়িতে লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দেয়া দেয়। হাতিয়ারপাড়ার নুরুল আলম (৩৫) বলেন, সেনারা তার দুই ভাইকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। প্রাণ বাঁচাতে তারা উখিয়া পালিয়ে আসেন। নাইছাপ্রু গ্রামের ৩৫ বছর বয়সী এক গৃহবধূ বলেন, রাখাইন রাজ্যে সেনারা তার হাত-পা বেঁধে পুকুর পাড়ে ধর্ষণ করে। নিকট আত্মীয়রা উদ্ধার করে তাকে উখিয়ায় নিয়ে আসেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

অধিকার পেলে মিয়ানমারে ফিরে যাবেন রোহিঙ্গারা

আপলোড টাইম : ০১:৩৩:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী ২০১৭

image_1798_276143সমীকরণ ডেস্ক: কফি আনান কমিশনের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল সোমবার কক্সবাজারের উখিয়ার দুটি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন। এ সময় কমিশনের সদস্যদের রোহিঙ্গারা জানান, মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি। সফরের দ্বিতীয় দিন সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে যান। এরপর তারা পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে স্থাপিত কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরও পরিদর্শন করেন। সেখানে দুই ঘণ্টা অবস্থানকালে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ১১ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেন। পরিদর্শনের সময় রোহিঙ্গারা নানা দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড-পোস্টার দেখিয়ে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধের দাবি জানান। এই দুটি শিবিরে অবস্থান করছেন অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গা। এর মধ্যে অন্তত ৪০ হাজার রোহিঙ্গা সদ্য অনুপ্রবেশকারী। প্রতিনিধি দলের তিন সদস্য হলেন মিয়ানমারের নাগরিক উইন ম্রা ও আই লুইন এবং লেবাননের নাগরিক ঘাশান সালামে। তাদের সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়রে যুগ্ম সচিব বাকী বিল্লাহ, জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, শরণার্থী-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও আইএমওর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার ব্যক্তিরা। কুতুপালং নিবন্ধিত শরণার্থীশিবিরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন আনান কমিশন। এ সময় কমিশনের কাছে রাখাইন রাজ্যে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মৌলভী আলি আহমদ, বস্নক পরিচালনা কমিটির সভাপতি জাফর আলম, নুরুল হক ও মো. ইউনুছ। এ সময় রোহিঙ্গারা গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত রাখাইন রাজ্যে সেনা নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী অত্যাচার ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে একটি চিঠি আনান কমিশনের প্রতিনিধি দলের কাছে হস্তান্তর করে। ওই চিঠিতে এলাকা, স্থান ও সময় উল্লেখ করে বলা হয়, ‘অপারেশন ক্লিজিং’ নামে রাখাইন রাজ্যে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০টি মসজিদ, ৫৪টি ধর্মীয় স্কুল ও তিন হাজার ৩২৯টি ঘরবাড়ি, ১৯৬টি দোকানে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করে ধ্বংস করা হয়। এ ছাড়া ৭৯৮ জন নারী ও কিশোরীকে ধর্ষণ, ৪৬৯ জনকে গুলি করে হত্যা, ১০৮ জনকে নির্যাতন চালিয়ে খুন, ৭৮ জনকে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা এবং ৯২০ জনকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালানো হয়। এর সত্যতা নিশ্চিত করে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক বলেন, এ সময় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গা মুসলিমদের মিয়ানমার ফিরে যাবে কি না জানতে চান। উত্তরে রোহিঙ্গারা বলে, আরাকানের (রাখাইন রাজ্য) স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরলে ও ন্যূনতম মৌলিক অধিকারগুলো পেলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি। এরপর কমিশনের সদস্যরা জানতে চান, বাংলাদেশে তারা কেমন আছে? জবাবে রোহিঙ্গারা বলে, নানা সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বাংলাদেশ সরকার ও স্থানীয় জনগণ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু শিবিরে খাদ্যদ্রব্যের মারাত্মক সংকট চলছে। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দরকার। কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের সময়ও আনান কমিশনের সদস্যদের কাছে সহায় সম্বলহীন অবস্থায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্যে সেনা ও পুলিশের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরেন। রাখাইন রাজ্যের গজরবিলের মো. রফিক (৪০) বলেন, গত ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা তাদের গ্রামটি ঘিরে গুলিবর্ষণ শুরু করে। ঘরবাড়িতে লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দেয়া দেয়। হাতিয়ারপাড়ার নুরুল আলম (৩৫) বলেন, সেনারা তার দুই ভাইকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। প্রাণ বাঁচাতে তারা উখিয়া পালিয়ে আসেন। নাইছাপ্রু গ্রামের ৩৫ বছর বয়সী এক গৃহবধূ বলেন, রাখাইন রাজ্যে সেনারা তার হাত-পা বেঁধে পুকুর পাড়ে ধর্ষণ করে। নিকট আত্মীয়রা উদ্ধার করে তাকে উখিয়ায় নিয়ে আসেন।