ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

৩ বছরের গ্যারান্টির রাস্তা এক বছরেই নষ্ট!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:৪৩:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ ২০২১
  • / ৬৩ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:
ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ‘তিন বছরের গ্যারান্টি দিয়ে বিশ্বমানের রাস্তা, পদ্মা সেতুর মতো মজবুত, ৭-৮ বছর স্থায়ী হবে’ ইত্যাদি সব প্রতিশ্রুতির বাণী ও চটকদার বক্তব্য দিয়ে তৈরি করা ২০ কোটি ৮৫ লাখ টাকার রাস্তা বছর না ঘুরতেই নষ্ট হতে শুরু হয়েছে। ঠিকাদারের নিয়ন্ত্রণে থাকা রাস্তাটি এখন ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ গাঁটির টাকা ব্যয় করে মেরামত করছে।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের আরাপপুর থেকে শেখপাড়া বাজার পর্যন্ত ৯.৫৫ কিলোমিটার এবং আরাপপুর ব্রিজ এপ্রোজ থেকে আল হেরা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ৪.২২৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব পায় আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন। প্রতিষ্ঠানটি ২০ কোটি ৮৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ব্যয়ে এই সড়কটি নির্মাণ করে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে এই নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনার ঢেউ শুরু হলে কাজ বন্ধ রাখে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। পরে কিছু কাজ করলেও ৫ কিলোমিটার রাস্তার কাজ না করে চলে যায়।
ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের এসডি মুকুল জ্যোতি বসু জানান, বিভিন্ন কিলোমিটারে যে কাজ ফেলে রাখা হয়েছে, তার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। বিশেষ করে শৈলকুপার ভাটই ও শেখপাড়া অংশে চরম দুরাবস্থা বিরাজ করছে। তিনি বলেন, কাজ অসমাপ্ত রেখে গত এক বছর আগেই ‘আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন’ চলে গেছে। তাদেরকে বহু চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠির জবাব পর্যন্ত দেয়নি। ফলে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় বাধ্য হয়ে আমরা ভাঙাচোরা রাস্তা মেরামত করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখছি।
এদিকে গত কয়েক মাস ধরেই ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের এসও গোলাম সারোয়ার ঠিকাদারের নিয়ন্ত্রণে থাকা রাস্তা মেরামত করে যাচ্ছেন। ঝিনাইদহ শহরের হামদহ ট্রাক টার্মিনাল এলাকার নতুন নির্মিত রাস্তার সাইট উঠিয়ে মেরামত করা হয়েছে। এসব রাস্তা তিন বছরের গ্যারান্টি দিয়ে করেছিল আবেদ মনছুর কনস্ট্রাকশন। অথচ ওই রাস্তা ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ গাঁটির টাকা ব্যয় করে ঠিকাদারের নিয়ন্ত্রণে থাকাবস্থায় মেরামত করেছে। এছাড়া নওগাঁর মেসার্স আমিনুল ইসলাম কনস্ট্রাকশনের নির্মিত নতুন রাস্তাটিও ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের যশোর-ট-১৩৬ নাম্বারের গাড়ি দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। এসও গোলাম সারোয়ারের নির্দেশে আল হেরা স্কুল থেকে লাউদিয়া, যুব উন্নয়ন অফিস ও মুক্তিযোদ্ধা মসিউর রহমান কলেজ পর্যন্ত মেরামত করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে এসও গোলাম সারোয়ার জানান, ঠিকাদার তো লাপাত্তা। তাদের বহুবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা চিঠির কোনো জবাব দেয় না। তাই রাস্তা ঠিক রাখতে সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে মেরামত করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন’ কাজ ফেলে রেখে চলে গেছে। অনেক পয়েন্টে তারা কাজ করেনি। তাদেরকে প্রচুর চিঠি দেওয়া হয়েছে, কোনো জবাব নেই। তিনি বলেন, প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে আমরা তাদের পেনাল্টি করার চিন্তা করছি। কারণ তাদের জমানত রয়েছে। সেই টাকা থেকে এখনকার মেরামতের ব্যয় কেটে রাখা হবে।
এ ব্যাপারে ‘আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন’-এর প্রজেক্ট ম্যানেজার এ এ মামুন খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, একটি কাজ করলে নষ্ট তো হতেই পারে। নষ্ট হলে আমরাই করে দেব। কিন্তু আমাদের তো সেটা জানাতে হবে। তিনি বলেন, ঝিনাইদহ সওজ বিভাগ আমাদের যে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে তা আমরা পায়নি। মেরামতের সময় কেন বলেছিলেন ৩ বছরের গ্যারান্টির কথা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখুন আমি এখন আর আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন গ্রুপে নেই। নতুন প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছি। তাই কে কী বলেছিল, তা আমার অজানা।’
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহে এই প্রকল্প শুরু হলে আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন’-এর মালিকানাধীন বাংলাদেশ টাইমস (অনলাইন) পত্রিকায় ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর ‘ঝিনাইদহে তিন বছরের গ্যারান্টি দিয়ে সড়ক নির্মাণ এবং যুগান্তর পত্রিকায় ২০১৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর ৩ বছরের গ্যারান্টি দিয়ে সড়কের কাজ! শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা তিন বছরের গ্যারান্টি দিয়ে বিশ্বমানের রাস্তা, পদ্মা সেতুর মতো মজবুত, ৭/৮ বছর স্থায়ী হবে ইত্যাদি সব প্রতিশ্রুতির বাণী ও চটকদার বক্তব্য দিয়ে বাহবা কুড়ান।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

৩ বছরের গ্যারান্টির রাস্তা এক বছরেই নষ্ট!

আপলোড টাইম : ১২:৪৩:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ ২০২১

ঝিনাইদহ অফিস:
ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ‘তিন বছরের গ্যারান্টি দিয়ে বিশ্বমানের রাস্তা, পদ্মা সেতুর মতো মজবুত, ৭-৮ বছর স্থায়ী হবে’ ইত্যাদি সব প্রতিশ্রুতির বাণী ও চটকদার বক্তব্য দিয়ে তৈরি করা ২০ কোটি ৮৫ লাখ টাকার রাস্তা বছর না ঘুরতেই নষ্ট হতে শুরু হয়েছে। ঠিকাদারের নিয়ন্ত্রণে থাকা রাস্তাটি এখন ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ গাঁটির টাকা ব্যয় করে মেরামত করছে।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের আরাপপুর থেকে শেখপাড়া বাজার পর্যন্ত ৯.৫৫ কিলোমিটার এবং আরাপপুর ব্রিজ এপ্রোজ থেকে আল হেরা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ৪.২২৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব পায় আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন। প্রতিষ্ঠানটি ২০ কোটি ৮৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ব্যয়ে এই সড়কটি নির্মাণ করে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে এই নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনার ঢেউ শুরু হলে কাজ বন্ধ রাখে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। পরে কিছু কাজ করলেও ৫ কিলোমিটার রাস্তার কাজ না করে চলে যায়।
ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের এসডি মুকুল জ্যোতি বসু জানান, বিভিন্ন কিলোমিটারে যে কাজ ফেলে রাখা হয়েছে, তার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। বিশেষ করে শৈলকুপার ভাটই ও শেখপাড়া অংশে চরম দুরাবস্থা বিরাজ করছে। তিনি বলেন, কাজ অসমাপ্ত রেখে গত এক বছর আগেই ‘আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন’ চলে গেছে। তাদেরকে বহু চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠির জবাব পর্যন্ত দেয়নি। ফলে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় বাধ্য হয়ে আমরা ভাঙাচোরা রাস্তা মেরামত করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখছি।
এদিকে গত কয়েক মাস ধরেই ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের এসও গোলাম সারোয়ার ঠিকাদারের নিয়ন্ত্রণে থাকা রাস্তা মেরামত করে যাচ্ছেন। ঝিনাইদহ শহরের হামদহ ট্রাক টার্মিনাল এলাকার নতুন নির্মিত রাস্তার সাইট উঠিয়ে মেরামত করা হয়েছে। এসব রাস্তা তিন বছরের গ্যারান্টি দিয়ে করেছিল আবেদ মনছুর কনস্ট্রাকশন। অথচ ওই রাস্তা ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ গাঁটির টাকা ব্যয় করে ঠিকাদারের নিয়ন্ত্রণে থাকাবস্থায় মেরামত করেছে। এছাড়া নওগাঁর মেসার্স আমিনুল ইসলাম কনস্ট্রাকশনের নির্মিত নতুন রাস্তাটিও ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের যশোর-ট-১৩৬ নাম্বারের গাড়ি দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। এসও গোলাম সারোয়ারের নির্দেশে আল হেরা স্কুল থেকে লাউদিয়া, যুব উন্নয়ন অফিস ও মুক্তিযোদ্ধা মসিউর রহমান কলেজ পর্যন্ত মেরামত করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে এসও গোলাম সারোয়ার জানান, ঠিকাদার তো লাপাত্তা। তাদের বহুবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা চিঠির কোনো জবাব দেয় না। তাই রাস্তা ঠিক রাখতে সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে মেরামত করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন’ কাজ ফেলে রেখে চলে গেছে। অনেক পয়েন্টে তারা কাজ করেনি। তাদেরকে প্রচুর চিঠি দেওয়া হয়েছে, কোনো জবাব নেই। তিনি বলেন, প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে আমরা তাদের পেনাল্টি করার চিন্তা করছি। কারণ তাদের জমানত রয়েছে। সেই টাকা থেকে এখনকার মেরামতের ব্যয় কেটে রাখা হবে।
এ ব্যাপারে ‘আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন’-এর প্রজেক্ট ম্যানেজার এ এ মামুন খানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, একটি কাজ করলে নষ্ট তো হতেই পারে। নষ্ট হলে আমরাই করে দেব। কিন্তু আমাদের তো সেটা জানাতে হবে। তিনি বলেন, ঝিনাইদহ সওজ বিভাগ আমাদের যে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে তা আমরা পায়নি। মেরামতের সময় কেন বলেছিলেন ৩ বছরের গ্যারান্টির কথা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখুন আমি এখন আর আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন গ্রুপে নেই। নতুন প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছি। তাই কে কী বলেছিল, তা আমার অজানা।’
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহে এই প্রকল্প শুরু হলে আবেদ মনসুর কনস্ট্রাকশন’-এর মালিকানাধীন বাংলাদেশ টাইমস (অনলাইন) পত্রিকায় ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর ‘ঝিনাইদহে তিন বছরের গ্যারান্টি দিয়ে সড়ক নির্মাণ এবং যুগান্তর পত্রিকায় ২০১৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর ৩ বছরের গ্যারান্টি দিয়ে সড়কের কাজ! শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা তিন বছরের গ্যারান্টি দিয়ে বিশ্বমানের রাস্তা, পদ্মা সেতুর মতো মজবুত, ৭/৮ বছর স্থায়ী হবে ইত্যাদি সব প্রতিশ্রুতির বাণী ও চটকদার বক্তব্য দিয়ে বাহবা কুড়ান।