ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

২৪ ঘণ্টায় নতুন তিনজনসহ আরও পাঁচজনের মৃত্যু

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৪:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুন ২০২১
  • / ৪২ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গায় করোনা সংক্রমণের রকেট গতি, দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল
৬৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৪ জনের করোনা পজিটিভ : শনাক্তের হার ৯২.৭৫ শতাংশ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গায় দিন দিন করোনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে। গতকাল সদর উপজেলার একজন ও জীবননগর উপজেলার দুজনসহ করোনা আক্রান্ত নতুন তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, এছাড়াও করোনা শনাক্ত হয়েছে দামুড়হুদা উপজেলায় পূর্বে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হওয়া আরও দুজনের নমুনায়। এনিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯ জনে। গতকাল জেলার ৬৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৪ জনের ফলাফল পজেটিভ এসেছে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৯২.৭৫ শতাংশ। যা এযাবত কালের নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় সর্বোচ্চ শনাক্তের হার। নতুন আক্রান্ত ৬৪ জনসহ জেলায় এ পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৭৯৬ জন। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা আক্রান্ত পাঁচজনের মৃত্যু ও নতুন শনাক্ত ৬৪ জনের বিষয়ে নিশ্চিত করে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন ও নিজ বাড়িতে হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনসহ নিহত তিনজন হলেন- চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ঝিনাইদহ বাসস্ট্যাণ্ডপাড়ার খলিল রহমানের স্ত্রী জাহানারা বেগম (৬০), জীবননগর উপজেলার কালা গ্রামের মাঝের পাড়ার মৃত ফকির চাঁদ বিশ্বাসের ছেলে আবুল কাশেম বিশ্বাস (৭০) ও একই উপজেলার বেনিপুর গ্রামের ফকরুদ্দীন বিশ্বাসের মেয়ে ফরিদা খাতুন (৪০)।
জানা যায়, জ্বর, ঠাণ্ডা ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন জাহানারা বেগম। গত ১৯ তারিখ শনিবার করোনা পরীক্ষার জন্য তিনি নমুনা দেন। গত সোমবার তাঁর নমুনায় করোনা শনাক্ত তিনি নিজ বাড়িতেই আইসোলেশনে ছিলেন। এর মধ্যে গতকাল সকাল ১০ টার দিকে তিনি গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বেলা ১১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্স যোগে জাহানারা বেগমকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, গত রোববার সকালে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জিন-এক্সপার্ট লাবে নমুনা পরীক্ষা করালে আবুল কাশেমের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। ওইদিনই পরিবারের সদস্যরা তাঁকে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা ইউনিটে ভর্তি করে। কিন্তু আবুল কাশেমের অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রেফার্ড করে। রোববারই পরিবারের সদস্যরা তাঁকে সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকাল সোয়া আটটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
অপরদিকে, গতকাল মঙ্গলবার ভোরে হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ফরিদা খাতুনের। গত ১৪ জুন জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জিন-এক্সপার্ট লাবে নমুনা পরীক্ষা করালে তাঁর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে হোম আইসোলেশনে রাখেন। গতকাল হোম আইসোলেশনে অবস্থানকালে তাঁর মৃত্যু হয়। জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সেলিমা আক্তার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মৃত্যুর পর করোনা শনাক্ত হওয়া দুজন হলেন- দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের লোকনাথপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার মৃত সিরজুল ইসলামের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৬৫) ও একই উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের মদন মিয়ার স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৫৫)। গত ১৭ জুন দুপুরে ঠাণ্ডা-জর ও শ্বাসকষ্টসহ করোনার নানা উপসর্গ নিয়ে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন শহিদুল ইসলাম। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস তাঁকে ইয়োলো জোনে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রহমত আলীর মৃত্যু হয়। গত ২০ জুন সদর হাসপাতালের ইয়োলো জোনে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয় তাসলিমা বেগমের। মৃত্যুর পর দুজনের শরীর থেকেই করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করা হয়। গতকাল উক্ত দুজনের নমুনার ফলাফল পজিটিভ আসে।
গতকাল মঙ্গলবার জেলায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৬৪ জন। গতকাল চুয়াডাঙ্গার ৬৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ৬৪ জনের নমুনার ফলাফল পজিটিভ আসে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৯২.৭৫ শতাংশ। নতুন আক্রান্ত ৬৪ জনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ২২ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১০ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ১০ জন ও জীবননগর উপজেলার ২২ জন। এনিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৭৯৬ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলার ১ হাজার ২৯৮ জন, আলমডাঙ্গার ৪৫৬ জন, দামুড়হুদায় ৬৮৫ জন ও জীবননগরে ৩৫৭ জন। গত সোমবার জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ করোনা পরীক্ষার জন্য ১৩৫টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করে। গতকাল উক্ত নমুনা ও পূর্বের পেন্ডিং নমুনার মধ্যে কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষাকৃত মোট ৬৯টি নমুনার ফলাফল প্রকাশ করে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ। এরমধ্যে ৬৪ জনের করোনা ফলাফল পজিটিভ আসে, বাকী ৫টি নমুনার ফলাফল নেগেটিভ।
এছাড়া গতকাল জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ করোনা পরীক্ষার জন্য আরও ২৪২টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে গতকালের ২৪২টি নমুনাসহ চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রেরণকৃত ৬৬২টি নমুনার ফলাফল পেন্ডিং রয়েছে। গতকাল জেলা থেকে দামুড়হুদা উপজেলা থেকে ১০ জন সুস্থ হয়েছে। এনিয়ে জেলায় মোট সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ২০ জন। এরমধ্যে সদর উপজেলার ১ হাজার ১১ জন, আলমডাঙ্গার ৩৫০ জন, দামুড়হুদার ৪৩৯ ও জীবননগরে ২২০ জন। জেলায় বর্তমানে করোনা আক্রান্ত হয়ে হোম ও হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৬৮৭ জন।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ ১২ হাজার ২৮৯টি, প্রাপ্ত ফলাফল ১১ হাজার ৬২৭টি, পজিটিভ ২ হাজার ৭৯৮ জন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় ৬৮৭ জন করোনাক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। এরমধ্যে সদর উপজেলায় অবস্থানকালে আক্রান্ত হয়েছেন ২৫৪ জন, আলমডাঙ্গায় ৮৭ জন, দামুড়হুদায় ২১৮ জন ও জীবননগরে ১২৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে বর্তমানে ৬৩০ জন হোম আইসোলেশনে আছেন। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ২৩২ জন, আলমডাঙ্গায় ৭৯ জন, দামুড়হুদায় ২০০ জন ও জীবননগরে ১১৯ জন। প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে আছেন সদর উপজেলার ২১ জন, আলমডাঙ্গার ৭ জন, দামুড়হুদার ১৬ জন ও জীবননগরের ৯ জন জনসহ মোট ৫৩ জন। চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৮৪ জনের। এরমধ্যে সদর উপজেলার ২৭ জন, আলমডাঙ্গায় ১৮ জন, দামুড়হুদায় ২৩ জন ও জীবননগরে ৬ জনসহ ৭৪ জন। চুয়াডাঙ্গায় আক্রান্ত অন্য ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে জেলার বাইরে। উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলার বাইরে চিকিৎসাধীন রয়েছে অন্য ৪ জন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

২৪ ঘণ্টায় নতুন তিনজনসহ আরও পাঁচজনের মৃত্যু

আপলোড টাইম : ১০:৩৪:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুন ২০২১

চুয়াডাঙ্গায় করোনা সংক্রমণের রকেট গতি, দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল
৬৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৪ জনের করোনা পজিটিভ : শনাক্তের হার ৯২.৭৫ শতাংশ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গায় দিন দিন করোনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে। গতকাল সদর উপজেলার একজন ও জীবননগর উপজেলার দুজনসহ করোনা আক্রান্ত নতুন তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, এছাড়াও করোনা শনাক্ত হয়েছে দামুড়হুদা উপজেলায় পূর্বে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হওয়া আরও দুজনের নমুনায়। এনিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯ জনে। গতকাল জেলার ৬৯টি নমুনা পরীক্ষায় ৬৪ জনের ফলাফল পজেটিভ এসেছে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৯২.৭৫ শতাংশ। যা এযাবত কালের নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় সর্বোচ্চ শনাক্তের হার। নতুন আক্রান্ত ৬৪ জনসহ জেলায় এ পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৭৯৬ জন। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা আক্রান্ত পাঁচজনের মৃত্যু ও নতুন শনাক্ত ৬৪ জনের বিষয়ে নিশ্চিত করে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন ও নিজ বাড়িতে হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনসহ নিহত তিনজন হলেন- চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ঝিনাইদহ বাসস্ট্যাণ্ডপাড়ার খলিল রহমানের স্ত্রী জাহানারা বেগম (৬০), জীবননগর উপজেলার কালা গ্রামের মাঝের পাড়ার মৃত ফকির চাঁদ বিশ্বাসের ছেলে আবুল কাশেম বিশ্বাস (৭০) ও একই উপজেলার বেনিপুর গ্রামের ফকরুদ্দীন বিশ্বাসের মেয়ে ফরিদা খাতুন (৪০)।
জানা যায়, জ্বর, ঠাণ্ডা ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন জাহানারা বেগম। গত ১৯ তারিখ শনিবার করোনা পরীক্ষার জন্য তিনি নমুনা দেন। গত সোমবার তাঁর নমুনায় করোনা শনাক্ত তিনি নিজ বাড়িতেই আইসোলেশনে ছিলেন। এর মধ্যে গতকাল সকাল ১০ টার দিকে তিনি গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বেলা ১১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্স যোগে জাহানারা বেগমকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, গত রোববার সকালে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জিন-এক্সপার্ট লাবে নমুনা পরীক্ষা করালে আবুল কাশেমের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। ওইদিনই পরিবারের সদস্যরা তাঁকে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা ইউনিটে ভর্তি করে। কিন্তু আবুল কাশেমের অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রেফার্ড করে। রোববারই পরিবারের সদস্যরা তাঁকে সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকাল সোয়া আটটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
অপরদিকে, গতকাল মঙ্গলবার ভোরে হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ফরিদা খাতুনের। গত ১৪ জুন জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জিন-এক্সপার্ট লাবে নমুনা পরীক্ষা করালে তাঁর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে হোম আইসোলেশনে রাখেন। গতকাল হোম আইসোলেশনে অবস্থানকালে তাঁর মৃত্যু হয়। জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সেলিমা আক্তার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মৃত্যুর পর করোনা শনাক্ত হওয়া দুজন হলেন- দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের লোকনাথপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়ার মৃত সিরজুল ইসলামের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৬৫) ও একই উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের মদন মিয়ার স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৫৫)। গত ১৭ জুন দুপুরে ঠাণ্ডা-জর ও শ্বাসকষ্টসহ করোনার নানা উপসর্গ নিয়ে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন শহিদুল ইসলাম। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস তাঁকে ইয়োলো জোনে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রহমত আলীর মৃত্যু হয়। গত ২০ জুন সদর হাসপাতালের ইয়োলো জোনে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয় তাসলিমা বেগমের। মৃত্যুর পর দুজনের শরীর থেকেই করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করা হয়। গতকাল উক্ত দুজনের নমুনার ফলাফল পজিটিভ আসে।
গতকাল মঙ্গলবার জেলায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৬৪ জন। গতকাল চুয়াডাঙ্গার ৬৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ৬৪ জনের নমুনার ফলাফল পজিটিভ আসে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৯২.৭৫ শতাংশ। নতুন আক্রান্ত ৬৪ জনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ২২ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১০ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ১০ জন ও জীবননগর উপজেলার ২২ জন। এনিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৭৯৬ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলার ১ হাজার ২৯৮ জন, আলমডাঙ্গার ৪৫৬ জন, দামুড়হুদায় ৬৮৫ জন ও জীবননগরে ৩৫৭ জন। গত সোমবার জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ করোনা পরীক্ষার জন্য ১৩৫টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করে। গতকাল উক্ত নমুনা ও পূর্বের পেন্ডিং নমুনার মধ্যে কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষাকৃত মোট ৬৯টি নমুনার ফলাফল প্রকাশ করে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ। এরমধ্যে ৬৪ জনের করোনা ফলাফল পজিটিভ আসে, বাকী ৫টি নমুনার ফলাফল নেগেটিভ।
এছাড়া গতকাল জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ করোনা পরীক্ষার জন্য আরও ২৪২টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে গতকালের ২৪২টি নমুনাসহ চুয়াডাঙ্গা থেকে প্রেরণকৃত ৬৬২টি নমুনার ফলাফল পেন্ডিং রয়েছে। গতকাল জেলা থেকে দামুড়হুদা উপজেলা থেকে ১০ জন সুস্থ হয়েছে। এনিয়ে জেলায় মোট সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ২০ জন। এরমধ্যে সদর উপজেলার ১ হাজার ১১ জন, আলমডাঙ্গার ৩৫০ জন, দামুড়হুদার ৪৩৯ ও জীবননগরে ২২০ জন। জেলায় বর্তমানে করোনা আক্রান্ত হয়ে হোম ও হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৬৮৭ জন।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ ১২ হাজার ২৮৯টি, প্রাপ্ত ফলাফল ১১ হাজার ৬২৭টি, পজিটিভ ২ হাজার ৭৯৮ জন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গায় ৬৮৭ জন করোনাক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। এরমধ্যে সদর উপজেলায় অবস্থানকালে আক্রান্ত হয়েছেন ২৫৪ জন, আলমডাঙ্গায় ৮৭ জন, দামুড়হুদায় ২১৮ জন ও জীবননগরে ১২৮ জন। আক্রান্তদের মধ্যে বর্তমানে ৬৩০ জন হোম আইসোলেশনে আছেন। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ২৩২ জন, আলমডাঙ্গায় ৭৯ জন, দামুড়হুদায় ২০০ জন ও জীবননগরে ১১৯ জন। প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে আছেন সদর উপজেলার ২১ জন, আলমডাঙ্গার ৭ জন, দামুড়হুদার ১৬ জন ও জীবননগরের ৯ জন জনসহ মোট ৫৩ জন। চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ৮৪ জনের। এরমধ্যে সদর উপজেলার ২৭ জন, আলমডাঙ্গায় ১৮ জন, দামুড়হুদায় ২৩ জন ও জীবননগরে ৬ জনসহ ৭৪ জন। চুয়াডাঙ্গায় আক্রান্ত অন্য ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে জেলার বাইরে। উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলার বাইরে চিকিৎসাধীন রয়েছে অন্য ৪ জন।