ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

২০ দলীয় জোটে থেকেই স্বতন্ত্র লড়বে জামায়াত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৬:২২:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ এপ্রিল ২০১৮
  • / ৪৯৫ বার পড়া হয়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট: রাজনৈতিক দল হিসাবে আদালত কর্তৃক ‘নিবন্ধন’ অবৈধ ঘোষিত ও দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ হারানোর পরও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছে, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে অনেক আগেই কেন্দ্র থেকে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বার্তা পাঠানো হয়েছে। সূত্রগুলোর দাবি, বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চায় জামায়াত। তবে আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল কী হবে তা এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের গতকাল শনিবার সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘আমরা ২০ দলে আছি। ২০ দলে থেকেই জোটগত নির্বাচন করবো ইনশাল্লাহ। আমাদের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। প্রতীক নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে যিনি যে প্রতীক পাবেন সেই প্রতীক নিয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার কোনো সিদ্ধান্ত বা চিন্তা-ভাবনা এখনও জামায়াতের নেই। অর্থাৎ জামায়াত নির্বাচন করবে ২০ দলীয় জোটগতভাবে, আর জামায়াতের প্রার্থী হবেন স্বতন্ত্র।’
অবশ্য রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ‘নিবন্ধনহারা জামায়াত’ নেতারা কৌশলে নির্বাচনের মাঠে নিজেদের উপস্থিতি ধরে রাখতে বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে গিয়ে বিএনপির-ই নির্বাচনী প্রতীক ‘ধানের শীষ’ও ব্যবহার করতে পারে। তবে স্থানীয় ও উপমহাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি বিষয়টিকে কীভাবে সমন্বয় করবে তার উপরও সেটি অনেকাংশে নির্ভর করছে।
জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, দলের নীতিনির্ধারকরা ৫০ থেকে ৭০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিয়ে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গোপনে ইতোমধ্যে বেশক’টি নির্বাচনবিষয়ক সাংগঠনিক বৈঠকও করেছেন জামায়াতের সংশ্লিষ্ট নেতারা। এ বছরের মার্চে এ রকম একটি বৈঠক থেকেই জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমানসহ রাজশাহী অঞ্চলের ১০জন নেতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজনৈতিক দল হিসাবে জামায়াতের সামনে আগামী জাতীয় নির্বাচন নতুন এক চ্যালেঞ্জ হিসাবে আবির্ভূত হবে। প্রথমত, যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর এটিই হবে দলের প্রথম নির্বাচন। দ্বিতীয়ত, নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক হারানোর পর এবারই প্রথম তারা জাতীয় নির্বাচনে লড়বে। আর যদি বিএনপিসহ ২০ দল আবারও নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে ভিন্ন কথা।
নির্বাচনের জামায়াতের কৌশল কী হতে পারে, এ ব্যাপারে দলটির কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘আমরা এখন আন্দোলন ও নির্বাচন দুটোরই প্রস্তুতি নিচ্ছি। শেষ পর্যন্ত সরকারের পলিসি কী হয়, পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়- সেটির উপর ভিত্তি করে ২০ দল বসেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে। উদ্ভুত পরিস্থিতির নিরিখে জামায়াতও দলীয় কৌশল নির্ধারণ করবে।’ এই নেতাও বলেন, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ার কোনো চিন্তা জামায়াতের নেই।
তবে এ বছরের ডিসেম্বরে (সম্ভাব্য) অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে জামায়াত যে শেষ পর্যন্ত কৌশলে বিএনপির ওপরই ভর করতে পারে সেটির আলামত ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। একদিকে ভোটের মাঠে প্রার্থী হিসাবে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়া, অন্যদিকে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে দরকষাকষির আগাম ক্ষেত্র প্রস্তুতের অংশ হিসাবে জামায়াত আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠেয় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও মেয়র পদে এককভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোষণা করে। পরে অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠকে আপসরফার পর এবং কয়েকটি কাউন্সিলর পদে বিএনপির ছাড় দেওয়ার শর্তে নিজেদের মেয়র প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে নেয় জামায়াত। এর আগে স্থগিত হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপ-নির্বাচনেও জামায়াত দলীয় নেতা সেলিম উদ্দিনকে স্বতন্ত্রভাবে একক প্রার্থী ঘোষণা করে। যা নিয়ে ২০ দলের অন্য শরিকদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে জামায়াতকে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার একাধিক দায়িত্বশীল সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব সিটি করপোরেশনেই মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেয়ার জন্য দলটির নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরার একাধিক সদস্য জানান, শুধু দর কষাকষির জন্যই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মেয়র পদে জামায়াত স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর লক্ষ্য দুটি। প্রথমত, ভোট ও রাজনীতির মাঠে জামায়াত তাদের উপস্থিতি জানান দিতে চায়; দ্বিতীয়ত, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ছাড় দিতে বিএনপিকে আগাম চাপ দিচ্ছে জামায়াত।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

২০ দলীয় জোটে থেকেই স্বতন্ত্র লড়বে জামায়াত

আপলোড টাইম : ০৬:২২:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

ডেস্ক রিপোর্ট: রাজনৈতিক দল হিসাবে আদালত কর্তৃক ‘নিবন্ধন’ অবৈধ ঘোষিত ও দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ হারানোর পরও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছে, নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে অনেক আগেই কেন্দ্র থেকে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বার্তা পাঠানো হয়েছে। সূত্রগুলোর দাবি, বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চায় জামায়াত। তবে আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল কী হবে তা এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের গতকাল শনিবার সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘আমরা ২০ দলে আছি। ২০ দলে থেকেই জোটগত নির্বাচন করবো ইনশাল্লাহ। আমাদের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। প্রতীক নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে যিনি যে প্রতীক পাবেন সেই প্রতীক নিয়েই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার কোনো সিদ্ধান্ত বা চিন্তা-ভাবনা এখনও জামায়াতের নেই। অর্থাৎ জামায়াত নির্বাচন করবে ২০ দলীয় জোটগতভাবে, আর জামায়াতের প্রার্থী হবেন স্বতন্ত্র।’
অবশ্য রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ‘নিবন্ধনহারা জামায়াত’ নেতারা কৌশলে নির্বাচনের মাঠে নিজেদের উপস্থিতি ধরে রাখতে বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে গিয়ে বিএনপির-ই নির্বাচনী প্রতীক ‘ধানের শীষ’ও ব্যবহার করতে পারে। তবে স্থানীয় ও উপমহাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি বিষয়টিকে কীভাবে সমন্বয় করবে তার উপরও সেটি অনেকাংশে নির্ভর করছে।
জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, দলের নীতিনির্ধারকরা ৫০ থেকে ৭০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিয়ে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গোপনে ইতোমধ্যে বেশক’টি নির্বাচনবিষয়ক সাংগঠনিক বৈঠকও করেছেন জামায়াতের সংশ্লিষ্ট নেতারা। এ বছরের মার্চে এ রকম একটি বৈঠক থেকেই জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমানসহ রাজশাহী অঞ্চলের ১০জন নেতাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজনৈতিক দল হিসাবে জামায়াতের সামনে আগামী জাতীয় নির্বাচন নতুন এক চ্যালেঞ্জ হিসাবে আবির্ভূত হবে। প্রথমত, যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর এটিই হবে দলের প্রথম নির্বাচন। দ্বিতীয়ত, নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক হারানোর পর এবারই প্রথম তারা জাতীয় নির্বাচনে লড়বে। আর যদি বিএনপিসহ ২০ দল আবারও নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে ভিন্ন কথা।
নির্বাচনের জামায়াতের কৌশল কী হতে পারে, এ ব্যাপারে দলটির কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘আমরা এখন আন্দোলন ও নির্বাচন দুটোরই প্রস্তুতি নিচ্ছি। শেষ পর্যন্ত সরকারের পলিসি কী হয়, পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়- সেটির উপর ভিত্তি করে ২০ দল বসেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে। উদ্ভুত পরিস্থিতির নিরিখে জামায়াতও দলীয় কৌশল নির্ধারণ করবে।’ এই নেতাও বলেন, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ার কোনো চিন্তা জামায়াতের নেই।
তবে এ বছরের ডিসেম্বরে (সম্ভাব্য) অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে জামায়াত যে শেষ পর্যন্ত কৌশলে বিএনপির ওপরই ভর করতে পারে সেটির আলামত ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। একদিকে ভোটের মাঠে প্রার্থী হিসাবে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়া, অন্যদিকে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে দরকষাকষির আগাম ক্ষেত্র প্রস্তুতের অংশ হিসাবে জামায়াত আগামী ১৫ মে অনুষ্ঠেয় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও মেয়র পদে এককভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোষণা করে। পরে অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সঙ্গে বৈঠকে আপসরফার পর এবং কয়েকটি কাউন্সিলর পদে বিএনপির ছাড় দেওয়ার শর্তে নিজেদের মেয়র প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে নেয় জামায়াত। এর আগে স্থগিত হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপ-নির্বাচনেও জামায়াত দলীয় নেতা সেলিম উদ্দিনকে স্বতন্ত্রভাবে একক প্রার্থী ঘোষণা করে। যা নিয়ে ২০ দলের অন্য শরিকদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে জামায়াতকে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার একাধিক দায়িত্বশীল সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব সিটি করপোরেশনেই মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেয়ার জন্য দলটির নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরার একাধিক সদস্য জানান, শুধু দর কষাকষির জন্যই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মেয়র পদে জামায়াত স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর লক্ষ্য দুটি। প্রথমত, ভোট ও রাজনীতির মাঠে জামায়াত তাদের উপস্থিতি জানান দিতে চায়; দ্বিতীয়ত, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ছাড় দিতে বিএনপিকে আগাম চাপ দিচ্ছে জামায়াত।