ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

১৫ দিনে ৮ জনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ৩৭৯ জন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২০
  • / ১২৫ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গায় ঈদের পর আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়ডাঙ্গায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। গণপরিবহন, হাট-বাজার, বিপনী-বিতান, কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে প্রায় সব স্থানেই সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি বেশিরভাগ মানুষই মানছেন না। মুখে মাস্ক ও হাতে হ্যান্ড গ্লাভস ছাড়া মানুষ চলাচল করছে। সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই। যাত্রীবাহী গণপরিবহণে দুই সিটে একজন করে যাতায়ত করতে দেখা গেলেও অটোরিকশা, ইজিবাইক, সিএনজিতে গাদাগাদি করে লোকজন যাতায়াত করছে।
চুয়াডাঙ্গায় গত ১৫ দিনে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭৯ জন ও সুস্থ হয়েছেন ১৫৯ জন ও মারা গেছেন ৮ জন। এর মধ্যে গতকাল নতুন ১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন ও সুস্থ হয়েছে ৫ জন। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। চুয়াডাঙ্গায় প্রথম করোনা সন্দেহে হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলার থানাপাড়ার আশাদুল ইসলামের ছেলে ইতালি প্রবাসী সাব্বির আহম্মেদে (২৯)। গত ১৬ মার্চ সোমবার বেলা ১১টার দিকে সাব্বির আহম্মেদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তাঁকে নেওয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। এ সময় হাসপাতলের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি রাখেন। ওই দিনই সাব্বির আহম্মেদ করোনা আক্রান্ত কি না, তা নিশ্চিত হতে যশোর থেকে আইইডিসিআর-এর একজন প্রতিনিধি চুয়াডাঙ্গা এসে সোয়াব সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠান। এদিকে, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) রিপোর্টের ফলাফল পেয়ে গত ১৯ মার্চ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান সাব্বির আহম্মেদ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত করেন। সেই থেকে করোনা আক্রান্ত এ জেলায় শুরু হয়। এরপর থেকে গত ১৪৯ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯৭ জনে।
এদিকে, গতকাল শনিবার রাতে কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাব থেকে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসে ১৪ তারিখের সংগৃহীত ২৬ জনের নমুনার ফলাফল এসে পৌঁছায়। যার মধ্যে পজিটিভ ১০টি এবং নেগেটিভ ১৬টি। গতকাল আক্রান্ত ১০ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় ৬ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২ জন ও দামুড়হুদা উপজেলার ২ জন। নতুন আক্রান্ত ১০ জনের বয়স ৩৩ বছর থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত। পুরুষ ৮ জন ও নারী ২ জন। করোনা আক্রান্ত সন্দেহে গতকাল জেলা সিভিল সার্জন অফিস নতুন ৩১টি নমুনা সংগ্রহ করেছে। সদর উপজেলা থেকে ১৯টি, দামুড়হুদা উপজেলা থেকে ৬টি ও জীবননগর উপজেলা থেকে ৬টি নমুনাসহ সংগৃহীত ৩১টি নমুনা পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ৩১ জুলাই ঈদের আগের দিন পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬১৬ জন। ১ আগস্ট ঈদের দিন থেকে ১৫ আগস্ট গতকাল পর্যন্ত জেলায় নতুন আক্রান্ত ৩৬৯ জন। ১৪ আগস্ট শুক্রবার জেলায় দুইদিনের ৮৩টি নমুনায় দু’জন মৃত ব্যক্তির নমুনাসহ ৪৫টি নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়। বাকি ৩৮টি নমুনার রিপোর্ট নেগেটিভ। ওই দিন জেলায় মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮৭ জনে। গত শুক্রবার করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত দুজনের নমুনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এ নিয়ে জেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১৯ জন। একই দিনে সদর উপজেলার হোম আইসোলেশন থেকে ৭ জন নতুন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট সুস্থতার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯২ জন।
১৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসে করোনা শনাক্তের নতুন কোনো করোনার ফলাফল আসেনি। ওইদিন নতুন ১১ জন সুস্থ হন। ১৩ আগস্ট পর্যন্ত জেলায় মোট সুস্থতার সংখ্যা ৪৮৫ জন। তবে গত বৃহস্পতিবার করোনা উপসর্গ নিয়ে আব্দুর রশিদ নামে এক মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়। পরদিন তাঁর নমুনার ফলাফল নেগেটিভ আসে। ১২ আগস্ট বুধবার জেলায় নতুন করে ৫১ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়। একই দিনে একজন নারী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান এবং ১১ আগস্ট করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত সাহাদত হোসেন ও সাদরী আলম দুজনের নমুনার ফলাফল পজিটিভ আসে। ওইদিন পর্যন্ত জেলায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৭ জন।
১১ আগস্ট মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় নতুন করে ২৩ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়। নতুন শনাক্ত ২৩ জনের মধ্যে সদর উপজেলার মুক্তিপাড়ার করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ভৈরব মিয়া ও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ৫ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ২ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ১ জন ও জীবননগর উপজেলার ১৫ জনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ১১ আগস্ট করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির সংখ্যা দাড়ায় ১৪ জনে। ১০ আগস্ট সোমবার চুয়াডাঙ্গায় নতুন করে ১২ জন করোনা শনাক্ত হয় এবং সদর হাসপাতালের ইয়োলো জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগী গ্রামের রশিদুল ইমলামের ছেলে শামীম রেজা (২৪) ও চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মুন্সিপাড়ার মৃত দাউদের স্ত্রী হামিদা বেগম (৭০)।
৯ আগস্ট রোববার করোনা উপসর্গ নিয়ে সেফাউর রহমান (৬২) নামের এক বৃদ্ধরও মৃত্যু হয়। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালের ইয়োলো জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত বৃদ্ধ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ইসলামপাড়ার মৃত রাজু মিয়ার।
৮ আগস্ট শনিবার চুয়াডাঙ্গায় করোনার নতুন কোনো ফলাফল নেই। শনিবার চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিস করোনা কোনো ফলাফল পাইনি। তবে করোনা সন্দেহে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ৭৭ টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠায়। ৭ আগস্ট শুক্রবার জেলায় নতুন করে আরও ২৭ জন করোনা শনাক্ত হয়। ওইদিন জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাড়ায় ৮১৬ জনে।
৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার জেলার ৩ উপজেলার ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মীসহ নতুন করে ৩০ করোনা শনাক্ত হয় এবং নতুন সুস্থ হয়েছে ১২ জন সুস্থসহ জেলায় মোট সুস্থতার সংখ্যা ছিল ৩৮৫ জন। নতুন আক্রান্ত ৩০ জনসহ ওইদিন জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়ায় ৭৮৯ জনে।
৫ আগস্ট বুধবার চুয়াডাঙ্গায় ৩ দিনের সংগৃহিত ১৫৬ টি নমুনার মধ্যে নতুন করে ৭১ জন করোনা শনাক্ত হয়। বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় জেলা সিভিল সার্জন অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করেন। ৫ আগস্ট জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৫৯ জন। ওই দিন করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত দুই বৃদ্ধর নমুনার ফলাফল পজিটিভ আসে। (৩০ জুলাই) চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দৌলতদিয়াড় একালার বাসিন্দা কাসেদ আলী মোল্লা (৭০) ও জীবননগর উপজেলার তারিনীবাস গ্রামে শিক্ষক নুরুল ইসলাম (৬০) করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। ৫ আগস্ট পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাড়ায় ১৩ জনে।
৪ আগস্ট মঙ্গলবার জেলায় নতুন ৩০ জন করোনা শনাক্ত হয়। মঙ্গলবার রাত ৮টায় জেলা সিভিল সার্জন অফিসে ৫১ জনের রিপোর্ট এসে পৌছায়। এর মধ্যে ৩০ জনের রিপোর্ট পজিটিভ ও বাকী ২১ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ।
৩ আগস্ট সোমবার কুষ্টিয়ার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে চুয়াডাঙ্গার ফলোআপসহ ৪০টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন ১৫ জন করোনা শনাক্ত হয়। সোমবার নতুন আক্রান্ত ১৫ জনের মধ্যে সদরে উপজেলার ১২ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১, দামুড়হুদা উপজেলার ১ জন ও জীবননগর উপজেলার ১ জন।
২ আগস্ট রোববার জেলা স্বাস্থ বিভাগ নতুন কোনো রিপোর্ট পাইনি। ওইদিন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাব চুয়াডাঙ্গার কোনো নমুনার ফলাফল প্রকাশ করেনি।
১ আগস্ট শনিবার কুষ্টিয়ার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে চুয়াডাঙ্গার ফলোআপসহ ৮৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত ২৫ জনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার পুলিশ প্রধানসহ ১৭ জন। আলমডাঙ্গা উপজেলার ৪ জন ও দামুড়হুদা উপজেলার ৩ জন।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান বলেন, জেলায় ১৫ দিনে ৩৬৯ জন করোনা আক্রান্ত হওয়াটা সামাজিক সংক্রমণের ফল। গণপরিবহন, হাট-বাজার, বিপনী বিতান, কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে সব স্থানেই সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ থাকলেও কেউই তা মানছে না। আক্রান্তের তুলনায় জেলায় মৃত্যুহার কম থাকলেও ইতোমধ্যে ৯৮৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ৪৯২ জন ও মারা গেছেন ১৯ জন। করোনা মোকাবিলায় সবাইকে সচেতন হতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হতে। বাড়ির বাইরে বের হলেই মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। নয়তো করোনা সংক্রমণের হার দিন দিন বাড়তেই থাকবে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ ৪ হাজার ২৩৬টি, প্রাপ্ত ফলাফল ৪ হাজার ১১৭টি, পজিটিভ ৯৯৭ জন, নেগেটিভ ৩ হাজার ৩০ জন। জেলায় মোট সুস্থতার সংখ্যা ৪৯৭ জন ও মৃত্যু ১৯ জন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জেলায় গতকাল হোম আইসোলেসনে ছিল ৪২৪ জন ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে ছিল ৫৫ জন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

১৫ দিনে ৮ জনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ৩৭৯ জন

আপলোড টাইম : ০৯:০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২০

চুয়াডাঙ্গায় ঈদের পর আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়ডাঙ্গায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। গণপরিবহন, হাট-বাজার, বিপনী-বিতান, কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে প্রায় সব স্থানেই সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি বেশিরভাগ মানুষই মানছেন না। মুখে মাস্ক ও হাতে হ্যান্ড গ্লাভস ছাড়া মানুষ চলাচল করছে। সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই। যাত্রীবাহী গণপরিবহণে দুই সিটে একজন করে যাতায়ত করতে দেখা গেলেও অটোরিকশা, ইজিবাইক, সিএনজিতে গাদাগাদি করে লোকজন যাতায়াত করছে।
চুয়াডাঙ্গায় গত ১৫ দিনে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭৯ জন ও সুস্থ হয়েছেন ১৫৯ জন ও মারা গেছেন ৮ জন। এর মধ্যে গতকাল নতুন ১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন ও সুস্থ হয়েছে ৫ জন। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। চুয়াডাঙ্গায় প্রথম করোনা সন্দেহে হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলার থানাপাড়ার আশাদুল ইসলামের ছেলে ইতালি প্রবাসী সাব্বির আহম্মেদে (২৯)। গত ১৬ মার্চ সোমবার বেলা ১১টার দিকে সাব্বির আহম্মেদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তাঁকে নেওয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। এ সময় হাসপাতলের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি রাখেন। ওই দিনই সাব্বির আহম্মেদ করোনা আক্রান্ত কি না, তা নিশ্চিত হতে যশোর থেকে আইইডিসিআর-এর একজন প্রতিনিধি চুয়াডাঙ্গা এসে সোয়াব সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠান। এদিকে, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) রিপোর্টের ফলাফল পেয়ে গত ১৯ মার্চ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান সাব্বির আহম্মেদ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত করেন। সেই থেকে করোনা আক্রান্ত এ জেলায় শুরু হয়। এরপর থেকে গত ১৪৯ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯৭ জনে।
এদিকে, গতকাল শনিবার রাতে কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাব থেকে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসে ১৪ তারিখের সংগৃহীত ২৬ জনের নমুনার ফলাফল এসে পৌঁছায়। যার মধ্যে পজিটিভ ১০টি এবং নেগেটিভ ১৬টি। গতকাল আক্রান্ত ১০ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় ৬ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২ জন ও দামুড়হুদা উপজেলার ২ জন। নতুন আক্রান্ত ১০ জনের বয়স ৩৩ বছর থেকে ৭০ বছর পর্যন্ত। পুরুষ ৮ জন ও নারী ২ জন। করোনা আক্রান্ত সন্দেহে গতকাল জেলা সিভিল সার্জন অফিস নতুন ৩১টি নমুনা সংগ্রহ করেছে। সদর উপজেলা থেকে ১৯টি, দামুড়হুদা উপজেলা থেকে ৬টি ও জীবননগর উপজেলা থেকে ৬টি নমুনাসহ সংগৃহীত ৩১টি নমুনা পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ৩১ জুলাই ঈদের আগের দিন পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬১৬ জন। ১ আগস্ট ঈদের দিন থেকে ১৫ আগস্ট গতকাল পর্যন্ত জেলায় নতুন আক্রান্ত ৩৬৯ জন। ১৪ আগস্ট শুক্রবার জেলায় দুইদিনের ৮৩টি নমুনায় দু’জন মৃত ব্যক্তির নমুনাসহ ৪৫টি নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়। বাকি ৩৮টি নমুনার রিপোর্ট নেগেটিভ। ওই দিন জেলায় মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮৭ জনে। গত শুক্রবার করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত দুজনের নমুনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এ নিয়ে জেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১৯ জন। একই দিনে সদর উপজেলার হোম আইসোলেশন থেকে ৭ জন নতুন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট সুস্থতার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯২ জন।
১৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসে করোনা শনাক্তের নতুন কোনো করোনার ফলাফল আসেনি। ওইদিন নতুন ১১ জন সুস্থ হন। ১৩ আগস্ট পর্যন্ত জেলায় মোট সুস্থতার সংখ্যা ৪৮৫ জন। তবে গত বৃহস্পতিবার করোনা উপসর্গ নিয়ে আব্দুর রশিদ নামে এক মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়। পরদিন তাঁর নমুনার ফলাফল নেগেটিভ আসে। ১২ আগস্ট বুধবার জেলায় নতুন করে ৫১ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়। একই দিনে একজন নারী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান এবং ১১ আগস্ট করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত সাহাদত হোসেন ও সাদরী আলম দুজনের নমুনার ফলাফল পজিটিভ আসে। ওইদিন পর্যন্ত জেলায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৭ জন।
১১ আগস্ট মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় নতুন করে ২৩ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়। নতুন শনাক্ত ২৩ জনের মধ্যে সদর উপজেলার মুক্তিপাড়ার করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ভৈরব মিয়া ও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ৫ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ২ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ১ জন ও জীবননগর উপজেলার ১৫ জনের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ১১ আগস্ট করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির সংখ্যা দাড়ায় ১৪ জনে। ১০ আগস্ট সোমবার চুয়াডাঙ্গায় নতুন করে ১২ জন করোনা শনাক্ত হয় এবং সদর হাসপাতালের ইয়োলো জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা উপসর্গ নিয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগী গ্রামের রশিদুল ইমলামের ছেলে শামীম রেজা (২৪) ও চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মুন্সিপাড়ার মৃত দাউদের স্ত্রী হামিদা বেগম (৭০)।
৯ আগস্ট রোববার করোনা উপসর্গ নিয়ে সেফাউর রহমান (৬২) নামের এক বৃদ্ধরও মৃত্যু হয়। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালের ইয়োলো জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত বৃদ্ধ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ইসলামপাড়ার মৃত রাজু মিয়ার।
৮ আগস্ট শনিবার চুয়াডাঙ্গায় করোনার নতুন কোনো ফলাফল নেই। শনিবার চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিস করোনা কোনো ফলাফল পাইনি। তবে করোনা সন্দেহে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ৭৭ টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠায়। ৭ আগস্ট শুক্রবার জেলায় নতুন করে আরও ২৭ জন করোনা শনাক্ত হয়। ওইদিন জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাড়ায় ৮১৬ জনে।
৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার জেলার ৩ উপজেলার ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মীসহ নতুন করে ৩০ করোনা শনাক্ত হয় এবং নতুন সুস্থ হয়েছে ১২ জন সুস্থসহ জেলায় মোট সুস্থতার সংখ্যা ছিল ৩৮৫ জন। নতুন আক্রান্ত ৩০ জনসহ ওইদিন জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়ায় ৭৮৯ জনে।
৫ আগস্ট বুধবার চুয়াডাঙ্গায় ৩ দিনের সংগৃহিত ১৫৬ টি নমুনার মধ্যে নতুন করে ৭১ জন করোনা শনাক্ত হয়। বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় জেলা সিভিল সার্জন অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করেন। ৫ আগস্ট জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৫৯ জন। ওই দিন করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত দুই বৃদ্ধর নমুনার ফলাফল পজিটিভ আসে। (৩০ জুলাই) চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দৌলতদিয়াড় একালার বাসিন্দা কাসেদ আলী মোল্লা (৭০) ও জীবননগর উপজেলার তারিনীবাস গ্রামে শিক্ষক নুরুল ইসলাম (৬০) করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। ৫ আগস্ট পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাড়ায় ১৩ জনে।
৪ আগস্ট মঙ্গলবার জেলায় নতুন ৩০ জন করোনা শনাক্ত হয়। মঙ্গলবার রাত ৮টায় জেলা সিভিল সার্জন অফিসে ৫১ জনের রিপোর্ট এসে পৌছায়। এর মধ্যে ৩০ জনের রিপোর্ট পজিটিভ ও বাকী ২১ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ।
৩ আগস্ট সোমবার কুষ্টিয়ার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে চুয়াডাঙ্গার ফলোআপসহ ৪০টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন ১৫ জন করোনা শনাক্ত হয়। সোমবার নতুন আক্রান্ত ১৫ জনের মধ্যে সদরে উপজেলার ১২ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১, দামুড়হুদা উপজেলার ১ জন ও জীবননগর উপজেলার ১ জন।
২ আগস্ট রোববার জেলা স্বাস্থ বিভাগ নতুন কোনো রিপোর্ট পাইনি। ওইদিন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাব চুয়াডাঙ্গার কোনো নমুনার ফলাফল প্রকাশ করেনি।
১ আগস্ট শনিবার কুষ্টিয়ার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে চুয়াডাঙ্গার ফলোআপসহ ৮৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ২৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত ২৫ জনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার পুলিশ প্রধানসহ ১৭ জন। আলমডাঙ্গা উপজেলার ৪ জন ও দামুড়হুদা উপজেলার ৩ জন।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান বলেন, জেলায় ১৫ দিনে ৩৬৯ জন করোনা আক্রান্ত হওয়াটা সামাজিক সংক্রমণের ফল। গণপরিবহন, হাট-বাজার, বিপনী বিতান, কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে সব স্থানেই সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ থাকলেও কেউই তা মানছে না। আক্রান্তের তুলনায় জেলায় মৃত্যুহার কম থাকলেও ইতোমধ্যে ৯৮৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ৪৯২ জন ও মারা গেছেন ১৯ জন। করোনা মোকাবিলায় সবাইকে সচেতন হতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হতে। বাড়ির বাইরে বের হলেই মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। নয়তো করোনা সংক্রমণের হার দিন দিন বাড়তেই থাকবে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ ৪ হাজার ২৩৬টি, প্রাপ্ত ফলাফল ৪ হাজার ১১৭টি, পজিটিভ ৯৯৭ জন, নেগেটিভ ৩ হাজার ৩০ জন। জেলায় মোট সুস্থতার সংখ্যা ৪৯৭ জন ও মৃত্যু ১৯ জন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জেলায় গতকাল হোম আইসোলেসনে ছিল ৪২৪ জন ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে ছিল ৫৫ জন।