ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হুমকিতে খাদ্য কর্মসূচি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪০:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০
  • / ১২৫ বার পড়া হয়েছে

গুদামে মজুদ সাড়ে ৭ লাখ টন : আরও দরকার ১৩ লাখ টন
সমীকরণ প্রতিবেদন:
লক্ষ্য অনুযায়ী খাদ্য সংগ্রহ করতে না পারায় হুমকিতে সরকারের খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি। মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী চলতি অর্থবছর সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ডিসেম্বর-জুন মেয়াদে প্রায় ১৩ লাখ টন খাদ্যের প্রয়োজন। অথচ গুদামে মজুদ আছে মাত্র সাড়ে ৭ লাখ টন। সংশ্লিষ্টরা জানান, জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তত ১০ লাখ টন খাদ্য আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণের কথা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করা হয়েছে। ২১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়ে এ পরিকল্পনার কথা জানান খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে মন্ত্রণালয় যা বলেছে তা এ রকম : এ পর্যন্ত ১ লাখ টন খাদ্য আমদানির জন্য সরবরাহকারীর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আরও দেড় লাখ টন খাদ্য আমদানির চুক্তি সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এ ছাড়া জি টু জি পদ্ধতিতে ভারত থেকে চাল আনার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সরকারের কর্মকর্তারা গতকাল নিশ্চিত করেছেন, ২৩ ডিসেম্বর (বুধবার) সকালে ভারতের সঙ্গে এ বিষয়ে ভার্চুয়ালি সভা সম্পন্ন হয়েছে। দেশটি দেড় লাখ টন চাল দেওয়ার বিষয়ে সরকারকে সম্মতি জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংগ্রহের মতো আমদানির এ উদ্যোগ কোনোভাবে সফল না হলে চলতি অর্থবছরে সরকারের খাদ্য কর্মসূচি ভেস্তে যেতে পারে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে খাদ্য ব্যবহার হয়। আর এ খাদ্যের চাহিদা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ডিসেম্বর-জুন প্রান্তিকে। কারণ সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির সবচেয়ে উপযুক্ত সময় এটি। এ সময় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় অবকাঠামো প্রকল্পের গতি বাড়ে। ফলে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চাল-গম দরকার হয়। এ কারণে যত দ্রুত সম্ভব চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এবার বন্যার কারণে আমনের উৎপাদন কম হয়েছে। সরকারের খাদ্য মজুদও কম। এ পরিস্থিতিতে আমরা আরও দুই মাস আগেই সরকারকে খাদ্য আমদানির পরামর্শ দিয়েছিলাম। এখন এটি বিলম্বিত হওয়ায় এরই মধ্যে বাজারে প্রভাব পড়েছে। আমনের মৌসুম চলার পরও চালের দাম বেশি।’
সিপিডির এ জ্যেষ্ঠ গবেষক বলেন, ‘করোনার কারণে নতুন করে অনেক লোক দরিদ্র হয়েছে। খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় তাদের অনেকে কিনে খেতে পারবে না। এদের জন্য সরকারের ভিজিএফ, ভিজিডি, ওএমএসসহ নানা কর্মসূচি নিতে হচ্ছে। আর এ ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য দ্রুত খাদ্য আমদানি করতে হবে। সরকারের আমদানি প্রক্রিয়া যত বিলম্বিত হবে তত বেশি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে। তখন দাম আরও বাড়িয়ে সুযোগ নেবে অসাধু ব্যবসায়ীরা।’ কত চাল লাগবে : মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী চলতি অর্থবছরে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ২৪ লাখ ৪৩ হাজার টন খাদ্য বিতরণের লক্ষ্য নেওয়া হয়। যার মধ্যে ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৪০৪ টন চাল ও ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ টন গম রয়েছে। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ১১ লাখ ২৪ হাজার ৩৬২ টন খাদ্য, যার মধ্যে চাল ৯ লাখ ১৪ হাজার টন। খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, কর্মসূচির জন্য চলতি অর্থবছর আরও ১৩ লাখ ১৯ হাজার টন খাদ্যের প্রয়োজন পড়বে। এর মধ্যে চালের চাহিদা আছে ১১ লাখ ৮৪ হাজার টন। বর্তমানে সরকারের গুদামে মজুদ সাড়ে ৭ লাখ টন খাদ্যের মধ্যে চাল আছে মাত্র ৫ লাখ ৪৪ হাজার টন। বাকিটা গম।
যে কারণে মজুদ কম :
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছরের এ মজুদ পরিস্থিতি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টন কম। গত বছরের এ সময়ে খাদ্য মজুদ ছিল প্রায় ১১ লাখ টন। মূলত আমন মৌসুম থেকে প্রত্যাশিত খাদ্য সংগ্রহ না হওয়ায় মজুদ কমছে। এতেই হুমকির মুখে সরকারের খাদ্য কর্মসূচি। জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুম থেকে প্রায় ২ লাখ টন ধান ও সাড়ে ৬ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল। এর বিপরীতে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ হাজার ৩১১ টন চাল ও মাত্র ২৫৭ টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। খাদ্য সংগ্রহ অভিযান সফল না হওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বলা হয়েছে, বর্তমানে ধান-চালের বাজারমূল্য সরকারি সংগ্রহমূল্যের চেয়ে বেশি থাকায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ সত্ত্বেও মিলাররা সরকারের সঙ্গে চুক্তি করতে আগ্রহী হচ্ছে না। চুক্তি সম্পাদনের জন্য নির্ধারিত তারিখ ৭ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সিদ্ধ চালের ক্ষেত্রে ২১ আর আতপ চালের ক্ষেত্রে ২৮ শতাংশ চুক্তি সম্পাদন হয়েছে। আমন উৎপাদন থেকে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ অভিযান সফল না হওয়ায় মূলত চালের আকাল পড়েছে গুদামে, যা পূর্ণ করার জন্য এখন বিদেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ টন খাদ্য আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বিষয়টি স্বীকার করে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, ‘৪ লাখ টন খাদ্য আমদানির বিষয় নিশ্চিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে ১ লাখ টন চালের ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ লাখ টন চাল আমদানির টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে।’ ভারত থেকে জি টু জি প্রক্রিয়ায় চাল আনার বিষয়ে সচিব বলেন, ‘আমরা গত বুধবার দেশটির খাদ্য সরবরাহ দফতরের সঙ্গে ভার্চুয়াল আলোচনা করেছি। তাদের কাছ থেকে আপাতত দেড় লাখ টন চাল আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রয়োজনে অন্য দেশ থেকেও চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সরকারের চুক্তিও রয়েছে।’ তবে অতিরিক্ত আমদানি কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কি না তাও দেখতে হচ্ছে মন্ত্রণালয়কে। আর সে জন্য একটি ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে খাদ্য আমদানির প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হচ্ছে। নাজমানারা খানুম বলেন, ‘আমদানির ক্ষেত্রে সরকার কৃষকের স্বার্থ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে। আমরা যদি দেখি আমদানির কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তবে সে মুহূর্তে বিদেশ থেকে খাদ্য আনা বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

হুমকিতে খাদ্য কর্মসূচি

আপলোড টাইম : ১০:৪০:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০

গুদামে মজুদ সাড়ে ৭ লাখ টন : আরও দরকার ১৩ লাখ টন
সমীকরণ প্রতিবেদন:
লক্ষ্য অনুযায়ী খাদ্য সংগ্রহ করতে না পারায় হুমকিতে সরকারের খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি। মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী চলতি অর্থবছর সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ডিসেম্বর-জুন মেয়াদে প্রায় ১৩ লাখ টন খাদ্যের প্রয়োজন। অথচ গুদামে মজুদ আছে মাত্র সাড়ে ৭ লাখ টন। সংশ্লিষ্টরা জানান, জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তত ১০ লাখ টন খাদ্য আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণের কথা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করা হয়েছে। ২১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়ে এ পরিকল্পনার কথা জানান খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে মন্ত্রণালয় যা বলেছে তা এ রকম : এ পর্যন্ত ১ লাখ টন খাদ্য আমদানির জন্য সরবরাহকারীর সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আরও দেড় লাখ টন খাদ্য আমদানির চুক্তি সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এ ছাড়া জি টু জি পদ্ধতিতে ভারত থেকে চাল আনার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সরকারের কর্মকর্তারা গতকাল নিশ্চিত করেছেন, ২৩ ডিসেম্বর (বুধবার) সকালে ভারতের সঙ্গে এ বিষয়ে ভার্চুয়ালি সভা সম্পন্ন হয়েছে। দেশটি দেড় লাখ টন চাল দেওয়ার বিষয়ে সরকারকে সম্মতি জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংগ্রহের মতো আমদানির এ উদ্যোগ কোনোভাবে সফল না হলে চলতি অর্থবছরে সরকারের খাদ্য কর্মসূচি ভেস্তে যেতে পারে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে খাদ্য ব্যবহার হয়। আর এ খাদ্যের চাহিদা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ডিসেম্বর-জুন প্রান্তিকে। কারণ সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির সবচেয়ে উপযুক্ত সময় এটি। এ সময় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় অবকাঠামো প্রকল্পের গতি বাড়ে। ফলে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চাল-গম দরকার হয়। এ কারণে যত দ্রুত সম্ভব চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এবার বন্যার কারণে আমনের উৎপাদন কম হয়েছে। সরকারের খাদ্য মজুদও কম। এ পরিস্থিতিতে আমরা আরও দুই মাস আগেই সরকারকে খাদ্য আমদানির পরামর্শ দিয়েছিলাম। এখন এটি বিলম্বিত হওয়ায় এরই মধ্যে বাজারে প্রভাব পড়েছে। আমনের মৌসুম চলার পরও চালের দাম বেশি।’
সিপিডির এ জ্যেষ্ঠ গবেষক বলেন, ‘করোনার কারণে নতুন করে অনেক লোক দরিদ্র হয়েছে। খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় তাদের অনেকে কিনে খেতে পারবে না। এদের জন্য সরকারের ভিজিএফ, ভিজিডি, ওএমএসসহ নানা কর্মসূচি নিতে হচ্ছে। আর এ ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য দ্রুত খাদ্য আমদানি করতে হবে। সরকারের আমদানি প্রক্রিয়া যত বিলম্বিত হবে তত বেশি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে। তখন দাম আরও বাড়িয়ে সুযোগ নেবে অসাধু ব্যবসায়ীরা।’ কত চাল লাগবে : মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী চলতি অর্থবছরে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিতে ২৪ লাখ ৪৩ হাজার টন খাদ্য বিতরণের লক্ষ্য নেওয়া হয়। যার মধ্যে ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৪০৪ টন চাল ও ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ টন গম রয়েছে। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ১১ লাখ ২৪ হাজার ৩৬২ টন খাদ্য, যার মধ্যে চাল ৯ লাখ ১৪ হাজার টন। খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, কর্মসূচির জন্য চলতি অর্থবছর আরও ১৩ লাখ ১৯ হাজার টন খাদ্যের প্রয়োজন পড়বে। এর মধ্যে চালের চাহিদা আছে ১১ লাখ ৮৪ হাজার টন। বর্তমানে সরকারের গুদামে মজুদ সাড়ে ৭ লাখ টন খাদ্যের মধ্যে চাল আছে মাত্র ৫ লাখ ৪৪ হাজার টন। বাকিটা গম।
যে কারণে মজুদ কম :
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছরের এ মজুদ পরিস্থিতি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টন কম। গত বছরের এ সময়ে খাদ্য মজুদ ছিল প্রায় ১১ লাখ টন। মূলত আমন মৌসুম থেকে প্রত্যাশিত খাদ্য সংগ্রহ না হওয়ায় মজুদ কমছে। এতেই হুমকির মুখে সরকারের খাদ্য কর্মসূচি। জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুম থেকে প্রায় ২ লাখ টন ধান ও সাড়ে ৬ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল। এর বিপরীতে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ হাজার ৩১১ টন চাল ও মাত্র ২৫৭ টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। খাদ্য সংগ্রহ অভিযান সফল না হওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বলা হয়েছে, বর্তমানে ধান-চালের বাজারমূল্য সরকারি সংগ্রহমূল্যের চেয়ে বেশি থাকায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ সত্ত্বেও মিলাররা সরকারের সঙ্গে চুক্তি করতে আগ্রহী হচ্ছে না। চুক্তি সম্পাদনের জন্য নির্ধারিত তারিখ ৭ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সিদ্ধ চালের ক্ষেত্রে ২১ আর আতপ চালের ক্ষেত্রে ২৮ শতাংশ চুক্তি সম্পাদন হয়েছে। আমন উৎপাদন থেকে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ অভিযান সফল না হওয়ায় মূলত চালের আকাল পড়েছে গুদামে, যা পূর্ণ করার জন্য এখন বিদেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ টন খাদ্য আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বিষয়টি স্বীকার করে খাদ্য সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, ‘৪ লাখ টন খাদ্য আমদানির বিষয় নিশ্চিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে ১ লাখ টন চালের ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ লাখ টন চাল আমদানির টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে।’ ভারত থেকে জি টু জি প্রক্রিয়ায় চাল আনার বিষয়ে সচিব বলেন, ‘আমরা গত বুধবার দেশটির খাদ্য সরবরাহ দফতরের সঙ্গে ভার্চুয়াল আলোচনা করেছি। তাদের কাছ থেকে আপাতত দেড় লাখ টন চাল আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রয়োজনে অন্য দেশ থেকেও চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সরকারের চুক্তিও রয়েছে।’ তবে অতিরিক্ত আমদানি কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কি না তাও দেখতে হচ্ছে মন্ত্রণালয়কে। আর সে জন্য একটি ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে খাদ্য আমদানির প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হচ্ছে। নাজমানারা খানুম বলেন, ‘আমদানির ক্ষেত্রে সরকার কৃষকের স্বার্থ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে। আমরা যদি দেখি আমদানির কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তবে সে মুহূর্তে বিদেশ থেকে খাদ্য আনা বন্ধ করে দেওয়া হবে।’