ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হুমকিতে খাদ্যনিরাপত্তা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৩৬:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ৭ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন: আবাদ কমার পাশাপাশি ফলন প্রায় ১০ শতাংশের বেশি কম হওয়ার ফলে এবার আউশ ও আমনে ১০ থেকে ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে। বিদেশ থেকে চাল আমদানিনির্ভরতাও একই সাথে আরো বাড়বে। দেশের মোট চালের চাহিদার প্রায় ৫৫ শতাংশ আসে বোরো ধান থেকে। আর বাকি ৪৫ শতাংশ আসে আউশ ও আমন ধান থেকে। এর মধ্যে আমন থেকে আসে ৩৬ থেকে ৩৮ শতাংশ চাল। আউশ থেকে আসে ৬ থেকে ৭ শতাংশ। কৃষি অর্থনীতিবিদ এবং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্যা ও অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর আউশ ও আমন ধানের আবাদ গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমেছে। তবে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবাদ এলাকা তেমন কমেনি। ফলনও ভালো হবে। ফলে চাল উৎপাদন কম হওয়ার শঙ্কা নেই। কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম জানান, বন্যা ও অতি খরার কারণে এবার আউশ ও আমন আবাদ কম হয়েছে। অন্য দিকে, আমন আবাদ দেরিতে হওয়ায় ফলন ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কম হবে। এ কারণে আমনে যেখানে এক কোটি ৫০ লাখ টন চাল উৎপাদন হওয়ার কথা সেখানে এক কোটি ৩৫ লাখ টনের মতো হতে পারে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ লাখ টন কম হওয়ার আশঙ্কা আছে। অন্য দিকে, আউশে যেখানে প্রায় ৩০ লাখ টন চাল হওয়ার কথা সেটি ২৫ লাখ টনের বেশি হবে বলে মনে হয় না। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ লাখ টন চাল কম হতে পারে।
এই কৃষি অর্থনীতিবিদ বলেন, এসব কথা চিন্তা করে শীতকালীন চিনা, কাউন, গম, ভুট্টা ও আলু আবাদে জোর দিতে হবে। যেহেতু চালের দাম বেড়ে গেছে তাই চালের বিকল্প হিসেবে এগুলোতে জোর দিতে হবে। গরিব মানুষ এগুলোর ওপর নির্ভর করবে। এগুলোর দাম যাতে কম থাকে সে জন্য আবাদ বাড়াতে হবে, যাতে মানুষ কম দামে তা কিনতে পারে। অন্য দিকে, আগামী বোরো মৌসুমকে গুরুত্ব দিতে হবে সরকারকে। কৃষি উপকরণ বিশেষ করে সার ও ডিজেলের দাম কমিয়ে দিতে হবে। কারণ, ৮০ শতাংশ সেচ হয় ডিজেলে। পারলে ডিজেলে নগদ সহায়তা দিতে হবে। এটা দিয়ে হলে আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। কারণ বিশ্বজুড়েই খাদ্যের মার্কেটে উচ্চমূল্য। যুদ্ধের কারণে সরবরাহও বিঘ্নিত। আমদানির ওপর নির্ভর করা ঠিক হবে না। এখনই খাদ্যের দাম ওঠানামা করছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের নিজস্ব উৎপাদনে নির্ভরশীল হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।
ডিএই’র পরিচালক (সরেজমিন উইং) হাবিবুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ শতাংশ জমির আউশ ধান কর্তন হয়েছে। এ বছর প্রায় ১১ লাখ ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়েছে। তার দাবি ফলনও ভালো। আগের বছর প্রায় ১৩ লাখ হেক্টর জমিতে আউশ হয়েছিল। আবাদ এলাকা কমলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে তিনি দাবি করেন। তবে, অন্য একটি সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে আউশ আবাদ ছিল প্রায় সাড়ে ১১ লাখ হেক্টরের মতো। এ বছর তা প্রায় এক লাখ হেক্টর কমেছে। আর ফলনও কমেছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন কমবে। হাবিবুর রহমান চৌধুরী জানান, এবার আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৫৯ লাখ হেক্টরের বেশি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৫ লাখ হেক্টরের বেশি চাষাবাদ হয়েছে। আমন চাষে দেরি হলেও আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি পূরণ হবে। আর ফলনও আশানরূপই হবে। উৎপাদন কম হবে না; বরং বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কৃষিবিদ। তবে, বেসরকারি তথ্য বলছে, আমন ধান চাষ এবার কয়েক লাখ হেক্টর কম হচ্ছে। আর দেরিতে হওয়ায় ফলনও আশানরূপ হবে না। কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বন্যা ও খরার কারণে এবার আউশ ও আমন আবাদ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কম হয়েছে। বিশেষ করে আমন আবাদ দেরিতে হওয়ায় ফলনও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কম হবে। কৃষির সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই দেশে চালের দাম বেশি। বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার বেসরকারিভাবে চাল আমদানিতে ব্যর্থ হয়ে সরকারিভাবেই ১০ লাখ টনের বেশি আমদানির ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু চলমান আউশ ও আমনের ফলন কম হলে খাদ্যনিরাপত্তা আরো হুমকিতে পড়বে। বিদেশ থেকে চাল আমদানিনির্ভরতা আরো বাড়বে, যা ডলারের সঙ্কটের কারণে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

হুমকিতে খাদ্যনিরাপত্তা

আপলোড টাইম : ০৪:৩৬:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদন: আবাদ কমার পাশাপাশি ফলন প্রায় ১০ শতাংশের বেশি কম হওয়ার ফলে এবার আউশ ও আমনে ১০ থেকে ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর ফলে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে। বিদেশ থেকে চাল আমদানিনির্ভরতাও একই সাথে আরো বাড়বে। দেশের মোট চালের চাহিদার প্রায় ৫৫ শতাংশ আসে বোরো ধান থেকে। আর বাকি ৪৫ শতাংশ আসে আউশ ও আমন ধান থেকে। এর মধ্যে আমন থেকে আসে ৩৬ থেকে ৩৮ শতাংশ চাল। আউশ থেকে আসে ৬ থেকে ৭ শতাংশ। কৃষি অর্থনীতিবিদ এবং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্যা ও অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর আউশ ও আমন ধানের আবাদ গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমেছে। তবে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবাদ এলাকা তেমন কমেনি। ফলনও ভালো হবে। ফলে চাল উৎপাদন কম হওয়ার শঙ্কা নেই। কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম জানান, বন্যা ও অতি খরার কারণে এবার আউশ ও আমন আবাদ কম হয়েছে। অন্য দিকে, আমন আবাদ দেরিতে হওয়ায় ফলন ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কম হবে। এ কারণে আমনে যেখানে এক কোটি ৫০ লাখ টন চাল উৎপাদন হওয়ার কথা সেখানে এক কোটি ৩৫ লাখ টনের মতো হতে পারে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ লাখ টন কম হওয়ার আশঙ্কা আছে। অন্য দিকে, আউশে যেখানে প্রায় ৩০ লাখ টন চাল হওয়ার কথা সেটি ২৫ লাখ টনের বেশি হবে বলে মনে হয় না। সব মিলিয়ে প্রায় ২০ লাখ টন চাল কম হতে পারে।
এই কৃষি অর্থনীতিবিদ বলেন, এসব কথা চিন্তা করে শীতকালীন চিনা, কাউন, গম, ভুট্টা ও আলু আবাদে জোর দিতে হবে। যেহেতু চালের দাম বেড়ে গেছে তাই চালের বিকল্প হিসেবে এগুলোতে জোর দিতে হবে। গরিব মানুষ এগুলোর ওপর নির্ভর করবে। এগুলোর দাম যাতে কম থাকে সে জন্য আবাদ বাড়াতে হবে, যাতে মানুষ কম দামে তা কিনতে পারে। অন্য দিকে, আগামী বোরো মৌসুমকে গুরুত্ব দিতে হবে সরকারকে। কৃষি উপকরণ বিশেষ করে সার ও ডিজেলের দাম কমিয়ে দিতে হবে। কারণ, ৮০ শতাংশ সেচ হয় ডিজেলে। পারলে ডিজেলে নগদ সহায়তা দিতে হবে। এটা দিয়ে হলে আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে হবে। কারণ বিশ্বজুড়েই খাদ্যের মার্কেটে উচ্চমূল্য। যুদ্ধের কারণে সরবরাহও বিঘ্নিত। আমদানির ওপর নির্ভর করা ঠিক হবে না। এখনই খাদ্যের দাম ওঠানামা করছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের নিজস্ব উৎপাদনে নির্ভরশীল হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।
ডিএই’র পরিচালক (সরেজমিন উইং) হাবিবুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ শতাংশ জমির আউশ ধান কর্তন হয়েছে। এ বছর প্রায় ১১ লাখ ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হয়েছে। তার দাবি ফলনও ভালো। আগের বছর প্রায় ১৩ লাখ হেক্টর জমিতে আউশ হয়েছিল। আবাদ এলাকা কমলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে তিনি দাবি করেন। তবে, অন্য একটি সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে আউশ আবাদ ছিল প্রায় সাড়ে ১১ লাখ হেক্টরের মতো। এ বছর তা প্রায় এক লাখ হেক্টর কমেছে। আর ফলনও কমেছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন কমবে। হাবিবুর রহমান চৌধুরী জানান, এবার আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৫৯ লাখ হেক্টরের বেশি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৫ লাখ হেক্টরের বেশি চাষাবাদ হয়েছে। আমন চাষে দেরি হলেও আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি পূরণ হবে। আর ফলনও আশানরূপই হবে। উৎপাদন কম হবে না; বরং বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কৃষিবিদ। তবে, বেসরকারি তথ্য বলছে, আমন ধান চাষ এবার কয়েক লাখ হেক্টর কম হচ্ছে। আর দেরিতে হওয়ায় ফলনও আশানরূপ হবে না। কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বন্যা ও খরার কারণে এবার আউশ ও আমন আবাদ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কম হয়েছে। বিশেষ করে আমন আবাদ দেরিতে হওয়ায় ফলনও ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কম হবে। কৃষির সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই দেশে চালের দাম বেশি। বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার বেসরকারিভাবে চাল আমদানিতে ব্যর্থ হয়ে সরকারিভাবেই ১০ লাখ টনের বেশি আমদানির ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু চলমান আউশ ও আমনের ফলন কম হলে খাদ্যনিরাপত্তা আরো হুমকিতে পড়বে। বিদেশ থেকে চাল আমদানিনির্ভরতা আরো বাড়বে, যা ডলারের সঙ্কটের কারণে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।