ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হুন্ডি বাড়ার আশঙ্কা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২০:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ মে ২০২২
  • / ৯ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন: ব্যাংকিং চ্যানেল ও খোলাবাজারের মধ্যে ডলারের দামে এখনো ৭-১০ টাকার ফারাক। ফলে ইনফরমাল (অবৈধ) চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে বেশি উপকৃত হচ্ছেন প্রবাসীরা। এ জন্য দেশে থাকা স্বজনদের কাছে টাকা পাঠাতে হুন্ডির দিকেই ঝুঁকছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও দেশের বাজারে ডলার কারসাজির ফলে প্রতি ডলারের দাম ১০২ টাকায় উঠে যায়। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তাৎক্ষণিক নজরদারি বাড়ায় দু-তিন দিনের ব্যবধানে এই রেট আবার ৯৬ টাকায় নেমে এসেছে। অথচ ডলারের ব্যাংক রেট এখনো ৮৭ টাকার নিচে। ফলে সরকারি ঘোষিত ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা যোগ হয়ে প্রতি লাখে অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা বেশি পান প্রবাসীরা। অন্যদিকে ইনফরমাল বা অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রতি লাখে ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা বেশি পাচ্ছেন তারা। এ জন্য তারা অবৈধ পথেই রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, গত ঈদুল ফিতরের সময় বৈধ পথে রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ছিল। ঈদের পরও এই প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, খোলাবাজারে ডলারের দাম হঠাৎ করে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় অবৈধ পথে রেমিট্যান্স বেড়ে যেতে পারে। এমনকি মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা বেড়াতে যাওয়া স্বজনদের কাছেও নগদ ডলার পাঠিয়ে দিচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, এমনকি সাইপ্রাস, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের দেশ ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এতে সামনের দিনগুলোতে বৈধ পথে বৈদেশিক মুদ্রা আসার পরিমাণ কমে যাবে। যার একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। এতে দেশের বাজারে ডলারের সংকট আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘খোলাবাজারে ডলারের দাম বাড়ার ফলে ইনফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে উদ্বুদ্ধ হওয়ার একটা আশঙ্কা তো থাকেই। এবার হঠাৎ করে যেহেতু খোলাবাজারে ডলারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে তাই অতি মুনাফার লোভে প্রবাসীদের অনেকেই অবৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হবেন। এটা ঠেকাতে হলে আমাদেও বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে। একই সঙ্গে সম্ভব হলে প্রণোদনার পরিমাণও কিছুটা বাড়িয়ে দিতে হবে।’

এদিকে অন্য একটি সূত্র জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে হুন্ডি তৎপরতা বেড়ে গেছে। এর ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সে নেতিবাচক ধাক্কা লাগতে পারে। ব্যাংকের চেয়ে ভালো রেট পাওয়া এবং খরচ কম হওয়ায় প্রবাসীদের একটি বড় অংশ অবৈধ পন্থা জেনেও হুন্ডির দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে অর্থ পাচারও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি আঁচও করতে পেরেছে। যার ফলে আসছে বাজেটে রেমিট্যান্সে নগদ প্রণোদনা বৃদ্ধির বিষয়ে অর্থ বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। একাধিক প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। এমনকি ২০২২-২৩ বাজেটে এ খাতে প্রণোদনা বাড়ানোর বিষয়েও ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সম্প্রতি অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এনবিআর ও অর্থ বিভাগের এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় জানানো হয়, ডলারের দর ব্যাংকের তুলনায় খোলাবাজারে দ্রুত বেড়েছে। হুন্ডি ও অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ার কারণে ডলারের অবৈধ বাজারে চাহিদা বেড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি দর আরও বাড়বে এমন আশায় অনেকে ডলার কিনে রাখছেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিংও বেড়েছে। অবশ্য তখন ডলারের দাম খুব একটা বাড়েনি। এ অনুষ্ঠানের সপ্তাহখানেক পরই ডলারের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। এক লাফে খোলাবাজারে ১০২ টাকায় উঠে যায় ডলারের রেট। যদিও দু-তিন দিন পরই তা আবার ৯৬ টাকায় নেমে এসেছে। দাম কমিয়ে ডলারের বাজারটাকে স্থিতিশীল করতে না পারলে হুন্ডি ও পাচার উভয়ই বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অসৎ ব্যবসায়ীরা ওভার ইনভয়েস করে রপ্তানি বেশি দেখিয়ে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির অবৈধ সুবিধা নিতে চাইবেন। অন্যদিকে আন্ডার ইনভয়েস করে পণ্য আমদানির আড়ালে ডলার পাচারও হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে। প্রথম ১০ মাসে ৭ লাখের বেশি লোক কাজের জন্য বিদেশে গেছেন। সরকার রেমিট্যান্সের জন্য প্রণোদনা দিচ্ছে। এর পরও আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্থ পাঠানো কমে গেছে। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৭৩১ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ কম। রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার পেছনে হুন্ডি বেড়ে যাওয়াকে অন্যতম কারণ মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রণোদনা থাকলেও ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানোর খরচ বিবেচনায় নিলে ব্যাংকের চেয়ে হুন্ডির মাধ্যমে অনেক বেশি দর পাচ্ছেন প্রবাসীরা। এ জন্য বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রক্রিয়া আরও সহজ করাসহ প্রণোদনা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৪১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আমদানির চেয়ে রপ্তানি অনেক কম হওয়ায় সরকারের চলতি হিসাবে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য মোটেও সুখকর নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছি ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যদিও সম্প্রতি দাম অনেকটা বেড়ে গেছে। আমদানি পর্যায়ে কতগুলো সিদ্ধান্ত এবং তদারকি বাড়ানো গেলে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’ তবে পাচার ও হুন্ডি ঠেকানোর জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

হুন্ডি বাড়ার আশঙ্কা

আপলোড টাইম : ০৯:২০:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ মে ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদন: ব্যাংকিং চ্যানেল ও খোলাবাজারের মধ্যে ডলারের দামে এখনো ৭-১০ টাকার ফারাক। ফলে ইনফরমাল (অবৈধ) চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে বেশি উপকৃত হচ্ছেন প্রবাসীরা। এ জন্য দেশে থাকা স্বজনদের কাছে টাকা পাঠাতে হুন্ডির দিকেই ঝুঁকছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও দেশের বাজারে ডলার কারসাজির ফলে প্রতি ডলারের দাম ১০২ টাকায় উঠে যায়। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের তাৎক্ষণিক নজরদারি বাড়ায় দু-তিন দিনের ব্যবধানে এই রেট আবার ৯৬ টাকায় নেমে এসেছে। অথচ ডলারের ব্যাংক রেট এখনো ৮৭ টাকার নিচে। ফলে সরকারি ঘোষিত ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা যোগ হয়ে প্রতি লাখে অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা বেশি পান প্রবাসীরা। অন্যদিকে ইনফরমাল বা অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠালে প্রতি লাখে ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা বেশি পাচ্ছেন তারা। এ জন্য তারা অবৈধ পথেই রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, গত ঈদুল ফিতরের সময় বৈধ পথে রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ছিল। ঈদের পরও এই প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, খোলাবাজারে ডলারের দাম হঠাৎ করে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় অবৈধ পথে রেমিট্যান্স বেড়ে যেতে পারে। এমনকি মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা বেড়াতে যাওয়া স্বজনদের কাছেও নগদ ডলার পাঠিয়ে দিচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, এমনকি সাইপ্রাস, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের দেশ ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এতে সামনের দিনগুলোতে বৈধ পথে বৈদেশিক মুদ্রা আসার পরিমাণ কমে যাবে। যার একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। এতে দেশের বাজারে ডলারের সংকট আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘খোলাবাজারে ডলারের দাম বাড়ার ফলে ইনফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে উদ্বুদ্ধ হওয়ার একটা আশঙ্কা তো থাকেই। এবার হঠাৎ করে যেহেতু খোলাবাজারে ডলারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে তাই অতি মুনাফার লোভে প্রবাসীদের অনেকেই অবৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হবেন। এটা ঠেকাতে হলে আমাদেও বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে। একই সঙ্গে সম্ভব হলে প্রণোদনার পরিমাণও কিছুটা বাড়িয়ে দিতে হবে।’

এদিকে অন্য একটি সূত্র জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে হুন্ডি তৎপরতা বেড়ে গেছে। এর ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সে নেতিবাচক ধাক্কা লাগতে পারে। ব্যাংকের চেয়ে ভালো রেট পাওয়া এবং খরচ কম হওয়ায় প্রবাসীদের একটি বড় অংশ অবৈধ পন্থা জেনেও হুন্ডির দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে অর্থ পাচারও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি আঁচও করতে পেরেছে। যার ফলে আসছে বাজেটে রেমিট্যান্সে নগদ প্রণোদনা বৃদ্ধির বিষয়ে অর্থ বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। একাধিক প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। এমনকি ২০২২-২৩ বাজেটে এ খাতে প্রণোদনা বাড়ানোর বিষয়েও ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সম্প্রতি অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এনবিআর ও অর্থ বিভাগের এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় জানানো হয়, ডলারের দর ব্যাংকের তুলনায় খোলাবাজারে দ্রুত বেড়েছে। হুন্ডি ও অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ার কারণে ডলারের অবৈধ বাজারে চাহিদা বেড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি দর আরও বাড়বে এমন আশায় অনেকে ডলার কিনে রাখছেন। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে আমদানিতে ওভার ইনভয়েসিংও বেড়েছে। অবশ্য তখন ডলারের দাম খুব একটা বাড়েনি। এ অনুষ্ঠানের সপ্তাহখানেক পরই ডলারের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। এক লাফে খোলাবাজারে ১০২ টাকায় উঠে যায় ডলারের রেট। যদিও দু-তিন দিন পরই তা আবার ৯৬ টাকায় নেমে এসেছে। দাম কমিয়ে ডলারের বাজারটাকে স্থিতিশীল করতে না পারলে হুন্ডি ও পাচার উভয়ই বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অসৎ ব্যবসায়ীরা ওভার ইনভয়েস করে রপ্তানি বেশি দেখিয়ে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির অবৈধ সুবিধা নিতে চাইবেন। অন্যদিকে আন্ডার ইনভয়েস করে পণ্য আমদানির আড়ালে ডলার পাচারও হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে। প্রথম ১০ মাসে ৭ লাখের বেশি লোক কাজের জন্য বিদেশে গেছেন। সরকার রেমিট্যান্সের জন্য প্রণোদনা দিচ্ছে। এর পরও আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্থ পাঠানো কমে গেছে। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৭৩১ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ কম। রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার পেছনে হুন্ডি বেড়ে যাওয়াকে অন্যতম কারণ মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রণোদনা থাকলেও ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানোর খরচ বিবেচনায় নিলে ব্যাংকের চেয়ে হুন্ডির মাধ্যমে অনেক বেশি দর পাচ্ছেন প্রবাসীরা। এ জন্য বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রক্রিয়া আরও সহজ করাসহ প্রণোদনা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৪১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আমদানির চেয়ে রপ্তানি অনেক কম হওয়ায় সরকারের চলতি হিসাবে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য মোটেও সুখকর নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছি ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যদিও সম্প্রতি দাম অনেকটা বেড়ে গেছে। আমদানি পর্যায়ে কতগুলো সিদ্ধান্ত এবং তদারকি বাড়ানো গেলে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’ তবে পাচার ও হুন্ডি ঠেকানোর জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন।