ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হিজড়াদের দলে ভেড়াতে দুই যুবকের লিঙ্গ কর্তন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০২:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট ২০১৯
  • / ২৪৬ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:
সাগর হোসেন আর প্রান্ত সরকার, টগবগে দুই যুবক। একজনের বয়স ২২, অন্যজনের ১৮ বছর। সাগর পড়ালেখা করেন, আর প্রান্ত সরকার পড়তেন ঝিনাইদহ সরকারি বালক বিদ্যালয়ে। দুজনেরই চলাফেরা সমাজে অন্যদের মতোই। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে চলতেন তাঁরা। কোনো কিছুতেই পিছিয়ে থাকেননি এ দুই যুবক। ঝিনাইদহ শহরে ছিল তাঁদের চলাফেরা। এরই মধ্যে চাকলাপাড়ার এক হিজড়া তাঁদের দুজনকে কৌশলে দলে ভেড়ান। তাঁদের দিয়ে খারাপ কাজসহ নেশাগ্রস্ত করে তোলে ওই হিজড়া। স্কুল ছাড়েন প্রান্ত। জড়িয়ে পড়েন অপরাধে। প্রান্ত সরকারের বাবা সাইকেল মিস্ত্রি উজ্জ¦ল সরকার উপায় না পেয়ে ছেলেকে একটি মামলা দিয়ে জেলে পাঠান। জেলে যাওয়ার পর হিজড়াদের গাত্রদাহ শুরু হয়। প্রান্ত সরকার হিজড়া না হলেও তাঁর জন্মনিবন্ধন, হিজড়া সনদ ও সমাজসেবার ভুয়া প্রত্যয়নপত্র জোগাড় করে তাঁকে জেল থেকে বের করেন আকাশি নামের এক হিজড়া। প্রান্ত সরকারের জামিনে সহায়তা করেন আইনজীবী অ্যাড. রবিউল ইসলাম। আদালতে প্রান্ত সরকারের মায়ের একটি ভুয়া আবেদনপত্রও জমা দেন হিজড়াদের আইনজীবী অ্যাড. রবিউল। জামিনে মুক্ত হয়ে প্রান্ত বাড়ি না ফেরায় সন্তানের জন্য পাগল হয়ে যান বাবা উজ্জ্বল সরকার। এরই মধ্যে প্রান্ত ও সাগরকে অপহরণ করে নিয়ে যায় হিজড়াদের একটি গ্রুপ। খুলনা অঞ্চলের একটি গুদাম ঘরে আটকে রেখে অচেতন করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দুজনেরই লিঙ্গ পরিবর্তন করে দিয়েছেন হিজড়ারা। এখন তাঁরা গুরুতর অসুস্থ। ওই দুজনের দাবি, কেন তাঁদের জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দেওয়া হলো। নিজেদের দলে ভেড়াতে হিজড়ারা কেন তাঁদের জীবন ধ্বংস করে দিল। এখন তাঁরা সমাজে কীভাবে বেঁচে থাকবেন। তাঁরা এ অপরাধের বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন। আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য পিবিআই সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছেন বলে জানান ওই দুই যুবক।
ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে সাগর হোসেন (২২)। ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল। পারিবারিক কারণে মাঝে কিছুদিন পড়ালেখা বন্ধ ছিল। পরে ঝিনাইদহ সরকারি বালক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। দশম শ্রেণিতে পড়ালেখা করছিলেন তিনি। সাগর জানান, তাঁর কণ্ঠ কিছুটা নারীদের কণ্ঠের মতো। এ কারণে হিজড়ারা তাঁর পিছু নিয়ে তাঁদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেন। বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরে ওই হিজড়াদের এড়িয়ে চলতেন। সাগর হোসেন জানান, গত ১২ জুলাই রাত আনুমানিক ৯টার দিকে তিনি ঝিনাইদহ শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে আরাপপুর এলাকায় যাচ্ছিলেন। পথে নবগঙ্গা নদীর ওপর ব্রিজ থেকে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর খুলনা ফুলতলা এলাকায় নিয়ে একটি গুদাম ঘরে আটকে রাখে। ওই রাতেই তাঁকে অচেতন করে ডাক্তারের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করা হয়। জ্ঞান ফেরার পর তিনি দেখতে পান, তাঁর পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে। তিনি আরও দেখতে পান, পাশে প্রান্ত সরকার নামের আরেকজনকে একই অবস্থা করে ফেলে রাখা হয়েছে। এরপর তাঁদের এলাকায় ফেরত নিয়ে আসা হয়। তাঁদের শরীর খারাপ হওয়ায় হিজড়ারা তাঁদের ২৫ জুলাই ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান এবং সেখানে ফেলে রেখে হিজড়ারা পালিয়ে যান। পরে তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
প্রান্ত সরকার (১৮) ঝিনাইদহ শহরের মহিষাকু-ু এলাকার উজ্জ্বল সরকারের ছেলে। প্রান্ত জানান, হিজড়ারা গত ১১ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাঁকে শহরের তসলিম ক্লিনিকের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যান। এরপর ফুলতলা এলাকায় নিয়ে অচেতন করে তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করেন। তিনি জানান, রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি। তিনি অন্য দশজনের মতোই ছিলেন। এখন তাঁর সমাজে কোনো ঠাঁই নেই। পরিবারও তাঁদের মেনে নিতে পারছে না। এখন কোথায় যাবেন, তা খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। সারাক্ষণ মুখ লুকিয়ে তিনি চলাফেরা করছেন।
সাগর ও প্রান্ত জানান, তাঁরা এ অন্যায়ের বিচার চেয়ে ঝিনাইদহ আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেছেন। এ মামলায় তাঁরা আসামি করেছেন শহরের কাঞ্চননগর এলাকার বাসিন্দা আকাশি ওরফে খোকন (৪৫), ভুটিয়ারগাতি এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারা ওরফে আবু সাঈদ (৪২), উদয়পুর এলাকার বাসিন্দা কারিশমা ওরফে লিয়াকত (৩০) ও ব্যাপারীপাড়া এলাকার মনোয়ারাকে (৫০)। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী জানান, তাঁরা এ অন্যায়ের বিচার চেয়ে আদালতে পৃথক মামলা করেছেন। আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আইনজীবী আরও বলেন, এ ঘটনা একটি জঘন্যতম অপরাধ, এর উপযুক্ত বিচার হওয়া জরুরি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

হিজড়াদের দলে ভেড়াতে দুই যুবকের লিঙ্গ কর্তন

আপলোড টাইম : ০৯:০২:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ অগাস্ট ২০১৯

ঝিনাইদহ অফিস:
সাগর হোসেন আর প্রান্ত সরকার, টগবগে দুই যুবক। একজনের বয়স ২২, অন্যজনের ১৮ বছর। সাগর পড়ালেখা করেন, আর প্রান্ত সরকার পড়তেন ঝিনাইদহ সরকারি বালক বিদ্যালয়ে। দুজনেরই চলাফেরা সমাজে অন্যদের মতোই। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে চলতেন তাঁরা। কোনো কিছুতেই পিছিয়ে থাকেননি এ দুই যুবক। ঝিনাইদহ শহরে ছিল তাঁদের চলাফেরা। এরই মধ্যে চাকলাপাড়ার এক হিজড়া তাঁদের দুজনকে কৌশলে দলে ভেড়ান। তাঁদের দিয়ে খারাপ কাজসহ নেশাগ্রস্ত করে তোলে ওই হিজড়া। স্কুল ছাড়েন প্রান্ত। জড়িয়ে পড়েন অপরাধে। প্রান্ত সরকারের বাবা সাইকেল মিস্ত্রি উজ্জ¦ল সরকার উপায় না পেয়ে ছেলেকে একটি মামলা দিয়ে জেলে পাঠান। জেলে যাওয়ার পর হিজড়াদের গাত্রদাহ শুরু হয়। প্রান্ত সরকার হিজড়া না হলেও তাঁর জন্মনিবন্ধন, হিজড়া সনদ ও সমাজসেবার ভুয়া প্রত্যয়নপত্র জোগাড় করে তাঁকে জেল থেকে বের করেন আকাশি নামের এক হিজড়া। প্রান্ত সরকারের জামিনে সহায়তা করেন আইনজীবী অ্যাড. রবিউল ইসলাম। আদালতে প্রান্ত সরকারের মায়ের একটি ভুয়া আবেদনপত্রও জমা দেন হিজড়াদের আইনজীবী অ্যাড. রবিউল। জামিনে মুক্ত হয়ে প্রান্ত বাড়ি না ফেরায় সন্তানের জন্য পাগল হয়ে যান বাবা উজ্জ্বল সরকার। এরই মধ্যে প্রান্ত ও সাগরকে অপহরণ করে নিয়ে যায় হিজড়াদের একটি গ্রুপ। খুলনা অঞ্চলের একটি গুদাম ঘরে আটকে রেখে অচেতন করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দুজনেরই লিঙ্গ পরিবর্তন করে দিয়েছেন হিজড়ারা। এখন তাঁরা গুরুতর অসুস্থ। ওই দুজনের দাবি, কেন তাঁদের জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দেওয়া হলো। নিজেদের দলে ভেড়াতে হিজড়ারা কেন তাঁদের জীবন ধ্বংস করে দিল। এখন তাঁরা সমাজে কীভাবে বেঁচে থাকবেন। তাঁরা এ অপরাধের বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন। আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য পিবিআই সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছেন বলে জানান ওই দুই যুবক।
ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে সাগর হোসেন (২২)। ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল। পারিবারিক কারণে মাঝে কিছুদিন পড়ালেখা বন্ধ ছিল। পরে ঝিনাইদহ সরকারি বালক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। দশম শ্রেণিতে পড়ালেখা করছিলেন তিনি। সাগর জানান, তাঁর কণ্ঠ কিছুটা নারীদের কণ্ঠের মতো। এ কারণে হিজড়ারা তাঁর পিছু নিয়ে তাঁদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেন। বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরে ওই হিজড়াদের এড়িয়ে চলতেন। সাগর হোসেন জানান, গত ১২ জুলাই রাত আনুমানিক ৯টার দিকে তিনি ঝিনাইদহ শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে আরাপপুর এলাকায় যাচ্ছিলেন। পথে নবগঙ্গা নদীর ওপর ব্রিজ থেকে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর খুলনা ফুলতলা এলাকায় নিয়ে একটি গুদাম ঘরে আটকে রাখে। ওই রাতেই তাঁকে অচেতন করে ডাক্তারের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করা হয়। জ্ঞান ফেরার পর তিনি দেখতে পান, তাঁর পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে। তিনি আরও দেখতে পান, পাশে প্রান্ত সরকার নামের আরেকজনকে একই অবস্থা করে ফেলে রাখা হয়েছে। এরপর তাঁদের এলাকায় ফেরত নিয়ে আসা হয়। তাঁদের শরীর খারাপ হওয়ায় হিজড়ারা তাঁদের ২৫ জুলাই ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান এবং সেখানে ফেলে রেখে হিজড়ারা পালিয়ে যান। পরে তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
প্রান্ত সরকার (১৮) ঝিনাইদহ শহরের মহিষাকু-ু এলাকার উজ্জ্বল সরকারের ছেলে। প্রান্ত জানান, হিজড়ারা গত ১১ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাঁকে শহরের তসলিম ক্লিনিকের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যান। এরপর ফুলতলা এলাকায় নিয়ে অচেতন করে তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করেন। তিনি জানান, রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি। তিনি অন্য দশজনের মতোই ছিলেন। এখন তাঁর সমাজে কোনো ঠাঁই নেই। পরিবারও তাঁদের মেনে নিতে পারছে না। এখন কোথায় যাবেন, তা খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। সারাক্ষণ মুখ লুকিয়ে তিনি চলাফেরা করছেন।
সাগর ও প্রান্ত জানান, তাঁরা এ অন্যায়ের বিচার চেয়ে ঝিনাইদহ আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেছেন। এ মামলায় তাঁরা আসামি করেছেন শহরের কাঞ্চননগর এলাকার বাসিন্দা আকাশি ওরফে খোকন (৪৫), ভুটিয়ারগাতি এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারা ওরফে আবু সাঈদ (৪২), উদয়পুর এলাকার বাসিন্দা কারিশমা ওরফে লিয়াকত (৩০) ও ব্যাপারীপাড়া এলাকার মনোয়ারাকে (৫০)। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী জানান, তাঁরা এ অন্যায়ের বিচার চেয়ে আদালতে পৃথক মামলা করেছেন। আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আইনজীবী আরও বলেন, এ ঘটনা একটি জঘন্যতম অপরাধ, এর উপযুক্ত বিচার হওয়া জরুরি।