ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হাসপাতাল এখন ময়লা-আবর্জনার স্তূপ : স্বাস্থ্যঝুঁকি চরমে!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:০১:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২০
  • / ১৪৫ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় দুর্গন্ধময় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের পরিবেশ
আফজালুল হক:
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ময়লা-আবর্জনা ও অপরিষ্কার টয়লেটের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে হাসপাতালের রোগী ও রোগীর স্বজনেরা। বেড়েছে মশার উপদ্রবও। এতে রোগী ও স্বজনদের ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় দীর্ঘদিন যাবত হাসপাতাল ওয়ার্ডের টয়লেট, হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে এ দুর্গন্ধময় পরিবেশ চলে আসছে। নেই কোনো স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা। এমনকি টয়লেটের দরজা অর্ধেক ভাঙা। এতে করে একদিকে রোগীদের সুস্থ হতে যেমন সময় লাগছে বেশি, অন্যদিকে রোগী দেখতে আসা স্বজনেরা এই গন্ধময় পরিস্থিতিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন প্রতিনিয়ত। এতে করে হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রোগী ও স্বজনেরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও ওয়ার্ডে প্রবেশের মুখেই রয়েছে প্রচণ্ড দুর্গন্ধময় পরিবেশ। রয়েছে যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ এবং এর থেকে আসা প্রচণ্ড দুর্গন্ধ। যা নাকে-মুখে কাপড় দিয়েও সহ্য করা দায়। এছাড়াও হাসপাতালের জেনারেটর রুমের সামনে, লাশঘরের পাশে ও মর্গের সামনে ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি। সদর হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডের টয়লেট অপরিচ্ছন্ন। প্রায় টয়লেটের দরজা অর্ধেক আছে বাকি অংশ নেই। কোনোটির দরজাও নেই, এমনকি কোনো টয়লেটেই বদনা/মগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে এসব আবর্জনা পরিস্কার না হওয়ায় হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আবার এসব নোংরা-আবর্জনায় বৃষ্টির পানি জমে মশার জন্ম হচ্ছে এবং বাড়ছে উপদ্রব। যার কারণে ওয়ার্ডের রোগী ও তাদের স্বজনেরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
হাসপাতালে মেডিসিন (পুরুষ) ওয়ার্ডে ভর্তি নুরুল ইসলাম নামের এক রোগী বলেন, ‘গত দুই দিন যাবত ভর্তি আছি। হাসপাতালের টয়লেটসহ গ্রিল অপরিস্কার। প্রচণ্ড দুর্গন্ধময় পরিবেশ। এমনকি টয়লেটের দরজা ভাঙা ও ময়লাভর্তি। এতে করে মশার উপদ্রপও প্রচুর।’ মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি নাসরিন খাতুন বলেন, ‘নোংরা অপরিষ্কার টয়লেটে দুর্গন্ধের কারণে যেতে হয় নাক চেপে। টয়লেটের সবখানে উপচে পড়ে আছে মলমূত্র। রোগীদের কথা আপাতত বাদ, সুস্থ লোক ওই টয়লেটে গেলে অসুস্থ হয়ে যাবে। আর রোগী হবে আরও অসুস্থ।’
পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডের আকিমুল ইসলাম নামের এক রোগী জানান, পেটে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর বেডটি টয়লেটের পাশে হওয়ায় দুর্গন্ধের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর তিনি নাক চেপে ধরে রাখেন। কর্তৃপক্ষের এসব বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।
মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের এক রোগীর স্বজন জনি মিয়া জানান, ‘কয়েকদিন আগে আমার বড় ভাইয়ের কিডনিজনিত সমস্যার কারণে ভর্তি করিয়েছি। দুই দিন ধরে হসপাতালে আছি। ওয়ার্ডের ভেতরটা তেমন পরিষ্কার না। টয়লেট থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। এ অবস্থায় আমরা সুস্থ মানুষেরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছি।’
এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সাজিদ হাসান বলেন, ‘আমরা সবসময়ই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাচ্ছি। টয়লেটের দরজার বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের আরও সচেতন হতে হবে। অতিরিক্ত রোগী ও দর্শনার্থীকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আমাদের পর্যালোচনা অনুযায়ী দিন-রাত মিলিয়ে একজন রোগীর সঙ্গে দেখা করতে অন্তত ৭-৮ জন হাসপাতালে আসেন। এতে করে টয়লেটগুলোতে অনেক বেশি চাপ পড়ে। তাই ময়লা-আবর্জনা থাকে। জনবল কম থাকায় আমাদের পরিচ্ছন্নকর্মীরা সবসময় থাকতে পারে না। তবে তারা সবসময়ই চেষ্টা করছেন সেবা প্রদান করার। এছাড়াও হাসপাতালের টয়লেটের দরজার ও বিভিন্ন সরঞ্জামের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগকে জানিয়েছি।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

হাসপাতাল এখন ময়লা-আবর্জনার স্তূপ : স্বাস্থ্যঝুঁকি চরমে!

আপলোড টাইম : ১১:০১:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২০

স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় দুর্গন্ধময় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের পরিবেশ
আফজালুল হক:
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ময়লা-আবর্জনা ও অপরিষ্কার টয়লেটের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে হাসপাতালের রোগী ও রোগীর স্বজনেরা। বেড়েছে মশার উপদ্রবও। এতে রোগী ও স্বজনদের ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় দীর্ঘদিন যাবত হাসপাতাল ওয়ার্ডের টয়লেট, হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে এ দুর্গন্ধময় পরিবেশ চলে আসছে। নেই কোনো স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা। এমনকি টয়লেটের দরজা অর্ধেক ভাঙা। এতে করে একদিকে রোগীদের সুস্থ হতে যেমন সময় লাগছে বেশি, অন্যদিকে রোগী দেখতে আসা স্বজনেরা এই গন্ধময় পরিস্থিতিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন প্রতিনিয়ত। এতে করে হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রোগী ও স্বজনেরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগ কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও ওয়ার্ডে প্রবেশের মুখেই রয়েছে প্রচণ্ড দুর্গন্ধময় পরিবেশ। রয়েছে যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ এবং এর থেকে আসা প্রচণ্ড দুর্গন্ধ। যা নাকে-মুখে কাপড় দিয়েও সহ্য করা দায়। এছাড়াও হাসপাতালের জেনারেটর রুমের সামনে, লাশঘরের পাশে ও মর্গের সামনে ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি। সদর হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডের টয়লেট অপরিচ্ছন্ন। প্রায় টয়লেটের দরজা অর্ধেক আছে বাকি অংশ নেই। কোনোটির দরজাও নেই, এমনকি কোনো টয়লেটেই বদনা/মগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে এসব আবর্জনা পরিস্কার না হওয়ায় হাসপাতালের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আবার এসব নোংরা-আবর্জনায় বৃষ্টির পানি জমে মশার জন্ম হচ্ছে এবং বাড়ছে উপদ্রব। যার কারণে ওয়ার্ডের রোগী ও তাদের স্বজনেরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
হাসপাতালে মেডিসিন (পুরুষ) ওয়ার্ডে ভর্তি নুরুল ইসলাম নামের এক রোগী বলেন, ‘গত দুই দিন যাবত ভর্তি আছি। হাসপাতালের টয়লেটসহ গ্রিল অপরিস্কার। প্রচণ্ড দুর্গন্ধময় পরিবেশ। এমনকি টয়লেটের দরজা ভাঙা ও ময়লাভর্তি। এতে করে মশার উপদ্রপও প্রচুর।’ মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি নাসরিন খাতুন বলেন, ‘নোংরা অপরিষ্কার টয়লেটে দুর্গন্ধের কারণে যেতে হয় নাক চেপে। টয়লেটের সবখানে উপচে পড়ে আছে মলমূত্র। রোগীদের কথা আপাতত বাদ, সুস্থ লোক ওই টয়লেটে গেলে অসুস্থ হয়ে যাবে। আর রোগী হবে আরও অসুস্থ।’
পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডের আকিমুল ইসলাম নামের এক রোগী জানান, পেটে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর বেডটি টয়লেটের পাশে হওয়ায় দুর্গন্ধের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর তিনি নাক চেপে ধরে রাখেন। কর্তৃপক্ষের এসব বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।
মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডের এক রোগীর স্বজন জনি মিয়া জানান, ‘কয়েকদিন আগে আমার বড় ভাইয়ের কিডনিজনিত সমস্যার কারণে ভর্তি করিয়েছি। দুই দিন ধরে হসপাতালে আছি। ওয়ার্ডের ভেতরটা তেমন পরিষ্কার না। টয়লেট থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। এ অবস্থায় আমরা সুস্থ মানুষেরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছি।’
এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সাজিদ হাসান বলেন, ‘আমরা সবসময়ই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাচ্ছি। টয়লেটের দরজার বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের আরও সচেতন হতে হবে। অতিরিক্ত রোগী ও দর্শনার্থীকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আমাদের পর্যালোচনা অনুযায়ী দিন-রাত মিলিয়ে একজন রোগীর সঙ্গে দেখা করতে অন্তত ৭-৮ জন হাসপাতালে আসেন। এতে করে টয়লেটগুলোতে অনেক বেশি চাপ পড়ে। তাই ময়লা-আবর্জনা থাকে। জনবল কম থাকায় আমাদের পরিচ্ছন্নকর্মীরা সবসময় থাকতে পারে না। তবে তারা সবসময়ই চেষ্টা করছেন সেবা প্রদান করার। এছাড়াও হাসপাতালের টয়লেটের দরজার ও বিভিন্ন সরঞ্জামের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগকে জানিয়েছি।’