ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হত্যা গুম নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদন; দায়মুক্তির সংস্কৃতি বন্ধ হোক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১১:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২
  • / ১০ বার পড়া হয়েছে

‘২০২১ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শিরোনামে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দীর্ঘ প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে এ দেশের মানুষের অধিকারহারা অবস্থার করুণ চিত্র। খুন গুম হেফাজতে মৃত্যু বা ভয়াবহ হয়রানির ঘটনা আগের বছরগুলোর মতো ২০২১ সালেও ঘটেছে। এ ধরনের একটি আইনবহির্ভূত ঘটনা ঘটলেই দেশে তোলপাড় হওয়ার কথা। অথচ প্রকাশ্যে এসব ঘটনা ঘটেছে; কিছুই হয়নি। এর কারণও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তা হলো, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার গুরুতর অবনতি। আন্তর্জাতিক সংবাদ প্রতিষ্ঠান আল জাজিরা বাংলাদেশের নেতৃত্বের বেআইনি কর্মকা- নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশের পর দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক আক্ষেপ করে তার পত্রিকায় নিজেদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে সম্পাদকীয় লেখেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, মুক্ত মিডিয়া হলে আমরাও আলজাজিরার রিপোর্টের আরো গভীরে যেতাম এবং বিশ্লেষণ করতাম পয়েন্ট ধরে ধরে। একই কারণে ক্রমবর্ধমান হারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরও দেশে সবাই নীরবতার নীতি বেছে নিয়েছেন।
২০২১ সালে দেশে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। হত্যা ও গুমের ঘটনা সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টরাই চালিয়েছে। বেপরোয়া গ্রেফতার, আটক অব্যাহত ছিল। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা এর নিশানা। বিদেশে অবস্থানরতদের বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ। সরকারের নিষ্ঠুর কর্মকা-ে ভুক্তভোগীরা ফরিয়াদ করারও অধিকার রাখছেন না। এ অসহায়ত্ব বছরের পর বছর ধরে চলছে। অন্য দিকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী পাচ্ছে দায়মুক্তি। এর প্রমাণ, কোনো ঘটনারই তদন্ত না হওয়া। মার্কিন রিপোর্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিচারের বিষয়টি এসেছে। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এতে স্বচ্ছতা, প্রামাণিকতা ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এসেছে তার চিকিৎসা নিয়ে হয়রানির প্রসঙ্গও। বিচার বিভাগের গুরুতর সমস্যা এবং ব্যক্তিবিশেষের অপরাধের দায়ে পরিবারের সদস্যদের শাস্তি দেয়ার বিষয়টিও বাদ পড়েনি। রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর অকারণ বিধিনিষেধ এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠানে বাধা দেয়া হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ ছাড়াও সাংবাদিকদের নির্যাতন চালিয়ে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মিডিয়া বশ করা হয়। অন্য দিকে নতুন মিডিয়ার অনুমোদন বা নবায়ন দেয়া হয় কেবল সরকারের পছন্দের লোকদের। ইন্টারনেটের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপেরও সবরকম চেষ্টা করে সরকার। ২০১৮ সালের নির্বাচনের অনিয়ম, বলপ্রয়োগ, দুর্নীতি নিয়েও মন্তব্য করা হয়েছে রিপোর্টে। নিপীড়িত মানুষ ন্যায়বিচার পেলে ভুক্তভোগীদের পক্ষে প্রবল জনমত গড়ে উঠতে পারত। সেটি না হয়ে, বরং নির্যাতিতরা অপমানিত লাঞ্ছিত হয়ে চুপ থাকতে বাধ্য হয়েছেন। সরকার নিপীড়নকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে মানবাধিকার প্রতিবেদনে গুরুতর আকারে আসার কথা ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র যখন সুনির্দিষ্ট অপরাধের ভিত্তিতে আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে; বিচার না পাওয়া মানুষের জন্য সেটি কিছুটা স্বস্তি এনে দেয়। প্রতিবাদ করতে না পারা ফরিয়াদিদের কথা মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্টে সুনির্দিষ্টভাবে আসায় সেটিও তাদের স্বস্তির কারণ হয়েছে। আমরা মনে করি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সুবিচার হবে। তা অবশ্যই বাইরের কারো কাছে যাওয়া উচিত হবে না। তাই সবার প্রত্যাশা, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। কোনো কিছু দীর্ঘ দিন ধামচাপা দিয়ে রাখা যায় না, সরকারের এই বোধোদয় হবে। আশা করব, সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। নতুন করে যাতে আর কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা না ঘটে তা-ও নিশ্চিত করতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

হত্যা গুম নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদন; দায়মুক্তির সংস্কৃতি বন্ধ হোক

আপলোড টাইম : ০৯:১১:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২

‘২০২১ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শিরোনামে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দীর্ঘ প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে এ দেশের মানুষের অধিকারহারা অবস্থার করুণ চিত্র। খুন গুম হেফাজতে মৃত্যু বা ভয়াবহ হয়রানির ঘটনা আগের বছরগুলোর মতো ২০২১ সালেও ঘটেছে। এ ধরনের একটি আইনবহির্ভূত ঘটনা ঘটলেই দেশে তোলপাড় হওয়ার কথা। অথচ প্রকাশ্যে এসব ঘটনা ঘটেছে; কিছুই হয়নি। এর কারণও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তা হলো, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার গুরুতর অবনতি। আন্তর্জাতিক সংবাদ প্রতিষ্ঠান আল জাজিরা বাংলাদেশের নেতৃত্বের বেআইনি কর্মকা- নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশের পর দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক আক্ষেপ করে তার পত্রিকায় নিজেদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে সম্পাদকীয় লেখেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, মুক্ত মিডিয়া হলে আমরাও আলজাজিরার রিপোর্টের আরো গভীরে যেতাম এবং বিশ্লেষণ করতাম পয়েন্ট ধরে ধরে। একই কারণে ক্রমবর্ধমান হারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরও দেশে সবাই নীরবতার নীতি বেছে নিয়েছেন।
২০২১ সালে দেশে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। হত্যা ও গুমের ঘটনা সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টরাই চালিয়েছে। বেপরোয়া গ্রেফতার, আটক অব্যাহত ছিল। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা এর নিশানা। বিদেশে অবস্থানরতদের বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ। সরকারের নিষ্ঠুর কর্মকা-ে ভুক্তভোগীরা ফরিয়াদ করারও অধিকার রাখছেন না। এ অসহায়ত্ব বছরের পর বছর ধরে চলছে। অন্য দিকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী পাচ্ছে দায়মুক্তি। এর প্রমাণ, কোনো ঘটনারই তদন্ত না হওয়া। মার্কিন রিপোর্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিচারের বিষয়টি এসেছে। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এতে স্বচ্ছতা, প্রামাণিকতা ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এসেছে তার চিকিৎসা নিয়ে হয়রানির প্রসঙ্গও। বিচার বিভাগের গুরুতর সমস্যা এবং ব্যক্তিবিশেষের অপরাধের দায়ে পরিবারের সদস্যদের শাস্তি দেয়ার বিষয়টিও বাদ পড়েনি। রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর অকারণ বিধিনিষেধ এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠানে বাধা দেয়া হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ ছাড়াও সাংবাদিকদের নির্যাতন চালিয়ে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মিডিয়া বশ করা হয়। অন্য দিকে নতুন মিডিয়ার অনুমোদন বা নবায়ন দেয়া হয় কেবল সরকারের পছন্দের লোকদের। ইন্টারনেটের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপেরও সবরকম চেষ্টা করে সরকার। ২০১৮ সালের নির্বাচনের অনিয়ম, বলপ্রয়োগ, দুর্নীতি নিয়েও মন্তব্য করা হয়েছে রিপোর্টে। নিপীড়িত মানুষ ন্যায়বিচার পেলে ভুক্তভোগীদের পক্ষে প্রবল জনমত গড়ে উঠতে পারত। সেটি না হয়ে, বরং নির্যাতিতরা অপমানিত লাঞ্ছিত হয়ে চুপ থাকতে বাধ্য হয়েছেন। সরকার নিপীড়নকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে মানবাধিকার প্রতিবেদনে গুরুতর আকারে আসার কথা ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র যখন সুনির্দিষ্ট অপরাধের ভিত্তিতে আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে; বিচার না পাওয়া মানুষের জন্য সেটি কিছুটা স্বস্তি এনে দেয়। প্রতিবাদ করতে না পারা ফরিয়াদিদের কথা মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্টে সুনির্দিষ্টভাবে আসায় সেটিও তাদের স্বস্তির কারণ হয়েছে। আমরা মনে করি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সুবিচার হবে। তা অবশ্যই বাইরের কারো কাছে যাওয়া উচিত হবে না। তাই সবার প্রত্যাশা, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। কোনো কিছু দীর্ঘ দিন ধামচাপা দিয়ে রাখা যায় না, সরকারের এই বোধোদয় হবে। আশা করব, সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। নতুন করে যাতে আর কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা না ঘটে তা-ও নিশ্চিত করতে হবে।