ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

হজের গুরুত্ব, ফজিলত ও মাসলা-মাসায়েল

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ জুলাই ২০২১
  • / ৪১ বার পড়া হয়েছে

ধর্ম প্রতিবেদন:
যে মুসলমানের মালিকানাধীনে নিজের স্বাভাবিক প্রয়োজনীয় ব্যয়ের বাইরে অন্তত অতটুকু সম্পদ আছে- সে বায়তুল্লাহ শরিফ গমন তথা হজের সফর করতে পারে তার ওপর জীবনে অন্তত একবার হজ করা ফরজ। হাদিসে হজের ফজিলত বর্ণনা করে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি হজ করে এবং হজের মধ্যে স্ত্রীসঙ্গম ও অন্যায় আচরণ থেকে বিরত থাকে সে গুনাহ থেকে এমন পবিত্র হয়ে যায় যেন আজই তার জননী তাকে প্রসব করেছে।” অন্য বর্ণনায় এসেছে, “মাবরুর হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না।” বুখারি। হজ তিন প্রকার- কিরান, তামাত্তু ও ইফরাদ। এক- কিরান। মিকাত অতিক্রমের আগে ওমরাহ ও হজের ইহরাম বেঁধে একই ইহরামে ওমরাহ ও হজ উভয়টি আদায় করা। প্রথমে মক্কা মুকাররমা পৌঁছে ওমরাহ করা অতঃপর এই ইহরাম দ্বারা হজের সময় হজ ও কোরবানি দেওয়া। দুই- তামাত্তু হজ। হজের মাসসমূহে মিকাত থেকে শুধু ওমরাহর নিয়তে ইহরাম বাঁধা এবং মক্কা মুকাররমায় পৌঁছে ওমরাহর কাজ সম্পন্ন করার পর চুল কেটে বা চেঁছে ইহরামমুক্ত হয়ে যাওয়া। অতঃপর এ সফরেই হজের ইহরাম বেঁধে হজের নির্ধারিত কাজগুলো সম্পন্ন করা এবং কোরবানি দেওয়া। তিন- ইফরাদ। মিকাত থেকে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধা এবং মক্কা মুকাররমা পৌঁছে ওমরাহ না করা বরং (সুন্নাত তাওয়াফ) তাওয়াফে কুদুম করে ইহরাম অবস্থায় হজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা। অতঃপর নির্ধারিত সময়ে হজের আমলগুলো সম্পন্ন করা। ইহরামের নিয়ম- ইহরামের মূল বিষয় হচ্ছে হজ বা ওমরাহর নিয়তে তালবিয়া পাঠ। এর দ্বারাই ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মাথায় সিঁথি করা অবস্থায় ইহরামের তালবিয়া পাঠ করতে দেখেছি। তিনি বলেছেন, এ বাক্যগুলোর অতিরিক্ত কিছু বলেননি। মুসলিম। তবে ইহরাম গ্রহণের সুন্নাত তরিকা হলো মুখ, নখ ও শরীরের পরিষ্কারযোগ্য লোম চেঁছে বা কেটে পরিষ্কার করবে। উত্তমরূপে গোসল করবে, গোসল সম্ভব না হলে অজু করবে। পুরুষরা দুইটি নতুন বা ধৌত সাদা চাদর নেবে। একটি লুঙ্গির মতো করে পরবে। অন্যটি চাদর হিসেবে ব্যবহার করবে। পায়ের পাতার ওপরের অংশ খোলা থাকে এমন চপ্পল বা স্যান্ডেল পরবে। ইহরাম বাঁধার আগে খালি শরীরে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব। শরীরের আতর বা ঘ্রাণ ইহরাম গ্রহণের পর বাকি থাকলেও অসুবিধা নেই। তবে ইহরামের কাপড়ে আতর বা সুগন্ধি লাগাবে না। কেননা ইহরামের কাপড়ে এমন আতর বা সুগন্ধি লাগানো নিষেধ, যার ঘ্রাণ ইহরামের পরও বাকি থাকে। মাকরুহ ওয়াক্ত না হলে ইহরাম বাঁধার আগে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে। অতঃপর যে হজ আদায়ের ইচ্ছা সে অনুযায়ী নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করবে। নিচে ইহরামের প্রতিটি বিষয় দলিলসহ আলোচনা করা হলো- ১. মোচ, নখ ও শরীরের পরিষ্কারযোগ্য লোম চেঁছে বা কেটে পরিষ্কার করা। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা। ২. ইহরামের উদ্দেশ্যে উত্তমরূপে গোসল করা। তিরমিজি, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা। গোসল সম্ভব না হলে অজু করে নেওয়া। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি ওমরাহর জন্য অজু করলেন, গোসল করলেন না। মাসলা : ঋতুমতী মহিলার জন্য ইহরামের আগে গোসল করা মুস্তাহাব। গুনিয়াতুন নাসিক, আবু দাউদ। ৩. পুরুষদের দুটি সাদা চাদর প্রয়োজন হবে, যা নতুনও হতে পারে কিংবা ধোয়াও হতে পারে। একটি লুঙ্গির মতো করে এবং অন্যটি চাদর হিসেবে পরিধান করবে। কালো রঙের কিংবা পুরুষের জন্য অনুমোদিত এমন যে কোনো রঙের কাপড় পরিধান করাও জায়েজ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

হজের গুরুত্ব, ফজিলত ও মাসলা-মাসায়েল

আপলোড টাইম : ১০:২৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ জুলাই ২০২১

ধর্ম প্রতিবেদন:
যে মুসলমানের মালিকানাধীনে নিজের স্বাভাবিক প্রয়োজনীয় ব্যয়ের বাইরে অন্তত অতটুকু সম্পদ আছে- সে বায়তুল্লাহ শরিফ গমন তথা হজের সফর করতে পারে তার ওপর জীবনে অন্তত একবার হজ করা ফরজ। হাদিসে হজের ফজিলত বর্ণনা করে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি হজ করে এবং হজের মধ্যে স্ত্রীসঙ্গম ও অন্যায় আচরণ থেকে বিরত থাকে সে গুনাহ থেকে এমন পবিত্র হয়ে যায় যেন আজই তার জননী তাকে প্রসব করেছে।” অন্য বর্ণনায় এসেছে, “মাবরুর হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না।” বুখারি। হজ তিন প্রকার- কিরান, তামাত্তু ও ইফরাদ। এক- কিরান। মিকাত অতিক্রমের আগে ওমরাহ ও হজের ইহরাম বেঁধে একই ইহরামে ওমরাহ ও হজ উভয়টি আদায় করা। প্রথমে মক্কা মুকাররমা পৌঁছে ওমরাহ করা অতঃপর এই ইহরাম দ্বারা হজের সময় হজ ও কোরবানি দেওয়া। দুই- তামাত্তু হজ। হজের মাসসমূহে মিকাত থেকে শুধু ওমরাহর নিয়তে ইহরাম বাঁধা এবং মক্কা মুকাররমায় পৌঁছে ওমরাহর কাজ সম্পন্ন করার পর চুল কেটে বা চেঁছে ইহরামমুক্ত হয়ে যাওয়া। অতঃপর এ সফরেই হজের ইহরাম বেঁধে হজের নির্ধারিত কাজগুলো সম্পন্ন করা এবং কোরবানি দেওয়া। তিন- ইফরাদ। মিকাত থেকে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বাঁধা এবং মক্কা মুকাররমা পৌঁছে ওমরাহ না করা বরং (সুন্নাত তাওয়াফ) তাওয়াফে কুদুম করে ইহরাম অবস্থায় হজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকা। অতঃপর নির্ধারিত সময়ে হজের আমলগুলো সম্পন্ন করা। ইহরামের নিয়ম- ইহরামের মূল বিষয় হচ্ছে হজ বা ওমরাহর নিয়তে তালবিয়া পাঠ। এর দ্বারাই ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মাথায় সিঁথি করা অবস্থায় ইহরামের তালবিয়া পাঠ করতে দেখেছি। তিনি বলেছেন, এ বাক্যগুলোর অতিরিক্ত কিছু বলেননি। মুসলিম। তবে ইহরাম গ্রহণের সুন্নাত তরিকা হলো মুখ, নখ ও শরীরের পরিষ্কারযোগ্য লোম চেঁছে বা কেটে পরিষ্কার করবে। উত্তমরূপে গোসল করবে, গোসল সম্ভব না হলে অজু করবে। পুরুষরা দুইটি নতুন বা ধৌত সাদা চাদর নেবে। একটি লুঙ্গির মতো করে পরবে। অন্যটি চাদর হিসেবে ব্যবহার করবে। পায়ের পাতার ওপরের অংশ খোলা থাকে এমন চপ্পল বা স্যান্ডেল পরবে। ইহরাম বাঁধার আগে খালি শরীরে আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব। শরীরের আতর বা ঘ্রাণ ইহরাম গ্রহণের পর বাকি থাকলেও অসুবিধা নেই। তবে ইহরামের কাপড়ে আতর বা সুগন্ধি লাগাবে না। কেননা ইহরামের কাপড়ে এমন আতর বা সুগন্ধি লাগানো নিষেধ, যার ঘ্রাণ ইহরামের পরও বাকি থাকে। মাকরুহ ওয়াক্ত না হলে ইহরাম বাঁধার আগে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে। অতঃপর যে হজ আদায়ের ইচ্ছা সে অনুযায়ী নিয়ত করে তালবিয়া পাঠ করবে। নিচে ইহরামের প্রতিটি বিষয় দলিলসহ আলোচনা করা হলো- ১. মোচ, নখ ও শরীরের পরিষ্কারযোগ্য লোম চেঁছে বা কেটে পরিষ্কার করা। মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা। ২. ইহরামের উদ্দেশ্যে উত্তমরূপে গোসল করা। তিরমিজি, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা। গোসল সম্ভব না হলে অজু করে নেওয়া। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি ওমরাহর জন্য অজু করলেন, গোসল করলেন না। মাসলা : ঋতুমতী মহিলার জন্য ইহরামের আগে গোসল করা মুস্তাহাব। গুনিয়াতুন নাসিক, আবু দাউদ। ৩. পুরুষদের দুটি সাদা চাদর প্রয়োজন হবে, যা নতুনও হতে পারে কিংবা ধোয়াও হতে পারে। একটি লুঙ্গির মতো করে এবং অন্যটি চাদর হিসেবে পরিধান করবে। কালো রঙের কিংবা পুরুষের জন্য অনুমোদিত এমন যে কোনো রঙের কাপড় পরিধান করাও জায়েজ।