ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সৌদিতে নারী শ্রমিক নির্যাতনের কেন সুরাহা নেই?

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪১:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুলাই ২০১৮
  • / ৩০৪ বার পড়া হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট: সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়ে ধর্ষণসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার নারীদের বেশিরভাগই নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী থাকেন না। ফলে সৌদি সরকার কিংবা সে দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের কিছু করার থাকে না বলে জানিয়েছেন রিয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ। তবে তিনি বলেন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের প্রতিটি কেস সৌদি শ্রম দফতরে জানানো হয়। “কিন্তু ৯০% ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার নারী তার নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে কোন মামলা দায়ের করতে চান না,” বলছেন তিনি, “এই ধরনের ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তারা দ্রুত বাড়ি ফিরতে চান। দীর্ঘ সময় ধরে মামলা চলবে, সে আশঙ্কায় তারা আর সৌদিতে কালক্ষেপণ করতে চান না।” একে একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে মি. মসীহ বলেন, সৌদি আরবে যৌন নির্যাতন কিংবা অন্য যে কোন ধরনের শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। “সৌদি প্রশাসন সেই আইন প্রয়োগের ব্যাপারে আগ্রহীও। কিন্তু দেখা যায় যে যারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা এতটাই বিপর্যস্ত থাকেন যে এক মুহূর্তও তারা আর এ দেশে থাকতে চান না।” এর বাইরে নতুন পরিবেশে গিয়ে অনেকেই খাপ খাওয়াতে পারে না, তারাও নানা অজুহাতে দেশে ফিরে আসতে চান বলে জানান মি. মসীহ। সৌদি আরবে মূলত গৃহকর্মী হিসেবে বর্তমানে ২,০৩,০০০ নারী শ্রমিক কর্মরত। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ২০১৫ সালের পর থেকে এদের মধ্যে ৩% অর্থাৎ ৬,০০০ শ্রমিক দেশে ফিরেছেন। এদের মধ্যে প্রায় সবাই ধর্ষণ, মারধরসহ বিভিন্ন নিপীড়নের শিকার হয়ে দেশে ফেরেন বলে জানান বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান। “মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে সংখ্যা দিয়ে বিচার করা যায় না,” বলছেন তিনি, “শরীরে মারের দাগ, পোড়া দাগ নিয়ে যে অভিবাসী নারী এয়ারপোর্টে এসে কাঁদেন, সেই কান্না শুধু তার একার না। সেই কান্না সৌদি আরবে কর্মরত সব নারীর। কারণ আমরা জানি না বাকি নারী শ্রমিকরা কী অবস্থায় আছেন।” এসব নারীর মধ্যে অনেকেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। অনেক সময় তাদের পরিবারও তাদের গ্রহণ করতে চায় না। দেশে ফেরার পর এই নারীদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ থাকে না। সৌদিতে অভিবাসী নারীদের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মি. হাসান বলেন, নির্যাতনের শিকার নারীদের দেশে ফেরত পাঠানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। তিনি বলেন, বাদবাকি নারী শ্রমিক ভালভাবে রয়েছেন কিনা সেই বিষয়ে নজর রাখাও দূতাবাসের একটা প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত। কিন্তু রিয়াদে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলছেন, এতে আইনগত জটিলতা রয়েছে। সৌদি নিয়োগকর্তা কখনই কোন বাড়িতে সৌদি প্রশাসন বা বাংলাদেশ দূতাবাসকে ঢুকতে দেয় না। গোলাম মসীহ জানান, সৌদি আরবে যেসব নারী শ্রমিক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন, তাদের দেখাশোনার জন্য রিয়াদ ও জেদ্দায় দুটি সেফ হোম রয়েছে। কিন্তু ব্র্যাকের শরিফুল হাসান বলছেন, এখানে যে সব বিপদগ্রস্ত নারী থাকেন তাদের সাথে সৌদি প্রশাসনের কোন যোগাযোগ হয় না। অভিবাসী অধিকার আন্দোলনকারীদের যুক্তি হচ্ছে, সমস্যাটা যেহেতু সৌদি আরবে, সুতরাং যা ব্যবস্থা নেয়ার সেটা সেখানেই নিতে হবে। তারা বলেন, এটা না করা পর্যন্ত বিমানবন্দরের অ্যারাইভাল লাউঞ্জে নারী শ্রমিকদের আর্তনাদ চলতেই থাকবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সৌদিতে নারী শ্রমিক নির্যাতনের কেন সুরাহা নেই?

আপলোড টাইম : ১০:৪১:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুলাই ২০১৮

ডেস্ক রির্পোট: সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়ে ধর্ষণসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার নারীদের বেশিরভাগই নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী থাকেন না। ফলে সৌদি সরকার কিংবা সে দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের কিছু করার থাকে না বলে জানিয়েছেন রিয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ। তবে তিনি বলেন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের প্রতিটি কেস সৌদি শ্রম দফতরে জানানো হয়। “কিন্তু ৯০% ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার নারী তার নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে কোন মামলা দায়ের করতে চান না,” বলছেন তিনি, “এই ধরনের ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তারা দ্রুত বাড়ি ফিরতে চান। দীর্ঘ সময় ধরে মামলা চলবে, সে আশঙ্কায় তারা আর সৌদিতে কালক্ষেপণ করতে চান না।” একে একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে মি. মসীহ বলেন, সৌদি আরবে যৌন নির্যাতন কিংবা অন্য যে কোন ধরনের শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। “সৌদি প্রশাসন সেই আইন প্রয়োগের ব্যাপারে আগ্রহীও। কিন্তু দেখা যায় যে যারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা এতটাই বিপর্যস্ত থাকেন যে এক মুহূর্তও তারা আর এ দেশে থাকতে চান না।” এর বাইরে নতুন পরিবেশে গিয়ে অনেকেই খাপ খাওয়াতে পারে না, তারাও নানা অজুহাতে দেশে ফিরে আসতে চান বলে জানান মি. মসীহ। সৌদি আরবে মূলত গৃহকর্মী হিসেবে বর্তমানে ২,০৩,০০০ নারী শ্রমিক কর্মরত। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ২০১৫ সালের পর থেকে এদের মধ্যে ৩% অর্থাৎ ৬,০০০ শ্রমিক দেশে ফিরেছেন। এদের মধ্যে প্রায় সবাই ধর্ষণ, মারধরসহ বিভিন্ন নিপীড়নের শিকার হয়ে দেশে ফেরেন বলে জানান বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান। “মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে সংখ্যা দিয়ে বিচার করা যায় না,” বলছেন তিনি, “শরীরে মারের দাগ, পোড়া দাগ নিয়ে যে অভিবাসী নারী এয়ারপোর্টে এসে কাঁদেন, সেই কান্না শুধু তার একার না। সেই কান্না সৌদি আরবে কর্মরত সব নারীর। কারণ আমরা জানি না বাকি নারী শ্রমিকরা কী অবস্থায় আছেন।” এসব নারীর মধ্যে অনেকেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। অনেক সময় তাদের পরিবারও তাদের গ্রহণ করতে চায় না। দেশে ফেরার পর এই নারীদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ থাকে না। সৌদিতে অভিবাসী নারীদের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মি. হাসান বলেন, নির্যাতনের শিকার নারীদের দেশে ফেরত পাঠানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। তিনি বলেন, বাদবাকি নারী শ্রমিক ভালভাবে রয়েছেন কিনা সেই বিষয়ে নজর রাখাও দূতাবাসের একটা প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত। কিন্তু রিয়াদে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলছেন, এতে আইনগত জটিলতা রয়েছে। সৌদি নিয়োগকর্তা কখনই কোন বাড়িতে সৌদি প্রশাসন বা বাংলাদেশ দূতাবাসকে ঢুকতে দেয় না। গোলাম মসীহ জানান, সৌদি আরবে যেসব নারী শ্রমিক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন, তাদের দেখাশোনার জন্য রিয়াদ ও জেদ্দায় দুটি সেফ হোম রয়েছে। কিন্তু ব্র্যাকের শরিফুল হাসান বলছেন, এখানে যে সব বিপদগ্রস্ত নারী থাকেন তাদের সাথে সৌদি প্রশাসনের কোন যোগাযোগ হয় না। অভিবাসী অধিকার আন্দোলনকারীদের যুক্তি হচ্ছে, সমস্যাটা যেহেতু সৌদি আরবে, সুতরাং যা ব্যবস্থা নেয়ার সেটা সেখানেই নিতে হবে। তারা বলেন, এটা না করা পর্যন্ত বিমানবন্দরের অ্যারাইভাল লাউঞ্জে নারী শ্রমিকদের আর্তনাদ চলতেই থাকবে।