ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সীমান্ত এখন সোনার খনি!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৩:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / ১৫ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:

ঝিনাইদহসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত পথে ভারতে সোনা পাচার বেড়েছে। ভরি বা গ্রাম নয়, পাচার হচ্ছে কেজি কেজি সোনা। বলা যায় সীমান্ত এখন সোনার খনি। এপারের বিজিবি এবং ওপারের বিএসএফ’র হাতে কোটি কোটি টাকার সোনা আটক হচ্ছে। তারপরও লাগাম টানা যাচ্ছে না সোনা পাচারের। বরং সোনা পাচারকারীরা কৌশল বদল করছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা সোনার বার আটক হয়েছিল। ২০২৩ সালের দুই মাসে ২৪টি সোনার বার জব্দ করেছে মহেশপুর-৫৮ বিজিবি। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ জানুয়ারি বিজিবির দুটি আভিযানিক দল গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মহেশপুর উপজেলার পদ্মপুকুর ডিগ্রি কলেজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে স্কসটেপে মোড়ানো ৪৬৬.৩৮ গ্রাম ওজনের চারটি সোনার বারসহ বহনকারী বায়েজিদকে আটক করে। উদ্ধারকৃত সোনার মূল্য ৩৪ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। গত ১১ ফেব্রয়ারি মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর সীমান্তে অভিযানে সাড়ে ৯২ লাখ টাকা মূল্যের ১০টি সোনার বারসহ মফিজুর রহমান নামে এক পাচারকারীকে আটক করে বিজিবি। ২০২২ সালের পহেলা এপ্রিল মহেশপুরের করিমপুর গ্রাম থেকে সর্ববৃহৎ সোনার চালান আটক হয়। ওই দিন ৮ কোটি টাকা মূল্যের ৯৯টি সোনার বার জব্দ করে বিজিবি। একই বছরের ফেব্রয়ারি মহেশপুরের নিশ্চিন্তপুর গ্রাম থেকে বিজিবি ১০টি সোনার বার উদ্ধরি করে যার মূল্য ৭৪ লাখ টাকা। ২৭ এপ্রিল পিপুলবাড়িয়া থেকে ৯টি, গয়াসপুর থেকে ১০টি ও ২৯ এপ্রিল জুলুলী গ্রাম থেকে ৪০টি সোনার বার ধরা পড়ে। ১৫ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুরহুদা উপজেলার নস্তিপুর সীমান্ত থেকে ৫৮টি সোনার বার উদ্ধার করে বিজিবি। যার মূল্য ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আটক করা হয় একজন পাচারকারিকে। সে রাতেই চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে দর্শনা সীমান্তে যাওয়ার পথে একটি প্রাইভেট কার তল্লাশী করে ৫টি সোনার বার উদ্ধা করে পুলিশ। আটক করা হয়  কামরুল হাসান জুয়েল ও অরিফ হোসেন নামে ২ জনকে। ১৭ সেপ্টেম্বর শার্শার পুটখালী বামুণ্ডা সীমান্ত থেকে ২০টি সোনার বার উদ্ধার করে বিজিবি। হৃদয় হোসেন নামে এক পাচারকারির সপিং ভ্যাগ থেকে সোনার বার গুলো উদ্ধার করা হয়। ২০ সেপ্টেম্বর শার্শা উপজেলার সীমান্তবর্তী গোগা বাজারের পাশ থেকে ১৫টি সোনার বারসহ জসিম উদ্দিন নামে এক পাচারকারিকে আটক করে বিজিবি। যার মূল্য ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে বিজিবি চুয়াডাঙ্গার গয়েশপুর সীমান্ত থেকে ভারতে পাচার কালে ৪টি সোনার বারসহ তাজমুল হোসেন নামে এক পাচারকারিকে আটক করে। ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে শার্শা উপজেলার রুদ্রপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার কালে ১০টি সোনার বারসহ বিজিবি আটক করে সাইফুল ইসলাম নামে আরও এক পাচারকারিকে। একই দিন পুটখালী সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার কালে মসজিদ বাড়ি এলাকা হতে একটি প্রাইভেট কার থেকে ১ কেজি ৬০ গ্রাম ওজনের সোনার বার উদ্ধার করে বিজিবি। আটক করা হয় কারের ২ যাত্রীকে। বেনাপোলের  মালিপোতা সীমান্ত থেকে ১৮টি সোনার বার উদ্ধার করে বিজিবি। যার ওজন ২ কেজি ১০০ গ্রাম।

বিজিবির খুলনা ২১ ব্যাটালিয়নের একটি সূত্র জানায়, গত বছর প্রায় ২৩ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়। বিজিবি’র যশোর ৪৭ ব্যাটালিয়নের সুত্রমতে সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পাচারকালে ৩৫ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়। বিজিবি’র চুয়াডাঙ্গা ৬ ব্যাটালিয়নের একটি সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১ কেজি ১৭০ গ্রাম সোনা উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রয়ারি) বিকালে মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের সময় ১০ পিচ সোনার বারসহ এক চোরাকারবারীকে আটক করে ৫৮ বিজিবি।

খালিশপুর ৫৮ বিজিবি’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ পারভেজ রানা গতকাল জানান, বাংলাদেশ থেকে ভারতে সোনা পাচারের জন্য যাদবপুর সীমান্তের পোড়াপারা কাঠবাজার এলাকায় অবস্থান করছিল আব্দুল হাদি নামে এক পাচারকারী। এ সময় তাকে ১ কেজি ১’শ ৬৬ গ্রাম ওজনের ১০টি সোনার বারসহ আটক করা হয়। আব্দুল হাদির বাড়ি যশোর র্শাশা উপজেলার সালকোন গ্রামে। তিনি আরও বলেন, ‘সোনাসহ বিভিন্ন পন্যের চোরাচালান রোধে সীমান্তে বিজিবি কঠোর নজদারী বাড়িয়েছে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সীমান্ত এখন সোনার খনি!

আপলোড টাইম : ০৮:৩৩:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

ঝিনাইদহ অফিস:

ঝিনাইদহসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত পথে ভারতে সোনা পাচার বেড়েছে। ভরি বা গ্রাম নয়, পাচার হচ্ছে কেজি কেজি সোনা। বলা যায় সীমান্ত এখন সোনার খনি। এপারের বিজিবি এবং ওপারের বিএসএফ’র হাতে কোটি কোটি টাকার সোনা আটক হচ্ছে। তারপরও লাগাম টানা যাচ্ছে না সোনা পাচারের। বরং সোনা পাচারকারীরা কৌশল বদল করছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০২২ সালে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা সোনার বার আটক হয়েছিল। ২০২৩ সালের দুই মাসে ২৪টি সোনার বার জব্দ করেছে মহেশপুর-৫৮ বিজিবি। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ জানুয়ারি বিজিবির দুটি আভিযানিক দল গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মহেশপুর উপজেলার পদ্মপুকুর ডিগ্রি কলেজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে স্কসটেপে মোড়ানো ৪৬৬.৩৮ গ্রাম ওজনের চারটি সোনার বারসহ বহনকারী বায়েজিদকে আটক করে। উদ্ধারকৃত সোনার মূল্য ৩৪ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। গত ১১ ফেব্রয়ারি মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর সীমান্তে অভিযানে সাড়ে ৯২ লাখ টাকা মূল্যের ১০টি সোনার বারসহ মফিজুর রহমান নামে এক পাচারকারীকে আটক করে বিজিবি। ২০২২ সালের পহেলা এপ্রিল মহেশপুরের করিমপুর গ্রাম থেকে সর্ববৃহৎ সোনার চালান আটক হয়। ওই দিন ৮ কোটি টাকা মূল্যের ৯৯টি সোনার বার জব্দ করে বিজিবি। একই বছরের ফেব্রয়ারি মহেশপুরের নিশ্চিন্তপুর গ্রাম থেকে বিজিবি ১০টি সোনার বার উদ্ধরি করে যার মূল্য ৭৪ লাখ টাকা। ২৭ এপ্রিল পিপুলবাড়িয়া থেকে ৯টি, গয়াসপুর থেকে ১০টি ও ২৯ এপ্রিল জুলুলী গ্রাম থেকে ৪০টি সোনার বার ধরা পড়ে। ১৫ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুরহুদা উপজেলার নস্তিপুর সীমান্ত থেকে ৫৮টি সোনার বার উদ্ধার করে বিজিবি। যার মূল্য ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আটক করা হয় একজন পাচারকারিকে। সে রাতেই চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে দর্শনা সীমান্তে যাওয়ার পথে একটি প্রাইভেট কার তল্লাশী করে ৫টি সোনার বার উদ্ধা করে পুলিশ। আটক করা হয়  কামরুল হাসান জুয়েল ও অরিফ হোসেন নামে ২ জনকে। ১৭ সেপ্টেম্বর শার্শার পুটখালী বামুণ্ডা সীমান্ত থেকে ২০টি সোনার বার উদ্ধার করে বিজিবি। হৃদয় হোসেন নামে এক পাচারকারির সপিং ভ্যাগ থেকে সোনার বার গুলো উদ্ধার করা হয়। ২০ সেপ্টেম্বর শার্শা উপজেলার সীমান্তবর্তী গোগা বাজারের পাশ থেকে ১৫টি সোনার বারসহ জসিম উদ্দিন নামে এক পাচারকারিকে আটক করে বিজিবি। যার মূল্য ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে বিজিবি চুয়াডাঙ্গার গয়েশপুর সীমান্ত থেকে ভারতে পাচার কালে ৪টি সোনার বারসহ তাজমুল হোসেন নামে এক পাচারকারিকে আটক করে। ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে শার্শা উপজেলার রুদ্রপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার কালে ১০টি সোনার বারসহ বিজিবি আটক করে সাইফুল ইসলাম নামে আরও এক পাচারকারিকে। একই দিন পুটখালী সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার কালে মসজিদ বাড়ি এলাকা হতে একটি প্রাইভেট কার থেকে ১ কেজি ৬০ গ্রাম ওজনের সোনার বার উদ্ধার করে বিজিবি। আটক করা হয় কারের ২ যাত্রীকে। বেনাপোলের  মালিপোতা সীমান্ত থেকে ১৮টি সোনার বার উদ্ধার করে বিজিবি। যার ওজন ২ কেজি ১০০ গ্রাম।

বিজিবির খুলনা ২১ ব্যাটালিয়নের একটি সূত্র জানায়, গত বছর প্রায় ২৩ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়। বিজিবি’র যশোর ৪৭ ব্যাটালিয়নের সুত্রমতে সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পাচারকালে ৩৫ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়। বিজিবি’র চুয়াডাঙ্গা ৬ ব্যাটালিয়নের একটি সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১ কেজি ১৭০ গ্রাম সোনা উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রয়ারি) বিকালে মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের সময় ১০ পিচ সোনার বারসহ এক চোরাকারবারীকে আটক করে ৫৮ বিজিবি।

খালিশপুর ৫৮ বিজিবি’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাসুদ পারভেজ রানা গতকাল জানান, বাংলাদেশ থেকে ভারতে সোনা পাচারের জন্য যাদবপুর সীমান্তের পোড়াপারা কাঠবাজার এলাকায় অবস্থান করছিল আব্দুল হাদি নামে এক পাচারকারী। এ সময় তাকে ১ কেজি ১’শ ৬৬ গ্রাম ওজনের ১০টি সোনার বারসহ আটক করা হয়। আব্দুল হাদির বাড়ি যশোর র্শাশা উপজেলার সালকোন গ্রামে। তিনি আরও বলেন, ‘সোনাসহ বিভিন্ন পন্যের চোরাচালান রোধে সীমান্তে বিজিবি কঠোর নজদারী বাড়িয়েছে।’