ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সীমান্তে ফের রোহিঙ্গা ঢল

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:৩৬:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  • / ৮১৮ বার পড়া হয়েছে

রাখাইনের আকিয়াব ও ছিটুয়ে আবারও সেনা নির্যাতন শুরু

দু’দিনে ২২টি পয়েন্ট দিয়ে ৫০ হাজার শরণার্থীর প্রবেশ * সীমান্তে কাঁটাতারে বৈদ্যুতিক সংযোগ
সমীকরণ ডেস্ক: মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে। মাঝে কয়েকদিন রোহিঙ্গা ¯্রােত কমলেও গত দু’দিনে হঠাৎ করেই বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ বেড়েছে। নতুন করে রাখাইনের রাজধানী আকিয়াব ও ছিটুয়ে অঞ্চলে শুক্রবার থেকে তল্লাশির নামে রোহিঙ্গা নির্যাতন শুরু হওয়ায় ওই সব অঞ্চলের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের উদ্দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ শনিবার রাতেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। আবার কেউ কেউ সীমান্তে সুযোগের অপেক্ষা করছেন। টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত এবং এখানকার নোম্যান্স ল্যান্ডেও অবস্থান নিয়েছেন অনেকে। আন্তর্জাতিক নানা চাপ ও নিন্দা উপেক্ষা করে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া বা তাদের নির্যাতন বন্ধ করার পরিবর্তে নতুন এলাকায় নির্যাতন শুরু করেছে। সীমান্ত দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া ভেদ করে শনিবার ও রোববার রাতে ২২টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন। সীমান্ত পাড়ি দেয়ার জন্য নতুন করে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা পরিবার মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে জড়ো হয়েছে। রাখাইনের রাজধানী আকিয়াব ও ছিটুয়ে অঞ্চলের আশপাশের গ্রামগুলো এতদিন সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বাইরে ছিল। কিন্তু নতুন করে সেখানে তল্লাশির নামে অভিযান শুরু করায় ওই অঞ্চলের লাখ লাখ রোহিঙ্গার মাঝে আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে আকিয়াবের আশপাশের এলাকার গ্রামগুলোর রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের দিকে আসা শুরু করেছেন। সর্বশেষ আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এবং ওপারের কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে সোর্সের মাধ্যমে যোগাযোগ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহেদ হোসেন সিদ্দিক সোমবার রাতে বলেন, মাঝে কয়েক দিন রোহিঙ্গা আসা কিছুটা কমলেও দু’দিন ধরে আবারও প্রবেশের হার বেড়েছে। এ দু’দিনে ২০-৩০ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে টেকনাফের সাবরাং সীমান্ত দিয়ে এসব রোহিঙ্গা আসছে এবং তারা মিয়ানমারের আকিয়াব থেকে আসছে বলে খবর পাচ্ছি।’
এর আগে রাখাইন রাজ্যের মংডু, রাচিদং, বুচিদংসহ বিভিন্ন গ্রামে ২৫ আগস্ট সেনা অভিযানের নামে রোহিঙ্গা নিধন শুরু হয়। রাখাইন রাজ্যের ২১৪টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন করা হয়। প্রাণ বাঁচাতে তাই রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ দলে দলে ২২টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। শেষের দিকে এসে রোহিঙ্গা ঢল কিছুটা কমলেও এক মাস না যেতেই আবারও নতুন এলাকা আক্রান্ত হওয়ায় সীমান্তে বাংলাদেশমুখীদের সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়েছে।
ইউএনএইচসিআরের হিসাব অনুযায়ী, এরই মধ্যে সাড়ে চার লাখ নির্যাতিত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। যাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে উখিয়া ও টেকনাফের অন্তত ১০টি নতুন-পুরনো ক্যাম্পে। সেনাবাহিনী এরই মধ্যে তাদের জন্য ১৪ হাজার শেড নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যেখানে ঠাঁই পাবে ৮৪ হাজার পরিবার। খাদ্যাভাব সরকারি ও বেসরকারিভাবে পূরণ করতে প্রতিদিনই তাদের জন্য দেয়া হচ্ছে প্রচুর ত্রাণসামগ্রী। ত্রাণের সুষম বণ্টনের জন্যও সরকার সেনাবাহিনীকে মাঠে নামিয়েছে। গত রোববার থেকে ত্রাণ বিতরণ ও শেড নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনও শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার প্রস্তুতি যখন শেষ পর্যায়ে ঠিক তখনই আবার মিয়ানমারে নতুন এলাকায় সেনাবাহিনীর হামলা, তল্লাশির নামে নির্যাতন শুরু হয়েছে। এর জের ধরে নতুন করে রোহিঙ্গা ঢল নামতে শুরু করায় বাংলাদেশে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া গত রোববার দুপুরে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ ঘোলার চর পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারের মংডুর খুইন্যা পাড়া এলাকা থেকে আসে ১৮ রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকা। ওই নৌকার রোহিঙ্গা নারী ছলিমা খাতুন (৩৮) জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের গ্রামটি গত ৪ দিন আগে ছাই করে দিয়েছিল। গ্রামটি এখন জনমানব শূন্য, সেখানে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর পোড়া গন্ধ। গ্রামের সবাই আগেই চলে এসেছেন, তারা সবশেষে এসেছেন। ওই গ্রামটি এখন রোহিঙ্গাশূন্য।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সীমান্তে ফের রোহিঙ্গা ঢল

আপলোড টাইম : ১২:৩৬:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রাখাইনের আকিয়াব ও ছিটুয়ে আবারও সেনা নির্যাতন শুরু

দু’দিনে ২২টি পয়েন্ট দিয়ে ৫০ হাজার শরণার্থীর প্রবেশ * সীমান্তে কাঁটাতারে বৈদ্যুতিক সংযোগ
সমীকরণ ডেস্ক: মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে। মাঝে কয়েকদিন রোহিঙ্গা ¯্রােত কমলেও গত দু’দিনে হঠাৎ করেই বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ বেড়েছে। নতুন করে রাখাইনের রাজধানী আকিয়াব ও ছিটুয়ে অঞ্চলে শুক্রবার থেকে তল্লাশির নামে রোহিঙ্গা নির্যাতন শুরু হওয়ায় ওই সব অঞ্চলের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের উদ্দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ শনিবার রাতেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। আবার কেউ কেউ সীমান্তে সুযোগের অপেক্ষা করছেন। টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত এবং এখানকার নোম্যান্স ল্যান্ডেও অবস্থান নিয়েছেন অনেকে। আন্তর্জাতিক নানা চাপ ও নিন্দা উপেক্ষা করে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া বা তাদের নির্যাতন বন্ধ করার পরিবর্তে নতুন এলাকায় নির্যাতন শুরু করেছে। সীমান্ত দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া ভেদ করে শনিবার ও রোববার রাতে ২২টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন। সীমান্ত পাড়ি দেয়ার জন্য নতুন করে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা পরিবার মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে জড়ো হয়েছে। রাখাইনের রাজধানী আকিয়াব ও ছিটুয়ে অঞ্চলের আশপাশের গ্রামগুলো এতদিন সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বাইরে ছিল। কিন্তু নতুন করে সেখানে তল্লাশির নামে অভিযান শুরু করায় ওই অঞ্চলের লাখ লাখ রোহিঙ্গার মাঝে আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে আকিয়াবের আশপাশের এলাকার গ্রামগুলোর রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশের দিকে আসা শুরু করেছেন। সর্বশেষ আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এবং ওপারের কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে সোর্সের মাধ্যমে যোগাযোগ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহেদ হোসেন সিদ্দিক সোমবার রাতে বলেন, মাঝে কয়েক দিন রোহিঙ্গা আসা কিছুটা কমলেও দু’দিন ধরে আবারও প্রবেশের হার বেড়েছে। এ দু’দিনে ২০-৩০ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে টেকনাফের সাবরাং সীমান্ত দিয়ে এসব রোহিঙ্গা আসছে এবং তারা মিয়ানমারের আকিয়াব থেকে আসছে বলে খবর পাচ্ছি।’
এর আগে রাখাইন রাজ্যের মংডু, রাচিদং, বুচিদংসহ বিভিন্ন গ্রামে ২৫ আগস্ট সেনা অভিযানের নামে রোহিঙ্গা নিধন শুরু হয়। রাখাইন রাজ্যের ২১৪টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন করা হয়। প্রাণ বাঁচাতে তাই রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ দলে দলে ২২টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। শেষের দিকে এসে রোহিঙ্গা ঢল কিছুটা কমলেও এক মাস না যেতেই আবারও নতুন এলাকা আক্রান্ত হওয়ায় সীমান্তে বাংলাদেশমুখীদের সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়েছে।
ইউএনএইচসিআরের হিসাব অনুযায়ী, এরই মধ্যে সাড়ে চার লাখ নির্যাতিত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। যাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে উখিয়া ও টেকনাফের অন্তত ১০টি নতুন-পুরনো ক্যাম্পে। সেনাবাহিনী এরই মধ্যে তাদের জন্য ১৪ হাজার শেড নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যেখানে ঠাঁই পাবে ৮৪ হাজার পরিবার। খাদ্যাভাব সরকারি ও বেসরকারিভাবে পূরণ করতে প্রতিদিনই তাদের জন্য দেয়া হচ্ছে প্রচুর ত্রাণসামগ্রী। ত্রাণের সুষম বণ্টনের জন্যও সরকার সেনাবাহিনীকে মাঠে নামিয়েছে। গত রোববার থেকে ত্রাণ বিতরণ ও শেড নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধনও শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার প্রস্তুতি যখন শেষ পর্যায়ে ঠিক তখনই আবার মিয়ানমারে নতুন এলাকায় সেনাবাহিনীর হামলা, তল্লাশির নামে নির্যাতন শুরু হয়েছে। এর জের ধরে নতুন করে রোহিঙ্গা ঢল নামতে শুরু করায় বাংলাদেশে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া গত রোববার দুপুরে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ ঘোলার চর পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারের মংডুর খুইন্যা পাড়া এলাকা থেকে আসে ১৮ রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকা। ওই নৌকার রোহিঙ্গা নারী ছলিমা খাতুন (৩৮) জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের গ্রামটি গত ৪ দিন আগে ছাই করে দিয়েছিল। গ্রামটি এখন জনমানব শূন্য, সেখানে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর পোড়া গন্ধ। গ্রামের সবাই আগেই চলে এসেছেন, তারা সবশেষে এসেছেন। ওই গ্রামটি এখন রোহিঙ্গাশূন্য।