ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সিরিয়ায় আর কত লাশের মিছিল?

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
  • / ৪০২ বার পড়া হয়েছে

সিরিয়া আজ শক্তিধর দেশগুলির এক জটিল রণক্ষেত্র। চতুর্মুখী হামলায় সাধারণ মানুষ বিপর্যস্ত। বর্তমানে সিরিয়ার ৎুধানত দুইটি অঞ্চল অস্থির ও অগ্নিগর্ভ। রাজধানী দামেস্কের নিকটবর্তী বিদ্রোহী অধ্যুষিত ও অবরুদ্ধ গৌতায় সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর রকেট ও বিমান হামলা এবং হেলিকপ্টারে বোমাবর্ষণ অব্যাহত আছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী সেখানে তিন শতাধিক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে অর্ধশতাধিকই শিশু। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১২শত। বাশার-আল-আসাদ বাহিনী সর্বশেষ এই বিদ্রোহী ঘাঁটিতে বিদ্রোহীদের দমনে যেন পোড়ামাটি-নীতি অবলম্বন করেছে। দোকানপাট, বসতবাড়ি, খাবারের গুদাম কোনো কিছুই বাদ পড়ছে না হামলা হতে। সরকারি বাহিনীর হামলা শুরুর পর একদিনেই নিহত হয়েছে দেড় শতাধিক। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস-এর মতে, ২০১৫ সালের পর একদিনে বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার এটা সর্বোচ্চ সংখ্যা। অন্যদিকে আফরিনে অব্যাহত আছে তুরস্কের সেনা অভিযান। এই অঞ্চলটি ২০১২ সাল হতেই সিরীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। এটা কুর্দিপন্থী ওয়াইপিজি মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রণে। ওয়াইপিজিকে নিষিদ্ধঘোষিত কুর্দিস্থান ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিকেকের অংশ হিসাবে দেখে আঙ্কারা। যদিও গৃহযুদ্ধকালে আসাদ-বিরোধী লড়াইয়ে ওয়াইপিজি জোটকে সমর্থন দিয়াছিল তুরস্ক, কিন্তু সীমান্তের নিকট বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী গঠনের খবরে তাদের আঁতুড় ঘরে শেষ করতেই এখন বদ্ধপরিকর তারা। ওয়াইপিজি শত্রু হলেও তুরস্কের সেনাবাহিনীর মোকাবিলায় বাশার-আল-আসাদের বাহিনী এখন তাদের সমর্থন করছে। তবে, তাহারা সেনাবাহিনী নয়, সেখানে পাঠিয়েছে একটি অনুগত মিলিশিয়াগোষ্ঠী। এমতাবস্থায় আফরিনে অনেকে তুরস্ক-সিরিয়া যুদ্ধের আশঙ্কা করলেও ন্যাটো সদস্য তুরস্ককে রাশিয়ার একান্ত দরকার বলে এবং আফরিনে অভিযান প্রেরণে রাশিয়ার সমর্থন থাকায় শেষপর্যন্ত দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ নাও হতে পারে। আফরিনে বেসামরিক হতাহতের খবর তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু গৌতার পরিস্থিতি ভয়াবহ। সেখানকার চার লক্ষ মানুষ আজ অবরুদ্ধ। প্রয়োজনীয় খাদ্য-পানীয়ের অভাবে তাদের মধ্যে অনেকেই অপুষ্টির শিকার। পূর্ব গৌতা রাশিয়া, ইরান ও তুরস্ক ঘোষিত একটি ডি এস্কেলেশন জোন বা অস্ত্রবিরতি অঞ্চলের আওতাভুক্ত। ২০১৩ সালে এখানেই রাসায়নিক হামলার ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু এইজন্য কাউকে কোনো শাস্তি পেতে হয়নি। যারা মনে করেছিলেন যে, ইরাক ও সিরিয়ার কিছু এলাকা নিয়ে খেলাফত ঘোষণাকারী আইএস পরাজিত হলেই সিরিয়া তথা এতদঞ্চলে শান্তি আসবে, তাদের এই ধারণা আজ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সিরিয়া যুদ্ধ কীভাবে শুরু হল, কারা চাপিয়ে দিল ও তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যই বা কী ছিল তা ভেবে দেখলে সহসা এই যুদ্ধের অবসান ঘটবার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বাশার-আল-আসাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যেমন শিয়া-সুন্নির দ্বন্দ্ব আছে, তেমনি আছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাও। এইসব দ্বন্দ্বে রাশিয়া, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব প্রভৃতি দেশ জড়িত। ২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়া যুদ্ধে এখন অবধি নিহতের সংখ্যা পাঁচ লক্ষাধিক। বাস্তুচ্যুত লক্ষ লক্ষ মানুষ। বহুমেরুকরণের যুগে বিশ্বব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত শান্তির দেখা পাওয়া সত্যিই কঠিন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সিরিয়ায় আর কত লাশের মিছিল?

আপলোড টাইম : ০৯:৩৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

সিরিয়া আজ শক্তিধর দেশগুলির এক জটিল রণক্ষেত্র। চতুর্মুখী হামলায় সাধারণ মানুষ বিপর্যস্ত। বর্তমানে সিরিয়ার ৎুধানত দুইটি অঞ্চল অস্থির ও অগ্নিগর্ভ। রাজধানী দামেস্কের নিকটবর্তী বিদ্রোহী অধ্যুষিত ও অবরুদ্ধ গৌতায় সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর রকেট ও বিমান হামলা এবং হেলিকপ্টারে বোমাবর্ষণ অব্যাহত আছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী সেখানে তিন শতাধিক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে অর্ধশতাধিকই শিশু। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১২শত। বাশার-আল-আসাদ বাহিনী সর্বশেষ এই বিদ্রোহী ঘাঁটিতে বিদ্রোহীদের দমনে যেন পোড়ামাটি-নীতি অবলম্বন করেছে। দোকানপাট, বসতবাড়ি, খাবারের গুদাম কোনো কিছুই বাদ পড়ছে না হামলা হতে। সরকারি বাহিনীর হামলা শুরুর পর একদিনেই নিহত হয়েছে দেড় শতাধিক। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস-এর মতে, ২০১৫ সালের পর একদিনে বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার এটা সর্বোচ্চ সংখ্যা। অন্যদিকে আফরিনে অব্যাহত আছে তুরস্কের সেনা অভিযান। এই অঞ্চলটি ২০১২ সাল হতেই সিরীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। এটা কুর্দিপন্থী ওয়াইপিজি মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রণে। ওয়াইপিজিকে নিষিদ্ধঘোষিত কুর্দিস্থান ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিকেকের অংশ হিসাবে দেখে আঙ্কারা। যদিও গৃহযুদ্ধকালে আসাদ-বিরোধী লড়াইয়ে ওয়াইপিজি জোটকে সমর্থন দিয়াছিল তুরস্ক, কিন্তু সীমান্তের নিকট বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী গঠনের খবরে তাদের আঁতুড় ঘরে শেষ করতেই এখন বদ্ধপরিকর তারা। ওয়াইপিজি শত্রু হলেও তুরস্কের সেনাবাহিনীর মোকাবিলায় বাশার-আল-আসাদের বাহিনী এখন তাদের সমর্থন করছে। তবে, তাহারা সেনাবাহিনী নয়, সেখানে পাঠিয়েছে একটি অনুগত মিলিশিয়াগোষ্ঠী। এমতাবস্থায় আফরিনে অনেকে তুরস্ক-সিরিয়া যুদ্ধের আশঙ্কা করলেও ন্যাটো সদস্য তুরস্ককে রাশিয়ার একান্ত দরকার বলে এবং আফরিনে অভিযান প্রেরণে রাশিয়ার সমর্থন থাকায় শেষপর্যন্ত দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ নাও হতে পারে। আফরিনে বেসামরিক হতাহতের খবর তেমন একটা পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু গৌতার পরিস্থিতি ভয়াবহ। সেখানকার চার লক্ষ মানুষ আজ অবরুদ্ধ। প্রয়োজনীয় খাদ্য-পানীয়ের অভাবে তাদের মধ্যে অনেকেই অপুষ্টির শিকার। পূর্ব গৌতা রাশিয়া, ইরান ও তুরস্ক ঘোষিত একটি ডি এস্কেলেশন জোন বা অস্ত্রবিরতি অঞ্চলের আওতাভুক্ত। ২০১৩ সালে এখানেই রাসায়নিক হামলার ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু এইজন্য কাউকে কোনো শাস্তি পেতে হয়নি। যারা মনে করেছিলেন যে, ইরাক ও সিরিয়ার কিছু এলাকা নিয়ে খেলাফত ঘোষণাকারী আইএস পরাজিত হলেই সিরিয়া তথা এতদঞ্চলে শান্তি আসবে, তাদের এই ধারণা আজ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সিরিয়া যুদ্ধ কীভাবে শুরু হল, কারা চাপিয়ে দিল ও তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যই বা কী ছিল তা ভেবে দেখলে সহসা এই যুদ্ধের অবসান ঘটবার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বাশার-আল-আসাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যেমন শিয়া-সুন্নির দ্বন্দ্ব আছে, তেমনি আছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাও। এইসব দ্বন্দ্বে রাশিয়া, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব প্রভৃতি দেশ জড়িত। ২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়া যুদ্ধে এখন অবধি নিহতের সংখ্যা পাঁচ লক্ষাধিক। বাস্তুচ্যুত লক্ষ লক্ষ মানুষ। বহুমেরুকরণের যুগে বিশ্বব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত শান্তির দেখা পাওয়া সত্যিই কঠিন।