ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সাত জঙ্গির ফাঁসি, দ্রুত দ- কার্যকর হোক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০২:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৯
  • / ২১৪ বার পড়া হয়েছে

ভয়ংকর এক রাতের বিভীষিকা পুরো বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। বহু মানুষের জীবন বদলে যায় ২০১৬ সালের ১ জুলাই। সেই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় নিহত হন ২২ জন, যাঁদের ১৭ জনই বিদেশি। ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে সেই সংকটের রক্তাক্ত অবসান ঘটে। বিশ্বজুড়ে উগ্রপন্থার প্রসারের মধ্যে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে একদল তরুণের ওই আত্মঘাতী হামলা বাংলাদেশকেও বদলে দেয় অনেকখানি। ওই রাতের ঘটনা নতুন এক সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় সবাইকে। জানা যায়, শুধু মাদরাসাপড়ুয়া গরিব ঘরের ছেলেরা নয়, নামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়া ধনী পরিবারের সন্তানরাও বাড়ি থেকে পালিয়ে নিরুদ্দেশ হচ্ছে; জড়াচ্ছে জঙ্গিবাদের ভয়ংকর পথে। তিন বছর আগে ঢাকার কূটনৈতিকপাড়া গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় ২২ জনকে হত্যার দায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যের ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত। অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলায় বিচারের মুখোমুখি করা আরেক আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেওয়া হয়েছে রায়ে। হলি আর্টিজানে হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচজন মারা যায়। এই হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী, মেজর (বরখাস্ত) জাহিদ, মারজানসহ অনেকেই বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছে।
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তের পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দেয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, হলি আর্টিজানে হামলার পেছনে মূলত তিনটি উদ্দেশ্য ছিল জঙ্গিদের। কূটনৈতিক এলাকায় হামলা করে নিজেদের সামর্থ্যের জানান দেওয়া; বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করে নৃশংসতার প্রকাশ ঘটানো এবং দেশে-বিদেশে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পাওয়ার পাশাপাশি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করা। তদন্তে আরো জানা গেছে, হলি আর্টিজান ক্যাফেতে হামলা চালানোর আগে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে জঙ্গিরা গ্রেনেড নিক্ষেপের প্রশিক্ষণ নিয়েছিল।
সরকারের জিরো টলারেন্স ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় তৎপরতায় দেশে জঙ্গি সংগঠনগুলোর কার্যক্রম অনেক কমেছে। তবে তারা একেবারে নিষ্ক্রিয় হয়নি। জঙ্গিবাদ নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের ওপর হামলাসহ কিছু ঘটনায় নব্য জেএমবিসহ জঙ্গি সংগঠনের লোন উলফ বা একাকী ধাঁচের হামলার প্রবণতা ধরা পড়েছে। অর্থাৎ জঙ্গি তৎপরতা কিছুটা স্তিমিত হলেও ঘর গোছানোর কাজ কখনো থেমে থাকেনি। ‘নব্য জেএমবি’ নামের একটি অংশ এখন আরো বেশি সংগঠিত, প্রযুক্তিনির্ভর এবং আরো বেশি উগ্র মতাদর্শে পরিচালিত।
আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছিল। এই রায়ের মধ্য দিয়ে তা পুনরুদ্ধার হয়েছে। এখন আইনগত সব দিক দ্রুত সম্পন্ন করে রায় কার্যকরে সরকার উদ্যোগী হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সাত জঙ্গির ফাঁসি, দ্রুত দ- কার্যকর হোক

আপলোড টাইম : ১০:০২:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৯

ভয়ংকর এক রাতের বিভীষিকা পুরো বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। বহু মানুষের জীবন বদলে যায় ২০১৬ সালের ১ জুলাই। সেই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় নিহত হন ২২ জন, যাঁদের ১৭ জনই বিদেশি। ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে সেই সংকটের রক্তাক্ত অবসান ঘটে। বিশ্বজুড়ে উগ্রপন্থার প্রসারের মধ্যে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে একদল তরুণের ওই আত্মঘাতী হামলা বাংলাদেশকেও বদলে দেয় অনেকখানি। ওই রাতের ঘটনা নতুন এক সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় সবাইকে। জানা যায়, শুধু মাদরাসাপড়ুয়া গরিব ঘরের ছেলেরা নয়, নামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়া ধনী পরিবারের সন্তানরাও বাড়ি থেকে পালিয়ে নিরুদ্দেশ হচ্ছে; জড়াচ্ছে জঙ্গিবাদের ভয়ংকর পথে। তিন বছর আগে ঢাকার কূটনৈতিকপাড়া গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় ২২ জনকে হত্যার দায়ে নব্য জেএমবির সাত সদস্যের ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত। অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলায় বিচারের মুখোমুখি করা আরেক আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেওয়া হয়েছে রায়ে। হলি আর্টিজানে হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচজন মারা যায়। এই হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী, মেজর (বরখাস্ত) জাহিদ, মারজানসহ অনেকেই বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছে।
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তের পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দেয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, হলি আর্টিজানে হামলার পেছনে মূলত তিনটি উদ্দেশ্য ছিল জঙ্গিদের। কূটনৈতিক এলাকায় হামলা করে নিজেদের সামর্থ্যের জানান দেওয়া; বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করে নৃশংসতার প্রকাশ ঘটানো এবং দেশে-বিদেশে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পাওয়ার পাশাপাশি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করা। তদন্তে আরো জানা গেছে, হলি আর্টিজান ক্যাফেতে হামলা চালানোর আগে ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীতে জঙ্গিরা গ্রেনেড নিক্ষেপের প্রশিক্ষণ নিয়েছিল।
সরকারের জিরো টলারেন্স ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় তৎপরতায় দেশে জঙ্গি সংগঠনগুলোর কার্যক্রম অনেক কমেছে। তবে তারা একেবারে নিষ্ক্রিয় হয়নি। জঙ্গিবাদ নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের ওপর হামলাসহ কিছু ঘটনায় নব্য জেএমবিসহ জঙ্গি সংগঠনের লোন উলফ বা একাকী ধাঁচের হামলার প্রবণতা ধরা পড়েছে। অর্থাৎ জঙ্গি তৎপরতা কিছুটা স্তিমিত হলেও ঘর গোছানোর কাজ কখনো থেমে থাকেনি। ‘নব্য জেএমবি’ নামের একটি অংশ এখন আরো বেশি সংগঠিত, প্রযুক্তিনির্ভর এবং আরো বেশি উগ্র মতাদর্শে পরিচালিত।
আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছিল। এই রায়ের মধ্য দিয়ে তা পুনরুদ্ধার হয়েছে। এখন আইনগত সব দিক দ্রুত সম্পন্ন করে রায় কার্যকরে সরকার উদ্যোগী হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।