ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সাংবাদিকদের ওপর হামলা গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের অপপ্রয়াস : টিআইবি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৪৬:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ অগাস্ট ২০২২
  • / ১৪ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সম্প্রতি ধারাবাহিকভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং ক্ষমতার অপব্যবহার, হামলা-মামলা ও বিচারহীনতার মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চলমান প্রক্রিয়ার শঙ্কাজনক অপপ্রয়াসের অব্যাহত প্রবণতা। এসব ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও বাস্তবিক অর্থে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিচার শেষ হয় না; যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকের সুরক্ষা নিশ্চিতে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রতিটি ঘটনায় অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাংবাদিকদের সুরক্ষায় বিশেষ আইনের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যখন দেশের মানুষ প্রভাবশালী ও ক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজদের অর্থপাচার এবং নানাবিধ দুর্নীতির দায়ে বহুমুখী সঙ্কট মোকাবেলা করছে, তখন দুর্নীতির তথ্য উদঘাটন ও প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের ওপর ধারাবাহিক হামলা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। বিশেষ করে, অতিসম্প্রতি চিকিৎসা খাতসহ বিভিন্ন জনসেবা প্রদানকারী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য সংগ্রহকালে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকার সাংবাদিকদের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনায় স্পষ্ট যে, দুর্নীতিবাজরা কতটা বেপরোয়া, ক্ষমতাধর এবং সঙ্ঘবদ্ধ! আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তো বটেই, রাষ্ট্রীয় কোনো কর্তৃপক্ষকেই তারা পরোয়া করে না। এই বেপরোয়া আচরণ প্রমাণ করে, কোনো না কোনো প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তারা সুরক্ষা ও দায়মুক্তি পেয়ে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘নিয়মিত বিরতিতে সাংবাদিক নির্যাতন এবং গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে হামলা-মামলার ঘটনা ঘটলেও, কঠোর আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে যথোপযুক্ত শাস্তির দৃষ্টান্ত কার্যত অনুপস্থিত, যা নিয়ে আমরা দীর্ঘ দিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছি। বরং এ কথা বলাও অত্যুক্তি হবে না যে, মুক্ত গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতা বিষয়ে সরকারের অবস্থান কার্যত সারবত্তাহীন আনুষ্ঠানিকতার রূপ নিয়েছে।’ আইন ও শালিস কেন্দ্রের তথ্যসূত্রে ড. জামান বলেন, ‘‘এ বছরের শুরু থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত অন্তত ১১৯ জন সাংবাদিক নানামুখী হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৮ জন পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার এবং ১৯ জন প্রকাশিত সংবাদের দায়ে মামলার শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে, অতি সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘ দিন ধরে বিরাজমান অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহকালে ঢাকা ও বরিশালে অন্তত তিনজন টেলিভিশন সাংবাদিকের ওপর সঙ্ঘবদ্ধ ভয়াবহ হামলা এ খাতে শক্তিশালী সিন্ডিকেট এবং তাদের সুরক্ষাদাতাদের বেপরোয়া দৌরাত্ম্যের প্রমাণ দেয়, যা টিআইবির বিভিন্ন গবেষণা এবং গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, এসব ঘটনার পুনঃপৌনিকতা ‘মুক্ত সাংবাদিকতা’র সাংবিধানিক অঙ্গীকারকে ধারাবাহিকভাবে পদদলিত করছে।’

এ ধরনের ধারাবাহিক হামলা সাংবাদিকদের মনোবল ভেঙে দিয়ে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশে বাধা সৃষ্টির সুগভীর ও সঙ্ঘবদ্ধ অপকৌশল কি না? এমন প্রশ্ন তুলে নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বিশ্ব দায়মুক্তি সূচক-২০২১ অনুযায়ী সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতায় বাংলাদেশের দশম অবস্থান লজ্জাজনকভাবে দেশে সাংবাদিকতার প্রকট ঝুঁকির দৃষ্টান্ত। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচক-২০২২ অনুযায়ী ১০ ধাপ পিছিয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ১৬২তম অবস্থানও প্রমাণ করে যে, সাংবাদিকতা এ দেশে ধারাবাহিকভাবেই কঠিন হয়ে উঠছে। তাই সাংবাদিকদের সুরক্ষায় অবিলম্বে বিশেষ আইন প্রণয়ন এবং তার কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ২০১৮ সালে জাতিসঙ্ঘের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউর (ইউপিআর) অধীনে বাংলাদেশের তৃতীয় পর্যালোচনার সময় সরকার সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সম্পর্কিত যে আটটি সুপারিশ সমর্থন করেছিল, সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় এ কথা বলা মোটেও অযৌক্তিক হবে না যে, দেশে মৌখিকভাবে স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্ত গণমাধ্যমের প্রচার থাকলেও বাস্তবে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উভয় পদ্ধতিতেই গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের সর্বাত্মক অপচেষ্টা চলছে। অবিলম্বে এই আত্মঘাতী পথ পরিহার করে, সার্বিকভাবে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ এবং বিশেষ করে, তথ্য প্রকাশ ও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিতের স্বার্থে মুক্ত সাংবাদিকতার পথ উন্মুক্ত করতে সাংবাদিকদের ওপর সংঘটিত প্রতিটি নির্যাতন, হয়রানি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি সাংবাদিকদের সুরক্ষায় বিশেষ আইন প্রণয়নের দাবি জানাই।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সাংবাদিকদের ওপর হামলা গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের অপপ্রয়াস : টিআইবি

আপলোড টাইম : ০৫:৪৬:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ অগাস্ট ২০২২

সমীকরণ প্রতিবেদন:অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সম্প্রতি ধারাবাহিকভাবে সাংবাদিকদের ওপর হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং ক্ষমতার অপব্যবহার, হামলা-মামলা ও বিচারহীনতার মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চলমান প্রক্রিয়ার শঙ্কাজনক অপপ্রয়াসের অব্যাহত প্রবণতা। এসব ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও বাস্তবিক অর্থে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিচার শেষ হয় না; যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকের সুরক্ষা নিশ্চিতে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রতিটি ঘটনায় অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাংবাদিকদের সুরক্ষায় বিশেষ আইনের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যখন দেশের মানুষ প্রভাবশালী ও ক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজদের অর্থপাচার এবং নানাবিধ দুর্নীতির দায়ে বহুমুখী সঙ্কট মোকাবেলা করছে, তখন দুর্নীতির তথ্য উদঘাটন ও প্রকাশের জন্য সাংবাদিকদের ওপর ধারাবাহিক হামলা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। বিশেষ করে, অতিসম্প্রতি চিকিৎসা খাতসহ বিভিন্ন জনসেবা প্রদানকারী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য সংগ্রহকালে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকার সাংবাদিকদের ওপর নৃশংস হামলার ঘটনায় স্পষ্ট যে, দুর্নীতিবাজরা কতটা বেপরোয়া, ক্ষমতাধর এবং সঙ্ঘবদ্ধ! আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তো বটেই, রাষ্ট্রীয় কোনো কর্তৃপক্ষকেই তারা পরোয়া করে না। এই বেপরোয়া আচরণ প্রমাণ করে, কোনো না কোনো প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় তারা সুরক্ষা ও দায়মুক্তি পেয়ে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘নিয়মিত বিরতিতে সাংবাদিক নির্যাতন এবং গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে হামলা-মামলার ঘটনা ঘটলেও, কঠোর আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে যথোপযুক্ত শাস্তির দৃষ্টান্ত কার্যত অনুপস্থিত, যা নিয়ে আমরা দীর্ঘ দিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছি। বরং এ কথা বলাও অত্যুক্তি হবে না যে, মুক্ত গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতা বিষয়ে সরকারের অবস্থান কার্যত সারবত্তাহীন আনুষ্ঠানিকতার রূপ নিয়েছে।’ আইন ও শালিস কেন্দ্রের তথ্যসূত্রে ড. জামান বলেন, ‘‘এ বছরের শুরু থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত অন্তত ১১৯ জন সাংবাদিক নানামুখী হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৮ জন পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার এবং ১৯ জন প্রকাশিত সংবাদের দায়ে মামলার শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে, অতি সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘ দিন ধরে বিরাজমান অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহকালে ঢাকা ও বরিশালে অন্তত তিনজন টেলিভিশন সাংবাদিকের ওপর সঙ্ঘবদ্ধ ভয়াবহ হামলা এ খাতে শক্তিশালী সিন্ডিকেট এবং তাদের সুরক্ষাদাতাদের বেপরোয়া দৌরাত্ম্যের প্রমাণ দেয়, যা টিআইবির বিভিন্ন গবেষণা এবং গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, এসব ঘটনার পুনঃপৌনিকতা ‘মুক্ত সাংবাদিকতা’র সাংবিধানিক অঙ্গীকারকে ধারাবাহিকভাবে পদদলিত করছে।’

এ ধরনের ধারাবাহিক হামলা সাংবাদিকদের মনোবল ভেঙে দিয়ে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশে বাধা সৃষ্টির সুগভীর ও সঙ্ঘবদ্ধ অপকৌশল কি না? এমন প্রশ্ন তুলে নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বিশ্ব দায়মুক্তি সূচক-২০২১ অনুযায়ী সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতায় বাংলাদেশের দশম অবস্থান লজ্জাজনকভাবে দেশে সাংবাদিকতার প্রকট ঝুঁকির দৃষ্টান্ত। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচক-২০২২ অনুযায়ী ১০ ধাপ পিছিয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের ১৬২তম অবস্থানও প্রমাণ করে যে, সাংবাদিকতা এ দেশে ধারাবাহিকভাবেই কঠিন হয়ে উঠছে। তাই সাংবাদিকদের সুরক্ষায় অবিলম্বে বিশেষ আইন প্রণয়ন এবং তার কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ২০১৮ সালে জাতিসঙ্ঘের ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউর (ইউপিআর) অধীনে বাংলাদেশের তৃতীয় পর্যালোচনার সময় সরকার সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সম্পর্কিত যে আটটি সুপারিশ সমর্থন করেছিল, সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় এ কথা বলা মোটেও অযৌক্তিক হবে না যে, দেশে মৌখিকভাবে স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্ত গণমাধ্যমের প্রচার থাকলেও বাস্তবে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উভয় পদ্ধতিতেই গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের সর্বাত্মক অপচেষ্টা চলছে। অবিলম্বে এই আত্মঘাতী পথ পরিহার করে, সার্বিকভাবে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ এবং বিশেষ করে, তথ্য প্রকাশ ও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিতের স্বার্থে মুক্ত সাংবাদিকতার পথ উন্মুক্ত করতে সাংবাদিকদের ওপর সংঘটিত প্রতিটি নির্যাতন, হয়রানি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি সাংবাদিকদের সুরক্ষায় বিশেষ আইন প্রণয়নের দাবি জানাই।’