সরকার কাঠামো ও সেনা নিয়োগে পাল্টাপাল্টি প্রস্তাব
- আপলোড টাইম : ০৪:২২:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ অক্টোবর ২০১৭
- / ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপ শেষ
সমীকরণ ডেস্ক: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপ শেষ হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। শেষ দিনে সংলাপে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি (জেপি) ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। মোট ৪০টি দল এ সংলাপে অংশ নেয়। বেশির ভাগ দলের পক্ষ থেকে এমন কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা ইসির পক্ষে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এর পরও ইসি এসব প্রস্তাব লিপিবদ্ধ করে প্রকাশ করবে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া বলা হয়েছে, সংলাপে যেসব ইস্যুতে রাজনৈতিক ঐকমত্য হবে সেসব প্রস্তাব আমলে নেওয়া হবে।
নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা ও সেনা নিয়োগ বিষয়ে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের অবস্থানই দুই মেরুতে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দলগুলো বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই নির্বাচন চায়। নির্বাচনে বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে সেনা নিয়োগেরও বিপক্ষে এ জোটের শরিকরা। অন্যদিকে সংসদের বাইরে থাকা দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটসহ গত নির্বাচনে অংশ না নেওয়া দলগুলো নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং বিশেষ ক্ষমতাসহ সেনা নিয়োগের পক্ষে। সংলাপে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা এবং সেনা নিয়োগ বিষয়ে প্রায় সব দলই নিজস্ব অভিমত দিয়েছে। সে তুলানায় সীমানা পুননির্ধারণ, ‘না’ ভোটের বিধান চালু, ইভিএম ব্যবহার এবং নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে সব দলের অভিমত পাওয়া যায়নি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এবং নির্বাচনসংক্রান্ত অন্যান্য আইন বাংলায় রূপান্তরের বিষয়ে অনেক দলেরই সমর্থন মিলেছে। দুটি দল নির্বাচনে প্রার্থীর ব্যক্তিগত আট তথ্যসহ হলফনামা দাখিলের বিধান বাতিল চেয়েছে। নির্বাচন কর্মকর্তাদেরই রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া, প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেওয়া এবং সংসদে নারী আসনের সংখ্যা বাড়িয়ে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছে বেশ কয়েকটি দল।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সংলাপে অংশ নেওয়া ৪০টি দলের মধ্যে বিএনপিসহ ২৩টিই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করে এবং ম্যাজিস্টেরিয়াল ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব রেখেছে। বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও সেনা মোতায়েনের পক্ষে। বিদ্যমান আইনের বাইরে সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে আওয়ামী লীগসহ ৯টি দল। এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো মতামত নেই বা বিষয়টি ইসির ওপর ছেড়ে দিয়েছে আটটি দল।
সংসদ ভেঙে সহায়ক বা দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় ২০টি দল। এর বিপক্ষে বিদ্যমান সংবিধান অনুসারে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই নির্বাচন চায় ৯টি দল। এ বিষয়ে ভিন্ন ধরনের প্রস্তাব রয়েছে বা স্পষ্ট কোনো অভিমত নেই ১১টি দলের।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) চালু করার পক্ষে মত দিয়েছে আওয়ামী লীগসহ সাতটি দল। এর বিপক্ষে মত ১১টি দলের। বাকি ২২ দলের এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো মত পাওয়া যায়নি। এমনকি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের সব দলও ইভিএম প্রশ্নে একমত নয়। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে বেশির ভাগ দলই কোনো অভিমত রাখেনি। বিদ্যমান সীমানা বহাল রাখতে বলেছে আওয়ামী লীগসহ সাতটি দল। ভোটারসংখ্যার ভিত্তিতে পরিবর্তন বা ২০০৮ সালের আগের সীমানা পুনর্বহাল চেয়েছে বিএনপিসহ ছয়টি দল।
ইসিতে নিবন্ধিত ৪০টি দলের মধ্যে সাতটি ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক। এগুলো হলো আওয়ামী লীগ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ, তরীকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি) ও গণতন্ত্রী পার্টি। এর বাইরে জোটের সদস্য অন্য পাঁচটি দলের নিবন্ধন নেই।
অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে নিবন্ধিত দল রয়েছে ৯টি। এগুলো হলো বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপা, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। এ জোটের শরিক ইসলামী ঐক্যজোট, এনপিপিসহ আরো কয়েকটি দল ইসিতে নিবন্ধিত হলেও তাদের মূল অংশ জোট পরিত্যাগ করেছে এবং তাদেরই ইসির সংলাপে ডাকা হয়েছে। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের আদেশে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় এ জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী সংলাপে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়নি।
বিএনপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ ‘সহায়ক সরকার’-এর অধীনে ভোটের প্রস্তাব রাখে। এ ছাড়া নির্বাচনের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্তি ও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন, ২০০৮ সালের আগের সংসদীয় আসন সীমানা ফিরিয়ে আনা, ইভিএম চালু না করাসহ ২০ দফা প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।
আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুসারে বর্তমান সীমানায় ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব রাখে। নির্বাচনে সেনা নিয়োগ প্রশ্নেও আওয়ামী লীগ বর্তমান ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে আগ্রহী নয়। তাদের বক্তব্য, প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা যাবেÍতা ১৮৯৮ সালে প্রণীত ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৯ থেকে ১৩১ ধারায় এবং সেনা বিধিমালায় ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ শিরোনামে সুস্পষ্টভাবে তার উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন পরিচালনায় কেবল প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল কর্মচারীদের প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছে ক্ষমতাসীন দল। সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে ভোটের পক্ষে মত দিয়েছে জাতীয় পার্টি (জেপি)। সেই সঙ্গে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য প্রয়োজনে সেনা মোতায়েনের পক্ষে দলটি। সীমানা পুনর্বিন্যাস ও ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়েছে দলটি।