ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সরকারে একাকার আওয়ামী লীগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৪:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুন ২০১৯
  • / ২০৫ বার পড়া হয়েছে

♦ মাঠপর্যায়ে নেই সাংগঠনিক কার্যক্রম
♦ সবাই তাকিয়ে থাকে দলীয় প্রধানের দিকে
সমীকরণ প্রতিবেদন:
জনগণের মন জয় করা কিংবা সরকারের পক্ষে জনমত তৈরি করার লক্ষ্যে মাঠে তেমন কোনো তৎপরতা নেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। সাংগঠনিক শক্তির বদলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এখন দলটির ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারি প্রশাসন। টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এলেও মাঠপর্যায়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা নড়বড়ে। মন্ত্রী-এমপি ও নেতারা প্রশাসনমুখী হওয়ায় কর্মীদের সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে দূরত্ব। এর প্রভাব পড়েছে উপজেলা নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয়েও ১৩৬ জন নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার বিরুদ্ধে লড়ে।
মাঠপর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মীদের সঙ্গে নেতৃত্বের দূরত্ব বাড়ছে। এ ছাড়া যেসব নেতা দলকে জনসম্পৃক্ত রেখেছেন, তাঁদেরও মূল্যায়ন নেই তেমন। ত্যাগী নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন পরিবেষ্টিত হয়ে থাকা এবং সুবিধাভোগী ও চাটুকারদের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা দূরে সরে যাচ্ছে। আর সুবিধাভোগী ও চাটুকার ধরনের লোকজন সাংগঠনিক কার্যক্রমের প্রতি নজর না দিয়ে মন্ত্রী-এমপি, মেয়র-চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের কাছ থেকে আরো বেশি সুবিধা বাগানোর চেষ্টায় ব্যস্ত থাকে। তৃতীয় দফায় সরকার গঠন করার পর পাঁচ মাসেও উল্লেুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুখযোগ্য কোনো সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন দিবস পালনের মধ্যে সীমিত হয়ে গেছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। আগামী অক্টোবরে দলের জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা। দলীয় সূত্রে জানা যায়, সম্মেলন সামনে রেখে মাঠপর্যায়ে সংগঠন গোছাতে বিভাগওয়ারি কমিটি করে দেওয়া হলেও খুলনা ছাড়া অন্য কোনো বিভাগে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কেন্দ্রে শীর্ষস্থানীয় নেতারা মন্ত্রিত্ব কিংবা সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে ব্যস্ত। সরকারি পদ যাঁরা পাননি তাঁরাও দলের জন্য সময় দেন না। একই অবস্থা তৃণমূল পর্যায়েও। মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতাদের কাছে উপেক্ষিত কর্মীরা গুটিয়ে নিয়েছে নিজেদের।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সবাই নেত্রীর দিকে চেয়ে থাকেন। তিনি যখন কিছু বলেন সেটা নিয়ে খুব তোড়জোড় শুরু হয়। এরপর নেত্রী যখন সেটা ভুলে যান তখন অন্যরাও ভুলে যান। কেন্দ্রীয় নেতারা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে সংগঠনের সমস্যা সমাধান বা দল গোছানোর কাজে আগ্রহী নন। আবার অন্য সমস্যাও আছে। আওয়ামী লীগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখন নেত্রী ছাড়া অন্য কারো কথা কেউ মানতে চায় না। এ প্রবণতার কারণে সংগঠনকে সক্রিয় করতে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে কর্মকা- চালানোয় উৎসাহ বোধ করেন না কেন্দ্রীয় নেতারা।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে সভা-সমাবেশ থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি জনগণের মন জয় করা এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- প্রচার করার কাজে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানান। কিন্তু ওই আহ্বানে দলের কেন্দ্র বা তৃণমূল পর্যন্ত কোনো পর্যায়েই কোনো সাড়া মেলেনি এ পর্যন্ত। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার জনস্বার্থে মাদক, নদী দখল ও খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এসব বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি বা অন্য কোনো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামেনি আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের সরকার রাজনৈতিক সরকার। সরকারপ্রধান দেশের সবচেয়ে বড় রাজনীতিবিদ। ফলে রাজনৈতিক দলকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রশাসননির্ভর হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে উন্নত দেশগুলোতেও সরকার প্রশাসনের মতামত নিয়ে থাকে। প্রশাসনের সঙ্গে নানা বিধি-বিধানের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে সরকার তার কাজ এগিয়ে নিয়ে থাকে। আমাদের এখানেও তেমনটাই হচ্ছে।’ আওয়ামী লীগের খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আমরা মোটেও প্রশাসননির্ভর নই। সরকারের কাজ তো আর দল করতে পারে না। আবার দলের কাজও প্রশাসন দিয়ে সম্ভব নয়। যার যা কাজ তারা তা-ই করছে। আমরা আমাদের দলীয় কর্মকা- নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছি।’ চার ধাপের উপজেলা নির্বাচনে যেসব মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতা নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু মাস পেরিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সে সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময়ে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়েছে। এতে তৃণমূলে কিছুটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। আমরা আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে সংগঠনকে গুছিয়ে ফেলব। আমাদের দল কোনোভাবেই প্রশাসননির্ভর নয়। প্রশাসন তাদের মতো কাজ করবে, আমরা আমাদের মতো দলীয় কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, যাব।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সরকারে একাকার আওয়ামী লীগ

আপলোড টাইম : ০৯:২৪:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুন ২০১৯

♦ মাঠপর্যায়ে নেই সাংগঠনিক কার্যক্রম
♦ সবাই তাকিয়ে থাকে দলীয় প্রধানের দিকে
সমীকরণ প্রতিবেদন:
জনগণের মন জয় করা কিংবা সরকারের পক্ষে জনমত তৈরি করার লক্ষ্যে মাঠে তেমন কোনো তৎপরতা নেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। সাংগঠনিক শক্তির বদলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এখন দলটির ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারি প্রশাসন। টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় এলেও মাঠপর্যায়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা নড়বড়ে। মন্ত্রী-এমপি ও নেতারা প্রশাসনমুখী হওয়ায় কর্মীদের সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে দূরত্ব। এর প্রভাব পড়েছে উপজেলা নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয়েও ১৩৬ জন নির্বাচিত হয়েছেন নৌকার বিরুদ্ধে লড়ে।
মাঠপর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মীদের সঙ্গে নেতৃত্বের দূরত্ব বাড়ছে। এ ছাড়া যেসব নেতা দলকে জনসম্পৃক্ত রেখেছেন, তাঁদেরও মূল্যায়ন নেই তেমন। ত্যাগী নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন পরিবেষ্টিত হয়ে থাকা এবং সুবিধাভোগী ও চাটুকারদের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে দলের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা দূরে সরে যাচ্ছে। আর সুবিধাভোগী ও চাটুকার ধরনের লোকজন সাংগঠনিক কার্যক্রমের প্রতি নজর না দিয়ে মন্ত্রী-এমপি, মেয়র-চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের কাছ থেকে আরো বেশি সুবিধা বাগানোর চেষ্টায় ব্যস্ত থাকে। তৃতীয় দফায় সরকার গঠন করার পর পাঁচ মাসেও উল্লেুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুখযোগ্য কোনো সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন দিবস পালনের মধ্যে সীমিত হয়ে গেছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। আগামী অক্টোবরে দলের জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা। দলীয় সূত্রে জানা যায়, সম্মেলন সামনে রেখে মাঠপর্যায়ে সংগঠন গোছাতে বিভাগওয়ারি কমিটি করে দেওয়া হলেও খুলনা ছাড়া অন্য কোনো বিভাগে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কেন্দ্রে শীর্ষস্থানীয় নেতারা মন্ত্রিত্ব কিংবা সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে ব্যস্ত। সরকারি পদ যাঁরা পাননি তাঁরাও দলের জন্য সময় দেন না। একই অবস্থা তৃণমূল পর্যায়েও। মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতাদের কাছে উপেক্ষিত কর্মীরা গুটিয়ে নিয়েছে নিজেদের।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সবাই নেত্রীর দিকে চেয়ে থাকেন। তিনি যখন কিছু বলেন সেটা নিয়ে খুব তোড়জোড় শুরু হয়। এরপর নেত্রী যখন সেটা ভুলে যান তখন অন্যরাও ভুলে যান। কেন্দ্রীয় নেতারা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে সংগঠনের সমস্যা সমাধান বা দল গোছানোর কাজে আগ্রহী নন। আবার অন্য সমস্যাও আছে। আওয়ামী লীগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখন নেত্রী ছাড়া অন্য কারো কথা কেউ মানতে চায় না। এ প্রবণতার কারণে সংগঠনকে সক্রিয় করতে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে কর্মকা- চালানোয় উৎসাহ বোধ করেন না কেন্দ্রীয় নেতারা।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে সভা-সমাবেশ থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি জনগণের মন জয় করা এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- প্রচার করার কাজে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানান। কিন্তু ওই আহ্বানে দলের কেন্দ্র বা তৃণমূল পর্যন্ত কোনো পর্যায়েই কোনো সাড়া মেলেনি এ পর্যন্ত। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার জনস্বার্থে মাদক, নদী দখল ও খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এসব বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি বা অন্য কোনো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামেনি আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমাদের সরকার রাজনৈতিক সরকার। সরকারপ্রধান দেশের সবচেয়ে বড় রাজনীতিবিদ। ফলে রাজনৈতিক দলকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রশাসননির্ভর হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে উন্নত দেশগুলোতেও সরকার প্রশাসনের মতামত নিয়ে থাকে। প্রশাসনের সঙ্গে নানা বিধি-বিধানের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে সরকার তার কাজ এগিয়ে নিয়ে থাকে। আমাদের এখানেও তেমনটাই হচ্ছে।’ আওয়ামী লীগের খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আমরা মোটেও প্রশাসননির্ভর নই। সরকারের কাজ তো আর দল করতে পারে না। আবার দলের কাজও প্রশাসন দিয়ে সম্ভব নয়। যার যা কাজ তারা তা-ই করছে। আমরা আমাদের দলীয় কর্মকা- নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছি।’ চার ধাপের উপজেলা নির্বাচনে যেসব মন্ত্রী, এমপি ও দলীয় নেতা নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু মাস পেরিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সে সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময়ে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়েছে। এতে তৃণমূলে কিছুটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। আমরা আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে সংগঠনকে গুছিয়ে ফেলব। আমাদের দল কোনোভাবেই প্রশাসননির্ভর নয়। প্রশাসন তাদের মতো কাজ করবে, আমরা আমাদের মতো দলীয় কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, যাব।’