ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সরকারের হাতে জেলা পরিষদ নির্বাচন তারিখ ঠিক করে প্রজ্ঞাপন জারির পর তফসিল ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করবে ইসি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:০৬:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে

ddddddddddddddd-350x350সমীকরণ ডেস্ক: জেলা পরিষদ নির্বাচনের ক্ষমতা সরকারের হাতে রেখে ঘুঁটি সাজানো হচ্ছে। সরকার ভোটের তারিখ ঠিক করে প্রজ্ঞাপন জারির পর তফসিল ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অথচ সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোটের তারিখসহ পুরো প্রক্রিয়া এককভাবে করে কমিশন। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ্ নেওয়াজ এ প্রসঙ্গে বলেন, স্থানীয় পর্যায়ের অন্য নির্বাচন থেকে জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা থাকছে। এই নির্বাচনের ভোটের তারিখ ঠিক করবে সরকার। এর আলোকে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি হবে। পরে এই সিদ্ধান্তের আলোকে ভোটের দিন ঠিক রেখে কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে। তিনি বলেন, এই নির্বাচন বাদে সিটি, পৌর, উপজেলা ও ইউপিথসব নির্বাচনে ভোটের দিনক্ষণ থেকে তফসিল ঘোষণাসহ পুরো নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কমিশন। সরকারের এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোটের তারিখ সরকারের হাতে রাখাটা সমীচীন হয়নি। কোন সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব তা জানার কথা কমিশনের। তাই জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্ত নির্বাচনকে কুক্ষিগত করার শামিল। এ ছাড়া ভোটের তারিখটি সরকারের হাতে রাখার ফলে দলীয় একক প্রার্থী করার পথ প্রশস্ত হলো। এদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরে তিনটি বড় নির্বাচন হবে। দুটি সিটি এবং একটি জেলা পরিষদের নির্বাচন। এসব নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে কমিশন। জেলা পরিষদ নির্বাচনটি নির্দলীয় হলেও সিটি নির্বাচন হবে রাজনৈতিক দলীয় ব্যানারে। ফলে দুটি নির্বাচনের আমেজে ভিন্নতা থাকবে।
জানা গেছে, ২১ সদস্য নিয়ে গঠিত হবে জেলা পরিষদ। পরিষদে একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সাধারণ সদস্য এবং পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য থাকবেন। স্থানীয় সরকারের চার স্তরের (সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ) জনপ্রতিনিধিরা ভোট দিয়ে তাদের নির্বাচিত করবেন। এই নির্বাচন পরিচালনা বিধি ও আচরণবিধি প্রণয়ন করছে ইসি। অচিরেই তা আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হলে ভোটের তারিখ সরকার ঠিক করে দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে। এটির কপি কমিশনকে পাঠানোর পর ৪০-৪৫ দিন সময় হাতে রেখে তফসিল দেবে কমিশন।
উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকারের অন্যতম স্তর জেলা পরিষদে ৪২ বছরেও নির্বাচন হয়নি। সংবিধান ও বিধিবিধানে স্থানীয় সরকারের সকল স্তর জনপ্রতিনিধির দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও জেলা পরিষদ অকার্যকর রয়েছে দীর্ঘকাল ধরে। এর আগে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ ২০১২ সালের ১৫ অক্টোবর দেশের (তিন পাবর্ত্য জেলা বাদে) ৬১ জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। এসব প্রশাসকের অধিকাংশই আওয়ামী লীগদলীয় স্থানীয় নেতা। ইতোমধ্যে কিছু জায়গায় মৃত্যুজনিত কারণে প্রশাসকের পদ শূন্য হলে সেখানে আরেকজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ২০০০ সালে স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইন সংশোধন করা হয়। শর্তসাপেক্ষে পরোক্ষ নির্বাচনের বিধানও রাখা হয় এই সংশোধিত আইনে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রণীত সংিবধানের ৫৯ অনেেুচ্ছদের (১) উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের সব প্রশাসনিক একাংশ বা স্তরে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শাসন প্রতিষ্ঠা বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ, সংিবধনের ১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বাংলাদেশকে ‘গণতান্ত্রিক’ রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে জেলায় নির্বাচিত জেলা পরিষদ, উপেজলায় নির্বাচিত উপেজলা পরিষদ, মহানগরে নির্বাচিত সিটি করপোরেশন এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদকে দিয়ে ‘স্থানীয় শাসন’ পরিচালনা করাই সাংবিধানিক নির্দেশনা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সরকারের হাতে জেলা পরিষদ নির্বাচন তারিখ ঠিক করে প্রজ্ঞাপন জারির পর তফসিল ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করবে ইসি

আপলোড টাইম : ০২:০৬:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০১৬

ddddddddddddddd-350x350সমীকরণ ডেস্ক: জেলা পরিষদ নির্বাচনের ক্ষমতা সরকারের হাতে রেখে ঘুঁটি সাজানো হচ্ছে। সরকার ভোটের তারিখ ঠিক করে প্রজ্ঞাপন জারির পর তফসিল ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অথচ সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোটের তারিখসহ পুরো প্রক্রিয়া এককভাবে করে কমিশন। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ্ নেওয়াজ এ প্রসঙ্গে বলেন, স্থানীয় পর্যায়ের অন্য নির্বাচন থেকে জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা থাকছে। এই নির্বাচনের ভোটের তারিখ ঠিক করবে সরকার। এর আলোকে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি হবে। পরে এই সিদ্ধান্তের আলোকে ভোটের দিন ঠিক রেখে কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে। তিনি বলেন, এই নির্বাচন বাদে সিটি, পৌর, উপজেলা ও ইউপিথসব নির্বাচনে ভোটের দিনক্ষণ থেকে তফসিল ঘোষণাসহ পুরো নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কমিশন। সরকারের এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোটের তারিখ সরকারের হাতে রাখাটা সমীচীন হয়নি। কোন সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব তা জানার কথা কমিশনের। তাই জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্ত নির্বাচনকে কুক্ষিগত করার শামিল। এ ছাড়া ভোটের তারিখটি সরকারের হাতে রাখার ফলে দলীয় একক প্রার্থী করার পথ প্রশস্ত হলো। এদিকে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরে তিনটি বড় নির্বাচন হবে। দুটি সিটি এবং একটি জেলা পরিষদের নির্বাচন। এসব নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে কমিশন। জেলা পরিষদ নির্বাচনটি নির্দলীয় হলেও সিটি নির্বাচন হবে রাজনৈতিক দলীয় ব্যানারে। ফলে দুটি নির্বাচনের আমেজে ভিন্নতা থাকবে।
জানা গেছে, ২১ সদস্য নিয়ে গঠিত হবে জেলা পরিষদ। পরিষদে একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সাধারণ সদস্য এবং পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য থাকবেন। স্থানীয় সরকারের চার স্তরের (সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ) জনপ্রতিনিধিরা ভোট দিয়ে তাদের নির্বাচিত করবেন। এই নির্বাচন পরিচালনা বিধি ও আচরণবিধি প্রণয়ন করছে ইসি। অচিরেই তা আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হলে ভোটের তারিখ সরকার ঠিক করে দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করবে। এটির কপি কমিশনকে পাঠানোর পর ৪০-৪৫ দিন সময় হাতে রেখে তফসিল দেবে কমিশন।
উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকারের অন্যতম স্তর জেলা পরিষদে ৪২ বছরেও নির্বাচন হয়নি। সংবিধান ও বিধিবিধানে স্থানীয় সরকারের সকল স্তর জনপ্রতিনিধির দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও জেলা পরিষদ অকার্যকর রয়েছে দীর্ঘকাল ধরে। এর আগে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগ ২০১২ সালের ১৫ অক্টোবর দেশের (তিন পাবর্ত্য জেলা বাদে) ৬১ জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। এসব প্রশাসকের অধিকাংশই আওয়ামী লীগদলীয় স্থানীয় নেতা। ইতোমধ্যে কিছু জায়গায় মৃত্যুজনিত কারণে প্রশাসকের পদ শূন্য হলে সেখানে আরেকজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ২০০০ সালে স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইন সংশোধন করা হয়। শর্তসাপেক্ষে পরোক্ষ নির্বাচনের বিধানও রাখা হয় এই সংশোধিত আইনে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে প্রণীত সংিবধানের ৫৯ অনেেুচ্ছদের (১) উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের সব প্রশাসনিক একাংশ বা স্তরে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শাসন প্রতিষ্ঠা বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ, সংিবধনের ১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বাংলাদেশকে ‘গণতান্ত্রিক’ রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে জেলায় নির্বাচিত জেলা পরিষদ, উপেজলায় নির্বাচিত উপেজলা পরিষদ, মহানগরে নির্বাচিত সিটি করপোরেশন এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদকে দিয়ে ‘স্থানীয় শাসন’ পরিচালনা করাই সাংবিধানিক নির্দেশনা।