ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সরকারি প্রাথমিকের ৪৮ লাখ শিক্ষার্থীই ক্লাসে ফেরেনি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:২২:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / ২৩ বার পড়া হয়েছে

৫ অক্টোবর খুলছে ঢাবির হল : সব ক্যাম্পাসে গোয়েন্দা নজরদারি
সমীকরণ প্রতিবেদন:
স্কুল খুললেও এখনো ক্লাসে ফেরেনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৮ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। দীর্ঘ দিন পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া হলেও প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অনুপস্থিতির হার অনেক বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, এসব শির্ক্ষার্থী হয়তো তাদের নিয়মিত ক্লাসে আর ফিরবে না। অন্য দিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি। অনেক অভিভাবক এখনো করোনার ভয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। পরিস্থিতি আরো একটু স্বাভাবিক হলেই সব শিক্ষার্থীই ক্লাসে ফিরবে। শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই বড় একটি সংখ্যা স্কুলে ফেরেনি তা নয়, বেসরকারি অনেক কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কত শতাংশ অন্য স্কুলে আবার ভর্তি হয়েছে বা হয়নি তারও কোনো পরিসংখ্যান জানা যায়নি। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, করোনার প্রভাবে গত দেড় বছরে ১০ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। কাজেই এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠরত শিক্ষার্থীরা এখনো হিসাবের বাইরে রয়েছে।
সূত্রমতে, দীর্ঘ বন্ধের পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারা দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। স্কুল খোলার শুরুর দিন থেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিইপি) ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির বিষয়টি গুরুত্বসহকারে মনিটরিং করছে। প্রতিটি জেলা ও উপজেলা থেকে নিয়মিত নির্ধারিত ছকে শিক্ষার্থীদের আপডেট তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। আর নির্দেশনা মতো নির্ধারিত ছকে এসব তথ্য নিয়মিতভাবেই মাউশি ও ডিপিইতে পাঠাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা মাঠপর্যায় থেকে যে তথ্য ডিপিইতে আসছে তাতে দেখা যাচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী এখনো অনুপস্থিত। আর অনুপস্থিতির এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮ লাখেরও উপরে।
ডিপিই সূত্রে আরো জানা গেছে, দেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। গত বছরের হিসাব অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা চার কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ১৫৮ জন। এর মধ্যে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। সংখ্যার হিসাবে যা ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার ৫৭৮ জন। সূত্র জানায়, ৬৪ জেলার মধ্যে গত তিন-চার দিনের গড় হিসাবে প্রাথমিকে ৭৩ দশমিক ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত ছিল। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৭০ দশমিক ২৭ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৪ দশমিক ৫১ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭১ দশমিক ৩৫ শতাংশ, খুলনায় ৮১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, সিলেটে ৬৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ, বরিশালে ৭৬ দশমিক ২৯ শতাংশ, রাজশাহীতে ৭৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ ও রংপুর বিভাগে ৭৬ দশমিক ১১ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত, তাদের অভিভাবকরা বেশির ভাগই গ্রামে চলে গেগ্রণ। তারা আর ফিরে আসতে চান না। বিশেষ করে জেলা শহরগুলো থেকে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আর ফিরে আসবে না। ডিপিই সূত্র আরো জানায়, স্কুল খোলার পর বেশির ভাগ জেলা বা বিভাগেই শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির সংখ্যা ২০ শতাংশ বা তার কিছু বেশি। এটি একটি চিন্তার কারণ। কেননা ২০ শতাংশ একটি বড় সংখ্যা। তারা বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবে পরিবারের আর্থিক সঙ্কট, আয়-রোজগার কমে যাওয়া, কর্মসংস্থানের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে শিশুদের বিদ্যালয়ে ফেরানো কঠিন।
যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেন শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার এ সংখ্যার সাথে একমত নন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এখনই শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার সংখ্যা নির্ধারণ করা যাবে না। কেননা অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের এখনো স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। তারা আরা একটু সময় নিতে চান। পরিস্থিতি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে চান। প্রতিমন্ত্রীর মতে স্কুলগুলো পুরোদমে শুরু হলে এই ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে।
৫ অক্টোবরই খুলছে ঢাবির হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য আগামী ৫ অক্টোবর থেকে আবাসিক হল খুলে দেয়া হবে। এ ছাড়া ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল বিকেলে ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের যেসব শিক্ষার্থী অন্তত কোভিড-১৯ এর প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন, তারা স্বাস্থ্যবিধি ও স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর মেনে টিকাকার্ড বা সনদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ পরিচয়পত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেখিয়ে গ্রন্থাগার ব্যবহার ও নিজ নিজ হলে উঠতে পারবে। প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, বিজ্ঞান গ্রন্থাগার ও বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের সেমিনার লাইব্রেরিগুলো ব্যবহার করতে পারবে। আবাসিক শিক্ষার্থীরা ৫ অক্টোবর সকাল ৮টা থেকে নিজ নিজ হলে উঠতে পারবে। শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সেবাদানকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীদেরও টিকা নেয়ার সনদ বা প্রমাণপত্র সাথে রাখতে বলা হয়েছে। আরো বলা হয়, সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আবাসিক হল ও অ্যাকাডেমিক ভবনের দৃশ্যমান জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের নির্দেশিকা সংবলিত ব্যানার বা ফেস্টুন থাকবে। টিকা নেয়াসাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে অনার্স প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ নিজ আবাসিক হল খুলে দেয়া হবে। আবাসিক হলগুলোতে আগের মতো ঠাসাঠাসি করে বসবাস ও কথিত কোনো ‘গণরুম’ রাখা যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু নিয়মিত আবাসিক শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করবে। এতে আরো বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থী টিকা কার্যক্রমের আওতায় আসার পর সশরীরে শ্রেণিকার্যক্রমের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা: মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিক্যাল সেন্টারে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী এখনো টিকার নিবন্ধন করেননি, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিবন্ধনের আওতায় এসে টিকা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও বাড়বে নজরদারি
বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও সব ক্যাম্পাসে বাড়ানো হবে গোয়েন্দা নজরদারি। এরই মধ্যে প্রতিটি ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরা বসানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার পর ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। একই সাথে যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে রাখা হবে বিশেষ নজর। এ ছাড়া ক্যাম্পাসগুলোতে ‘নৈরাজ্য’ ও ‘জঙ্গিবাদ প্রচার’ হওয়ার আশঙ্কাসংক্রান্ত কোনো তথ্য আছে কি না জানতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, দীর্ঘ দিন পর বিশ্ববিদ্যালয় খুললে নানা সমস্যা আসতে পারে। সেগুলো মোকাবেলায় ভিসিদের সাথে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার পর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনবে। তা ছাড়া ক্যাম্পাসের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টদের নজরদারি থাকবে। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্ন হয় এমন কিছুই হবে না। করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে ২৭ সেপ্টেম্বরের পর অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। এ দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারির আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে। আবার চালু হওয়ার পর যেন কোনো ধরনের ‘অরাজক পরিস্থিতি’ তৈরি না হয়, সে জন্য এ নির্দেশ দেয়া হয়। প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়।
গত বৃহস্পতিবার ইউজিসি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক শেষে মঞ্জুরি কমিশনের দুই সদস্য বিষয়টি জানান। মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কী করণীয় তা ঠিক করতে একটি গোপন বৈঠক ছিল। তাই আমি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করব না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সরকারি প্রাথমিকের ৪৮ লাখ শিক্ষার্থীই ক্লাসে ফেরেনি

আপলোড টাইম : ১১:২২:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

৫ অক্টোবর খুলছে ঢাবির হল : সব ক্যাম্পাসে গোয়েন্দা নজরদারি
সমীকরণ প্রতিবেদন:
স্কুল খুললেও এখনো ক্লাসে ফেরেনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৮ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। দীর্ঘ দিন পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া হলেও প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অনুপস্থিতির হার অনেক বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, এসব শির্ক্ষার্থী হয়তো তাদের নিয়মিত ক্লাসে আর ফিরবে না। অন্য দিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি। অনেক অভিভাবক এখনো করোনার ভয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। পরিস্থিতি আরো একটু স্বাভাবিক হলেই সব শিক্ষার্থীই ক্লাসে ফিরবে। শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই বড় একটি সংখ্যা স্কুলে ফেরেনি তা নয়, বেসরকারি অনেক কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কত শতাংশ অন্য স্কুলে আবার ভর্তি হয়েছে বা হয়নি তারও কোনো পরিসংখ্যান জানা যায়নি। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, করোনার প্রভাবে গত দেড় বছরে ১০ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। কাজেই এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠরত শিক্ষার্থীরা এখনো হিসাবের বাইরে রয়েছে।
সূত্রমতে, দীর্ঘ বন্ধের পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারা দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। স্কুল খোলার শুরুর দিন থেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিইপি) ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির বিষয়টি গুরুত্বসহকারে মনিটরিং করছে। প্রতিটি জেলা ও উপজেলা থেকে নিয়মিত নির্ধারিত ছকে শিক্ষার্থীদের আপডেট তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। আর নির্দেশনা মতো নির্ধারিত ছকে এসব তথ্য নিয়মিতভাবেই মাউশি ও ডিপিইতে পাঠাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা মাঠপর্যায় থেকে যে তথ্য ডিপিইতে আসছে তাতে দেখা যাচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী এখনো অনুপস্থিত। আর অনুপস্থিতির এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮ লাখেরও উপরে।
ডিপিই সূত্রে আরো জানা গেছে, দেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। গত বছরের হিসাব অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা চার কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ১৫৮ জন। এর মধ্যে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। সংখ্যার হিসাবে যা ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার ৫৭৮ জন। সূত্র জানায়, ৬৪ জেলার মধ্যে গত তিন-চার দিনের গড় হিসাবে প্রাথমিকে ৭৩ দশমিক ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত ছিল। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৭০ দশমিক ২৭ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৪ দশমিক ৫১ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭১ দশমিক ৩৫ শতাংশ, খুলনায় ৮১ দশমিক ৪৬ শতাংশ, সিলেটে ৬৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ, বরিশালে ৭৬ দশমিক ২৯ শতাংশ, রাজশাহীতে ৭৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ ও রংপুর বিভাগে ৭৬ দশমিক ১১ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত, তাদের অভিভাবকরা বেশির ভাগই গ্রামে চলে গেগ্রণ। তারা আর ফিরে আসতে চান না। বিশেষ করে জেলা শহরগুলো থেকে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আর ফিরে আসবে না। ডিপিই সূত্র আরো জানায়, স্কুল খোলার পর বেশির ভাগ জেলা বা বিভাগেই শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির সংখ্যা ২০ শতাংশ বা তার কিছু বেশি। এটি একটি চিন্তার কারণ। কেননা ২০ শতাংশ একটি বড় সংখ্যা। তারা বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবে পরিবারের আর্থিক সঙ্কট, আয়-রোজগার কমে যাওয়া, কর্মসংস্থানের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে শিশুদের বিদ্যালয়ে ফেরানো কঠিন।
যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো: জাকির হোসেন শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার এ সংখ্যার সাথে একমত নন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এখনই শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার সংখ্যা নির্ধারণ করা যাবে না। কেননা অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের এখনো স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। তারা আরা একটু সময় নিতে চান। পরিস্থিতি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে চান। প্রতিমন্ত্রীর মতে স্কুলগুলো পুরোদমে শুরু হলে এই ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে।
৫ অক্টোবরই খুলছে ঢাবির হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য আগামী ৫ অক্টোবর থেকে আবাসিক হল খুলে দেয়া হবে। এ ছাড়া ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল বিকেলে ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের যেসব শিক্ষার্থী অন্তত কোভিড-১৯ এর প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন, তারা স্বাস্থ্যবিধি ও স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর মেনে টিকাকার্ড বা সনদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ পরিচয়পত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেখিয়ে গ্রন্থাগার ব্যবহার ও নিজ নিজ হলে উঠতে পারবে। প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, বিজ্ঞান গ্রন্থাগার ও বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের সেমিনার লাইব্রেরিগুলো ব্যবহার করতে পারবে। আবাসিক শিক্ষার্থীরা ৫ অক্টোবর সকাল ৮টা থেকে নিজ নিজ হলে উঠতে পারবে। শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সেবাদানকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীদেরও টিকা নেয়ার সনদ বা প্রমাণপত্র সাথে রাখতে বলা হয়েছে। আরো বলা হয়, সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আবাসিক হল ও অ্যাকাডেমিক ভবনের দৃশ্যমান জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের নির্দেশিকা সংবলিত ব্যানার বা ফেস্টুন থাকবে। টিকা নেয়াসাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে অনার্স প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ নিজ আবাসিক হল খুলে দেয়া হবে। আবাসিক হলগুলোতে আগের মতো ঠাসাঠাসি করে বসবাস ও কথিত কোনো ‘গণরুম’ রাখা যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু নিয়মিত আবাসিক শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করবে। এতে আরো বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থী টিকা কার্যক্রমের আওতায় আসার পর সশরীরে শ্রেণিকার্যক্রমের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা: মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিক্যাল সেন্টারে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী এখনো টিকার নিবন্ধন করেননি, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিবন্ধনের আওতায় এসে টিকা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও বাড়বে নজরদারি
বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও সব ক্যাম্পাসে বাড়ানো হবে গোয়েন্দা নজরদারি। এরই মধ্যে প্রতিটি ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরা বসানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার পর ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে। একই সাথে যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে রাখা হবে বিশেষ নজর। এ ছাড়া ক্যাম্পাসগুলোতে ‘নৈরাজ্য’ ও ‘জঙ্গিবাদ প্রচার’ হওয়ার আশঙ্কাসংক্রান্ত কোনো তথ্য আছে কি না জানতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, দীর্ঘ দিন পর বিশ্ববিদ্যালয় খুললে নানা সমস্যা আসতে পারে। সেগুলো মোকাবেলায় ভিসিদের সাথে বৈঠক করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার পর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনবে। তা ছাড়া ক্যাম্পাসের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টদের নজরদারি থাকবে। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্ন হয় এমন কিছুই হবে না। করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে ২৭ সেপ্টেম্বরের পর অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। এ দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারির আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে। আবার চালু হওয়ার পর যেন কোনো ধরনের ‘অরাজক পরিস্থিতি’ তৈরি না হয়, সে জন্য এ নির্দেশ দেয়া হয়। প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়।
গত বৃহস্পতিবার ইউজিসি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক শেষে মঞ্জুরি কমিশনের দুই সদস্য বিষয়টি জানান। মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কী করণীয় তা ঠিক করতে একটি গোপন বৈঠক ছিল। তাই আমি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করব না।