ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সময়ের সমীকরণ সম্মাননা পেলেন যাঁরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / ২৬০ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিবেদক:
দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এর ৪র্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এবার একজনকে মরণোত্তর সম্মাননাসহ চারজনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার হোটেল সাহিদ প্যালেসের রাফেল কনভেনশন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চারটি বিভাগে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননা প্রাপ্তরা স্ব স্ব কৃতীত্বে সম্মানিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে তাঁরা তাঁদের জ্ঞানগর্ব প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন। বিশেষ সম্মাননা পেলেন মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য এন এন সাহা। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুজিবনগর সরকার ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম প্রণেতা। পিতার হয়ে মরণোত্তর সম্মাননা গ্রহণ করেন তাঁর পুত্র কবি ও সাংবাদিক চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু। বৈচিত্র্যময় চাষাবাদে বিশেষ অবদানের জন্য ওমর ফারুককে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। তিনি চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের নিধিকুন্ডু গ্রামের মৃত মঙ্গল খানের ছেলে। নিজ গ্রামের পাশ্ববর্তী দুধপাথিলা মাঠে এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে সেখানে চায়না কমলালেবু চাষ করে তাক লাগানো বৈচিত্রের জন্ম দিয়েছেন। এরপর প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননা গ্রহণ করেন পাখি ও প্রাণিপ্রেমী বখতিয়ার হামিদ। ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে বখতিয়ার হামিদ বিপুলের নেতৃত্বে ৩৫ জনের একদল তরুণ গ্রামের পাখি আর বনের প্রাণিদের গ্রামে ফিরিয়ে আনার পোক্ত পরিকল্পনায় নিয়ে কাজ শুরু করেন। তাঁরা এক হয়ে গড়ে তুললেন অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বেলগাছি যুবসমাজ’। যখন অর্থ একটি সংগঠন টিকিয়ে রাখার মূল চালিকা শক্তি, তখন তাঁদের সম্বল টিউশনি করে জমানো তিন-চার হাজার টাকা আর পাখপাখালির প্রতি অগাধ ভালোবাসা। তাদের সেই অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল আর ইচ্ছাশক্তির ওপর ভর করে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি গ্রাম হয়ে ওঠে দেশের প্রথম ‘পাখির গ্রাম বেলগাছি’। এছাড়া এসএ গেমসে একাধিক স্বর্ণপদক জয়ী তীরন্দাজ ইতি খাতুনকে দেওয়া হয় বিশেষ সম্মাননা। সপরিবারে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নেপথ্যের কারিগর বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির সদস্য সোহেল আকরামকে সঙ্গে নিয়ে সম্মাননা গ্রহণ করেন তিনি। মোছা. ইতি খাতুন চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের মুসলিমপাড়ার ইবাদত আলী ও আলিয়া বেগমের কন্যা। তিনি চুয়াডাঙ্গার ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে এ বছর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা দিয়েছেন। এই বিদ্যালয়েই ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ২০১৬ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে আর্চারি প্রশিক্ষণে হাতে খড়ি লাভ করেন তিনি। ওই বছরের ডিসেম্বরে চুয়াডাঙ্গা স্টেডিয়ামে আর্চারি ফেডারেশন আয়োজিত ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। এরপর নিজের মেধা, মনন আর নৈপুণ্যতা দেখিয়ে খুব অল্প সময়ে জায়গা করে নেন জাতীয় দলে অর্থ্যাৎ তীরন্দাজ সংসদ দলে। এরপর আর তাঁকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। বিভিন্ন সময়ে আন্তঃজেলা, আন্তঃবিভাগীয় ও জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এখন তাঁর ঘরভর্তি ক্রেস্ট আর মেডেলে। সম্প্রতি নেপালের পোখারায় অনুষ্ঠিত এসএ গেমস এ অংশ নিয়ে দেশের হয়ে স্বর্ণপদক জিতে লাল-সবুজের পতাকাকে তুলে দিয়েছে অনন্য উচ্চতায়। আর্চারি রিকার্ভে একক, দলগত ও মিশ্র দলগত ক্যাটাগরিতে ছিনিয়ে এনেছে তিনটি গোল্ড মেডেল। ইতির নেপথ্যের কারিগর চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান ক্রীড়াবিদ সোহেল আকরাম বাংলাদেশের আর্চারিকে বিশ্বের দরবারে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে যে ৩-৪ জন কাজ করছেন, তাঁদের একজন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সময়ের সমীকরণ সম্মাননা পেলেন যাঁরা

আপলোড টাইম : ১০:৩৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯

বিশেষ প্রতিবেদক:
দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এর ৪র্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এবার একজনকে মরণোত্তর সম্মাননাসহ চারজনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার হোটেল সাহিদ প্যালেসের রাফেল কনভেনশন হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চারটি বিভাগে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননা প্রাপ্তরা স্ব স্ব কৃতীত্বে সম্মানিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে তাঁরা তাঁদের জ্ঞানগর্ব প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন। বিশেষ সম্মাননা পেলেন মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য এন এন সাহা। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুজিবনগর সরকার ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম প্রণেতা। পিতার হয়ে মরণোত্তর সম্মাননা গ্রহণ করেন তাঁর পুত্র কবি ও সাংবাদিক চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু। বৈচিত্র্যময় চাষাবাদে বিশেষ অবদানের জন্য ওমর ফারুককে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। তিনি চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের নিধিকুন্ডু গ্রামের মৃত মঙ্গল খানের ছেলে। নিজ গ্রামের পাশ্ববর্তী দুধপাথিলা মাঠে এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে সেখানে চায়না কমলালেবু চাষ করে তাক লাগানো বৈচিত্রের জন্ম দিয়েছেন। এরপর প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননা গ্রহণ করেন পাখি ও প্রাণিপ্রেমী বখতিয়ার হামিদ। ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে বখতিয়ার হামিদ বিপুলের নেতৃত্বে ৩৫ জনের একদল তরুণ গ্রামের পাখি আর বনের প্রাণিদের গ্রামে ফিরিয়ে আনার পোক্ত পরিকল্পনায় নিয়ে কাজ শুরু করেন। তাঁরা এক হয়ে গড়ে তুললেন অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বেলগাছি যুবসমাজ’। যখন অর্থ একটি সংগঠন টিকিয়ে রাখার মূল চালিকা শক্তি, তখন তাঁদের সম্বল টিউশনি করে জমানো তিন-চার হাজার টাকা আর পাখপাখালির প্রতি অগাধ ভালোবাসা। তাদের সেই অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল আর ইচ্ছাশক্তির ওপর ভর করে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি গ্রাম হয়ে ওঠে দেশের প্রথম ‘পাখির গ্রাম বেলগাছি’। এছাড়া এসএ গেমসে একাধিক স্বর্ণপদক জয়ী তীরন্দাজ ইতি খাতুনকে দেওয়া হয় বিশেষ সম্মাননা। সপরিবারে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নেপথ্যের কারিগর বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির সদস্য সোহেল আকরামকে সঙ্গে নিয়ে সম্মাননা গ্রহণ করেন তিনি। মোছা. ইতি খাতুন চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের মুসলিমপাড়ার ইবাদত আলী ও আলিয়া বেগমের কন্যা। তিনি চুয়াডাঙ্গার ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে এ বছর জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা দিয়েছেন। এই বিদ্যালয়েই ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ২০১৬ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার অধীনে আর্চারি প্রশিক্ষণে হাতে খড়ি লাভ করেন তিনি। ওই বছরের ডিসেম্বরে চুয়াডাঙ্গা স্টেডিয়ামে আর্চারি ফেডারেশন আয়োজিত ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। এরপর নিজের মেধা, মনন আর নৈপুণ্যতা দেখিয়ে খুব অল্প সময়ে জায়গা করে নেন জাতীয় দলে অর্থ্যাৎ তীরন্দাজ সংসদ দলে। এরপর আর তাঁকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। বিভিন্ন সময়ে আন্তঃজেলা, আন্তঃবিভাগীয় ও জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এখন তাঁর ঘরভর্তি ক্রেস্ট আর মেডেলে। সম্প্রতি নেপালের পোখারায় অনুষ্ঠিত এসএ গেমস এ অংশ নিয়ে দেশের হয়ে স্বর্ণপদক জিতে লাল-সবুজের পতাকাকে তুলে দিয়েছে অনন্য উচ্চতায়। আর্চারি রিকার্ভে একক, দলগত ও মিশ্র দলগত ক্যাটাগরিতে ছিনিয়ে এনেছে তিনটি গোল্ড মেডেল। ইতির নেপথ্যের কারিগর চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান ক্রীড়াবিদ সোহেল আকরাম বাংলাদেশের আর্চারিকে বিশ্বের দরবারে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে যে ৩-৪ জন কাজ করছেন, তাঁদের একজন।