ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সম্পাদকীয়

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫৪:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ নভেম্বর ২০২০
  • / ১১৩ বার পড়া হয়েছে

স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে
দেশে করোনার সংক্রমণ মাঝে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও এখন আবার এর হার বাড়ছে- সংবাদমাধ্যমের এ খবর আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। কারণ এত শঙ্কা, এত মৃত্যু, সব সংকট এখন সহনীয় হয়ে গেছে। বিশেষত করোনাকালীন বিভিন্ন চিকিৎসালয়ের, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসার নামে গলাকাটা নীতি মানুষকে এতই অতিষ্ঠ করেছে যে, মানুষ যেন স্বাস্থ্যমুখী হতে চায় না। মানুষের সংকটকে পুঁিজ করে সারা দেশে বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজিতে চিকিৎসার নামে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য ।
এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি স্বাস্থ্যনীতির তোয়াক্কা না করে চলছে অবাধ বানিজ্য। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এসব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো অবাধে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সাহস পায় কিভাবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। চিকিৎসা সেবার নামে দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে দীর্ঘদিন থেকে চলা এসব অনিয়মের লাগাম টানতে অবশেষে কঠোর হচ্ছে সরকার।
বেসরকারি এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সেবার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। পাশাপাশি অফিস চলাকালে সরকারি হাসপাতালের কোনো চিকিৎসক বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে থাকতে পারবেন না।
আর কোনো কারণে কর্মরত অবস্থায় থাকলে টাস্কফোর্স ও সংশ্লিষ্টদের অবগত করতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল দৈনিক মানবকণ্ঠে এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তবে করোনা আবার ফিরে আসার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। শীতে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ বাড়তে পারে- এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টদের সতর্কবার্তার পরও করোনা সংক্রমণ রোধে মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমন চিত্র অনাকাঙ্খিত।
অথচ মনে রাখা জরুরি, মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই। করোনাকে সামনে নিয়ে স্বাস্থ্য খাতকে সচেতন করছে সরকার । তারা একদিকে হাসপাতাল, ক্লিনিক ডাক্তার অন্যদিকে জনগণকেও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার কথা বলছে । দুটোই চলছে সমান্তরালে।
এমতাবস্থায় যদি আমরা সচেতন না হই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলি কিংবা মাস্ক ব্যবহারে উদাসীন থাকি, তাহলে আরও বড় ঝুঁকির মুখে পড়তে হতে পারে। মাস্ক ব্যবহার না করলে সরকারি অফিসে সেবা মিলবে না কিংবা ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক- সরকারের তরফে এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। আমরা এও দেখছি, মাস্ক ব্যবহারে জনসচেতনতা বাড়াতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানাও করা হচ্ছে। এর পরও ‘মাস্ক ব্যবহারের বালাই নেই’- এমন সংবাদ শিরোনাম উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয়ই বটে। আমরা মনে করি, শুধু আইন কিংবা অভিযান চালিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা যাবে না যদি মানুষের আত্মোপলব্ধি পুষ্ট না হয়। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষের সজাগ হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমাদেও মনে রাখা উচিত। আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবা বরাবরই গলদে পরিপূর্ণ। দেশে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সরকারি হাসপাতাল না থাকার কারণে মানুষ বেসরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। তাই সেই সুযোগ নিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো।
দু-একটি ভালো বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়া বাকিগুলো সেবার নামে মানুষের গলা কাটছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করে আমাদের দেশে যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা ছিল সেগুলো করা হয়নি। প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর ফি নির্ধারণ, সেবার মান খতিয়ে দেখা কিংবা নিয়ন্ত্রণ করা হয় না। আবার অনেক বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে যাদের লাইসেন্স নেই, পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই। এগুলো কিন্তু এক দিনে হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের খামখেয়ালির কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এখন যদি স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ না করে তাহলে এই জটিল সমস্যা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হবে না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সম্পাদকীয়

আপলোড টাইম : ০৯:৫৪:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ নভেম্বর ২০২০

স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে
দেশে করোনার সংক্রমণ মাঝে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও এখন আবার এর হার বাড়ছে- সংবাদমাধ্যমের এ খবর আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। কারণ এত শঙ্কা, এত মৃত্যু, সব সংকট এখন সহনীয় হয়ে গেছে। বিশেষত করোনাকালীন বিভিন্ন চিকিৎসালয়ের, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসার নামে গলাকাটা নীতি মানুষকে এতই অতিষ্ঠ করেছে যে, মানুষ যেন স্বাস্থ্যমুখী হতে চায় না। মানুষের সংকটকে পুঁিজ করে সারা দেশে বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজিতে চিকিৎসার নামে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য ।
এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি স্বাস্থ্যনীতির তোয়াক্কা না করে চলছে অবাধ বানিজ্য। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এসব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো অবাধে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সাহস পায় কিভাবে তা আমাদের বোধগম্য নয়। চিকিৎসা সেবার নামে দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে দীর্ঘদিন থেকে চলা এসব অনিয়মের লাগাম টানতে অবশেষে কঠোর হচ্ছে সরকার।
বেসরকারি এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সেবার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। পাশাপাশি অফিস চলাকালে সরকারি হাসপাতালের কোনো চিকিৎসক বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে থাকতে পারবেন না।
আর কোনো কারণে কর্মরত অবস্থায় থাকলে টাস্কফোর্স ও সংশ্লিষ্টদের অবগত করতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল দৈনিক মানবকণ্ঠে এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তবে করোনা আবার ফিরে আসার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। শীতে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ বাড়তে পারে- এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টদের সতর্কবার্তার পরও করোনা সংক্রমণ রোধে মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমন চিত্র অনাকাঙ্খিত।
অথচ মনে রাখা জরুরি, মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই। করোনাকে সামনে নিয়ে স্বাস্থ্য খাতকে সচেতন করছে সরকার । তারা একদিকে হাসপাতাল, ক্লিনিক ডাক্তার অন্যদিকে জনগণকেও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার কথা বলছে । দুটোই চলছে সমান্তরালে।
এমতাবস্থায় যদি আমরা সচেতন না হই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলি কিংবা মাস্ক ব্যবহারে উদাসীন থাকি, তাহলে আরও বড় ঝুঁকির মুখে পড়তে হতে পারে। মাস্ক ব্যবহার না করলে সরকারি অফিসে সেবা মিলবে না কিংবা ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক- সরকারের তরফে এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। আমরা এও দেখছি, মাস্ক ব্যবহারে জনসচেতনতা বাড়াতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানাও করা হচ্ছে। এর পরও ‘মাস্ক ব্যবহারের বালাই নেই’- এমন সংবাদ শিরোনাম উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয়ই বটে। আমরা মনে করি, শুধু আইন কিংবা অভিযান চালিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা যাবে না যদি মানুষের আত্মোপলব্ধি পুষ্ট না হয়। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে মানুষের সজাগ হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমাদেও মনে রাখা উচিত। আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবা বরাবরই গলদে পরিপূর্ণ। দেশে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সরকারি হাসপাতাল না থাকার কারণে মানুষ বেসরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। তাই সেই সুযোগ নিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালগুলো।
দু-একটি ভালো বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়া বাকিগুলো সেবার নামে মানুষের গলা কাটছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করে আমাদের দেশে যে ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার কথা ছিল সেগুলো করা হয়নি। প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর ফি নির্ধারণ, সেবার মান খতিয়ে দেখা কিংবা নিয়ন্ত্রণ করা হয় না। আবার অনেক বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে যাদের লাইসেন্স নেই, পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই। এগুলো কিন্তু এক দিনে হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের খামখেয়ালির কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এখন যদি স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ না করে তাহলে এই জটিল সমস্যা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হবে না।