ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সন্দেহের তির মাদ্রাসা সুপার আবু হানিফের দিকে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:২৭:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০১৯
  • / ১২৩৮ বার পড়া হয়েছে

আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গায় মরদেহ উদ্ধারের প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর মাথা উদ্ধার
বিশেষ প্রতিবেদক:
আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের একটি আমবাগান থেকে আবির হুসাইন (১১) নামের এক মাদ্রাসাছাত্রের মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধারের প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর নিখোঁজ মাথাটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি ইউনিটের সহায়তায় হত্যাকা-ের ঘটনাস্থলের পার্শ¦বর্তী একটি পুকুর থেকে মাথাটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত পরশু বুধবার সকালে মাদ্রাসার পার্শ¦বর্তী কেডিবি ইটভাটার পাশের একটি আমবাগান থেকে ওই ছাত্রের মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে নিখোঁজ মাথা উদ্ধারে অভিযানে নামে পুলিশ ও র‌্যাবের একাধিক দল। ঘটনার দিন বিকেল চারটার দিকে র‌্যাবের সদর দপ্তর থেকে ডিএডি জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে হেলিকপ্টারযোগে পাঁচ সদস্যের একটি ‘ডগ স্কোয়াড’ ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়। এরপর র‌্যাবের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দুটি কুকুর দিয়ে ঘটনাস্থল ও তার আশপাশ এলাকায় সুইপিং করানো হয়। ডগ স্কোয়াডের সূত্র ধরেই ধারণা করা হয়, ঘটনাস্থল থেকে ৩৫-৪০ গজ দূরে থাকা বিশালাকার ওই পুকুরটিতে কাটা মাথাটি ছুড়ে ফেলা হতে পারে। পুলিশের পক্ষ থেকেও ধারণা করা হয়, ওই পুকুর তল্লাশি করা হলে মাথা পাওয়া যেতে পারে। খবর পেয়ে খুলনা থেকে রাত সাড়ে আটটার দিকে পাঁচ সদস্যের একটি ডুবুরি দল এসে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) আব্দুস সালামের নেতৃত্বে ‘চিরুনি’ অভিযানে নামে। ডুবুরি দলের দুই সদস্য কয়েক ঘণ্টাব্যাপী পুকুরের গভীর পানিতে ও তার আশপাশে অনুসন্ধান চালান। রাতে খুঁজে না পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহর নেতৃত্বে সকাল ৯টা ৪৫মিনিটে দ্বিতীয় দিনের অভিযান শুরু করেন তাঁরা। খোঁজাখুঁজির ১৫ মিনিটের মাথায় পুকুরটির উত্তর-পূর্ব কোনায় পানিতে ডুবন্ত অবস্থায় মাথাটি খুঁজে পান ডুবুরিরা। এরপর সেটি কিনারে তোলা হলে স্থানীয় ও মাদ্রাসার সভাপতি হাজি ইয়ামিন আলী বিশ্বাস উদ্ধার হওয়া মাথাটি মাদ্রাসাছাত্র আবিরের বলে শনাক্ত করেন।


খবর পেয়ে ছুটে আসেন পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কানাই লাল সরকার, র‌্যাব-৬ ঝিনাইদহ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মাসুদুল আলমসহ কর্মকর্তারা।
এ সময় উৎসুক জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘যেকোনো ঘটনা একটা খাত থেকে যখন ভিন্ন খাতে যায়, তখন তার পিছনে কিছু বিষয় কাজ করে। আমরা এ বিষয়ে তদন্তের স্বার্থে পাঁচজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নিই। এর মধ্যে মাদ্রাসার সুপার মুফতি আবু হানিফ জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনাতে জামায়াত-শিবিরের মিছিল থেকে পুলিশের ওপর ভয়াবহ হামলা মামলার এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন আবু হানিফ। তাঁর ব্যাপারে আরও তথ্যানুসন্ধান চলছে। মাদ্রাসাছাত্র আবির হুসাইনকে হত্যায় জামায়াতের কোনো যোগসূত্র আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ কাজে আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন। যেকোনো ঘটনা তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানান।’ তিনি আরও বলেন, ঘাতক এতটাই চতুর ও ঠা-া মাথার খুনি যে, খুব নিখুঁত পরিকল্পনা করে হত্যা করে মাদ্রাসাছাত্রকে। এরপর হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে সরিয়ে দিতে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে গুম করা হয়। যাতে সম্প্রতি পদ্মা সেতু তৈরিতে মানুষের মাথা লাগছে, এটি প্রতিষ্ঠিত করে সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করা যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার ব্যাপারে জানতে পাঁচ শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদে পর্যায়ক্রমে বেশকিছু তথ্য উদ্ধার হয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। নিহত ছাত্রকে দীর্ঘদিন ধরে বলাৎকার করা হতো, বলাৎকারের ঘটনা ধামাচাপা দিতে এ হত্যা। এটি এখন পুলিশের কাছে পরিষ্কার। একই সঙ্গে ঘাতকও মাদ্রাসারই কেউ, এটি পুলিশ নিশ্চিত।
এ দিকে পুলিশের সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন মাদ্রাসার সুপার মুফতি আবু হানিফ। অসমর্থক সূত্রের তথ্যমতে, খুনি মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যেই একজন। তবে মাদ্রাসার সুপার মুফতি আবু হানিফকেই সন্দেহের এক নম্বরে রাখা হয়েছে। কারণ আবির হুসাইন নিখোঁজ হওয়ার সময় সুপার মাদ্রাসায় ছিলেন না।
এ প্রসঙ্গে আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান মুন্সি বলেন, নিখোঁজ হওয়ার পর এশার নামাজে দাঁড়িয়ে বেশ বিচলিত দেখা গেছে মাদ্রাসার সুপার মুফতি আবু হানিফকে। নামাজে দাঁড়ানোর পর কিছুক্ষণের জন্য বাইরে বের হন তিনি। মাদ্রাসার অন্য শিক্ষক, ছাত্রদের আলাদা আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য মিলেছে বলে জানান মুন্সি আসাদ।
অভিযান-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক বিবৃতিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও আলমডাঙ্গা সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহ বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গাসহ সব দেশবাসীকে আবারও বলতে চাই, ছেলেধরা বলে কিছু নেই, সব গুজব। গত বুধবার সকালে আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা থেকে গলাকাটা যে লাশ পাওয়া যায়, তার মাথাটা তাৎক্ষণিকভাবে না পাওয়া গেলে জনগণকে ছেলেধরা বলে ভুল বোঝানো হয়। অবশেষে লাশের মাথা ঘটনাস্থলের পাশেই পুকুরের মধ্যে পাওয়া যায়। ছেলেধরা বিষয়ই যদি হবে, তাহলে লাশের মাথাতো পদ্মা সেতুতে পাওয়ার কথা। সবাইকে এ ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। কাউকে সন্দেহ করার আগে যাচাই করুন এবং পুলিশকে অবহিত করুন।’
উদ্ধার হওয়া মাথাটি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে নিহত আবির হুসাইনের পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। দুপুরের দিকে মাথাটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের দৌলতপুরে নিয়ে গিয়ে মরদেহের সঙ্গে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতে নিহত আবির হুসাইনের মা গোলাপী বেগম ছেলে হত্যার ঘটনায় আলমডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় তিনি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করেছেন। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে থানার পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমানকে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সন্দেহের তির মাদ্রাসা সুপার আবু হানিফের দিকে

আপলোড টাইম : ১১:২৭:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০১৯

আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গায় মরদেহ উদ্ধারের প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর মাথা উদ্ধার
বিশেষ প্রতিবেদক:
আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের একটি আমবাগান থেকে আবির হুসাইন (১১) নামের এক মাদ্রাসাছাত্রের মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধারের প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর নিখোঁজ মাথাটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরি ইউনিটের সহায়তায় হত্যাকা-ের ঘটনাস্থলের পার্শ¦বর্তী একটি পুকুর থেকে মাথাটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত পরশু বুধবার সকালে মাদ্রাসার পার্শ¦বর্তী কেডিবি ইটভাটার পাশের একটি আমবাগান থেকে ওই ছাত্রের মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে নিখোঁজ মাথা উদ্ধারে অভিযানে নামে পুলিশ ও র‌্যাবের একাধিক দল। ঘটনার দিন বিকেল চারটার দিকে র‌্যাবের সদর দপ্তর থেকে ডিএডি জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে হেলিকপ্টারযোগে পাঁচ সদস্যের একটি ‘ডগ স্কোয়াড’ ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়। এরপর র‌্যাবের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দুটি কুকুর দিয়ে ঘটনাস্থল ও তার আশপাশ এলাকায় সুইপিং করানো হয়। ডগ স্কোয়াডের সূত্র ধরেই ধারণা করা হয়, ঘটনাস্থল থেকে ৩৫-৪০ গজ দূরে থাকা বিশালাকার ওই পুকুরটিতে কাটা মাথাটি ছুড়ে ফেলা হতে পারে। পুলিশের পক্ষ থেকেও ধারণা করা হয়, ওই পুকুর তল্লাশি করা হলে মাথা পাওয়া যেতে পারে। খবর পেয়ে খুলনা থেকে রাত সাড়ে আটটার দিকে পাঁচ সদস্যের একটি ডুবুরি দল এসে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) আব্দুস সালামের নেতৃত্বে ‘চিরুনি’ অভিযানে নামে। ডুবুরি দলের দুই সদস্য কয়েক ঘণ্টাব্যাপী পুকুরের গভীর পানিতে ও তার আশপাশে অনুসন্ধান চালান। রাতে খুঁজে না পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহর নেতৃত্বে সকাল ৯টা ৪৫মিনিটে দ্বিতীয় দিনের অভিযান শুরু করেন তাঁরা। খোঁজাখুঁজির ১৫ মিনিটের মাথায় পুকুরটির উত্তর-পূর্ব কোনায় পানিতে ডুবন্ত অবস্থায় মাথাটি খুঁজে পান ডুবুরিরা। এরপর সেটি কিনারে তোলা হলে স্থানীয় ও মাদ্রাসার সভাপতি হাজি ইয়ামিন আলী বিশ্বাস উদ্ধার হওয়া মাথাটি মাদ্রাসাছাত্র আবিরের বলে শনাক্ত করেন।


খবর পেয়ে ছুটে আসেন পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কানাই লাল সরকার, র‌্যাব-৬ ঝিনাইদহ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মাসুদুল আলমসহ কর্মকর্তারা।
এ সময় উৎসুক জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘যেকোনো ঘটনা একটা খাত থেকে যখন ভিন্ন খাতে যায়, তখন তার পিছনে কিছু বিষয় কাজ করে। আমরা এ বিষয়ে তদন্তের স্বার্থে পাঁচজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নিই। এর মধ্যে মাদ্রাসার সুপার মুফতি আবু হানিফ জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনাতে জামায়াত-শিবিরের মিছিল থেকে পুলিশের ওপর ভয়াবহ হামলা মামলার এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন আবু হানিফ। তাঁর ব্যাপারে আরও তথ্যানুসন্ধান চলছে। মাদ্রাসাছাত্র আবির হুসাইনকে হত্যায় জামায়াতের কোনো যোগসূত্র আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ কাজে আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন। যেকোনো ঘটনা তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানান।’ তিনি আরও বলেন, ঘাতক এতটাই চতুর ও ঠা-া মাথার খুনি যে, খুব নিখুঁত পরিকল্পনা করে হত্যা করে মাদ্রাসাছাত্রকে। এরপর হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে সরিয়ে দিতে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে গুম করা হয়। যাতে সম্প্রতি পদ্মা সেতু তৈরিতে মানুষের মাথা লাগছে, এটি প্রতিষ্ঠিত করে সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করা যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার ব্যাপারে জানতে পাঁচ শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদে পর্যায়ক্রমে বেশকিছু তথ্য উদ্ধার হয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। নিহত ছাত্রকে দীর্ঘদিন ধরে বলাৎকার করা হতো, বলাৎকারের ঘটনা ধামাচাপা দিতে এ হত্যা। এটি এখন পুলিশের কাছে পরিষ্কার। একই সঙ্গে ঘাতকও মাদ্রাসারই কেউ, এটি পুলিশ নিশ্চিত।
এ দিকে পুলিশের সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন মাদ্রাসার সুপার মুফতি আবু হানিফ। অসমর্থক সূত্রের তথ্যমতে, খুনি মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যেই একজন। তবে মাদ্রাসার সুপার মুফতি আবু হানিফকেই সন্দেহের এক নম্বরে রাখা হয়েছে। কারণ আবির হুসাইন নিখোঁজ হওয়ার সময় সুপার মাদ্রাসায় ছিলেন না।
এ প্রসঙ্গে আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান মুন্সি বলেন, নিখোঁজ হওয়ার পর এশার নামাজে দাঁড়িয়ে বেশ বিচলিত দেখা গেছে মাদ্রাসার সুপার মুফতি আবু হানিফকে। নামাজে দাঁড়ানোর পর কিছুক্ষণের জন্য বাইরে বের হন তিনি। মাদ্রাসার অন্য শিক্ষক, ছাত্রদের আলাদা আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য মিলেছে বলে জানান মুন্সি আসাদ।
অভিযান-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক বিবৃতিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও আলমডাঙ্গা সার্কেল) মো. কলিমুল্লাহ বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গাসহ সব দেশবাসীকে আবারও বলতে চাই, ছেলেধরা বলে কিছু নেই, সব গুজব। গত বুধবার সকালে আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা থেকে গলাকাটা যে লাশ পাওয়া যায়, তার মাথাটা তাৎক্ষণিকভাবে না পাওয়া গেলে জনগণকে ছেলেধরা বলে ভুল বোঝানো হয়। অবশেষে লাশের মাথা ঘটনাস্থলের পাশেই পুকুরের মধ্যে পাওয়া যায়। ছেলেধরা বিষয়ই যদি হবে, তাহলে লাশের মাথাতো পদ্মা সেতুতে পাওয়ার কথা। সবাইকে এ ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। কাউকে সন্দেহ করার আগে যাচাই করুন এবং পুলিশকে অবহিত করুন।’
উদ্ধার হওয়া মাথাটি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে নিহত আবির হুসাইনের পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। দুপুরের দিকে মাথাটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের দৌলতপুরে নিয়ে গিয়ে মরদেহের সঙ্গে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতে নিহত আবির হুসাইনের মা গোলাপী বেগম ছেলে হত্যার ঘটনায় আলমডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় তিনি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করেছেন। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে থানার পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমানকে।