ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সঙ্কুচিত হচ্ছে শ্রমবাজার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৭:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ জুন ২০১৮
  • / ৪৯৯ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ ডেস্ক: সিঙ্গাপুরে জনশক্তি প্রেরণের বাজার ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে। সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত কিছু বাংলাদেশীর অনৈতিক ভিসা ট্রেডিং, জঙ্গী তকমাসহ ভারতীয়দের আধিপত্যের কারণে এই জনশক্তি বাজারটি হাত ছাড়া হচ্ছে বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য। সেন্ডিং কান্ট্রিগুলো থেকে সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন কোম্পানীতে নিয়মিত কর্মী যাচ্ছে। কিন্ত বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এক বছর পরই অধিকাংশ বাংলাদেশী কর্মীর ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন না করে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে উচ্চ অভিবাসন ব্যয়ের ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হিমসিম খাচ্ছে প্রত্যাগত কর্মীরা। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশী দক্ষ কর্মী’র প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে সিঙ্গাপুরে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ করা সম্ভব বলে বায়রার একজন কর্মকর্তা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ২০১৩ সালে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি ও আতœীয়-স্বজনের উদ্যোগে ৬০ হাজার ৫৭ জন, ২০১৪ সালে ৫৪ হাজার ৭শ’ ৫০ জন, ২০১৫ সালে ৫৫ হাজার ৫শ’ ২৩ জন, ২০১৬ সালে ৫৪ হাজার ৭শ” ৩৯ জন, ২০১৭ সালে ৪০ হাজার ৪শ’ ১ জন কর্মী সিঙ্গাপুরে চাকুরি লাভ করেছে। গত জানুয়ারী থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ১২ হাজার ৪শ’ ৮১ জন কর্মী সিঙ্গাপুরে চাকুরি লাভ করেছে। গত জানুয়ারী থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশটি থেকে প্রবাসী কর্মীরা ৩১ দশমিক ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছে। বিএমই’িট’র নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি গতকাল মঙ্গলবার বলেন, সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন প্রকেক্টের কাজ শেষ হওয়ায় বাংলাদেশী কর্মী’র চাহিদা কমে যাচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, সিঙ্গাপুরের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। আমরা নতুন নতুন শ্রমবাজার সন্ধ্যানে নামছি। জাপান ও রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশে কর্মী প্রেরণের প্রক্রিয়া চলছে। বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমদ বলেন, সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজার ধরে রাখতে হলে দক্ষ কর্মী পাঠাতে হবে। দক্ষ কর্মী পাঠাতে না পারলে প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারে টিকে থাকা যাবে না। সিঙ্গাপুরে জনশক্তি রফতানি হ্রাস পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বায়রা সভাপতি বলেন, সরকার ও বেসরকারী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজার সম্প্রসারণে একযোগে কাজ করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে বায়রা সভাপতি বেনজীর আহমদ বলেন, সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশী কর্মীর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশী কর্মীরা সিঙ্গাপুরে অত্যান্ত নিষ্ঠার ও সততার সাথে কাজ করে প্রচুর রেমিটেন্স আয় করছে। ইতিপূব্যে সিঙ্গাপুরে জঙ্গী তৎপরতার সাথে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেফতারের ঘটনায় আমাদের ভাব-মর্যাদা ক্ষুন্ন করা হয়েছে। বায়রা সভাপতি বলেন, সিঙ্গাপুরে কর্মরত বাংলাদেশী কর্মীরা কোনো জঙ্গী তৎপরতার সাথে সম্পৃক্ত নয়। তিনি সম্ভাবনাময় সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজারের স্বার্থে উচ্চ অভিবাসন ব্যয় রোধ এবং অবৈধ ভিসা ট্রেডিং বন্ধের জন্য কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
২০০০ সালের শুরুর দিকে সিঙ্গাপুরে কর্মী প্রেরণের লক্ষে ১০/১২জন উদ্যোগতার উদ্যোগে বাংলাদেশে তৈরি হয়েছিল আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিং সেন্টার। সেই সব ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে সিঙ্গাপুর সরকারের বিল্ডিং কন্সট্রাকশন অথোরিটির তত্বাবধায়নে তাদের সিলেবাস অনুযায়ী সিঙ্গাপুর গমনেচ্ছুক কর্মীদের ৩ থেকে ৪ মাস বিশ্বমানের উপযোগী বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হতো। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মীরা ঝশরষষ ঊাধষঁধঃরড়হ ঞবংঃ এর মাধ্যমে স্কিল সার্টিফাইড করে স্বল্প খরচে সিঙ্গাপুর সরকারের অনুমোদিত এই সকল জনশক্তি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী প্রেরণ করত। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত কিছু বাংলাদেশী নিয়োগকর্তাদের অর্থ প্রদানের মাধ্যমে অনৈতিক ভিসা ট্রেডিং এ লিপ্ত হওয়ায় যেসকল রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো স্বল্প খরচে সিঙ্গাপুরে কর্মী প্রেরণ করত তারা এখন এই অসাধুর চক্রের দাপটে কর্মী প্রেরণ করতে পারছে না। ফলে গত এক বছরে যে সকল রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বিশাল বড় বিনিয়োগের মাধ্যমে ট্রেনিং সেন্টার চালু করেছিল সেইগুলো বেশিরভাগেই বন্ধ হওয়ার পথে। ইতিমধ্যে সাউথপয়েন্ট ওভারসিস ট্রেনিং সেন্টার, সিটি ট্রেনিং সেন্টার, ওয়েলটেক ট্রেনিং সেন্টার সহ বেশ কয়েকটি সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টার বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও ২০১৬ সালে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত কিছু বাংলাদেশী কর্মীকে আইএস সম্পৃক্ততার অভিযোগের অজুহাতে বাংলাদেশী কর্মী নেয়া কমে আসছে। যার বিপরীতে ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের কর্মী বেশি করে নেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি যারা ট্যুরিষ্ট ভিসায় কিংবা রিলিজ নিয়ে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় অবস্থান করে চাকরিদাতাদের বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করছে। তাদের কারণে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে কর্মী নেয়ার অভিবাসন ব্যয় বহুগুণে বেড়েই চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সিঙ্গাপুরে কর্মী প্রেরণে যেখানে ৩/৪ মাসের প্রশিক্ষণ খরচ, স্কিল সার্টিফাইড টেস্ট ফি ও বিমান ভাড়াসহ দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকায় কর্মী প্রেরণ করা হতো এখন সেদেশে কর্মী প্রেরণ করতে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকার বেশি ব্যয় করতে হয়। মাল্টিকালচার সমন্বয়ে গঠিত সিঙ্গাপুরে নিয়োন্ত্রিত অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী প্রেরণে সম্ভাবনা আবারো চালু করতে অনৈতিক ভিসা ট্রেডিং এর সাথে যুক্ত সেখানে অবস্থানকারী বাংলাদেশীদের চিন্থিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকার ইস্কাটনস্থ প্রবাসী কল্যাণ ভবনের ব্রিফিং সেন্টারে দপ্তর/সংস্থার সাথে মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (২০১৮-২০১৯) ও নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ক সচেতনতামূলক তথ্য চিত্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। তথ্যচিত্রটির চিত্রনাট্য, সংলাপ ও নির্দেশনা প্রদান করেছেন শ্রম অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রবাসী কল্যণ মন্ত্রী বলেন, বিদেশ গমন ইচ্ছুক কর্মীরা যাতে প্রতারণার শিকার না হন সেই লক্ষে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়নে নির্মিত হয়েছে এই নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ক সচেতনতামূলক তথ্যচিত্র। আমি এই তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণকে আমার ব্যক্তিগত ও এ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানায়। তিনি নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ক সচেতনতামূলক এই তথ্যচিত্রটি বা এর ম্যাসেজগুলো জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌছানোর জন্য উপস্থিত সাংবাদিকসহ সকলের কাছে অনুরোধ জানান।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সঙ্কুচিত হচ্ছে শ্রমবাজার

আপলোড টাইম : ০৯:১৭:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ জুন ২০১৮

সমীকরণ ডেস্ক: সিঙ্গাপুরে জনশক্তি প্রেরণের বাজার ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে। সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত কিছু বাংলাদেশীর অনৈতিক ভিসা ট্রেডিং, জঙ্গী তকমাসহ ভারতীয়দের আধিপত্যের কারণে এই জনশক্তি বাজারটি হাত ছাড়া হচ্ছে বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য। সেন্ডিং কান্ট্রিগুলো থেকে সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন কোম্পানীতে নিয়মিত কর্মী যাচ্ছে। কিন্ত বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এক বছর পরই অধিকাংশ বাংলাদেশী কর্মীর ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন না করে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে উচ্চ অভিবাসন ব্যয়ের ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হিমসিম খাচ্ছে প্রত্যাগত কর্মীরা। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশী দক্ষ কর্মী’র প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে সিঙ্গাপুরে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ করা সম্ভব বলে বায়রার একজন কর্মকর্তা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ২০১৩ সালে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি ও আতœীয়-স্বজনের উদ্যোগে ৬০ হাজার ৫৭ জন, ২০১৪ সালে ৫৪ হাজার ৭শ’ ৫০ জন, ২০১৫ সালে ৫৫ হাজার ৫শ’ ২৩ জন, ২০১৬ সালে ৫৪ হাজার ৭শ” ৩৯ জন, ২০১৭ সালে ৪০ হাজার ৪শ’ ১ জন কর্মী সিঙ্গাপুরে চাকুরি লাভ করেছে। গত জানুয়ারী থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ১২ হাজার ৪শ’ ৮১ জন কর্মী সিঙ্গাপুরে চাকুরি লাভ করেছে। গত জানুয়ারী থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশটি থেকে প্রবাসী কর্মীরা ৩১ দশমিক ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছে। বিএমই’িট’র নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি গতকাল মঙ্গলবার বলেন, সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন প্রকেক্টের কাজ শেষ হওয়ায় বাংলাদেশী কর্মী’র চাহিদা কমে যাচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, সিঙ্গাপুরের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। আমরা নতুন নতুন শ্রমবাজার সন্ধ্যানে নামছি। জাপান ও রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশে কর্মী প্রেরণের প্রক্রিয়া চলছে। বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমদ বলেন, সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজার ধরে রাখতে হলে দক্ষ কর্মী পাঠাতে হবে। দক্ষ কর্মী পাঠাতে না পারলে প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারে টিকে থাকা যাবে না। সিঙ্গাপুরে জনশক্তি রফতানি হ্রাস পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বায়রা সভাপতি বলেন, সরকার ও বেসরকারী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজার সম্প্রসারণে একযোগে কাজ করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে বায়রা সভাপতি বেনজীর আহমদ বলেন, সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশী কর্মীর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশী কর্মীরা সিঙ্গাপুরে অত্যান্ত নিষ্ঠার ও সততার সাথে কাজ করে প্রচুর রেমিটেন্স আয় করছে। ইতিপূব্যে সিঙ্গাপুরে জঙ্গী তৎপরতার সাথে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেফতারের ঘটনায় আমাদের ভাব-মর্যাদা ক্ষুন্ন করা হয়েছে। বায়রা সভাপতি বলেন, সিঙ্গাপুরে কর্মরত বাংলাদেশী কর্মীরা কোনো জঙ্গী তৎপরতার সাথে সম্পৃক্ত নয়। তিনি সম্ভাবনাময় সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজারের স্বার্থে উচ্চ অভিবাসন ব্যয় রোধ এবং অবৈধ ভিসা ট্রেডিং বন্ধের জন্য কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
২০০০ সালের শুরুর দিকে সিঙ্গাপুরে কর্মী প্রেরণের লক্ষে ১০/১২জন উদ্যোগতার উদ্যোগে বাংলাদেশে তৈরি হয়েছিল আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিং সেন্টার। সেই সব ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে সিঙ্গাপুর সরকারের বিল্ডিং কন্সট্রাকশন অথোরিটির তত্বাবধায়নে তাদের সিলেবাস অনুযায়ী সিঙ্গাপুর গমনেচ্ছুক কর্মীদের ৩ থেকে ৪ মাস বিশ্বমানের উপযোগী বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হতো। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মীরা ঝশরষষ ঊাধষঁধঃরড়হ ঞবংঃ এর মাধ্যমে স্কিল সার্টিফাইড করে স্বল্প খরচে সিঙ্গাপুর সরকারের অনুমোদিত এই সকল জনশক্তি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী প্রেরণ করত। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত কিছু বাংলাদেশী নিয়োগকর্তাদের অর্থ প্রদানের মাধ্যমে অনৈতিক ভিসা ট্রেডিং এ লিপ্ত হওয়ায় যেসকল রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো স্বল্প খরচে সিঙ্গাপুরে কর্মী প্রেরণ করত তারা এখন এই অসাধুর চক্রের দাপটে কর্মী প্রেরণ করতে পারছে না। ফলে গত এক বছরে যে সকল রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বিশাল বড় বিনিয়োগের মাধ্যমে ট্রেনিং সেন্টার চালু করেছিল সেইগুলো বেশিরভাগেই বন্ধ হওয়ার পথে। ইতিমধ্যে সাউথপয়েন্ট ওভারসিস ট্রেনিং সেন্টার, সিটি ট্রেনিং সেন্টার, ওয়েলটেক ট্রেনিং সেন্টার সহ বেশ কয়েকটি সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টার বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও ২০১৬ সালে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত কিছু বাংলাদেশী কর্মীকে আইএস সম্পৃক্ততার অভিযোগের অজুহাতে বাংলাদেশী কর্মী নেয়া কমে আসছে। যার বিপরীতে ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের কর্মী বেশি করে নেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তি যারা ট্যুরিষ্ট ভিসায় কিংবা রিলিজ নিয়ে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় অবস্থান করে চাকরিদাতাদের বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করছে। তাদের কারণে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে কর্মী নেয়ার অভিবাসন ব্যয় বহুগুণে বেড়েই চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সিঙ্গাপুরে কর্মী প্রেরণে যেখানে ৩/৪ মাসের প্রশিক্ষণ খরচ, স্কিল সার্টিফাইড টেস্ট ফি ও বিমান ভাড়াসহ দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকায় কর্মী প্রেরণ করা হতো এখন সেদেশে কর্মী প্রেরণ করতে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকার বেশি ব্যয় করতে হয়। মাল্টিকালচার সমন্বয়ে গঠিত সিঙ্গাপুরে নিয়োন্ত্রিত অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী প্রেরণে সম্ভাবনা আবারো চালু করতে অনৈতিক ভিসা ট্রেডিং এর সাথে যুক্ত সেখানে অবস্থানকারী বাংলাদেশীদের চিন্থিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকার ইস্কাটনস্থ প্রবাসী কল্যাণ ভবনের ব্রিফিং সেন্টারে দপ্তর/সংস্থার সাথে মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (২০১৮-২০১৯) ও নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ক সচেতনতামূলক তথ্য চিত্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। তথ্যচিত্রটির চিত্রনাট্য, সংলাপ ও নির্দেশনা প্রদান করেছেন শ্রম অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রবাসী কল্যণ মন্ত্রী বলেন, বিদেশ গমন ইচ্ছুক কর্মীরা যাতে প্রতারণার শিকার না হন সেই লক্ষে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়নে নির্মিত হয়েছে এই নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ক সচেতনতামূলক তথ্যচিত্র। আমি এই তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণকে আমার ব্যক্তিগত ও এ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানায়। তিনি নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ক সচেতনতামূলক এই তথ্যচিত্রটি বা এর ম্যাসেজগুলো জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌছানোর জন্য উপস্থিত সাংবাদিকসহ সকলের কাছে অনুরোধ জানান।