ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সখের ছাদ বাগান এখন বাণিজ্যিক নার্সারি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৬:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ জুলাই ২০২১
  • / ৬৫ বার পড়া হয়েছে

কালীগঞ্জে করোনাকালে ঘরবন্দী শিক্ষকের সৃজনশীলতা
রিয়াজ মোল্ল্যা, কালীগঞ্জ:
‘২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ঘরবন্দী দিন চলতে থাকে। ঘরবন্দী হয়ে হাফিয়ে ওঠা সময়ে কিছু একটা করার পরিকল্পনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। এরইমধ্যে এক দিন দুটি দার্জিলিং জাতের কমলা লেবুর চারা কিনে আমার ছোট্ট ছাদে রাখা টবে রোপণ করি। এমনিতেই ছোটবেলা থেকে গাছের প্রতি আমার একটা দুর্বলতা ছিল। সেই দুর্বলতা থেকে সখ চেপে বসে। শুরু করি আমার বাড়ির ছাদে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফল ও ফুলের চারা রোপণ। এরই মধ্যে মরু অঞ্চলের সুস্বাদু ত্বীন ফলসহ বেশ কয়েক প্রকারের গাছে ফল ধরা শুরু করে। আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। এক সময় সখের বাগান ছাদ পেরিয়ে বাড়ির আশপাশের জমিতে বাণিজ্যিক নার্সারিতে রুপ নেয়। যেখান থেকে প্রতিমাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার আয় হচ্ছে। সাথে আরও দুজন বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে আমার নার্সারিতে।’
করোনাকালে অবসর সময় কাজে লাগিয়ে কীভাবে বাড়তি আয় সম্ভব, তা দেখিয়ে দিয়েছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভাধীন কাশিপুর গ্রামের শিক্ষক হাফিজুর রহমান মাসুদ। তিনি একই উপজেলার মনোহরপুর পুখুরিয়া দাখিল মাদ্রাসার আইসিটি শিক্ষক। প্রতিদিন তাঁর ছাদ বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে সৌখিন মানুষরা আসছেন। ফেরার সময় অনেকে পছন্দের ফুল-ফলের চারা নিয়ে যাচ্ছেন। এরমধ্যে শুধুমাত্র ত্বীন ফলের চারা বিক্রি করেছেন ৫ লক্ষাধিক টাকার।
শিক্ষক হাফিজুর রহমান জানান, গত বছর মার্চে দেশে করোনা ধরা পড়া পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। সময় কাটাতে ছাদে প্রথমে দুটি লেবুর চারা লাগান। এসময় ঘরবন্দী হয়ে বসে না থেকে কিছু একটা করার পরিকল্পনা করেন। শুরু করেন ছোট্ট ছাদে দুস্প্রাপ্ত ফুল ও ফলের ছাদ বাগান। কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই সখের ছাদা বাগান এখন তাঁর আয়ের আরেকটি উৎসে পরিণত হয়েছে। এরপর ধীরে ধীরে সংগ্রহ করেন আরও দেশি-বিদেশি ফলের চারা। অনলাইনে যাচাই করে দেশের বিভিন্ন নার্সারি থেকে নানান জাতের ফল ও ফুলের চারার সংগ্রহশালা তৈরি করেন। তাঁর নার্সারিতে ১৭০ প্রজাতির বিভিন্ন ফল ও ফুলের চারা আছে।
এগুলোর মধ্যে পার্সিমন, লং মালবেরি ও ইনসুলিন প¬ান্ট। এছাড়া রয়েছে কিউজাই, কিং অপ চাকাপাতা, ব্রুনাই কিংসহ বিভিন্ন জাতের আম। হাজারি কাঁঠাল, থাই বারমাসি কাঁঠাল, ভিয়েতনামের লাল কাঁঠাল ও ভিয়েতনামের গোলাপি কাঠাল। কমলার মধ্যে রয়েছে দার্জিলিং কমলা, নাগপুরি কমলা, ছাতকি কমলা, মেন্ডারিন কমলা ও কেনু কমলা। এছাড়া চায়না-৩ কাগুজে লেবু, এলাচি কাগুজে লেবু, সিডলেচ কাগুজে লেবু ও থাই কাগুজে লেবু। ভিয়েতনামি ও কেরালা নারিকেল। বিদেশি ফল ত্বীন, যয়তুন, রামবুটান, ডুরিয়ান, অ্যাভোকাডোসহ ঔষধি গাছ করসল, টুরুপ চাণ্ডাল ও সাদা লজ্জাপতি।
মাসুদ জানান, তিনি পরিচিতজন ও এলাকার চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছেন বিদেশি ফল চাষে। তাঁর প্রেরণায় অনেকে বাণিজ্যিকভাবে ত্বীন ফলের চাষ শুরু করেছেন। তাঁর ছাদ বাগান ও বাড়ির আঙিনায় নার্সারি দেখে এখন অনেকে তাঁদের নিজ বাড়ির পতিত জমিতে বিভিন্ন ফলের চারা রোপণ করছেন বলেও তিনি জানান।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস অফিসার শিকদার মো. মোহায়মেন আক্তার শিক্ষক মাসুদের ছাদ বাগান প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা একটু চেষ্টা করলেই আমাদের ছাদে সবুজ বাগান গড়ে তুলতে পারি। ছাদ বাগান আমাদের একদিকে অবসর সময় কাটাতে সাহায্য করবে, অন্যদিকে পরিবারের সবজি ও ফলের চাহিদা পূরণে সহযোগিতা করবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সখের ছাদ বাগান এখন বাণিজ্যিক নার্সারি

আপলোড টাইম : ০৯:০৬:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ জুলাই ২০২১

কালীগঞ্জে করোনাকালে ঘরবন্দী শিক্ষকের সৃজনশীলতা
রিয়াজ মোল্ল্যা, কালীগঞ্জ:
‘২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ঘরবন্দী দিন চলতে থাকে। ঘরবন্দী হয়ে হাফিয়ে ওঠা সময়ে কিছু একটা করার পরিকল্পনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। এরইমধ্যে এক দিন দুটি দার্জিলিং জাতের কমলা লেবুর চারা কিনে আমার ছোট্ট ছাদে রাখা টবে রোপণ করি। এমনিতেই ছোটবেলা থেকে গাছের প্রতি আমার একটা দুর্বলতা ছিল। সেই দুর্বলতা থেকে সখ চেপে বসে। শুরু করি আমার বাড়ির ছাদে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফল ও ফুলের চারা রোপণ। এরই মধ্যে মরু অঞ্চলের সুস্বাদু ত্বীন ফলসহ বেশ কয়েক প্রকারের গাছে ফল ধরা শুরু করে। আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। এক সময় সখের বাগান ছাদ পেরিয়ে বাড়ির আশপাশের জমিতে বাণিজ্যিক নার্সারিতে রুপ নেয়। যেখান থেকে প্রতিমাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার আয় হচ্ছে। সাথে আরও দুজন বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে আমার নার্সারিতে।’
করোনাকালে অবসর সময় কাজে লাগিয়ে কীভাবে বাড়তি আয় সম্ভব, তা দেখিয়ে দিয়েছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভাধীন কাশিপুর গ্রামের শিক্ষক হাফিজুর রহমান মাসুদ। তিনি একই উপজেলার মনোহরপুর পুখুরিয়া দাখিল মাদ্রাসার আইসিটি শিক্ষক। প্রতিদিন তাঁর ছাদ বাগান দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে সৌখিন মানুষরা আসছেন। ফেরার সময় অনেকে পছন্দের ফুল-ফলের চারা নিয়ে যাচ্ছেন। এরমধ্যে শুধুমাত্র ত্বীন ফলের চারা বিক্রি করেছেন ৫ লক্ষাধিক টাকার।
শিক্ষক হাফিজুর রহমান জানান, গত বছর মার্চে দেশে করোনা ধরা পড়া পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। সময় কাটাতে ছাদে প্রথমে দুটি লেবুর চারা লাগান। এসময় ঘরবন্দী হয়ে বসে না থেকে কিছু একটা করার পরিকল্পনা করেন। শুরু করেন ছোট্ট ছাদে দুস্প্রাপ্ত ফুল ও ফলের ছাদ বাগান। কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই সখের ছাদা বাগান এখন তাঁর আয়ের আরেকটি উৎসে পরিণত হয়েছে। এরপর ধীরে ধীরে সংগ্রহ করেন আরও দেশি-বিদেশি ফলের চারা। অনলাইনে যাচাই করে দেশের বিভিন্ন নার্সারি থেকে নানান জাতের ফল ও ফুলের চারার সংগ্রহশালা তৈরি করেন। তাঁর নার্সারিতে ১৭০ প্রজাতির বিভিন্ন ফল ও ফুলের চারা আছে।
এগুলোর মধ্যে পার্সিমন, লং মালবেরি ও ইনসুলিন প¬ান্ট। এছাড়া রয়েছে কিউজাই, কিং অপ চাকাপাতা, ব্রুনাই কিংসহ বিভিন্ন জাতের আম। হাজারি কাঁঠাল, থাই বারমাসি কাঁঠাল, ভিয়েতনামের লাল কাঁঠাল ও ভিয়েতনামের গোলাপি কাঠাল। কমলার মধ্যে রয়েছে দার্জিলিং কমলা, নাগপুরি কমলা, ছাতকি কমলা, মেন্ডারিন কমলা ও কেনু কমলা। এছাড়া চায়না-৩ কাগুজে লেবু, এলাচি কাগুজে লেবু, সিডলেচ কাগুজে লেবু ও থাই কাগুজে লেবু। ভিয়েতনামি ও কেরালা নারিকেল। বিদেশি ফল ত্বীন, যয়তুন, রামবুটান, ডুরিয়ান, অ্যাভোকাডোসহ ঔষধি গাছ করসল, টুরুপ চাণ্ডাল ও সাদা লজ্জাপতি।
মাসুদ জানান, তিনি পরিচিতজন ও এলাকার চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছেন বিদেশি ফল চাষে। তাঁর প্রেরণায় অনেকে বাণিজ্যিকভাবে ত্বীন ফলের চাষ শুরু করেছেন। তাঁর ছাদ বাগান ও বাড়ির আঙিনায় নার্সারি দেখে এখন অনেকে তাঁদের নিজ বাড়ির পতিত জমিতে বিভিন্ন ফলের চারা রোপণ করছেন বলেও তিনি জানান।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস অফিসার শিকদার মো. মোহায়মেন আক্তার শিক্ষক মাসুদের ছাদ বাগান প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা একটু চেষ্টা করলেই আমাদের ছাদে সবুজ বাগান গড়ে তুলতে পারি। ছাদ বাগান আমাদের একদিকে অবসর সময় কাটাতে সাহায্য করবে, অন্যদিকে পরিবারের সবজি ও ফলের চাহিদা পূরণে সহযোগিতা করবে।’