সক্রিয় সিন্ডিকেট : নিত্যপণ্যের বাজারে রোজার উত্তাপ
- আপলোড টাইম : ১০:৫৭:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ মার্চ ২০২১
- / ৬২ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ প্রতিবেদন:
নিত্যপণ্যের বাজারে এখনই রোজার উত্তাপ। ছোলা থেকে শুরু করে ভোজ্যতেল, খেজুর, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, গরু ও মুরগির মাংস, গুঁড়া দুধ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। অসাধু সিন্ডিকেট গত দুমাসে ধাপে ধাপে এসব পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। আর এই দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। একদিকে করোনায় কর্মসংকোচন, অন্যদিকে পণ্যমূল্য বেশি-সব মিলিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে।
প্রতিবছরের মতো এবারও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোজায় নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে। এ জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা আগে থেকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র উলটো। প্রতিবছরের মতো এবারও সক্রিয় অসাধু সিন্ডিকেট। রোজা সামনে রেখে তারা জানুয়ারি থেকেই রমজানে ব্যবহৃত পণ্যের দাম বাড়িয়ে চলেছে। নিত্যপণ্যের বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত দুমাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি ছোলা সর্বোচ্চ ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি কেজি সাধারণ মানের খেজুর ১৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রতি কেজি চিনি ১০ টাকা, মুগডাল ১০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি গরুর মাংস দুমাসের ব্যবধানে ২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫ টাকা বেড়েছে। গুঁড়া দুধ কোম্পানিভেদে কেজিতে ২০-৪০ টাকা বেড়েছে। দাম বাড়ার এ চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাসিক বাজার পণ্যমূল্য তালিকায় লক্ষ করা গেছে। এদিকে বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও পণ্যটি বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে দুমাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ৯ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবি বলছে, গত বছরের তুলনায় প্রতি কেজি ছোলা ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্যতেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন গত বছরের তুলনায় লিটারে দাম ২৮ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি কেজি খেজুর বছর ব্যবধানে ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি চিনির দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। মুগডাল কেজিতে বছরে ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৪ দশমিক ৫৫ ও ব্রয়লার মুরগির দাম ২৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। গুঁড়া দুধ বছরের ব্যবধানে সর্বোচ্চ ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, রমজান এলে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এবারও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তাই ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে হলে সরকারের এখন থেকে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে। কারণ, বাজারে পণ্যের দর নিয়ে যে কারসাজি শুরু হয়েছে, তা এখনই থামানো না গেলে ভোক্তারা রমজান মাসে আরও বিড়ম্বনায় পড়বে। তাই অযৌক্তিকভাবে কেউ পণ্যের দাম বাড়ালে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এম কে মুজেরি বলেন, রমজানের আগেই অসাধুরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাকে দিশেহারা করে তোলে। কারণ, বাজারে সরকারের কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই। তদারকি না থাকায় কোনো কিছু ফলপ্রসূ হচ্ছে না। তাই তদারকি জোরদার করা দরকার। গত দুমাস ধরে অসাধুরা নানা অজুহাতে মাংসের বাজার অস্থির করে তুলেছে। দুমাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে ১৫-২০ টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা বিক্রি করছে। দেশি মুরগি কেজিতে ৪০ টাকা বাড়িয়ে ৪২০-৪৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি গরুর মাংস ২০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকা বা তার বেশি বিক্রি হচ্ছে।
সম্প্রতি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘রমজানের সময় পণ্যের দাম নিয়ে যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, সেজন্য প্রস্তুতি রয়েছে। কয়েকটা আইটেম নিয়ে আমাদের সমস্যা হয়। কিছু জিনিস আমাদের রয়েছে যেগুলো রমজানের পণ্য। যেমন: ছোলা, খেজুর, ডাল এসব জিনিস আমদানি করতে হয়। এগুলো টিসিবির মাধ্যমে অন্যান্য বছরের তুলনায় দ্বিগুণ আমদানি করা হচ্ছে। সবকিছু বুক করা হয়েছে। আশা করছি সবকিছু এসে যাবে। রমজানের সময় আমাদের সমস্যা যেন না হয় তার জন্য প্রস্তুতি রয়েছে।’ ‘এখন রমজানের আগেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন’-এ বিষয়ে টিপু মুনশি বলেন, এ বিষয়ে আমিও একমত। তবে কৌশলের বাইরেও কিছু কথা আছে। যেমন পেনিক বায়িং। আমরা রোজা শুরুর আগেই একসঙ্গে সবাই বাজারে ঢুকে পড়ি। এতে বিক্রেতারা সুযোগ নেয়। আমরাই সে সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বাজার তদারকি করা হচ্ছে। এবার কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আশা করি, রমজানে পণ্যমূল্য স্বাভাবিক থাকবে।