ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সংস্কৃতির মূলধারা সংকুচিত হচ্ছে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫৮:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ মে ২০১৯
  • / ২৪৫ বার পড়া হয়েছে

সমাজ ও ব্যক্তির জন্য সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ সংকট
দেশে সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ দিন দিন কমছে। সরকারি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পেশাদারি, জবাবদিহি ও আন্তরিকতার অভাব। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশেষ বিশেষ দিবস পালন ও উৎসব উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ নেই বললেই চলে। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে এ সম্পর্কিত প্রতিবেদন দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজির কদর তো বাড়ছেই, তার ওপর পরীক্ষা আর মুখস্থ বিদ্যার চাপে স্কুল থেকে সংস্কৃতিচর্চা একেবারেই নির্বাসিত হয়ে পড়েছে। বিপুলসংখ্যক ছাত্রের চাপ সামলাতে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরীক্ষা, ডিগ্রি আর সনদের মধ্যে আটকে গেছে। শৈশব, কৈশোর, তারুণ্যে শরীর-মনের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য যেসব খোরাক-রসদ দরকার, তার কিছুই দিতে পারে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার কারণে তাদের মধ্যে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস, মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, নিজেকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারার ও অন্যের সঙ্গে যোগাযোগের অক্ষমতা, বিচারহীনতা তৈরি হচ্ছে। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা না থাকা এবং খেলাধুলার সুযোগ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে তরুণরা সামাজিক-সম্প্রীতি থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে তাদের চিন্তাভাবনা। ফলে তরুণরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভুল শিক্ষা নিয়ে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এরই চরম পরিণতি হিসেবে গুলশান-কিশোরগঞ্জে জঙ্গি হামলায় মানুষ হত্যার ঘটনা দেখতে হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে, যারা জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদে জড়িত, তারা পরিবার, সমাজ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে নানাভাবে বিচ্ছিন্ন। ধর্মের নামে তাদের এমন উগ্রতায় দীক্ষিত করা হচ্ছে যে, তারা নিষ্ঠুরভাবে মানুষ হত্যা করছে। মাত্র অল্প কিছুদিনের প্রশিক্ষণে তারা কী করে এভাবে অমানুষ হতে পারে, এটা ভাবার বিষয়। রাষ্ট্র পরিচালনা করে রাজনীতি। আর এর পেছনে থাকে সংস্কৃতি। সংস্কৃতি হলো রাষ্ট্র ও জাতির অসাধারণ সম্পদ। এর চর্চা না হলে ছেলেমেয়েরা বিপথগামী হবে, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। প্রশ্ন উঠতে পারে, এ অবস্থায় সরকার কী করতে পারে? সংস্কৃতি কোন আরোপিত বিষয় নয়। ভাষা ও সংস্কৃতি সব সময় গতিশীল, তাই এর রূপান্তর, পরিবর্তন, উত্তরণ ঘটবেই এবং তাতে গ্রহণ-বর্জনের প্রশ্ন ওতপ্রোতভাবে যুক্ত থাকবেই। সরকারের কাছে কাম্য হলো সুস্থ সংস্কৃতির ধারা বহমান রাখা এবং তার অনুকূলে ভূমিকা পালন। সুস্থ প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের উচিত হবে সমাজকে আরও জায়গা দেয়া, সৃষ্টিশীল মানুষদের স্বাধীনতার পরিসর বাড়তে দেয়া এবং শিক্ষাকে স্বদেশ ও সংস্কৃতি চর্চার সমন্বয়ে প্রাণবন্ত মানবিক ও গভীরতায় সমৃদ্ধ হতে দেয়া। সব অপশক্তিকে প্রতিহত করার অন্যতম উপায় হলো সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা। সংস্কৃতি মানুষকে হতাশা থেকে বাঁচায়। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে আলোকিত মানুষ হওয়া যায়। শিক্ষাঙ্গনে বাংলার উদার মানবিক ধারার সংস্কৃতিচর্চার পথ খুলে তা বেগবান করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে ধর্মান্ধ বা জঙ্গি তরুণ সৃষ্টির পথ বন্ধ হয়। এর জন্য বিস্তারিত সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি প্রয়োজন। সমাজকে সেবা ও কল্যাণের পথে এবং সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে মানবিক করে তোলার জন্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক জাগরণের উদ্যোগ নিতে হবে। সমাজে সুস্থ ইতিবাচক মানবিক বাতাবরণ তৈরির জন্য ওয়ার্ড ও ইউপি এবং গ্রামাঞ্চলের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে এ ধারায় সক্রিয় করে তুলতে হবে। খোলামেলা পরিবেশে গ্রহণ-বর্জনের মাধ্যমে সংস্কৃতির সুস্থধারা বহমান থাকলে সমাজ সুস্থ থাকবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সংস্কৃতির মূলধারা সংকুচিত হচ্ছে

আপলোড টাইম : ০৯:৫৮:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ মে ২০১৯

সমাজ ও ব্যক্তির জন্য সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ সংকট
দেশে সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ দিন দিন কমছে। সরকারি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পেশাদারি, জবাবদিহি ও আন্তরিকতার অভাব। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশেষ বিশেষ দিবস পালন ও উৎসব উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কৃতিচর্চার সুযোগ নেই বললেই চলে। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে এ সম্পর্কিত প্রতিবেদন দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজির কদর তো বাড়ছেই, তার ওপর পরীক্ষা আর মুখস্থ বিদ্যার চাপে স্কুল থেকে সংস্কৃতিচর্চা একেবারেই নির্বাসিত হয়ে পড়েছে। বিপুলসংখ্যক ছাত্রের চাপ সামলাতে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরীক্ষা, ডিগ্রি আর সনদের মধ্যে আটকে গেছে। শৈশব, কৈশোর, তারুণ্যে শরীর-মনের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য যেসব খোরাক-রসদ দরকার, তার কিছুই দিতে পারে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার কারণে তাদের মধ্যে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস, মানসিক চাপ, বিষণ্নতা, নিজেকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারার ও অন্যের সঙ্গে যোগাযোগের অক্ষমতা, বিচারহীনতা তৈরি হচ্ছে। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা না থাকা এবং খেলাধুলার সুযোগ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে তরুণরা সামাজিক-সম্প্রীতি থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে তাদের চিন্তাভাবনা। ফলে তরুণরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভুল শিক্ষা নিয়ে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এরই চরম পরিণতি হিসেবে গুলশান-কিশোরগঞ্জে জঙ্গি হামলায় মানুষ হত্যার ঘটনা দেখতে হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে, যারা জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদে জড়িত, তারা পরিবার, সমাজ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে নানাভাবে বিচ্ছিন্ন। ধর্মের নামে তাদের এমন উগ্রতায় দীক্ষিত করা হচ্ছে যে, তারা নিষ্ঠুরভাবে মানুষ হত্যা করছে। মাত্র অল্প কিছুদিনের প্রশিক্ষণে তারা কী করে এভাবে অমানুষ হতে পারে, এটা ভাবার বিষয়। রাষ্ট্র পরিচালনা করে রাজনীতি। আর এর পেছনে থাকে সংস্কৃতি। সংস্কৃতি হলো রাষ্ট্র ও জাতির অসাধারণ সম্পদ। এর চর্চা না হলে ছেলেমেয়েরা বিপথগামী হবে, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। প্রশ্ন উঠতে পারে, এ অবস্থায় সরকার কী করতে পারে? সংস্কৃতি কোন আরোপিত বিষয় নয়। ভাষা ও সংস্কৃতি সব সময় গতিশীল, তাই এর রূপান্তর, পরিবর্তন, উত্তরণ ঘটবেই এবং তাতে গ্রহণ-বর্জনের প্রশ্ন ওতপ্রোতভাবে যুক্ত থাকবেই। সরকারের কাছে কাম্য হলো সুস্থ সংস্কৃতির ধারা বহমান রাখা এবং তার অনুকূলে ভূমিকা পালন। সুস্থ প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের উচিত হবে সমাজকে আরও জায়গা দেয়া, সৃষ্টিশীল মানুষদের স্বাধীনতার পরিসর বাড়তে দেয়া এবং শিক্ষাকে স্বদেশ ও সংস্কৃতি চর্চার সমন্বয়ে প্রাণবন্ত মানবিক ও গভীরতায় সমৃদ্ধ হতে দেয়া। সব অপশক্তিকে প্রতিহত করার অন্যতম উপায় হলো সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চা। সংস্কৃতি মানুষকে হতাশা থেকে বাঁচায়। সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে আলোকিত মানুষ হওয়া যায়। শিক্ষাঙ্গনে বাংলার উদার মানবিক ধারার সংস্কৃতিচর্চার পথ খুলে তা বেগবান করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে ধর্মান্ধ বা জঙ্গি তরুণ সৃষ্টির পথ বন্ধ হয়। এর জন্য বিস্তারিত সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি প্রয়োজন। সমাজকে সেবা ও কল্যাণের পথে এবং সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে মানবিক করে তোলার জন্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক জাগরণের উদ্যোগ নিতে হবে। সমাজে সুস্থ ইতিবাচক মানবিক বাতাবরণ তৈরির জন্য ওয়ার্ড ও ইউপি এবং গ্রামাঞ্চলের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে এ ধারায় সক্রিয় করে তুলতে হবে। খোলামেলা পরিবেশে গ্রহণ-বর্জনের মাধ্যমে সংস্কৃতির সুস্থধারা বহমান থাকলে সমাজ সুস্থ থাকবে।