ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সংস্কারকাজে পুরোনো পাইপ, স্থানীয়দের বাধায় কাজ বন্ধ!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪১:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ অগাস্ট ২০১৯
  • / ২৪৬ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা ব্রিজের সংস্কারকাজে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ
বিশেষ প্রতিবেদক:
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর জেলার প্রধান সংযোগ সেতু ‘মাথাভাঙ্গা ব্রিজ’-এর সংস্কার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় লোকজন। গতকাল রোববার রাত ১১টার দিকে চলমান এ সংস্কারকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, সেতু সংস্কারকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পুরোনো মরিচা ধরা লোহার পাইপ। প্রথম সাপোর্টিং রেক্টো ফিটিংসে (লোহার পাইপের স্তম্ভ) মোটামুটি মানসম্মত পাইপ দিয়ে গভীর পর্যন্ত পাইলিং করা হলেও পরবর্তী ফিটিংসগুলোর কাজ দায়সারাভাবে শেষ করা হচ্ছে। কারণ শর্ত অনুযায়ী আর দুই-তিন দিনের মধ্যে ব্রিজের মুখ থেকে বাঁধ সরিয়ে সব প্রকার যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করার নির্দেশনা রয়েছে। এ কারণে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন শ্রমিকেরা। তবে সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একজন প্রকৌশলী ছাড়া সড়ক ও জনপথের (সওজ) কোনো প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি সেখানে। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে রাতেই সওজ-এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আদম আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ না করায় কোনো মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, গত ১২ জুন মধ্যরাতে মাথাভাঙ্গা ব্রিজে ফাটল দেখা দিলে বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের ভারি যানবাহন চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের মধ্যে সড়কপথে চলাচলকারী মানুষ চরম বিপাকে পড়ে। জনগণের দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে ওই রাত থেকেই ব্রিজটির ভাঙা স্থানে লোহার পাটাতন দিয়ে মেরামত করে হালকা (৫ টন) যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়। সেই সঙ্গে শুরু হয় সংস্কারকাজ। তবে সে কাজে তেমন গতি নজরে আসেনি। একপর্যায়ে মাথাভাঙ্গা ব্রিজের সমস্যা দ্রুত সমাধানে বাস-ট্রাক পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা ধর্মঘট ও আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন। ওই সময় বাস-ট্রাক পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা মাথাভাঙ্গা ব্রিজের দুপ্রান্তের বাঁধ সরিয়ে ব্রিজটি ভারি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার জন্যও দাবি জানিয়েছিলেন। এর পরে গত ১৫ জুলাই মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা। ফলপ্রসূ আলোচনা শেষে ওই দিনই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয় এবং ব্রিজের নিচের অংশে লোহার পাইপ দিয়ে বিশালাকার খুঁটি তৈরি করে ব্রিজটি আরও মজবুত ও ভারি যানবাহন চলাচল উপযোগী করার কাজ শুরু হয়। ইতিমধ্যে ব্রিজের মধ্যবর্তী স্থানে ২৪টি লোহার পাইপ দিয়ে একটি সাপোর্টিং রেক্টো ফিটিংসের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। পশ্চিম প্রান্তে দ্বিতীয় ফিটিংসের পাইলিং কাজ চলমান অবস্থায় গতকাল রাতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে কাজ বন্ধ করে দেন স্থানীয় জনগণ।
স্থানীয় ব্যক্তিদের দাবি, মাথাভাঙ্গা ব্রিজ সংস্কারকাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দ্রুত কাজ শেষ করতে পাইলিংয়ের কাজেও ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাসের সঙ্গে আলোচনা না করে আর কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না।
এ ঘটনায় নির্মাণশ্রমিক ও জনগণের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কিশোর কুমার ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ব্রিজের সংস্কারকাজ বন্ধ ছিল।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সংস্কারকাজে পুরোনো পাইপ, স্থানীয়দের বাধায় কাজ বন্ধ!

আপলোড টাইম : ০৯:৪১:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ অগাস্ট ২০১৯

চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা ব্রিজের সংস্কারকাজে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ
বিশেষ প্রতিবেদক:
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর জেলার প্রধান সংযোগ সেতু ‘মাথাভাঙ্গা ব্রিজ’-এর সংস্কার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় লোকজন। গতকাল রোববার রাত ১১টার দিকে চলমান এ সংস্কারকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, সেতু সংস্কারকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পুরোনো মরিচা ধরা লোহার পাইপ। প্রথম সাপোর্টিং রেক্টো ফিটিংসে (লোহার পাইপের স্তম্ভ) মোটামুটি মানসম্মত পাইপ দিয়ে গভীর পর্যন্ত পাইলিং করা হলেও পরবর্তী ফিটিংসগুলোর কাজ দায়সারাভাবে শেষ করা হচ্ছে। কারণ শর্ত অনুযায়ী আর দুই-তিন দিনের মধ্যে ব্রিজের মুখ থেকে বাঁধ সরিয়ে সব প্রকার যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করার নির্দেশনা রয়েছে। এ কারণে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন শ্রমিকেরা। তবে সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একজন প্রকৌশলী ছাড়া সড়ক ও জনপথের (সওজ) কোনো প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি সেখানে। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে রাতেই সওজ-এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আদম আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ না করায় কোনো মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, গত ১২ জুন মধ্যরাতে মাথাভাঙ্গা ব্রিজে ফাটল দেখা দিলে বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের ভারি যানবাহন চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরের মধ্যে সড়কপথে চলাচলকারী মানুষ চরম বিপাকে পড়ে। জনগণের দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে ওই রাত থেকেই ব্রিজটির ভাঙা স্থানে লোহার পাটাতন দিয়ে মেরামত করে হালকা (৫ টন) যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়। সেই সঙ্গে শুরু হয় সংস্কারকাজ। তবে সে কাজে তেমন গতি নজরে আসেনি। একপর্যায়ে মাথাভাঙ্গা ব্রিজের সমস্যা দ্রুত সমাধানে বাস-ট্রাক পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা ধর্মঘট ও আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন। ওই সময় বাস-ট্রাক পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা মাথাভাঙ্গা ব্রিজের দুপ্রান্তের বাঁধ সরিয়ে ব্রিজটি ভারি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার জন্যও দাবি জানিয়েছিলেন। এর পরে গত ১৫ জুলাই মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা। ফলপ্রসূ আলোচনা শেষে ওই দিনই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয় এবং ব্রিজের নিচের অংশে লোহার পাইপ দিয়ে বিশালাকার খুঁটি তৈরি করে ব্রিজটি আরও মজবুত ও ভারি যানবাহন চলাচল উপযোগী করার কাজ শুরু হয়। ইতিমধ্যে ব্রিজের মধ্যবর্তী স্থানে ২৪টি লোহার পাইপ দিয়ে একটি সাপোর্টিং রেক্টো ফিটিংসের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। পশ্চিম প্রান্তে দ্বিতীয় ফিটিংসের পাইলিং কাজ চলমান অবস্থায় গতকাল রাতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে কাজ বন্ধ করে দেন স্থানীয় জনগণ।
স্থানীয় ব্যক্তিদের দাবি, মাথাভাঙ্গা ব্রিজ সংস্কারকাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দ্রুত কাজ শেষ করতে পাইলিংয়ের কাজেও ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাসের সঙ্গে আলোচনা না করে আর কোনো কাজ করতে দেওয়া হবে না।
এ ঘটনায় নির্মাণশ্রমিক ও জনগণের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কিশোর কুমার ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ব্রিজের সংস্কারকাজ বন্ধ ছিল।