ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শোকে স্তব্ধ দেশ : ভুল বার্তায় কেড়ে নিল ৫১ প্রাণ!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০৯:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মার্চ ২০১৮
  • / ৩৬৬ বার পড়া হয়েছে

বিমান দুর্ঘটনা : দ্রুত লাশ পাঠাতে এয়ারফোর্সের বিমান প্রস্তুত : ত্রিভুবন বিমানবন্দরের ৬ ট্রাফিক কন্ট্রোলার বদলি

বিমানমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল নেপালে : তদন্ত শুরু : জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিশ্বের নেতৃবৃন্দের শোক প্রকাশ
ডেস্ক রিপোর্ট: নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শোকে স্তব্ধ বাংলাদেশ। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ইউএস বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের লাশ দেশে দ্রুত পাঠানোর জন্য এয়ারফোর্সের বিমানকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিহত ফয়সাল আহমেদ, আলিফউজ্জামান, বিলকিস আরা, বেগম হুরুন নাহার বিলকিস বানু, আখতারা বেগম, নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, মো. রকিবুল হাসান, সানজিদা হক, মো. হাসান ইমাম, মো. নজরুল ইসলাম, আঁখি মনি, মিনহাজ বিন নাসির, এফ এইচ প্রিয়ক, তামারা প্রিয়মনি, মো. মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহারা তানভীন শশী রেজা, পিয়াস রায়, উম্মে সালামা, অনিরুদ্ধ জামান, মো. নুরুজ্জামান ও মো. রফিকুজ্জামানের পরিবার, আত্মীয় স্বজন তথা দেশবাসী শোকে মুহ্যমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাগ্যাহত যাত্রীদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সফর সংক্ষিপ্ত করে গতকাল সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। আজ বুধবার তার আসার দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল।
এ দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের পাইলট, কো-পাইলট, কেবিন ক্রু এবং যাত্রীসহ নিহত হয়েছেন অন্তত ২৬ জন বাংলাদেশী। আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরো ১০ জন। বিমানমন্ত্রী শাহজাহান কামালের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল গতকাল কাঠমান্ডু পৌঁছেছেন। ব্ল্যাকবক্স নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে নেপাল। আসছে বিমানটির প্রস্তুতকারক কোম্পানীর প্রতিনিধিরাও। ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের সময় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারে দায়িত্বরতদের মধ্যে ৬ কর্মকর্তাকে সরিয়ে নিয়েছে নেপালের বিমান কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শী এই কর্মকর্তাদের দুর্ঘটনাজনিত শোক থেকে বের করে আনার জন্য তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা।
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার (এটিসি) এবং বিধ্বস্ত ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানটির পাইলটের কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওটি নিয়ে তদন্ত করার ঘোষণা দিয়েছে নেপালি কর্তৃপক্ষ। নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএএন) এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিআইবি) যৌথভাবে অডিওটির সত্যতা যাচাই করবে। সিএএএন কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে নেপালি সংবাদমাধ্যম মাই রিপাবলিকা খবরটি জানিয়েছে।
এদিকে নেপালে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহত বাংলাদেশি যাত্রী ও ক্রুদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাস গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে এ তালিকা প্রকাশ করে। ওই ফ্লাইটের বাংলাদেশিদের মধ্যে ৩২ জন যাত্রী এবং চারজন পাইলট ও ক্রু ছিলেন। তাদের মধ্যে ২৬ জন নিহত হয়েছেন। আর ১০ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নেপালে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত জানতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামালের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল কাঠমান্ডু পৌঁছেছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর তারা কাঠমান্ডু পৌঁছান বলে জানিয়েছে নেপালি সংবাদমাধ্যম হিমালয়ান টাইমস। গতকাল মঙ্গলবার ত্রিভুবন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র প্রেমনাথ ঠাকুর বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটি পৌঁছানোর খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলটিতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা রয়েছেন। এ দলটির সঙ্গে নিহতদের স্বজনরাও রয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রেমনাথ। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, বেলা ১২টা ৫০ মিনিটে বিমানটির ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামার কথা থাকলেও ফ্লাইট কন্ট্রোল থেকে বিলম্বে ক্লিয়ারেন্স দেয়ায় বেলা ১টা ৫০ মিনিটে বিমানবন্দরে অবতরণ করে। গুরুতর আহতদের চারজন ‘আশঙ্কামুক্ত।
এদিকে, নেপালের কাঠমান্ডুতে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি, বাংলাদেশের সরকারের প্রতি এবং দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও বাংলাদেশের মানুষদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে একটি শোকবার্তা পাঠিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোনেমের বরাবর পাঠনো এ শোকবার্তায় জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘গতকাল নেপালের ত্রিভূবন বিমানবন্দরে ইউ-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তাতে আমি যারপরনাই ব্যথিত, শোকগ্রস্ত! আমি আমার হৃদয়ের গভীর থেকে সমবেদনা জানাচ্ছি নিহতেদর প্রতি, তাদের পরিবারের প্রতি, বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণের প্রতি।
অপরদিকে, শতাধিকবার ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের অভিজ্ঞতা যার রয়েছে, সেই আবিদ সুলতানের পরিচালনার মধ্যে কীভাবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হল, তা প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে বৈমানিকদের কাছে। বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে ইউএস-বাংলার বৈমানিকদের শেষ মুহূর্তের যে কথোপকথন ইন্টারনেটে ঘুরছে, তাতে দুই পক্ষের ভুল বোঝাবুঝি স্পষ্ট। পাহাড় ঘেরা কাঠমান্ডুতে ত্রিভুবন বিমানবন্দরের ঝুঁকিপূর্ণ উত্তর প্রান্ত বা রানওয়ে ২০ দিয়ে না নামতে বৈমানিকদের প্রতি সাধারণ নির্দেশনা রয়েছে বিমান সংস্থাগুলোর। কিন্তু সোমবার বিধ্বস্তের আগে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নির্দেশনা না শুনে ওই রানওয়ের দিকেই কেন যাচ্ছিল ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটি, তা এখন বড় প্রশ্ন।
বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রুটে দুটি ফ্লাইট চালিয়ে কাঠমান্ডু রওনা হওয়ার আগে আবিদ সুলতান কি বিশ্রাম চাচ্ছিলেন- সেই প্রশ্নও ইতোমধ্যে আলোচনায় এসেছে। কাঠমান্ডুতে অবতরণের সময় উড়োজাহাজটি কি আবিদ সুলতান চালাচ্ছিলেন, না কি নবীন পাইলট পৃথুলা রশিদের হাতে ছিল সে ভার, তার উত্তরও এখনও স্পষ্ট নয়। বাণিজ্যিক যাত্রা শুরুর চার বছরের মধ্যে অন্তত তিনটি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলার পর বড় এই দুর্ঘটনার পেছনে ইউএস-বাংলার কোনো গাফিলতি আছে কি না, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথাও বলছেন অনেকে। সোমবার ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান সংস্থাটির উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় অর্ধশত নিহতের ঘটনাটি এখন দেশজুড়ে আলোচিত। কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তার কারণ খুঁজছেন সবাই।
ককপিটে বিভ্রাট কেন?
ত্রিভুবন বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে বৈমানিকের কথোপকথন ধরে বিশ্বব্যাপী এভিয়েশন নিরাপত্তার তথ্য সরবরাহকারী সংস্থা জ্যাকডেক বলছে, “কোন দিকে নামবে সে বিষয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে পাইলটদের দিক থেকে।” বাংলাদেশের অভিজ্ঞ একজন পাইলট বলেন, “ত্রিভূবন বিমানবন্দরে বেশিরভাগ ফ্লাইট নামে দক্ষিণ দিক থেকে। উচ্চতা, বাতাস ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে উত্তর দিক থেকে নামাটা ঝুঁকিপূর্ণ।” তিনি জানান, ১০ বছর আগেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে তাদের পাইলটদের নির্দেশনা দেয় যে কোনো পরিস্থিতিতেই উত্তর দিক (২০) থেকে যেন বিমান নামানো না হয়। কথোপকথনের ওই অডিও থেকে বোঝা যায়, ইউএস-বাংলার ফ্লাইটটি (বিএস ২১১) যখন পৌঁছ্য়া, তখন রানওয়ে ০২ এ আরেকটি উড়োজাহাজ ছিল। তখন তাকে অপেক্ষায় রাখা হয়। এরপর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ পাইলটের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি কোন দিক দিয়ে নামতে চান- রানওয়ে ০২, না রানওয়ে ২০। পাইলট তখন বলেন, তিনি রানওয়ে ২০ ধরতে চান। তখন তাকে অনুমতি দেওয়া হয়। শেষ সময়ে পাইলট বলে ওঠেন, তিনি রানওয়ে ০২ এ নামতে যাচ্ছেন, যদিও এর আগে তিনি উল্টো দিকে নামার অনুমতি চেয়ে আসছিলেন। এরপর পরক্ষণেই রানওয়ের পূর্ব পাশে বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজটি। ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষে অভিযোগ আবার ত্রিভুবনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। তারা বলছেন, পাইলটকে ভুল বার্তা দেওয়া হয়েছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এক পাইলট বলেন, “পাইলটকে দক্ষিণ দিক (০২) থেকে নামতে বলা হয়েছে। পাইলটও নিশ্চিত করেছেন ০২। তারপরও তিনি উত্তর দিক থেকে বিমান নামানোর চেষ্টা করেছেন।”
সহকর্মীরা জানান, বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের সাবেক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আবিদের বিমান বাহিনীতে মিগ-২১ চালানোর অভিজ্ঞতাও রয়েছে। তার সময়কালে সব থেকে ‘ব্রাইট অফিসার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। নেপালে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলার ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফটটি ক্যাপ্টেন আবিদই কানাডা থেকে বাংলাদেশে উড়িয়ে এনেছিলেন। আবিদ সুলতানের ৫ হাজার ঘণ্টা ফ্লাইট চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। ১৭০০ ঘণ্টা অভিজ্ঞতা রয়েছে ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ চালানোর। শতাধিকবার তিনি ত্রিভূবনে বিমান ওঠানামা করিয়েছেন। দুর্ঘটনা কবলিত উড়োজাহাজে আবিদের সঙ্গে ছিলেন নবীন পাইলট পৃথুলা। দুজনেই মারা গেছেন এই দুর্ঘটনায়। ত্রিভুবনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দর, যেখানে গত বছরগুলোতে ২২টির বেশি দুর্ঘটনায় ৫০০ এর বেশি মানুষ নিহত হন, সেখানে পাইলট ও সহকারী পাইলটের উড়োজাহাজ চালানোর অভিজ্ঞতা দেখা হয়। যেমন- বাংলাদেশ বিমানের ক্ষেত্রে পাইলট ও সহকারী পাইলটের দুজনের নূন্যতম ৫০০ ঘণ্টার অভিজ্ঞতার দরকার হয়। এছাড়া রুট সিমুলেটর ও রুট সিমিনারাইজেশন করতে হয় এবং দুটি রুট প্রশিক্ষণ দিতে হয় এবং একটি রুট চেক দিতে হয়।
এদিকে, নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ইউএস বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের লাশ দেশে দ্রুত পাঠানোর জন্য এয়ারফোর্সের বিমানকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস এই তথ্য জানিয়েছেন। কখন লাশ পাঠানো সম্ভব হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময় বলা মুশকিল। কারণ এখানে বেশকিছু প্রক্রিয়া আছে। খেয়াল রাখতে হবে, এমন বড় কোনও দুর্ঘটনা নেপালে গত ২৫ বছরে হয়নি। তাই এমন পরিস্থিতিতে প্রস্তুত থাকলেও কিছু সমস্যা দেখা যায়। মাশফি বিনতে শামস জানান, বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা নেপালি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। লাশ শনাক্ত দ্রুত করা ও স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া বা দেশে পাঠানোই তাদের লক্ষ্য। ইতোমধ্যে কোঅর্ডিনেশন সেল খোলা হয়েছে দূতাবাসে। গতকাল সকাল থেকে লাশ পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে দূতাবাস সক্রিয় আছে বলেও জানান তিনি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পেরেছি ১০ জন জীবিত আছেন। তারা এখানকার ৩টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। দূতাবাসের পক্ষ থেকে আমি তাদের সঙ্গে দেখা করেছি। আহতরা কতটুকু শঙ্কামুক্ত জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে এককজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিদের ব্যাপারে আশ্বাস পেয়েছি। আশা করা যাচ্ছে, অল্প কিছুদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠবেন তারা। আহতদের স্বজনরা যদি তাদের নিয়ে যেতে চান সেক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, যিনি শঙ্কায় আছেন তাকে স্বজনরা ব্যাংকক বা সিঙ্গাপুরে নিতে চান। আমরা ইউএস বাংলার সঙ্গে যোগাযোগটা করিয়ে দিচ্ছি যাতে এয়ারবাসে নেওয়া সম্ভব হয়। এর আগে গতকাল সকালে হতাহতদের ৪৬ জন আত্মীয়কে নিয়ে নেপালে পৌঁছায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ। নেপালের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩৭ মিনিটে ত্রিভুবন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজটি অবতরণ করে। তাদের এনে একটি ব্রিফিং দিয়ে দূতাবাসের ট্রান্সপোর্টে গন্তব্যে পাঠানো হয়।
দুর্ঘটনার পরবর্তী সময়ে কোনও গাফলতি ছিল না বলে দাবি রাষ্ট্রদূতের। তার কথায়, যথেষ্ট দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ফায়ার ব্রিগেড ও সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সব সংস্থার লোকজন তাদের কাজ করেছেন। এখানকার প্রধানমন্ত্রী সেখানে গেছেন। দুই ঘণ্টার মধ্যে সবাইকে বের করে আনা গেছে। এদিকে নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারে দায়িত্বরতদের মধ্যে ৬ কর্মকর্তাকে সরিয়ে নেওয়াকে সন্দেহের চোখে দেখছে ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন মন্তব্য করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের সময় তারা সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন। শোক থেকে বের করে আনার জন্য তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি নেপালের বিমান কর্তৃপক্ষের।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

শোকে স্তব্ধ দেশ : ভুল বার্তায় কেড়ে নিল ৫১ প্রাণ!

আপলোড টাইম : ১০:০৯:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মার্চ ২০১৮

বিমান দুর্ঘটনা : দ্রুত লাশ পাঠাতে এয়ারফোর্সের বিমান প্রস্তুত : ত্রিভুবন বিমানবন্দরের ৬ ট্রাফিক কন্ট্রোলার বদলি

বিমানমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল নেপালে : তদন্ত শুরু : জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিশ্বের নেতৃবৃন্দের শোক প্রকাশ
ডেস্ক রিপোর্ট: নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শোকে স্তব্ধ বাংলাদেশ। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ইউএস বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের লাশ দেশে দ্রুত পাঠানোর জন্য এয়ারফোর্সের বিমানকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিহত ফয়সাল আহমেদ, আলিফউজ্জামান, বিলকিস আরা, বেগম হুরুন নাহার বিলকিস বানু, আখতারা বেগম, নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, মো. রকিবুল হাসান, সানজিদা হক, মো. হাসান ইমাম, মো. নজরুল ইসলাম, আঁখি মনি, মিনহাজ বিন নাসির, এফ এইচ প্রিয়ক, তামারা প্রিয়মনি, মো. মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহারা তানভীন শশী রেজা, পিয়াস রায়, উম্মে সালামা, অনিরুদ্ধ জামান, মো. নুরুজ্জামান ও মো. রফিকুজ্জামানের পরিবার, আত্মীয় স্বজন তথা দেশবাসী শোকে মুহ্যমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাগ্যাহত যাত্রীদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সফর সংক্ষিপ্ত করে গতকাল সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। আজ বুধবার তার আসার দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল।
এ দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের পাইলট, কো-পাইলট, কেবিন ক্রু এবং যাত্রীসহ নিহত হয়েছেন অন্তত ২৬ জন বাংলাদেশী। আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরো ১০ জন। বিমানমন্ত্রী শাহজাহান কামালের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল গতকাল কাঠমান্ডু পৌঁছেছেন। ব্ল্যাকবক্স নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে নেপাল। আসছে বিমানটির প্রস্তুতকারক কোম্পানীর প্রতিনিধিরাও। ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের সময় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারে দায়িত্বরতদের মধ্যে ৬ কর্মকর্তাকে সরিয়ে নিয়েছে নেপালের বিমান কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শী এই কর্মকর্তাদের দুর্ঘটনাজনিত শোক থেকে বের করে আনার জন্য তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা।
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার (এটিসি) এবং বিধ্বস্ত ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানটির পাইলটের কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওটি নিয়ে তদন্ত করার ঘোষণা দিয়েছে নেপালি কর্তৃপক্ষ। নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএএন) এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিআইবি) যৌথভাবে অডিওটির সত্যতা যাচাই করবে। সিএএএন কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে নেপালি সংবাদমাধ্যম মাই রিপাবলিকা খবরটি জানিয়েছে।
এদিকে নেপালে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহত বাংলাদেশি যাত্রী ও ক্রুদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাস গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে এ তালিকা প্রকাশ করে। ওই ফ্লাইটের বাংলাদেশিদের মধ্যে ৩২ জন যাত্রী এবং চারজন পাইলট ও ক্রু ছিলেন। তাদের মধ্যে ২৬ জন নিহত হয়েছেন। আর ১০ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নেপালে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত জানতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামালের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল কাঠমান্ডু পৌঁছেছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর তারা কাঠমান্ডু পৌঁছান বলে জানিয়েছে নেপালি সংবাদমাধ্যম হিমালয়ান টাইমস। গতকাল মঙ্গলবার ত্রিভুবন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র প্রেমনাথ ঠাকুর বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটি পৌঁছানোর খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলটিতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা রয়েছেন। এ দলটির সঙ্গে নিহতদের স্বজনরাও রয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রেমনাথ। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, বেলা ১২টা ৫০ মিনিটে বিমানটির ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামার কথা থাকলেও ফ্লাইট কন্ট্রোল থেকে বিলম্বে ক্লিয়ারেন্স দেয়ায় বেলা ১টা ৫০ মিনিটে বিমানবন্দরে অবতরণ করে। গুরুতর আহতদের চারজন ‘আশঙ্কামুক্ত।
এদিকে, নেপালের কাঠমান্ডুতে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি, বাংলাদেশের সরকারের প্রতি এবং দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও বাংলাদেশের মানুষদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে একটি শোকবার্তা পাঠিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোনেমের বরাবর পাঠনো এ শোকবার্তায় জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘গতকাল নেপালের ত্রিভূবন বিমানবন্দরে ইউ-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তাতে আমি যারপরনাই ব্যথিত, শোকগ্রস্ত! আমি আমার হৃদয়ের গভীর থেকে সমবেদনা জানাচ্ছি নিহতেদর প্রতি, তাদের পরিবারের প্রতি, বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণের প্রতি।
অপরদিকে, শতাধিকবার ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের অভিজ্ঞতা যার রয়েছে, সেই আবিদ সুলতানের পরিচালনার মধ্যে কীভাবে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হল, তা প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে বৈমানিকদের কাছে। বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে ইউএস-বাংলার বৈমানিকদের শেষ মুহূর্তের যে কথোপকথন ইন্টারনেটে ঘুরছে, তাতে দুই পক্ষের ভুল বোঝাবুঝি স্পষ্ট। পাহাড় ঘেরা কাঠমান্ডুতে ত্রিভুবন বিমানবন্দরের ঝুঁকিপূর্ণ উত্তর প্রান্ত বা রানওয়ে ২০ দিয়ে না নামতে বৈমানিকদের প্রতি সাধারণ নির্দেশনা রয়েছে বিমান সংস্থাগুলোর। কিন্তু সোমবার বিধ্বস্তের আগে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নির্দেশনা না শুনে ওই রানওয়ের দিকেই কেন যাচ্ছিল ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজটি, তা এখন বড় প্রশ্ন।
বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রুটে দুটি ফ্লাইট চালিয়ে কাঠমান্ডু রওনা হওয়ার আগে আবিদ সুলতান কি বিশ্রাম চাচ্ছিলেন- সেই প্রশ্নও ইতোমধ্যে আলোচনায় এসেছে। কাঠমান্ডুতে অবতরণের সময় উড়োজাহাজটি কি আবিদ সুলতান চালাচ্ছিলেন, না কি নবীন পাইলট পৃথুলা রশিদের হাতে ছিল সে ভার, তার উত্তরও এখনও স্পষ্ট নয়। বাণিজ্যিক যাত্রা শুরুর চার বছরের মধ্যে অন্তত তিনটি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলার পর বড় এই দুর্ঘটনার পেছনে ইউএস-বাংলার কোনো গাফিলতি আছে কি না, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথাও বলছেন অনেকে। সোমবার ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান সংস্থাটির উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় অর্ধশত নিহতের ঘটনাটি এখন দেশজুড়ে আলোচিত। কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটল, তার কারণ খুঁজছেন সবাই।
ককপিটে বিভ্রাট কেন?
ত্রিভুবন বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে বৈমানিকের কথোপকথন ধরে বিশ্বব্যাপী এভিয়েশন নিরাপত্তার তথ্য সরবরাহকারী সংস্থা জ্যাকডেক বলছে, “কোন দিকে নামবে সে বিষয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে পাইলটদের দিক থেকে।” বাংলাদেশের অভিজ্ঞ একজন পাইলট বলেন, “ত্রিভূবন বিমানবন্দরে বেশিরভাগ ফ্লাইট নামে দক্ষিণ দিক থেকে। উচ্চতা, বাতাস ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে উত্তর দিক থেকে নামাটা ঝুঁকিপূর্ণ।” তিনি জানান, ১০ বছর আগেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে তাদের পাইলটদের নির্দেশনা দেয় যে কোনো পরিস্থিতিতেই উত্তর দিক (২০) থেকে যেন বিমান নামানো না হয়। কথোপকথনের ওই অডিও থেকে বোঝা যায়, ইউএস-বাংলার ফ্লাইটটি (বিএস ২১১) যখন পৌঁছ্য়া, তখন রানওয়ে ০২ এ আরেকটি উড়োজাহাজ ছিল। তখন তাকে অপেক্ষায় রাখা হয়। এরপর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ পাইলটের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি কোন দিক দিয়ে নামতে চান- রানওয়ে ০২, না রানওয়ে ২০। পাইলট তখন বলেন, তিনি রানওয়ে ২০ ধরতে চান। তখন তাকে অনুমতি দেওয়া হয়। শেষ সময়ে পাইলট বলে ওঠেন, তিনি রানওয়ে ০২ এ নামতে যাচ্ছেন, যদিও এর আগে তিনি উল্টো দিকে নামার অনুমতি চেয়ে আসছিলেন। এরপর পরক্ষণেই রানওয়ের পূর্ব পাশে বিধ্বস্ত হয় উড়োজাহাজটি। ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষে অভিযোগ আবার ত্রিভুবনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। তারা বলছেন, পাইলটকে ভুল বার্তা দেওয়া হয়েছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ এক পাইলট বলেন, “পাইলটকে দক্ষিণ দিক (০২) থেকে নামতে বলা হয়েছে। পাইলটও নিশ্চিত করেছেন ০২। তারপরও তিনি উত্তর দিক থেকে বিমান নামানোর চেষ্টা করেছেন।”
সহকর্মীরা জানান, বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের সাবেক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আবিদের বিমান বাহিনীতে মিগ-২১ চালানোর অভিজ্ঞতাও রয়েছে। তার সময়কালে সব থেকে ‘ব্রাইট অফিসার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। নেপালে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলার ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ এয়ারক্রাফটটি ক্যাপ্টেন আবিদই কানাডা থেকে বাংলাদেশে উড়িয়ে এনেছিলেন। আবিদ সুলতানের ৫ হাজার ঘণ্টা ফ্লাইট চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। ১৭০০ ঘণ্টা অভিজ্ঞতা রয়েছে ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ চালানোর। শতাধিকবার তিনি ত্রিভূবনে বিমান ওঠানামা করিয়েছেন। দুর্ঘটনা কবলিত উড়োজাহাজে আবিদের সঙ্গে ছিলেন নবীন পাইলট পৃথুলা। দুজনেই মারা গেছেন এই দুর্ঘটনায়। ত্রিভুবনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দর, যেখানে গত বছরগুলোতে ২২টির বেশি দুর্ঘটনায় ৫০০ এর বেশি মানুষ নিহত হন, সেখানে পাইলট ও সহকারী পাইলটের উড়োজাহাজ চালানোর অভিজ্ঞতা দেখা হয়। যেমন- বাংলাদেশ বিমানের ক্ষেত্রে পাইলট ও সহকারী পাইলটের দুজনের নূন্যতম ৫০০ ঘণ্টার অভিজ্ঞতার দরকার হয়। এছাড়া রুট সিমুলেটর ও রুট সিমিনারাইজেশন করতে হয় এবং দুটি রুট প্রশিক্ষণ দিতে হয় এবং একটি রুট চেক দিতে হয়।
এদিকে, নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ইউএস বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের লাশ দেশে দ্রুত পাঠানোর জন্য এয়ারফোর্সের বিমানকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস এই তথ্য জানিয়েছেন। কখন লাশ পাঠানো সম্ভব হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময় বলা মুশকিল। কারণ এখানে বেশকিছু প্রক্রিয়া আছে। খেয়াল রাখতে হবে, এমন বড় কোনও দুর্ঘটনা নেপালে গত ২৫ বছরে হয়নি। তাই এমন পরিস্থিতিতে প্রস্তুত থাকলেও কিছু সমস্যা দেখা যায়। মাশফি বিনতে শামস জানান, বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা নেপালি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। লাশ শনাক্ত দ্রুত করা ও স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া বা দেশে পাঠানোই তাদের লক্ষ্য। ইতোমধ্যে কোঅর্ডিনেশন সেল খোলা হয়েছে দূতাবাসে। গতকাল সকাল থেকে লাশ পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে দূতাবাস সক্রিয় আছে বলেও জানান তিনি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পেরেছি ১০ জন জীবিত আছেন। তারা এখানকার ৩টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। দূতাবাসের পক্ষ থেকে আমি তাদের সঙ্গে দেখা করেছি। আহতরা কতটুকু শঙ্কামুক্ত জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে এককজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিদের ব্যাপারে আশ্বাস পেয়েছি। আশা করা যাচ্ছে, অল্প কিছুদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠবেন তারা। আহতদের স্বজনরা যদি তাদের নিয়ে যেতে চান সেক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, যিনি শঙ্কায় আছেন তাকে স্বজনরা ব্যাংকক বা সিঙ্গাপুরে নিতে চান। আমরা ইউএস বাংলার সঙ্গে যোগাযোগটা করিয়ে দিচ্ছি যাতে এয়ারবাসে নেওয়া সম্ভব হয়। এর আগে গতকাল সকালে হতাহতদের ৪৬ জন আত্মীয়কে নিয়ে নেপালে পৌঁছায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ। নেপালের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩৭ মিনিটে ত্রিভুবন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজটি অবতরণ করে। তাদের এনে একটি ব্রিফিং দিয়ে দূতাবাসের ট্রান্সপোর্টে গন্তব্যে পাঠানো হয়।
দুর্ঘটনার পরবর্তী সময়ে কোনও গাফলতি ছিল না বলে দাবি রাষ্ট্রদূতের। তার কথায়, যথেষ্ট দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ফায়ার ব্রিগেড ও সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সব সংস্থার লোকজন তাদের কাজ করেছেন। এখানকার প্রধানমন্ত্রী সেখানে গেছেন। দুই ঘণ্টার মধ্যে সবাইকে বের করে আনা গেছে। এদিকে নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারে দায়িত্বরতদের মধ্যে ৬ কর্মকর্তাকে সরিয়ে নেওয়াকে সন্দেহের চোখে দেখছে ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন মন্তব্য করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের সময় তারা সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন। শোক থেকে বের করে আনার জন্য তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি নেপালের বিমান কর্তৃপক্ষের।