ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শীত আসছে দেরিতে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:০৫:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৩৯৫ বার পড়া হয়েছে

image_1696_260511

সমীকরণ ডেস্ক: বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই শীতল বাতাস। মধ্যরাত পেরুতেই টিন আর ঘরের চালা বেয়ে পড়তে থাকে বৃষ্টির মতো পানি। পূব আকাশে ভোরের আলো তির্যক গতি দেয়া অবধি হালকা কুয়াশার মধ্যেই নদীতে মাছ ধরা নৌকা, খেটে খাওয়া মানুষদের গামছা দিয়ে কান ঢেকে কাজের সন্ধানে শিশিরভেজা পথ ধরে হেঁটে কিংবা সাইকেলে চড়ে এগিয়ে চলা। আর সূর্যের আলো ফুটে উঠার সঙ্গে সঙ্গে দূর্বাঘাস বা ধানগাছের পাতায় পাতায় মুক্তোদানার মতো জমাট বাঁধা শিশির-কণার ঝলকানি। প্রকৃতির এই নানা খেলা বিরাজ করছে এখন পুরো উত্তরাঞ্চলজুড়েই। আর এসব কিছুই জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তার। মূলত মৌসুমি ঋতুগুলোর সময়ের কিছুটা হেরফেরের কারণে অনেকটা দেরিতেই দেখা মিলছে শীতের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ঋতু সংবলিত মাসগুলোর আচরণের পরিবর্তন হয়েছে। এতে সময় পিছিয়েছে ২০ দিন। যার কারণে গ্রাম বাংলার মানুষের দীর্ঘদিনের বিশ্বাস ‘আশ্বিনে গা শিন শিন’ প্রবাদটিও এখন অনেকটা মস্নান হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আশ্বিন পেরিয়ে কার্তিকের পথচলা শুরু হয়েছে দুদিন আগেই। আর সপ্তাহখানেক আগ থেকে পথচলা শুরু শীতের। আবহাওয়া অফিস বলছে, উত্তরাঞ্চলজুড়েই শীত শুরু হয়েছে। বিশেষ করে গত ১১ অক্টোবর ভারি বৃষ্টিপাতের পর থেকেই শীতের আবহ দেখা দেয়। তবে সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে ক্রমেই তা ভারি হচ্ছে। তাপমাত্রাও নেমে আসছে নিচের দিকে। দেরিতেই শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। তবে এখনও সকাল ৯টা পেরুলেই চোখ রাঙাচ্ছে সূর্য। অনুভূত হচ্ছে গরম। ঘামে কমবেশি শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে। আর ভোর রাতে ঠা-া অনুভূত হওয়ায় অনেকে কাঁথা-কম্বল গায়ে জড়িয়ে চেষ্টা করছেন শীত নিবারণের। মাঝে কয়েকদিন যে ধরনের ভ্যাপসা গরম ও রোদের তাপমাত্রা ছিল, এখন সেটিও অনেকটাই কমে গেছে। এদিকে দিনে গরম দেখা দিলেও রাতে ঠা-ায় মানুষ একটু বিড়ম্বনায় পড়েছেন। গেল এক সপ্তাহ থেকে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২০ ডিগ্রি। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গেল এক সপ্তাহ থেকে উত্তরাঞ্চলের গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩২ থেকে ৩৪ এবং সর্বনিম্ন ২০ থেকে ২৪ ডিগ্রির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। গত, ১২ অক্টোবর সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৩ অক্টোবর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৪ অক্টোবর সর্বোচ্চ ৩৩ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৫ অক্টোবর সর্বোচ্চ ৩২ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৬ অক্টোবর ৩৪ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৭ অক্টোবর ৩৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৮ অক্টোবর সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৬-৯টা পর্যন্ত সর্বনিম্ম তাপমাত্রার এই নিম্নগতিই বলে দিচ্ছে রাজশাহীতে শীত একটু একটু করে বাড়তে শুরু করেছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, এবার একটু দেরিতে শীত শুরু হয়েছে। বিশেষ করে গত ১৪ অক্টোবর থেকেই তাপমাত্রা অনেকটা কমতে শুরু করেছে। তবে এর মাঝেও তাপমাত্রাও উঠানামা করেছে। পরিবেশ বিজ্ঞানী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাইলোজিক সাইন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মনজুর হোসেন জানান, গত ৫০ বছরে সিজনাল পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল যৌথভাবে চাষিদের জন্য স্থায়ী কৃষিপদ্ধতি প্রবর্তনের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পরিচালনায় এই গবেষণার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে সিজনাল পরিবর্তনে তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি। তাছাড়াও সিজন পিছিয়ে পড়েছে ২০ দিন। যার কারণে শীত আসছে একটু দেরিতে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

শীত আসছে দেরিতে

আপলোড টাইম : ০২:০৫:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর ২০১৬

image_1696_260511

সমীকরণ ডেস্ক: বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই শীতল বাতাস। মধ্যরাত পেরুতেই টিন আর ঘরের চালা বেয়ে পড়তে থাকে বৃষ্টির মতো পানি। পূব আকাশে ভোরের আলো তির্যক গতি দেয়া অবধি হালকা কুয়াশার মধ্যেই নদীতে মাছ ধরা নৌকা, খেটে খাওয়া মানুষদের গামছা দিয়ে কান ঢেকে কাজের সন্ধানে শিশিরভেজা পথ ধরে হেঁটে কিংবা সাইকেলে চড়ে এগিয়ে চলা। আর সূর্যের আলো ফুটে উঠার সঙ্গে সঙ্গে দূর্বাঘাস বা ধানগাছের পাতায় পাতায় মুক্তোদানার মতো জমাট বাঁধা শিশির-কণার ঝলকানি। প্রকৃতির এই নানা খেলা বিরাজ করছে এখন পুরো উত্তরাঞ্চলজুড়েই। আর এসব কিছুই জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তার। মূলত মৌসুমি ঋতুগুলোর সময়ের কিছুটা হেরফেরের কারণে অনেকটা দেরিতেই দেখা মিলছে শীতের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ঋতু সংবলিত মাসগুলোর আচরণের পরিবর্তন হয়েছে। এতে সময় পিছিয়েছে ২০ দিন। যার কারণে গ্রাম বাংলার মানুষের দীর্ঘদিনের বিশ্বাস ‘আশ্বিনে গা শিন শিন’ প্রবাদটিও এখন অনেকটা মস্নান হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আশ্বিন পেরিয়ে কার্তিকের পথচলা শুরু হয়েছে দুদিন আগেই। আর সপ্তাহখানেক আগ থেকে পথচলা শুরু শীতের। আবহাওয়া অফিস বলছে, উত্তরাঞ্চলজুড়েই শীত শুরু হয়েছে। বিশেষ করে গত ১১ অক্টোবর ভারি বৃষ্টিপাতের পর থেকেই শীতের আবহ দেখা দেয়। তবে সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে ক্রমেই তা ভারি হচ্ছে। তাপমাত্রাও নেমে আসছে নিচের দিকে। দেরিতেই শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। তবে এখনও সকাল ৯টা পেরুলেই চোখ রাঙাচ্ছে সূর্য। অনুভূত হচ্ছে গরম। ঘামে কমবেশি শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে। আর ভোর রাতে ঠা-া অনুভূত হওয়ায় অনেকে কাঁথা-কম্বল গায়ে জড়িয়ে চেষ্টা করছেন শীত নিবারণের। মাঝে কয়েকদিন যে ধরনের ভ্যাপসা গরম ও রোদের তাপমাত্রা ছিল, এখন সেটিও অনেকটাই কমে গেছে। এদিকে দিনে গরম দেখা দিলেও রাতে ঠা-ায় মানুষ একটু বিড়ম্বনায় পড়েছেন। গেল এক সপ্তাহ থেকে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২০ ডিগ্রি। স্থানীয় আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গেল এক সপ্তাহ থেকে উত্তরাঞ্চলের গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩২ থেকে ৩৪ এবং সর্বনিম্ন ২০ থেকে ২৪ ডিগ্রির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। গত, ১২ অক্টোবর সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৩ অক্টোবর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৪ অক্টোবর সর্বোচ্চ ৩৩ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৫ অক্টোবর সর্বোচ্চ ৩২ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৬ অক্টোবর ৩৪ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৭ অক্টোবর ৩৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৮ অক্টোবর সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৬-৯টা পর্যন্ত সর্বনিম্ম তাপমাত্রার এই নিম্নগতিই বলে দিচ্ছে রাজশাহীতে শীত একটু একটু করে বাড়তে শুরু করেছে। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, এবার একটু দেরিতে শীত শুরু হয়েছে। বিশেষ করে গত ১৪ অক্টোবর থেকেই তাপমাত্রা অনেকটা কমতে শুরু করেছে। তবে এর মাঝেও তাপমাত্রাও উঠানামা করেছে। পরিবেশ বিজ্ঞানী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাইলোজিক সাইন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মনজুর হোসেন জানান, গত ৫০ বছরে সিজনাল পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল যৌথভাবে চাষিদের জন্য স্থায়ী কৃষিপদ্ধতি প্রবর্তনের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পরিচালনায় এই গবেষণার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে সিজনাল পরিবর্তনে তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি। তাছাড়াও সিজন পিছিয়ে পড়েছে ২০ দিন। যার কারণে শীত আসছে একটু দেরিতে।