ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৮:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ অগাস্ট ২০২০
  • / ১২৩ বার পড়া হয়েছে

সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন শিশুকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় যে সত্যটি দেশবাসীর সামনে চলে এসেছে, তা বড়ই নিষ্ঠুর ও দুঃখজনক। বয়সের কারণেই শিশু বা কিশোররা অনেক পরিস্থিতিতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। অসৎ প্ররোচনাও থাকে। ফলে তারা কখনো কখনো জড়িয়ে যায় কিছু ভুল কাজের সঙ্গে। এমন অনেক শিশু-কিশোরকে রাখা হয় উন্নয়নকেন্দ্র বা সংশোধনকেন্দ্রে। উদ্দেশ্য, তারা যাতে নিজেদের ভুল বুঝতে পারে, সংশোধিত হয় এবং ভবিষ্যতে একেকজন সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু গত কয়েক দিনে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অরাজকতার যে চিত্র গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, তা কি কোনোভাবে এসব কেন্দ্রের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ? গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রেরই অবস্থা কমবেশি একই রকম। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা শিশুদের সংশোধিত হওয়ার বদলে বরং আরো বেশি অপরাধী হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রতিটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নির্দিষ্ট সংখ্যার দ্বিগুণ বা এর চেয়ে বেশি শিশুকে রাখা হয়। রাতে ঘুমানোর একটু জায়গা পাওয়ার জন্য নিজেদের মধ্যে শুরু হয় টানাহেঁচড়া, এমনকি মারামারি। শাসনের নামে চলে শিক্ষকদের চড়-লাথি-ঘুষি। সরকারের ভালো বরাদ্দ থাকলেও খাবার হয় খুবই নিম্নমানের। নেই শিশুদের মানসিক পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান বা কাউন্সেলিংয়ের জন্য উপযুক্ত ও দক্ষ কর্মকর্তা। অভিযোগ আছে, চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ থাকলেও কেন্দ্র থেকে কোনো নিবাসীকে কোনো ওষুধই সরবরাহ করা হয় না। শিশুরা অসুস্থ হয়ে দিনের পর দিন ভুগলেও তাদের চিকিৎসার বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়। আছে যৌন হয়রানির অভিযোগও। আর্থিক অনিয়মেরও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এই অবস্থায় অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এসব কেন্দ্রে উপযুক্ত লোকজনের নিয়োগই হয় না। এসব কেন্দ্রে যাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন তাঁরা শিশুর মনস্তত্ত্ব, অপরাধ সংশোধন, কাউন্সেলিংসহ অনেক বিষয়ে অদক্ষ। তাঁরা অন্য অপরাধীর মতোই শিশুদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তাহলে বিপুল অর্থ ব্যয় করে এসব শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র পরিচালনা করা কেন? প্রায় সব দেশেই শিশুদের সংশোধনের জন্য এমন অনেক কেন্দ্র রয়েছে। আছে সঠিক ব্যবস্থাপনা। শিশুরা প্রকৃত অর্থেই সেসব কেন্দ্র থেকে নিজেদের সংশোধন করে বেরিয়ে আসার সুযোগ পায়। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রের স্বার্থেই আমাদেরও এসব শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র সঠিকভাবে পরিচালনার উদ্যোগ নিতে হবে। যোগ্য ও দক্ষ লোকজনকে সেখানে নিয়োগ দিয়ে তাঁদের প্রতিটি কাজ জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র

আপলোড টাইম : ০৯:২৮:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ অগাস্ট ২০২০

সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন শিশুকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় যে সত্যটি দেশবাসীর সামনে চলে এসেছে, তা বড়ই নিষ্ঠুর ও দুঃখজনক। বয়সের কারণেই শিশু বা কিশোররা অনেক পরিস্থিতিতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। অসৎ প্ররোচনাও থাকে। ফলে তারা কখনো কখনো জড়িয়ে যায় কিছু ভুল কাজের সঙ্গে। এমন অনেক শিশু-কিশোরকে রাখা হয় উন্নয়নকেন্দ্র বা সংশোধনকেন্দ্রে। উদ্দেশ্য, তারা যাতে নিজেদের ভুল বুঝতে পারে, সংশোধিত হয় এবং ভবিষ্যতে একেকজন সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু গত কয়েক দিনে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অরাজকতার যে চিত্র গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, তা কি কোনোভাবে এসব কেন্দ্রের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ? গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রেরই অবস্থা কমবেশি একই রকম। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা শিশুদের সংশোধিত হওয়ার বদলে বরং আরো বেশি অপরাধী হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রতিটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে নির্দিষ্ট সংখ্যার দ্বিগুণ বা এর চেয়ে বেশি শিশুকে রাখা হয়। রাতে ঘুমানোর একটু জায়গা পাওয়ার জন্য নিজেদের মধ্যে শুরু হয় টানাহেঁচড়া, এমনকি মারামারি। শাসনের নামে চলে শিক্ষকদের চড়-লাথি-ঘুষি। সরকারের ভালো বরাদ্দ থাকলেও খাবার হয় খুবই নিম্নমানের। নেই শিশুদের মানসিক পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান বা কাউন্সেলিংয়ের জন্য উপযুক্ত ও দক্ষ কর্মকর্তা। অভিযোগ আছে, চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ থাকলেও কেন্দ্র থেকে কোনো নিবাসীকে কোনো ওষুধই সরবরাহ করা হয় না। শিশুরা অসুস্থ হয়ে দিনের পর দিন ভুগলেও তাদের চিকিৎসার বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়। আছে যৌন হয়রানির অভিযোগও। আর্থিক অনিয়মেরও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এই অবস্থায় অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এসব কেন্দ্রে উপযুক্ত লোকজনের নিয়োগই হয় না। এসব কেন্দ্রে যাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন তাঁরা শিশুর মনস্তত্ত্ব, অপরাধ সংশোধন, কাউন্সেলিংসহ অনেক বিষয়ে অদক্ষ। তাঁরা অন্য অপরাধীর মতোই শিশুদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তাহলে বিপুল অর্থ ব্যয় করে এসব শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র পরিচালনা করা কেন? প্রায় সব দেশেই শিশুদের সংশোধনের জন্য এমন অনেক কেন্দ্র রয়েছে। আছে সঠিক ব্যবস্থাপনা। শিশুরা প্রকৃত অর্থেই সেসব কেন্দ্র থেকে নিজেদের সংশোধন করে বেরিয়ে আসার সুযোগ পায়। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রের স্বার্থেই আমাদেরও এসব শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র সঠিকভাবে পরিচালনার উদ্যোগ নিতে হবে। যোগ্য ও দক্ষ লোকজনকে সেখানে নিয়োগ দিয়ে তাঁদের প্রতিটি কাজ জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।