ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:২২:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
  • / ২৫৯ বার পড়া হয়েছে

আলমডাঙ্গায় অনুমোদনবিহীন কিন্ডার গার্টেন স্কুলের রমরমা বাণিজ্য!
তানভির সোহেল, আলমডাঙ্গা:
আলমডাঙ্গায় অনুমোদনবিহীনভাবে বসত বাড়ির রুম ভাড়া নিয়ে কেজি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের নামে কিন্ডার গার্টেন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তিরা। শিক্ষার নামে কোমলমতি শিশুদের অভিভাবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আলমডাঙ্গার পৌর ও উপজেলায় প্রায় ১ শতাধিক কিন্ডার গার্টেন রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই কোন শিক্ষার মান। অদক্ষ ও কথিত শিক্ষক-শিক্ষিকা দিয়ে করানো হচ্ছে পাঠদান। অনেক কিন্ডার গার্টেন সকাল ৮টা থেকে রাত্র ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে বলে অভিযোগ ওঠে। সরকারি নীতিমালা না মেনেই একটি স্কুলের সাথে প্রতিযোগিতা করে একই স্থানে আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষরা।
ব্যাঙের ছাতার মতো বৈধ-অবৈধভাবে শিক্ষা বাণিজ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন আলমডাঙ্গার কিন্ডার গার্টেনের প্রতিষ্ঠাতারা। পর্যাপ্ত ছাত্র-ছাত্রী না থাকলেও স্কুলগুলো প্রতি বছরই হাতিয়ে নিচ্ছে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অসংখ্য পাঠ্যবই। একটি প্রতিষ্ঠানের তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোন নি¤œ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন না থাকলেও ২শ’ থেকে ১২শ’ গজের মধ্যে শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদনবিহীন অবৈধভাবে সাইনবোর্ড লাগিয়ে ও কয়েকটি আবাসিক রুম ভাড়া নিয়ে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় অনুমোদনবিহীনভাবে গড়ে উঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে শিক্ষা বাণিজ্য গোপনে চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত বেতন ও স্কুল খরচ। এমনও দেখা গেছে, ২/৩টি রুম নিয়ে কিন্ডার গার্টেন খুলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেজি, প্রাথমিক, মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র ছাত্রীদের টিচিং ও কোচিং করানো হচ্ছে বাড়তি আয়ের আশায়। অনেকে কিন্ডারগার্টেনকে সেবার পরিবর্তে ব্যবসায় পরিণত করেছেন।
বিশেষ করে আলমডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গণের কিন্ডার গার্টেনগুলোর সৃষ্টি শুধুমাত্র টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য। এছাড়া পৌরসভা এলাকায় ২শ’ থেকে ১২শ’ গজের মধ্যে প্রায় ১৪টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। প্রতি শ্রেণিতে ২০/৩০ জন করে ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ সরকারিভাবে ৮০/১০০ সেট বইয়ের চাহিদা দিয়ে থাকে। অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক বছর শুরু হওয়ার আগেই সিসি টিভিতে পর্যবেক্ষণ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রলোভনে ফেলে অনেক অভিভাবকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।
শুধু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। অনেক অভিভাবক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় অভিযোগ করেন, শুধু টাকায় খরচ করছি, পড়ালেখার মান কোনটাতেই ভাল না। তবে গোপন সংবাদের মাধ্যমে সময়ের সমীকরণ’র এই প্রতিবেদকের নিকট অভিযোগ আসে, এই সকল অবৈধভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার পিছনে বড় ভূমিকা পালন করে সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা। শিক্ষকেরা প্রতিটা স্কুলের সাথে চুক্তিভিত্তিক অনুসারে মাসিক ও বার্ষিক মুনাফা আদায় করে। এই ব্যাপারে অবৈধ স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত কোন ভূমিকা পালন না করায় সুধি সমাজে এই সকল বাণিজ্যিক শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে কোমলমতী শিশুরা বিভিন্ন ধরণের মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহাত মান্নান সময়ের সমীকরণকে জানান, এখানে প্রায় ১শ’ টিরও বেশি এমন স্কুল রয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের কোন প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেই। সরকারি আইন লঙ্ঘন করেই এই সকল প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। দ্রুতই প্রতিটা স্কুলের তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরই মাধ্যমে যে সকল কিন্ডার গার্টেন স্কুল নামে অবৈধভাবে শিক্ষার নামে বাণিজ্য করে যাচ্ছে সেই সকল প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনা হবে। সরকারিভাবে যে সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকেরা কিন্ডার গার্টেন স্কুলের সাথে অনৈতিকভাবে ছায়া প্রদর্শনি করে আসছে, সেই সকল শিক্ষকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, সরকারিভাবে যে সকল পাঠ্যবই বিভিন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা প্রতিবছরই তালিকার মাধ্যমে বই বিতরন করা হয়। সেই তুলনায় বইগুলো অবৈধভাবে কিন্ডার গার্টেন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট দিয়ে বাণিজ্য গড়ে তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে, তবে নীতিমালা না মানার বিষয়টি অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

শিক্ষার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা!

আপলোড টাইম : ১১:২২:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

আলমডাঙ্গায় অনুমোদনবিহীন কিন্ডার গার্টেন স্কুলের রমরমা বাণিজ্য!
তানভির সোহেল, আলমডাঙ্গা:
আলমডাঙ্গায় অনুমোদনবিহীনভাবে বসত বাড়ির রুম ভাড়া নিয়ে কেজি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের নামে কিন্ডার গার্টেন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তিরা। শিক্ষার নামে কোমলমতি শিশুদের অভিভাবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আলমডাঙ্গার পৌর ও উপজেলায় প্রায় ১ শতাধিক কিন্ডার গার্টেন রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই কোন শিক্ষার মান। অদক্ষ ও কথিত শিক্ষক-শিক্ষিকা দিয়ে করানো হচ্ছে পাঠদান। অনেক কিন্ডার গার্টেন সকাল ৮টা থেকে রাত্র ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে বলে অভিযোগ ওঠে। সরকারি নীতিমালা না মেনেই একটি স্কুলের সাথে প্রতিযোগিতা করে একই স্থানে আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষরা।
ব্যাঙের ছাতার মতো বৈধ-অবৈধভাবে শিক্ষা বাণিজ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন আলমডাঙ্গার কিন্ডার গার্টেনের প্রতিষ্ঠাতারা। পর্যাপ্ত ছাত্র-ছাত্রী না থাকলেও স্কুলগুলো প্রতি বছরই হাতিয়ে নিচ্ছে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অসংখ্য পাঠ্যবই। একটি প্রতিষ্ঠানের তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোন নি¤œ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন না থাকলেও ২শ’ থেকে ১২শ’ গজের মধ্যে শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদনবিহীন অবৈধভাবে সাইনবোর্ড লাগিয়ে ও কয়েকটি আবাসিক রুম ভাড়া নিয়ে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় অনুমোদনবিহীনভাবে গড়ে উঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে শিক্ষা বাণিজ্য গোপনে চালিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত বেতন ও স্কুল খরচ। এমনও দেখা গেছে, ২/৩টি রুম নিয়ে কিন্ডার গার্টেন খুলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেজি, প্রাথমিক, মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র ছাত্রীদের টিচিং ও কোচিং করানো হচ্ছে বাড়তি আয়ের আশায়। অনেকে কিন্ডারগার্টেনকে সেবার পরিবর্তে ব্যবসায় পরিণত করেছেন।
বিশেষ করে আলমডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গণের কিন্ডার গার্টেনগুলোর সৃষ্টি শুধুমাত্র টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য। এছাড়া পৌরসভা এলাকায় ২শ’ থেকে ১২শ’ গজের মধ্যে প্রায় ১৪টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। প্রতি শ্রেণিতে ২০/৩০ জন করে ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ সরকারিভাবে ৮০/১০০ সেট বইয়ের চাহিদা দিয়ে থাকে। অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক বছর শুরু হওয়ার আগেই সিসি টিভিতে পর্যবেক্ষণ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রলোভনে ফেলে অনেক অভিভাবকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।
শুধু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। অনেক অভিভাবক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় অভিযোগ করেন, শুধু টাকায় খরচ করছি, পড়ালেখার মান কোনটাতেই ভাল না। তবে গোপন সংবাদের মাধ্যমে সময়ের সমীকরণ’র এই প্রতিবেদকের নিকট অভিযোগ আসে, এই সকল অবৈধভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার পিছনে বড় ভূমিকা পালন করে সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা। শিক্ষকেরা প্রতিটা স্কুলের সাথে চুক্তিভিত্তিক অনুসারে মাসিক ও বার্ষিক মুনাফা আদায় করে। এই ব্যাপারে অবৈধ স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত কোন ভূমিকা পালন না করায় সুধি সমাজে এই সকল বাণিজ্যিক শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে কোমলমতী শিশুরা বিভিন্ন ধরণের মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহাত মান্নান সময়ের সমীকরণকে জানান, এখানে প্রায় ১শ’ টিরও বেশি এমন স্কুল রয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের কোন প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেই। সরকারি আইন লঙ্ঘন করেই এই সকল প্রতিষ্ঠান চালানোর জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। দ্রুতই প্রতিটা স্কুলের তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরই মাধ্যমে যে সকল কিন্ডার গার্টেন স্কুল নামে অবৈধভাবে শিক্ষার নামে বাণিজ্য করে যাচ্ছে সেই সকল প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনা হবে। সরকারিভাবে যে সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকেরা কিন্ডার গার্টেন স্কুলের সাথে অনৈতিকভাবে ছায়া প্রদর্শনি করে আসছে, সেই সকল শিক্ষকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, সরকারিভাবে যে সকল পাঠ্যবই বিভিন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা প্রতিবছরই তালিকার মাধ্যমে বই বিতরন করা হয়। সেই তুলনায় বইগুলো অবৈধভাবে কিন্ডার গার্টেন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট দিয়ে বাণিজ্য গড়ে তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে, তবে নীতিমালা না মানার বিষয়টি অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।