ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিক্ষক সংকট দূরীকরণে সময়োপযোগী উদ্যোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:১৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • / ২৮৪ বার পড়া হয়েছে

শিক্ষা জাতির মেরুদ-। এটি অতি পুরনো কথা। তবে এর মাহাত্ম্য এবং গভীরতা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু আমাদের দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার হাল সন্তোষজনক বলার উপায় নেই। প্রাথমিক থেকে শুরু করে সব স্তরেই নানা সংকট রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষক সংকট অন্যতম। বিশেষ করে সরকারি কলেজগুলোতে অবস্থা অনেকটাই নাজুক। অথচ প্রয়োজনের তুলনায় পদ শূন্য রয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত একটি সংবাদে সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকটের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা রীতিমতো হতাশাজনক। এতে শুধু যে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তা নয়, শিক্ষকদের ওপরও বাড়তি চাপ পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে প্রতিষ্ঠান। এটি শিক্ষা অনুকূল পদ্ধতি হতে পারে না। ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষকের চাহিদা পাঠিয়েছে। সরকারি কলেজগুলোর শূন্য পদে ১ হাজার ১৮৮ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার আয়োজন করবে সরকারি কর্ম কমিশন। এছাড়া ৪১তম বিসিএসের মাধ্যমে কেবল শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। এটি একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ নিঃসন্দেহে।
শিক্ষার বিকল্প কোনো কিছুই হতে পারে না। বর্তমান অগ্রসরমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে এটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ক্রমবর্ধমান বিশ্বের সঙ্গে সমান তালে উন্নয়ন যাত্রায় এগিয়ে যেতে হলে যুগোপযোগী শিক্ষা গ্রহণের বিকল্প নেই। আমাদের দেশে বিভিন্নœ স্তরে অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থীরা রয়েছেন। কিন্তু তাদের দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজে লাগাতে হলে প্রকৃত অর্থেই শিক্ষিত করে তুলতে হবে। আর এই কাজটি শিক্ষক ছাড়া আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অভাব থাকলে শিক্ষার্থীর যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তা অকার্যকর হয়ে পড়ার শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। ১৯৮৩ সালের এনাম কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী সরকারি কলেজে আরো সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষকের প্রাপ্যতা রয়েছে। মাউশির হিসাব অনুযায়ী, দেশের পুরনো ৩১৬টি সরকারি কলেজে মোট ১৫ হাজার ২৮৯টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৩ হাজার ৭৫৪টি পদই শূন্য। অর্থাৎ প্রায় ২৫ শতাংশ পদই শূন্য। এর ফলে কলেজগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলো বাদে দেশের বেশিরভাগ এলাকার সরকারি কলেজেই এখন শিক্ষকের সংকট চলছে। মফস্বল এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই সংকট আরো বেশি। শিক্ষার সঙ্গে দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের সম্পর্ক জড়িত। একজন দক্ষ শিক্ষকই কেবল পারেন প্রকৃত নাগরিক গড়ে তুলতে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে পৌঁছেই একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের মোড় নতুন বাঁক নেয়। তাই এ সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে শিক্ষকের অভাবে শিক্ষা গ্রহণে শিক্ষার্থীর কোনো ঘাটতি থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাব বাকি জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। সামগ্রিক বিবেচনায় শিক্ষক সংকট দূরীকরণে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সময়োপযোগী বলে মনে করি। তবে তা যত দ্রুত হবে, সবার জন্য ততই তা মঙ্গলকর।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

শিক্ষক সংকট দূরীকরণে সময়োপযোগী উদ্যোগ

আপলোড টাইম : ০৮:১৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শিক্ষা জাতির মেরুদ-। এটি অতি পুরনো কথা। তবে এর মাহাত্ম্য এবং গভীরতা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু আমাদের দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার হাল সন্তোষজনক বলার উপায় নেই। প্রাথমিক থেকে শুরু করে সব স্তরেই নানা সংকট রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষক সংকট অন্যতম। বিশেষ করে সরকারি কলেজগুলোতে অবস্থা অনেকটাই নাজুক। অথচ প্রয়োজনের তুলনায় পদ শূন্য রয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত একটি সংবাদে সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকটের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা রীতিমতো হতাশাজনক। এতে শুধু যে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তা নয়, শিক্ষকদের ওপরও বাড়তি চাপ পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে প্রতিষ্ঠান। এটি শিক্ষা অনুকূল পদ্ধতি হতে পারে না। ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষকের চাহিদা পাঠিয়েছে। সরকারি কলেজগুলোর শূন্য পদে ১ হাজার ১৮৮ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার আয়োজন করবে সরকারি কর্ম কমিশন। এছাড়া ৪১তম বিসিএসের মাধ্যমে কেবল শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। এটি একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ নিঃসন্দেহে।
শিক্ষার বিকল্প কোনো কিছুই হতে পারে না। বর্তমান অগ্রসরমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে এটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ক্রমবর্ধমান বিশ্বের সঙ্গে সমান তালে উন্নয়ন যাত্রায় এগিয়ে যেতে হলে যুগোপযোগী শিক্ষা গ্রহণের বিকল্প নেই। আমাদের দেশে বিভিন্নœ স্তরে অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থীরা রয়েছেন। কিন্তু তাদের দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজে লাগাতে হলে প্রকৃত অর্থেই শিক্ষিত করে তুলতে হবে। আর এই কাজটি শিক্ষক ছাড়া আর কারো পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অভাব থাকলে শিক্ষার্থীর যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তা অকার্যকর হয়ে পড়ার শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। ১৯৮৩ সালের এনাম কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী সরকারি কলেজে আরো সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষকের প্রাপ্যতা রয়েছে। মাউশির হিসাব অনুযায়ী, দেশের পুরনো ৩১৬টি সরকারি কলেজে মোট ১৫ হাজার ২৮৯টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৩ হাজার ৭৫৪টি পদই শূন্য। অর্থাৎ প্রায় ২৫ শতাংশ পদই শূন্য। এর ফলে কলেজগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলো বাদে দেশের বেশিরভাগ এলাকার সরকারি কলেজেই এখন শিক্ষকের সংকট চলছে। মফস্বল এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই সংকট আরো বেশি। শিক্ষার সঙ্গে দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়নের সম্পর্ক জড়িত। একজন দক্ষ শিক্ষকই কেবল পারেন প্রকৃত নাগরিক গড়ে তুলতে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে পৌঁছেই একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের মোড় নতুন বাঁক নেয়। তাই এ সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে শিক্ষকের অভাবে শিক্ষা গ্রহণে শিক্ষার্থীর কোনো ঘাটতি থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাব বাকি জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। সামগ্রিক বিবেচনায় শিক্ষক সংকট দূরীকরণে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সময়োপযোগী বলে মনে করি। তবে তা যত দ্রুত হবে, সবার জন্য ততই তা মঙ্গলকর।