ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য নিষিদ্ধ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:২২:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
  • / ২৭৯ বার পড়া হয়েছে

শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য নিষিদ্ধ
সরকারের নীতিমালা বৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট
সমীকরণ প্রতিবেদন: কোচিং বাণিজ্যে জড়ানোর সুযোগ নেই শিক্ষকদের। সরকারি ও বেসরকারি সকল স্কুল এবং কলেজের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকারের জারি করা নীতিমালাকে বৈধ ঘোষণা করে এ রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, সরকার রাষ্ট্রের কল্যাণে যে কোন সময় যে কোন ইস্যুতে আইন, বিধি ও নীতিমালা জারি করতে পারে। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ঢালাওভাবে যে কোচিং বাণিজ্য চলছিলো হাইকোর্টের রায়ের ফলে তা নিষিদ্ধ হলো। তিনি বলেন, গর্ভনমেন্ট সার্ভেন্ট (কনডাক্ট) রুলস এবং গর্ভনমেন্ট সার্ভেন্টস (ডিসিপ্লিন এন্ড আপিল) রুলস পর্যালোচনা করে আদালত রায়ে বলেছে যে একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী সরকারি চাকরির বাইরে গিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন ব্যবসা বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত হতে পারবেন না। ওই সব আইনের ধারাবাহিকতায় কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা এসেছে। ফলে এটা অসাংবিধানিক নয়।
জানা গেছে, ২০১২ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে একটি নীতিমালা জারি করে সরকার। ওই নীতিমালার ভূমিকায় বলা হয়, দেশের সরকারি ও বেসরকারি নি¤œ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক শ্রেণির শিক্ষক দীর্ঘদিন যাবত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কোচিং পরিচালনা করে আসছেন। এটি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যেখানে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। যা পরিবারের উপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে এবং এ ব্যয় নির্বাহে অভিভাবকগণ হিমশিম খাচ্ছেন। এছাড়া অনেক শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মনোযোগী না হয়ে কোচিং এ বেশি সময় ব্যয় করছেন। এক্ষেত্রে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা এবং অভিভাবকগণ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকার এই নীতিমালা প্রণয়ন করে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোন শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন।
প্রণীত এই নীতিমালার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন আইডিয়াল স্কুল গার্ডিয়ান ফোরাম ও অভিভাবক অ্যালায়েন্সের সভাপতি, ধানমন্ডি গর্ভনমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল এবং মতিঝিল গভর্নমেন্ট বয়েজ হাইস্কুলের কয়েকজন শিক্ষক। বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা ওই রিটের উপর রুল জারি করে হাইকোর্ট। রুলে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। ওই রিটের রুলের উপর চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গতকাল রায় দেন।
রিট আবেদনগুলো খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট রায়ে বলেন, একটি আধুনিক সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সময়ে সময়ে পরিপত্র, নীতিমালা, গাইডলাইন, সার্কুলার, বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে সরকার। এটা সরকারের সাংবিধানিক অধিকার। এই পরিপত্র, নীতিমালা, গাইডলাইন, সার্কুলার, বিজ্ঞপ্তি জারির জন্য জাতীয় সংসদে আইন পাশ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। সুতরাং কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা অসাংবিধানিক ও বেআইনি নয়। যেহেতু বেআইনি নয় সেহেতু এই নীতিমালার বাইরে কোন কোচিং করানো যাবে না। রায়ে বলা হয়, গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এমন সেক্টরকে দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তের অগ্রাধিকার তালিকায় রাখতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য নিষিদ্ধ

আপলোড টাইম : ০৩:২২:১০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য নিষিদ্ধ
সরকারের নীতিমালা বৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট
সমীকরণ প্রতিবেদন: কোচিং বাণিজ্যে জড়ানোর সুযোগ নেই শিক্ষকদের। সরকারি ও বেসরকারি সকল স্কুল এবং কলেজের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকারের জারি করা নীতিমালাকে বৈধ ঘোষণা করে এ রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, সরকার রাষ্ট্রের কল্যাণে যে কোন সময় যে কোন ইস্যুতে আইন, বিধি ও নীতিমালা জারি করতে পারে। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ঢালাওভাবে যে কোচিং বাণিজ্য চলছিলো হাইকোর্টের রায়ের ফলে তা নিষিদ্ধ হলো। তিনি বলেন, গর্ভনমেন্ট সার্ভেন্ট (কনডাক্ট) রুলস এবং গর্ভনমেন্ট সার্ভেন্টস (ডিসিপ্লিন এন্ড আপিল) রুলস পর্যালোচনা করে আদালত রায়ে বলেছে যে একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী সরকারি চাকরির বাইরে গিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন ব্যবসা বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত হতে পারবেন না। ওই সব আইনের ধারাবাহিকতায় কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা এসেছে। ফলে এটা অসাংবিধানিক নয়।
জানা গেছে, ২০১২ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে একটি নীতিমালা জারি করে সরকার। ওই নীতিমালার ভূমিকায় বলা হয়, দেশের সরকারি ও বেসরকারি নি¤œ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক শ্রেণির শিক্ষক দীর্ঘদিন যাবত বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কোচিং পরিচালনা করে আসছেন। এটি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যেখানে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। যা পরিবারের উপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে এবং এ ব্যয় নির্বাহে অভিভাবকগণ হিমশিম খাচ্ছেন। এছাড়া অনেক শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মনোযোগী না হয়ে কোচিং এ বেশি সময় ব্যয় করছেন। এক্ষেত্রে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা এবং অভিভাবকগণ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকার এই নীতিমালা প্রণয়ন করে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোন শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি সাপেক্ষে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন।
প্রণীত এই নীতিমালার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন আইডিয়াল স্কুল গার্ডিয়ান ফোরাম ও অভিভাবক অ্যালায়েন্সের সভাপতি, ধানমন্ডি গর্ভনমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল এবং মতিঝিল গভর্নমেন্ট বয়েজ হাইস্কুলের কয়েকজন শিক্ষক। বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা ওই রিটের উপর রুল জারি করে হাইকোর্ট। রুলে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। ওই রিটের রুলের উপর চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গতকাল রায় দেন।
রিট আবেদনগুলো খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট রায়ে বলেন, একটি আধুনিক সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সময়ে সময়ে পরিপত্র, নীতিমালা, গাইডলাইন, সার্কুলার, বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে সরকার। এটা সরকারের সাংবিধানিক অধিকার। এই পরিপত্র, নীতিমালা, গাইডলাইন, সার্কুলার, বিজ্ঞপ্তি জারির জন্য জাতীয় সংসদে আইন পাশ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। সুতরাং কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা অসাংবিধানিক ও বেআইনি নয়। যেহেতু বেআইনি নয় সেহেতু এই নীতিমালার বাইরে কোন কোচিং করানো যাবে না। রায়ে বলা হয়, গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এমন সেক্টরকে দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তের অগ্রাধিকার তালিকায় রাখতে হবে।