ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শরৎকাল

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১২:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • / ২৩৮ বার পড়া হয়েছে

ধর্ম প্রতিবেদন
বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এখন চলছে ঋতুর রানী শরৎ। শরতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শুভ্রতা। শরতের আকাশ একটু বাড়াবাড়ি রকমেরই শুভ্র। শরতের জমিন আকাশের চেয়েও বেশি শুভ্র হয়ে ওঠে কাশফুলের দোলায়। আল্লাহতায়ালার কি অপরূপ নিয়ামত! যত দূর চোখ যায় জমিনে সাদা কাশফুল, আকাশে সাদা মেঘের ভেলা- এ দৃশ্য দেখে কোনো মানুষ কি কৃতজ্ঞ না হয়ে পারে? পাপের কালো সমুদ্রে যে মানুষটি ডুবে থেকে ভিতরে-বাইরে পুরোপুরি কালো হয়ে গেছে শরৎ তাকে ডেকে যায়- হে আল্লাহর বান্দা! আমার মতো শুভ্র হও! ভিতরে-বাইরে ওপরে-নিচে সব জায়গার কালো ঝেড়ে সাদার আলো ধারণ কর, তবেই তুমি হতে পারবে প্রভুর প্রিয়তম বান্দাদের একজন। প্রভু তাঁর বান্দাদের ডেকে বলেন, ‘ওহে বিশ্বাসীরা! তোমরা সত্যিকারের তওবা- তওবাতুন নাসুহার মাধ্যমে শুভ্র রং ধারণ কর।’
সুরা মুলকে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ! তোমার প্রেমময় প্রভুর সৃষ্টিতে কোথাও অসংগতি নেই, ভুল নেই, কোথাও তুমি সামান্য পরিমাণ ত্রুটি দেখতে পাবে না। তুমি তাকাও! গবেষণা কর! বিশ্লেষণ কর! দেখ তো কোনো ভুল-ত্রুটি অসংগতি চোখে পড়ে কিনা? তোমরা হাজার বছর গবেষণা করে ক্লান্ত হয়ে পড়বে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিশ্লেষণ করে ক্ষান্ত দেবে। তবু রহমানের সৃষ্টিতে কোনো অসংগগতি, ভুল-ভ্রান্তি, ত্রুটি-বিচ্যুতি খুঁজে পাবে না।’ সুরা মুলক, আয়াত ৪।
শরতের বিমুগ্ধ সৌন্দর্য দেখাও যে ইবাদত, নদীর কলকল জিকিরে বয়ে যাওয়া শব্দ শোনাও যে ইবাদত, আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রভুর বিশালত্ব নিয়ে কল্পনা করা, উড়ে যাওয়া পাখির দিকে তাকিয়ে প্রভুর সৃষ্টিকে বিশ্লেষণ এসবও যে ইবাদত, আমরা বোধ হয় আজও তা বুঝে উঠতে পারিনি। একটু আগে সুরা মুলক থেকে যে উদাহরণ দিয়েছি, প্রভু যে মানুষকে আহ্বান করলেন তাঁর সৃষ্টিতে কোনো অসংগতি আছে কিনা গবেষণা করে, বিশ্লেষণ করে দেখার জন্য- সে আয়াত প্রমাণ করে সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করা উচ্চস্তরের ইবাদত। সুরা মুলক থেকেই আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছি। সৃষ্টিরাজি নিয়ে ভাবা, সৃষ্টির সৌন্দর্য দেখা যে কত বড় ইবাদত আশা করি তা পাঠক বুঝতে পারবেন। সুরা মুলকের ১৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! তুমি কি আকাশে উড়ন্ত পাখিদের লক্ষ্য কর না, কি চমৎকারভাবে ওরা ডানা মেলে ওড়ে, আবার উড়ন্ত অবস্থায়ই ডানা গুটিয়ে নেয়। দয়াময় আল্লাহই তাদের শূন্যে ভেসে থাকার শক্তি দিয়েছেন তিনি সবকিছু দেখেন এবং সবকিছু মনোযোগের সঙ্গে খেয়াল রাখেন।’ কোরআনের পাতায় পাতায় আমরা দেখতে পাব এমনিভাবে আল্লাহ কোথাও বলেছেন উটের দিকে তাকাও অথবা বলেছেন রাতের দিকে তাকাও, কোথাও বলেছেন সকাল দেখ, কোথাও বলেছেন তোমার দেহঘড়ির দিকে তাকাও, তার মানে প্রভুর প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা, বিশ্লেষণ করাও এক ধরনের ইবাদত। এটা যে কত উচ্চস্তরের ইবাদত তা বোঝানোর জন্য হাদিস থেকে একটি উদাহরণ দিচ্ছি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রভুর সৃষ্টি নিয়ে সামান্য সময় গবেষণা কর, ধ্যানে ডুবে থাকা সারা রাত নফল নামাজে মগ্ন থাকার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।’ অন্য আরেকটি হাদিসে তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রভুর সৃষ্টি নিয়ে রাতের একাংশ গবেষণায় ডুবে থাকবে, সে ব্যক্তি ৭০ বছর রাতে নফল নামাজ ও দিনে রোজা অবস্থায় জিহাদ করার সওয়াব পাবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

শরৎকাল

আপলোড টাইম : ০৯:১২:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

ধর্ম প্রতিবেদন
বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এখন চলছে ঋতুর রানী শরৎ। শরতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শুভ্রতা। শরতের আকাশ একটু বাড়াবাড়ি রকমেরই শুভ্র। শরতের জমিন আকাশের চেয়েও বেশি শুভ্র হয়ে ওঠে কাশফুলের দোলায়। আল্লাহতায়ালার কি অপরূপ নিয়ামত! যত দূর চোখ যায় জমিনে সাদা কাশফুল, আকাশে সাদা মেঘের ভেলা- এ দৃশ্য দেখে কোনো মানুষ কি কৃতজ্ঞ না হয়ে পারে? পাপের কালো সমুদ্রে যে মানুষটি ডুবে থেকে ভিতরে-বাইরে পুরোপুরি কালো হয়ে গেছে শরৎ তাকে ডেকে যায়- হে আল্লাহর বান্দা! আমার মতো শুভ্র হও! ভিতরে-বাইরে ওপরে-নিচে সব জায়গার কালো ঝেড়ে সাদার আলো ধারণ কর, তবেই তুমি হতে পারবে প্রভুর প্রিয়তম বান্দাদের একজন। প্রভু তাঁর বান্দাদের ডেকে বলেন, ‘ওহে বিশ্বাসীরা! তোমরা সত্যিকারের তওবা- তওবাতুন নাসুহার মাধ্যমে শুভ্র রং ধারণ কর।’
সুরা মুলকে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ! তোমার প্রেমময় প্রভুর সৃষ্টিতে কোথাও অসংগতি নেই, ভুল নেই, কোথাও তুমি সামান্য পরিমাণ ত্রুটি দেখতে পাবে না। তুমি তাকাও! গবেষণা কর! বিশ্লেষণ কর! দেখ তো কোনো ভুল-ত্রুটি অসংগতি চোখে পড়ে কিনা? তোমরা হাজার বছর গবেষণা করে ক্লান্ত হয়ে পড়বে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিশ্লেষণ করে ক্ষান্ত দেবে। তবু রহমানের সৃষ্টিতে কোনো অসংগগতি, ভুল-ভ্রান্তি, ত্রুটি-বিচ্যুতি খুঁজে পাবে না।’ সুরা মুলক, আয়াত ৪।
শরতের বিমুগ্ধ সৌন্দর্য দেখাও যে ইবাদত, নদীর কলকল জিকিরে বয়ে যাওয়া শব্দ শোনাও যে ইবাদত, আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রভুর বিশালত্ব নিয়ে কল্পনা করা, উড়ে যাওয়া পাখির দিকে তাকিয়ে প্রভুর সৃষ্টিকে বিশ্লেষণ এসবও যে ইবাদত, আমরা বোধ হয় আজও তা বুঝে উঠতে পারিনি। একটু আগে সুরা মুলক থেকে যে উদাহরণ দিয়েছি, প্রভু যে মানুষকে আহ্বান করলেন তাঁর সৃষ্টিতে কোনো অসংগতি আছে কিনা গবেষণা করে, বিশ্লেষণ করে দেখার জন্য- সে আয়াত প্রমাণ করে সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করা উচ্চস্তরের ইবাদত। সুরা মুলক থেকেই আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছি। সৃষ্টিরাজি নিয়ে ভাবা, সৃষ্টির সৌন্দর্য দেখা যে কত বড় ইবাদত আশা করি তা পাঠক বুঝতে পারবেন। সুরা মুলকের ১৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! তুমি কি আকাশে উড়ন্ত পাখিদের লক্ষ্য কর না, কি চমৎকারভাবে ওরা ডানা মেলে ওড়ে, আবার উড়ন্ত অবস্থায়ই ডানা গুটিয়ে নেয়। দয়াময় আল্লাহই তাদের শূন্যে ভেসে থাকার শক্তি দিয়েছেন তিনি সবকিছু দেখেন এবং সবকিছু মনোযোগের সঙ্গে খেয়াল রাখেন।’ কোরআনের পাতায় পাতায় আমরা দেখতে পাব এমনিভাবে আল্লাহ কোথাও বলেছেন উটের দিকে তাকাও অথবা বলেছেন রাতের দিকে তাকাও, কোথাও বলেছেন সকাল দেখ, কোথাও বলেছেন তোমার দেহঘড়ির দিকে তাকাও, তার মানে প্রভুর প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা, বিশ্লেষণ করাও এক ধরনের ইবাদত। এটা যে কত উচ্চস্তরের ইবাদত তা বোঝানোর জন্য হাদিস থেকে একটি উদাহরণ দিচ্ছি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রভুর সৃষ্টি নিয়ে সামান্য সময় গবেষণা কর, ধ্যানে ডুবে থাকা সারা রাত নফল নামাজে মগ্ন থাকার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।’ অন্য আরেকটি হাদিসে তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রভুর সৃষ্টি নিয়ে রাতের একাংশ গবেষণায় ডুবে থাকবে, সে ব্যক্তি ৭০ বছর রাতে নফল নামাজ ও দিনে রোজা অবস্থায় জিহাদ করার সওয়াব পাবে।’